সংস্কারে সাদা হলো অপরাজেয় বাংলা by আহমেদ মুনীরুদ্দিন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্যতম প্রতীকে পরিণত হওয়া ‘অপরাজেয় বাংলা’
ভাস্কর্যটি সংস্কার করা হয়েছে। এখন এটিকে দেখা যাচ্ছে সাদা রঙে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সংস্কারকাজের অংশ হিসেবে ভাস্করের
তত্ত্বাবধানেই এই প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। তবে এতে ভাস্কর্যটির নান্দনিক
ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ। অপরাজেয় বাংলার ভাস্কর সৈয়দ
আবদুল্লাহ খালিদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ক্ষয় রোধ করে দীর্ঘদিনের জন্য
টেকসই করতেই এই সাদা সিমেন্টের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। ফিগারগুলোর মাথার
কাছে কয়েকটা ফাটল দেখা দিয়েছিল। কোথাও কোথাও ক্ষয় হয়ে এর ক্ষতি হচ্ছিল।
দীর্ঘদিন একে রক্ষা করার জন্য সংস্কারকাজ প্রয়োজন ছিল। এভাবে সিমেন্টের
প্রলেপ দেওয়ায় ভাস্কর্যটির বলিষ্ঠতা ও নান্দনিকতা ক্ষুণ্ন হয়েছে কি না,
জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ঠিক যে আগে এর যে বৈশিষ্ট্য ছিল, তা খানিকটা
নষ্ট হয়ে গেছে।
>>ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্যতম প্রতীক ‘অপরাজেয় বাংলা’ (বাঁয়ে)। ভাস্কর্যটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় সম্প্রতি এর সংস্কার করা হয়েছে। তবে সংস্কারের পর এর বৈশিষ্ট্যে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে এবং সাদা দেখাচ্ছে (ডানে)। শিল্প সমালোচকেরা বলছেন, এতে ভাস্কর্যটির নান্দনিক ক্ষতি হয়েছে l ছবি: প্রথম আলো
১৯৭৩
সালে নির্মাণকাজ শুরু হলেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর মৌলবাদীদের
বিরোধিতার কারণে বারবার কাজ বন্ধ থাকায় অপরাজেয় বাংলার নির্মাণকাজ শেষ
হয়ে উদ্বোধন হয় ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী
প্রকৌশলী মো. জাভেদ আলম মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রথমে সাদা
সিমেন্টের সঙ্গে কিছুটা ধূসর সিমেন্ট মিশিয়ে একটা প্রলেপ দিই এবং পাথর
দিয়ে ঘষি। কিন্তু এতেও তা বেশি সাদা দেখা যাচ্ছিল এবং ভাস্কর্যের গায়ে
অনেকটা ছোপ ছোপ সাদা রয়ে যাচ্ছিল। তাই পরে আবার ধূসর সিমেন্টের একটা পাতলা
প্রলেপ দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা মূলত সাদাই রয়ে গেছে।’
স্থপতি ও শিল্প সমালোচক অধ্যাপক সামসুল ওয়ারেস এ প্রসঙ্গে বলেন, এতে মারাত্মক নন্দনতাত্ত্বিক ক্ষতি হয়ে গেল। সাদা সিমেন্টের প্রলেপের কারণে এটা ভাস্কর্য হিসেবেই খুব দুর্বল হয়ে গেল। কেননা, ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে মৌলিক ম্যাটেরিয়াল বা প্রকৃত নির্মাণসামগ্রীর বৈশিষ্ট্য ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্মাণসামগ্রীর চরিত্রকে কীভাবে কাজে লাগানো হলো এবং তা কতটা দৃশ্যমান থাকল বা কতটা বাড়তি মাত্রা যোগ করল, ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা। অপরাজেয় বাংলায় এসব খুবই দৃশ্যমান ছিল।
অপরাজেয় বাংলার এই রূপ বদলে আহত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী। ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শৌমিক অতনু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত নতুনগুলো পুরোনোগুলোর ধারাবাহিকতা ও নান্দনিক মান ধরে রাখতে পারছে না। এবার অপরাজেয় বাংলাকেও সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলো! প্রায় চার দশকের পুরোনো ভাস্কর্যকে নতুন রূপ দেওয়ার অধিকার কারও থাকার কথা না।
ভাস্কর খালিদের বানানো সাড়ে তিন ফুট একটি মাটির মাকেট থেকে কংক্রিট ঢালাইয়ে ভাস্কর্যটি নির্মাণের কারিগরি তত্ত্বাবধান করেছিলেন প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ। তিনি জানিয়েছেন, ভাস্কর্যটির সাম্প্রতিক সংস্কারকাজে তিনিও সায় দিয়েছিলেন। তহবিল সংকটের কারণে একটা অভিনব পদ্ধতিতে এই ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২৫ হাজার টাকা দিয়েছিল এবং ডাকসু ২৫ হাজার টাকা চাঁদা তুলেছিল। কিন্তু এই টাকায় লোহা বা ব্রোঞ্জে ভাস্কর্য নির্মাণ সম্ভব ছিল না বলে ভেতরে লোহার কাঠামো বানিয়ে কংক্রিট ঢালাইয়ে তা তৈরি করা হয়। এভাবে ভাস্কর্য নির্মাণ প্রকৌশলী এবং ভাস্কর উভয়ের জন্যই প্রচণ্ড শ্রমসাধ্য ও চ্যালেঞ্জিং ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা শিল্পীকে ডেকেছি। শিল্পীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই এই সংস্কার করা হয়েছে। শিল্পী ও প্রকৌশলী মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কী করা হবে।’ ভাস্কর্যটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার উপায় পাওয়া গেলে কী করবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এতে সর্বাত্মক সহায়তা দেবে। তবে সেটা শিল্পীকে চাইতে হবে, তাঁকেই বলতে হবে তিনি কী করতে চান।
স্থপতি ও শিল্প সমালোচক অধ্যাপক সামসুল ওয়ারেস এ প্রসঙ্গে বলেন, এতে মারাত্মক নন্দনতাত্ত্বিক ক্ষতি হয়ে গেল। সাদা সিমেন্টের প্রলেপের কারণে এটা ভাস্কর্য হিসেবেই খুব দুর্বল হয়ে গেল। কেননা, ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে মৌলিক ম্যাটেরিয়াল বা প্রকৃত নির্মাণসামগ্রীর বৈশিষ্ট্য ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্মাণসামগ্রীর চরিত্রকে কীভাবে কাজে লাগানো হলো এবং তা কতটা দৃশ্যমান থাকল বা কতটা বাড়তি মাত্রা যোগ করল, ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা। অপরাজেয় বাংলায় এসব খুবই দৃশ্যমান ছিল।
অপরাজেয় বাংলার এই রূপ বদলে আহত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী। ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শৌমিক অতনু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত নতুনগুলো পুরোনোগুলোর ধারাবাহিকতা ও নান্দনিক মান ধরে রাখতে পারছে না। এবার অপরাজেয় বাংলাকেও সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলো! প্রায় চার দশকের পুরোনো ভাস্কর্যকে নতুন রূপ দেওয়ার অধিকার কারও থাকার কথা না।
ভাস্কর খালিদের বানানো সাড়ে তিন ফুট একটি মাটির মাকেট থেকে কংক্রিট ঢালাইয়ে ভাস্কর্যটি নির্মাণের কারিগরি তত্ত্বাবধান করেছিলেন প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ। তিনি জানিয়েছেন, ভাস্কর্যটির সাম্প্রতিক সংস্কারকাজে তিনিও সায় দিয়েছিলেন। তহবিল সংকটের কারণে একটা অভিনব পদ্ধতিতে এই ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২৫ হাজার টাকা দিয়েছিল এবং ডাকসু ২৫ হাজার টাকা চাঁদা তুলেছিল। কিন্তু এই টাকায় লোহা বা ব্রোঞ্জে ভাস্কর্য নির্মাণ সম্ভব ছিল না বলে ভেতরে লোহার কাঠামো বানিয়ে কংক্রিট ঢালাইয়ে তা তৈরি করা হয়। এভাবে ভাস্কর্য নির্মাণ প্রকৌশলী এবং ভাস্কর উভয়ের জন্যই প্রচণ্ড শ্রমসাধ্য ও চ্যালেঞ্জিং ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা শিল্পীকে ডেকেছি। শিল্পীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই এই সংস্কার করা হয়েছে। শিল্পী ও প্রকৌশলী মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কী করা হবে।’ ভাস্কর্যটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার উপায় পাওয়া গেলে কী করবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এতে সর্বাত্মক সহায়তা দেবে। তবে সেটা শিল্পীকে চাইতে হবে, তাঁকেই বলতে হবে তিনি কী করতে চান।
No comments