দেশজুড়ে আবারো গণগ্রেফতার- পুলিশের বিরুদ্ধে বাণিজ্যের অভিযোগ by আবু সালেহ আকন
জামায়াতের কর্মসূচিকে ঘিরে আবারো শুরু
হয়েছে গণহারে গ্রেফতার। শুধু জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীই নয়, বিএনপিসহ
বিরোধীজোটের নেতাকর্মী, এমনকি সাধারণ মানুষও রয়েছেন এই গ্রেফতারের তালিকায়।
অভিযোগ উঠেছে পুরনো স্টাইলে পুলিশ এই রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে আবারো শুরু
করেছে বাণিজ্য। গ্রেফতার বা আটক হলেই পুলিশের ‘পোয়া বারো’। যত আটক বা
গ্রেফতার হচ্ছে ততই পকেট ভারী হচ্ছে পুলিশের। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তিন
দিন ধরে ব্যাপক অভিযান চলছে। রাজধানীর বস্তি, আবাসিক এলাকা, বিভিন্ন মেস,
আবাসিক হোটেল এবং বিভিন্ন টার্মিনালে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশের
শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, নাশকতারোধে তারা এই অভিযান চালাচ্ছে।
পুলিশের ভয়ে বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মী আবারো ঘরছাড়া হয়েছেন।
>> বৃহস্পতিবার রাতে ও গতকাল সকালে আটকদের গতকাল আদালতে হাজির করা হয় : নয়া দিগন্ত
গত
তিন দিনে দেশে আটক ও গ্রেফতারের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। গত
বৃহস্পতিবার জামায়াতের ডাকা হরতালের দিনকে কেন্দ্র করেই দেশের বিভিন্ন
স্থানে গ্রেফতার হয়েছে পাঁচ শতাধিক। এর বাইরেও আটক হয়েছেন অনেকে। জামায়াতে
ইসলামীর পক্ষ থেকে তাদের ছয় শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতারের দাবি করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জনপ্রতিনিধিও রয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলেন রংপুরের
মিঠাপুকুর উপজেলার নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মাজেদ মারজান।
আগামীকাল রোববার এবং পরের দিন সোমবারও জামায়াতের হরতাল রয়েছে।
সূত্র জানায়, এই হরতালকে ঘিরে গত দুই দিন ধরেই চলছে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশি অভিযান। গ্রেফতারও হচ্ছেন অনেকে। যেসব এলাকায় জোরালো অভিযান চলছে সেসব এলাকা হচ্ছে রাজধানী ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, বগুড়া, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নওগাঁ, মুন্সীগঞ্জ, পাবনা, যশোর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর, নীলফামারী, নেত্রকোনা, রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা ও নোয়াখালী। গতকালও বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২০০ গ্রেফতার হয়েছে।
আমাদের রংপুর সংবাদদাতা জানান, গত বৃহস্পতিবার রংপুর বিভাগে ৯৮ জন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীসহ মোট ৩০৮ জন গ্রেফতার হয়েছেন। পুলিশের এসআই শরিফুল ইসলাম বলেছেন, জামায়াত-শিবিরের বাইরে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা রয়েছে। গতকাল শুক্রবার আটজন শিবির কর্মীসহ ৬২ জন গ্রেফতার হয়েছেন। তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন নিরপরাধ মানুষ। পুলিশ তাদের নানা অজুহাতে গ্রেফতার করেছে।
আমাদের রাজশাহী সংবাদদাতা বলেছেন, বৃহস্পতিবার গ্রেফতার হয়েছেন ৩৩ জন। দলীয় পরিচয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
আমাদের যশোর সংবাদদাতা জানিয়েছেন, দুই দিনে এই এলাকায় গ্রেফতার হয়েছেন মোট ২৭ জন। স্থানীয় সূত্র জানায়, এই এলাকায় গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অনেকেই আছেন নিরপরাধ মানুষ। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে অনেকের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। যারা অর্থ দিতে পারেননি এমন অনেক নিরপরাধ মানুষকে পুলিশ আদালতে পাঠিয়েছে। জানা গেছে ঝিকরগাছায় মো: শাফী নামে এক যুবককে পুলিশ আদালতে পাঠিয়েছে। তিনি কৃষিকাজ করেন। পুলিশ তার কাছে টাকা চেয়ে ব্যর্থ হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। অপর এক মাদরাসা শিক্ষকের কাছ থেকে ১৮ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দিয়েছে। আরেক হাফেজকে ছেড়ে দিয়েছে প্রভাবশালী এক ব্যক্তির ফোনে।
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানিয়েছেন, গত তিন দিনে অর্ধ শতাধিক গ্রেফতার হয়েছেন। যার মধ্যে ৩৬ জনই সাধারণ মানুষ, যাদের রাজনীতির সাথে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এখনো সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চলছে। এভাবেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় জামায়াতের কর্মসূচিকে ঘিরে চলছে গ্রেফতার অভিযান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশের টার্গেট সাধারণ মানুষ। যাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। এসব মানুষকে আটক করে দেনদরবার করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। টাকা দিতে না চাইলে তাদের বিভিন্ন পেন্ডিং মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন করা হচ্ছে।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া এবং এর প্রতিবাদে ঘোষিত কর্মসূচিকে সামনে রেখে বরিশাল পুলিশ ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছে। জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কড়া নজরদারি এবং বেপরোয়া অভিযান অব্যাহত রেখেছে। গত তিন দিনে বরিশাল মহানগর ও জেলার কমপে শহস্রাধিক নেতাকর্মীর বাসাবাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ ও র্যাব। এ সময় তারা জামায়াত-শিবিরের ১১ নেতাকর্মীসহ নিরীহ অনেককে গ্রেফতার করেছে। জামায়াতের দেয়া তথ্য মতে বরিশাল মহানগর থেকে পাঁচজন এবং জেলার বিভ্ন্নি থানা থেকে সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপর দিকে পুলিশের দেয়া তথ্যের আলোকে গ্রেফতার সংখ্যা বলা হয়েছে ২৪ জন। আটক নেতাকর্মীদের পুলিশ পুরনো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কোর্টে চালান দিয়েছে। আদালত তাদের জামিন না দিয়ে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আটককৃতদের মধ্যে ছাত্র ও পরীার্থীও রয়েছে।
পুলিশের হাতে আটক নেতাকর্মীরা হলেন বরিশাল মহানগর জামায়াতের মো: আরিফুল ইসলাম, সিকদার মো: দোলন, মো: মাহাদী এবং শিবিরকর্মী আবু হোরায়রা, জেলা জামায়াতের বানারীপাড়ার জামায়াত কর্মী ইব্রাহীম, আগৈলঝাড়ার শিবির সেক্রেটারি গোলাম মোর্শেদ, হিজলা থানা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক নুরুল আমীন, মুলাদির জামায়াত কর্মী আবদুস সালাম, বাকেরগঞ্জের মো: শামীম, বাবুগঞ্জের আবুল বাশার।
এ দিকে আটককৃতদের স্বজনরা ােভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ বিনা অপরাধে বাসাবাড়ি থেকে গ্রেফতার করে যাকে-তাকে জামায়াত-শিবির বলে চালিয়ে দিচ্ছে। থানায় নিয়ে পুলিশ নানা ধরনের হয়রানিসহ হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। থানা হাজতে থাকা অবস্থায় আটককৃতরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
অপর দিকে পুলিশের প থেকে বলা হচ্ছে, পুলিশ নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে সবসময় টহল অব্যাহত রাখে। তবে জামায়াতের হরতাল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের রায়কে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে। আমরা যাদের আটক করেছি তারা কোনো-না-কোনো অভিযোগের সাথে সম্পৃক্ত। নিরপরাধ কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে না।
মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আমিনুল ইসলাম খসরু জানান, পুলিশ কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের বাসাবাড়িতে অভিযানের নামে হয়রানি করছে। মহানগর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট হেলালের বাসায় পুলিশ বারবার অভিযান চালায়, যা নিন্দনীয়। এ ছাড়া প্রতিটি নেতাকর্মীর বাসাবাড়িতে অভিযানের নামে পুলিশ যে তাণ্ডব চালায় যা নজিরবিহীন। আমরা পুলিশ প্রশাসনের এমন অগণতান্ত্রিক আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই এবং সব ধরনের হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানাই। তিনি এ সময় বিগত শান্তিপূর্ণ হরতালকে সামনে রেখে বিনা অপরাধে গ্রেফতারকৃত সব নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৮০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে নাশকতা প্রতিরোধকল্পে জামায়াত শিবিরের ১২ জন এবং বিভিন্ন মামলায় ৬৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নাশকতা প্রতিরোধে বিভিন্ন উপজেলায় পুলিশের অভিযান চলছে। এ ছাড়া গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ বিভিন্ন মামলায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিভিন্ন থানায় ৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, হরতালের প্রথম দিন থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পাঁচ জামায়াত কর্মীসহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন সদর থানা এলাকা থেকে মো: লোকমান হোসেন, রফিকুল ইসলাম, এনামুল হক, সাটুরিয়া থেকে হাজী মো: সাইফুল ইসলাম, মো: আলী হোসেন, দৌলতপুর এলাকা থেকে আবদুল মান্নান ও বজলুর রশিদ।
জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন বলেন, সম্পূনণ রাজনৈতিক কারণে এবং হয়রানির উদ্দেশ্যেই এ মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা জানান, কমলনগরে মো: ইস্রাফিল নামে জামায়াতের এক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ভোরে পুলিশ উপজেলার পাটোয়ারীরহাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ইস্রাফিল উপজেলার পাটোয়ারীরহাট ইউনিয়ন জামায়াতের কর্মী।
কমলনগর থানার ওসি মো: হুমায়ূন কবির জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত বছরের আগস্ট মাসে হরতাল চলাকালে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তিনি ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। এ ছাড়া হরতাল-অবরোধে নাশকতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে তিনি জানান।
রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে হরতালে পিকেটিংয়ের সময় পুলিশ জামায়াতের ইউনিয়ন সেক্রেটারি ও শিবিরকর্মীসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলেন আ: সালাম, জহুরুল ইসলাম, ফারুক ও রায়হান বিন সোলায়মান।
মনিরামপুর (যশোর) সংবাদদাতা জানান, মনিরামপুরে নাশকতার অভিযোগে জামায়াত-শিবিরের ১২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে যশোর শহর ও মনিরামপুর থেকে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা হলো আব্দুস সালাম, নজরুল ইসলাম, মোহম্মদ জিন্নাহ, মুস্তাকিন হোসেন, রফিকুল ইসলাম, রাজবাড়ীয়া গ্রামের আজগর আলী, শাহাজান আলী, জাহাঙ্গীর হোসেন, রেজাউল করিম, নাসির উদ্দীন, জুয়েল হোসেন ও সাদ্দাম হোসেন। তাদের বাড়ি উপজেলার এড়েন্দা, ইত্যা, রাজবাড়ীয়া ও দেবিদাসপুর গ্রামে। মনিরামপুর থানার ওসি মোল্লা খবির আহমেদ জানান, নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এই হরতালকে ঘিরে গত দুই দিন ধরেই চলছে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশি অভিযান। গ্রেফতারও হচ্ছেন অনেকে। যেসব এলাকায় জোরালো অভিযান চলছে সেসব এলাকা হচ্ছে রাজধানী ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, বগুড়া, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নওগাঁ, মুন্সীগঞ্জ, পাবনা, যশোর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর, নীলফামারী, নেত্রকোনা, রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা ও নোয়াখালী। গতকালও বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২০০ গ্রেফতার হয়েছে।
আমাদের রংপুর সংবাদদাতা জানান, গত বৃহস্পতিবার রংপুর বিভাগে ৯৮ জন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীসহ মোট ৩০৮ জন গ্রেফতার হয়েছেন। পুলিশের এসআই শরিফুল ইসলাম বলেছেন, জামায়াত-শিবিরের বাইরে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা রয়েছে। গতকাল শুক্রবার আটজন শিবির কর্মীসহ ৬২ জন গ্রেফতার হয়েছেন। তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন নিরপরাধ মানুষ। পুলিশ তাদের নানা অজুহাতে গ্রেফতার করেছে।
আমাদের রাজশাহী সংবাদদাতা বলেছেন, বৃহস্পতিবার গ্রেফতার হয়েছেন ৩৩ জন। দলীয় পরিচয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
আমাদের যশোর সংবাদদাতা জানিয়েছেন, দুই দিনে এই এলাকায় গ্রেফতার হয়েছেন মোট ২৭ জন। স্থানীয় সূত্র জানায়, এই এলাকায় গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অনেকেই আছেন নিরপরাধ মানুষ। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে অনেকের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। যারা অর্থ দিতে পারেননি এমন অনেক নিরপরাধ মানুষকে পুলিশ আদালতে পাঠিয়েছে। জানা গেছে ঝিকরগাছায় মো: শাফী নামে এক যুবককে পুলিশ আদালতে পাঠিয়েছে। তিনি কৃষিকাজ করেন। পুলিশ তার কাছে টাকা চেয়ে ব্যর্থ হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। অপর এক মাদরাসা শিক্ষকের কাছ থেকে ১৮ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দিয়েছে। আরেক হাফেজকে ছেড়ে দিয়েছে প্রভাবশালী এক ব্যক্তির ফোনে।
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানিয়েছেন, গত তিন দিনে অর্ধ শতাধিক গ্রেফতার হয়েছেন। যার মধ্যে ৩৬ জনই সাধারণ মানুষ, যাদের রাজনীতির সাথে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এখনো সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চলছে। এভাবেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় জামায়াতের কর্মসূচিকে ঘিরে চলছে গ্রেফতার অভিযান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশের টার্গেট সাধারণ মানুষ। যাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। এসব মানুষকে আটক করে দেনদরবার করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। টাকা দিতে না চাইলে তাদের বিভিন্ন পেন্ডিং মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন করা হচ্ছে।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া এবং এর প্রতিবাদে ঘোষিত কর্মসূচিকে সামনে রেখে বরিশাল পুলিশ ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছে। জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কড়া নজরদারি এবং বেপরোয়া অভিযান অব্যাহত রেখেছে। গত তিন দিনে বরিশাল মহানগর ও জেলার কমপে শহস্রাধিক নেতাকর্মীর বাসাবাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ ও র্যাব। এ সময় তারা জামায়াত-শিবিরের ১১ নেতাকর্মীসহ নিরীহ অনেককে গ্রেফতার করেছে। জামায়াতের দেয়া তথ্য মতে বরিশাল মহানগর থেকে পাঁচজন এবং জেলার বিভ্ন্নি থানা থেকে সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপর দিকে পুলিশের দেয়া তথ্যের আলোকে গ্রেফতার সংখ্যা বলা হয়েছে ২৪ জন। আটক নেতাকর্মীদের পুলিশ পুরনো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কোর্টে চালান দিয়েছে। আদালত তাদের জামিন না দিয়ে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আটককৃতদের মধ্যে ছাত্র ও পরীার্থীও রয়েছে।
পুলিশের হাতে আটক নেতাকর্মীরা হলেন বরিশাল মহানগর জামায়াতের মো: আরিফুল ইসলাম, সিকদার মো: দোলন, মো: মাহাদী এবং শিবিরকর্মী আবু হোরায়রা, জেলা জামায়াতের বানারীপাড়ার জামায়াত কর্মী ইব্রাহীম, আগৈলঝাড়ার শিবির সেক্রেটারি গোলাম মোর্শেদ, হিজলা থানা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক নুরুল আমীন, মুলাদির জামায়াত কর্মী আবদুস সালাম, বাকেরগঞ্জের মো: শামীম, বাবুগঞ্জের আবুল বাশার।
এ দিকে আটককৃতদের স্বজনরা ােভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ বিনা অপরাধে বাসাবাড়ি থেকে গ্রেফতার করে যাকে-তাকে জামায়াত-শিবির বলে চালিয়ে দিচ্ছে। থানায় নিয়ে পুলিশ নানা ধরনের হয়রানিসহ হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। থানা হাজতে থাকা অবস্থায় আটককৃতরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
অপর দিকে পুলিশের প থেকে বলা হচ্ছে, পুলিশ নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে সবসময় টহল অব্যাহত রাখে। তবে জামায়াতের হরতাল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের রায়কে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে। আমরা যাদের আটক করেছি তারা কোনো-না-কোনো অভিযোগের সাথে সম্পৃক্ত। নিরপরাধ কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে না।
মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আমিনুল ইসলাম খসরু জানান, পুলিশ কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের বাসাবাড়িতে অভিযানের নামে হয়রানি করছে। মহানগর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট হেলালের বাসায় পুলিশ বারবার অভিযান চালায়, যা নিন্দনীয়। এ ছাড়া প্রতিটি নেতাকর্মীর বাসাবাড়িতে অভিযানের নামে পুলিশ যে তাণ্ডব চালায় যা নজিরবিহীন। আমরা পুলিশ প্রশাসনের এমন অগণতান্ত্রিক আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই এবং সব ধরনের হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানাই। তিনি এ সময় বিগত শান্তিপূর্ণ হরতালকে সামনে রেখে বিনা অপরাধে গ্রেফতারকৃত সব নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৮০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে নাশকতা প্রতিরোধকল্পে জামায়াত শিবিরের ১২ জন এবং বিভিন্ন মামলায় ৬৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নাশকতা প্রতিরোধে বিভিন্ন উপজেলায় পুলিশের অভিযান চলছে। এ ছাড়া গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ বিভিন্ন মামলায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিভিন্ন থানায় ৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, হরতালের প্রথম দিন থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পাঁচ জামায়াত কর্মীসহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন সদর থানা এলাকা থেকে মো: লোকমান হোসেন, রফিকুল ইসলাম, এনামুল হক, সাটুরিয়া থেকে হাজী মো: সাইফুল ইসলাম, মো: আলী হোসেন, দৌলতপুর এলাকা থেকে আবদুল মান্নান ও বজলুর রশিদ।
জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন বলেন, সম্পূনণ রাজনৈতিক কারণে এবং হয়রানির উদ্দেশ্যেই এ মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা জানান, কমলনগরে মো: ইস্রাফিল নামে জামায়াতের এক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ভোরে পুলিশ উপজেলার পাটোয়ারীরহাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ইস্রাফিল উপজেলার পাটোয়ারীরহাট ইউনিয়ন জামায়াতের কর্মী।
কমলনগর থানার ওসি মো: হুমায়ূন কবির জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত বছরের আগস্ট মাসে হরতাল চলাকালে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তিনি ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। এ ছাড়া হরতাল-অবরোধে নাশকতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে তিনি জানান।
রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে হরতালে পিকেটিংয়ের সময় পুলিশ জামায়াতের ইউনিয়ন সেক্রেটারি ও শিবিরকর্মীসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলেন আ: সালাম, জহুরুল ইসলাম, ফারুক ও রায়হান বিন সোলায়মান।
মনিরামপুর (যশোর) সংবাদদাতা জানান, মনিরামপুরে নাশকতার অভিযোগে জামায়াত-শিবিরের ১২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে যশোর শহর ও মনিরামপুর থেকে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা হলো আব্দুস সালাম, নজরুল ইসলাম, মোহম্মদ জিন্নাহ, মুস্তাকিন হোসেন, রফিকুল ইসলাম, রাজবাড়ীয়া গ্রামের আজগর আলী, শাহাজান আলী, জাহাঙ্গীর হোসেন, রেজাউল করিম, নাসির উদ্দীন, জুয়েল হোসেন ও সাদ্দাম হোসেন। তাদের বাড়ি উপজেলার এড়েন্দা, ইত্যা, রাজবাড়ীয়া ও দেবিদাসপুর গ্রামে। মনিরামপুর থানার ওসি মোল্লা খবির আহমেদ জানান, নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে।
No comments