কিশোর গল্প- জমিদার by জসীম আল ফাহিম
তিনি জমিদার নন। তবে অনেক জমির মালিক। নাম শুকুরালি। শুকুরালির এত জমির মালিক হওয়ার পেছনে বিরাট গল্প আছে। সে গল্পই বলছি, শুনুন।
শুকুরালি তখন খুব ছোট। বয়স পাঁচ কি ছয়। বাবা দিনমজুর। সারা দিন তেখামারে কাজ করেন। সন্ধ্যায় তিনি কিছু চাল ডাল আর ছেলের জন্য একটি কাঠি লজেন্স কিনে বাড়ি ফিরতেন। কাঠি লজেন্সটি ছেলের হাতে দিয়ে বলতেন, ‘বড় হ বাবা। বড় হ। বড় হয়ে অনেক জমির মালিক হ।’
বাবা সে দিন কাজে যেতে পারেননি। শরীর কিছুটা খারাপ। কাজ নেই, তাই উপার্জনও নেই। ফলে সন্ধ্যায় চাল ডাল আর কাঠি লজেন্স এলো না। কাঠি লজেন্স না পেয়ে বেচারা শুকুরালি জুড়ে দিলো কান্না। ছেলের কান্না থামাতে বাবা শেষে মিছে করে গল্প পাতলেন।
শুকুরালি তখন খুব ছোট। বয়স পাঁচ কি ছয়। বাবা দিনমজুর। সারা দিন তেখামারে কাজ করেন। সন্ধ্যায় তিনি কিছু চাল ডাল আর ছেলের জন্য একটি কাঠি লজেন্স কিনে বাড়ি ফিরতেন। কাঠি লজেন্সটি ছেলের হাতে দিয়ে বলতেন, ‘বড় হ বাবা। বড় হ। বড় হয়ে অনেক জমির মালিক হ।’
বাবা সে দিন কাজে যেতে পারেননি। শরীর কিছুটা খারাপ। কাজ নেই, তাই উপার্জনও নেই। ফলে সন্ধ্যায় চাল ডাল আর কাঠি লজেন্স এলো না। কাঠি লজেন্স না পেয়ে বেচারা শুকুরালি জুড়ে দিলো কান্না। ছেলের কান্না থামাতে বাবা শেষে মিছে করে গল্প পাতলেন।
‘ছিল এক জমিদার। নাম তার তফাদার। তার ছিল ছেলে এক। নাম তার দফাদার ... ...।’
বাবার গল্প শুনে শুকুরালির কান্না থামে। গল্পে মন দেয় সে।
বাবা বলতে থাকেন, ‘দফাদার রোজ খেতো দশ হালি ডিম। বাবা তো জমিদার, তাই রোজ রোজ দশ হালি ডিমের জোগান দিতে কোনো সমস্যা হতো না। সমস্যা হয় কেবল আমার। সামান্য চাল ডাল আর একটি কাঠি লজেন্স জোগাতেই আমার সমস্যা হয়।’
বাবার গল্প শুনে শুকুরালি হঠাৎ প্রশ্ন করে, তোমার কেন সমস্যা হয় বাবা?
ছেলের প্রশ্নের জবাবে বাবা বলেন, কারণ আমি জমিদার না। দিনমজুর।
বাবার জবাব শুনে শুকুরালি মনে মনে ভাবে, বাবা দিনমজুর বলে কাঠি লজেন্স কিনে দিতে পারছেন না। জমিদার হলে নিশ্চয় পারতেন। পরে বলে, বাবা, আমি জমিদার হতে চাই। জমিদার হতে হলে আমাকে কী করতে হবে?
ছেলের কথা শুনে বাবা অবাক হয়ে তার মুখের দিকে তাকান। বলেন, তুই জমিদার হবি বাবা! ভালো কথা; কিন্তু এ যুগে জমিদার হতে হলে যে তোকে পড়ালেখা করতে হবে। অনেক অনেক পড়ালেখা।
বাবার কথা শুনে শুকুরালি সে দিনই পণ করে, সে অনেক পড়ালেখা করবে। তারপর একদিন না একদিন সে জমিদার হয়েই তবে ছাড়বে।
গল্প কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আরো আছে। শুনুন ধৈর্য ধরে। পড়ালেখা করে শুকুরালি একদিন উচ্চশিতি হলো। একটি ভালো চাকরিও পেলো। ভূমি অফিসের চাকরি। চাকরিতে শুকুরালি অনেক বেতন পায়। তবে বেতন যা পায়, তার চেয়ে বেশি পায় উৎকোচ।
এভাবে ভালোই যেতে থাকে শুকুরালির দিন। আর প্রতি বছরই সে কিছু-না-কিছু জমি কিনতে থাকে। জমি কিনতে কিনতে একদিন সে অনেক জমির মালিক হয়ে যায়। শুকুরালির জমি কেনা তবু থামে না।
শুকুরালির মনে পড়ে সে দিনের কথা, যে দিন তার বাবা তাকে সামান্য একটি কাঠি লজেন্স কিনে দিতে পারেননি। অথচ আজ সে কতই না জমির মালিক! ইচ্ছা করলে এখন সে কাঠি লজেন্স কেন রোজ রোজ কোরমা, পোলাওও খেতে পারে।
ভাবুন তো একবার বিষয়টা! মানুষের কী ভাগ্য! কপাল কত সহজেই না ফেরে! শুকুরালি অভাবকে জয় করে এখন ধনের রাজ্যে বাস করছে। তার বাবা-মা গত হলো বছর কয়েক আগে। বাবা-মায়ের কথা, তাদের অভাবী সংসারের কথা এখন শুকুরালির খুব মনে পড়ে।
মানুষ ধনী হলে আবার নানান বদঅভ্যাসের চর্চা শুরু করে দেয়। শুকুরালিও বাদ যায় না। সেও চর্চা করে।
এই যেমন শক্ত পানীয় পান। যা পান করলে শরীরের তাল ঠিক থাকে না। শরীরের ওপর নিজের দখল লোপ পায়। শুকুরালি একদিন এমনি শক্ত পানীয় (শরাববিশেষ) পান করে বাড়ি ফিরছিল। ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত। জোনাক পোকা জ্বলছে আর নিভছে। জোনাক পোকা জ্বলা দিয়ে কী হবে? ওই আলোতে তো আর পথ দেখা যায় না। অন্ধকারে পথ দেখতে হলে টর্চ দরকার। শুকুরালির সাথে আবার কোনো টর্চ নেই। শেষে অন্ধকারে টলতে টলতে পা ফসকে বেচারা ঢাকনা খোলা এক ম্যানহোলে এসে পড়ে। ম্যানহোলে পড়ার সাথে সাথে তার হার্ট অ্যাটাক হয়।
আশপাশে কোনো লোক না থাকায় সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। ম্যানহোলেই দেহ রাখে বেচারা।
ম্যানহোল থেকে তুলে নিয়ে শুকুরালিকে মার্কিন সাদা কাফনে মোড়ানো হয়। পরে তার জন্য তৈরি করা চিরস্থায়ী ঘরে এনে শোয়ানো হয়। ওই ঘরে শোয়ানোর পর তার আত্মা শূন্যে ভেসে ভেসে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে থাকে। আর আফসোস করে বলে, হায়, মন্দ ভাগ্য আমার! কত কত জমির মালিক আমি! অথচ জমিগুলো আমার কোনো কাজেই লাগল না। মাত্র সাড়ে তিন হাত জমির মালিক হলাম আমি। হায়...!
No comments