লন্ডন প্রবাসী দুই কোকিলকণ্ঠি by ফখরুল আলম
গত দু’দশকে ব্রিটেনের বাঙালি নারীর অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বাঙালি নারীরা যে বিশ্বের সব জায়গার কোথাও পিছিয়ে নেই তা স্পষ্ট। বাঙালি নারী অনেক বাধা, প্রতিবন্ধকতা আর পাশ্চাত্যের সব কুসংস্কার ডিঙ্গিয়ে আজ বিশ্বের সব প্রান্তেই দৃঢ় মনোবলের সঙ্গে এগিয়ে চলেছেন। যার প্রমাণ মেলে ব্রিটেনের বাঙালি নারীদের আকাশ ছোঁয়া সফলতা দেখে। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে শুরু করে বিলেতের সর্বক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহণ আর আকাশ ছোঁয়া সফলতা যা রীতিমতো অন্য কমিউনিটির মধ্যে প্রভাব ফেলছে।
বিলেতের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বাঙালি কমিউনিটির মাঝে দিন দিন বাংলা গানের কদর বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বিয়েশাদি থেকে শুরু করে যে কোনো সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিনোদনের অন্যতম উৎস হল সঙ্গীত। লন্ডন শহরসহ ব্রিটেনের বিভিন্ন ছোট-বড় সবক’টি শহরের প্রবাসী বাঙালি কমিউনিটির মানুষজনের নিত্যদিনের আনন্দের সঙ্গী হলেন ওই শিল্পীরা। আর এই শিল্পীরা সঙ্গীত গেয়ে যারা প্রবাসীদের নিজ দেশের ঐতিহ্য, শেকড় সন্ধান আর নাড়ির টানের তৃপ্তি দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের নিয়েই আমার আজকের এই প্রতিবেদন।
নূরজাহান শিল্পী
বিলেতের তরুণ প্রজন্মের প্রতিভা নূরজাহান শিল্পী। প্রবাসের মাটিকে অল্প কয়েক বছরেই জয় করে নিয়েছেন সঙ্গীত চর্চায়। আজকের বিলেতের মাটিতে হাজার হাজার দর্শককে মাতিয়ে তুলতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছেন তিনি। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন পাইলট হয়ে আকাশে আকাশে উড়ে বেড়ানো, আর শিক্ষাজীবনে মা-বাবার স্বপ্ন একজন সফল প্রকৌশলী হয়ে দেশ এবং জনগণের সেবা করে যাবেন। কিন্তু এক সময় সুরের সঙ্গে দর্শক আর শ্রোতাদের অক্লান্ত ভালোবাসার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে নূরজাহান শিল্পী নিজেই একজন আদর্শ সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করেছেন।।
খুব অল্প সময়ে নূরজাহান প্রবাসে এসে বিলেতের বিভিন্ন কমিউনিটির সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে জাগিয়ে তুলেছেন। আজীবন গানের মধ্যেই তিনি বেঁচে থাকতে চান। তার গানের সুরে সুরে মানুষ ভেসে যায় আবেগে। বাবা-মা আদর করে সেই ছোট্টবেলা থেকেই নাম রেখেছিলেন শিল্পী।
শিল্পীর পিতা এমএ বারী ঢাকা গাজীপুরের জয়দেবপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। ২ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে নূরজাহান এক ভাইকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে বসবাস করছেন। নানাবাড়ির সবাই ছিলেন সাংস্কৃতিক জগতের মানুষ; মূলত তাদের অনুপ্রেরণা আর মা-বাবার উৎসাহই আজকের সফলতা নূরজাহানের। বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে তিনি ৩ বছরের কোর্স শেষে পুরোদমে সঙ্গীত জগতে পদার্পণ করেন।
নজরুল সঙ্গীত ও আধুনিক গান তার প্রিয় হলেও বিলেতে এসে দর্শক-শ্রোতাদের চাহিদায় আধুনিক ফোক গান আর বাউল গানের প্রতি তার ঝোক বেড়েছে। ৬/৭ বছর থেকেই তিনি গানে তালিম শুরু করেন। তার ওস্তাদ ছিলেন কৃতিশচন্দ দাশ। বিলেতে তিনি বাংলা গানের পাশাপাশি হিন্দি গান করে থাকেন। বাঙালি কমিউনিটি ছাড়াও পাকিস্তানি এবং ইন্ডিয়ান কমিউনিটিতে তার গান খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
নূরজাহান শিল্পীর কয়েকটি অ্যালবাম রয়েছে- এর মধ্যে ‘সময় সুযোগ’ এবং লন্ডনে মিক্স অ্যালবাম ‘টেমস নদীর তীরে’। বিলেতের আগামী প্রজন্মের কাছে বাংলা গান আর বাংলা সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে তিনি সঙ্গীত স্কুল তৈরি করবেন। নতুনরা আসবেন গানের জগতে এ জন্য তাদের উৎসাহ দিতে হবে। তবেই আগামী প্রজন্ম বিলেতে ধরে রাখতে পারবে বাংলা গানকে।
রৌশনআরা মনি
ব্রিটেনের ৩ দশকের বাংলা সঙ্গীতের ইতিহাস তৈরি করা একটি নাম রৌশন আরা মনি। শৈশব থেকে নিজ ইচ্ছা আর বোনের একমাত্র উৎসাহের মাধ্যমে রৌশন আরা মনি নিজকে সৃষ্টি করেছেন একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে। তার রয়েছে গায়কি কণ্ঠ। কোকিল কণ্ঠের অধিকারী বলে প্রবাসের মাঠিতে খুব বেশি পরিচিত তিনি। শুধু গানের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। জনপ্রিয় উপস্থাপিকা হিসেবে পরিচিতি রয়েছে বিলেতজুড়ে। কবিতা, গান, নাটকসহ বিলেতের সাহিত্য ও সংস্কৃতির সর্বক্ষেত্রেই রৌশন আরা মনির পদচারণা চোখে পাড়ার মতো।
সানরাইজ রেডিও ( ইন্ডিয়ান রেডিও)-এর বাংলা বিভাগের উপস্থাপক হিসেবে দীর্ঘদিন তিনি কাজ করেছেন। মূলত লন্ডনের আজকের সাংস্কৃতি অঙ্গনকে যারা খুব কষ্ট করে উর্বর করেছেন তাদের কয়েকজনের মধ্যে রৌশন আরা মনি একজন। তার একক গানের সিডি ‘নিঝুম রাত’ এক সময় জনপ্রিয় ছিল ব্রিটেনজুড়ে। মঞ্চ নাটক করেছেন এর মধ্যে ‘ক্ষত বিক্ষত’ ছিল দর্শকপ্রিয়। রেডিওতে রৌশন আরা মনির অনেক নাটক রয়েছে।
সঙ্গীত জীবনে রৌশন আরা মনির সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে ১৯৮৬ সালে ‘সেইভ দ্য চিল্ডেন’-এর আয়োজনে ৭০টি দেশের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বাংলায় গান করা। তাছাড়া তিনি ২০০৯ সালে বাউল সম্রাট শাহ্ আবদুল করিমের অসুস্থতার জন্য গান গেয়ে ফান্ড তৈরি করেছিলেন ১০ হাজার পাউন্ড। চ্যানেল এস-এর আয়োজনে এ ফান্ডের সব অর্থ বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীসহ সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের হাতে শাহ্ আবদুল করিমের চিকিৎসার জন্য দান করা হয়। রৌশন আরা মনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড সঙ্গীতশিল্পী আজম খানের চিকিৎসার জন্য গান গেয়ে ফান্ড তৈরি করেন প্রায় ২ লাখ টাকা। সেই সময় আজম খানের মেয়ের হাতে তুলে দেন চিকিৎসার জন্য। শিল্পীদের চিকিৎসাসেবার জন্য গান গেয়ে ব্রিটেন থেকে টাকা তুলে দিতে পারায় তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেন।
রৌশন আরা মনি মনে করেন, বিলেতে আরও ভালো মানের শিল্পীর প্রয়োজন রয়েছে। নতুন নতুন শিল্পীর সৃষ্টি হোক, তারাই আগামীতে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ধরে রাখবে। এটা তার নিজের জন্যই নয়, এই প্রবাসে তার দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির দীর্ঘ পথকে করবে পরিচিত। তার স্বপ্ন আগামীতে বাংলাদেশের পথশিশুদের নিয়ে কাজ করবেন।
ফখরুল আলম, লিভারপুল থেকে
বিলেতের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বাঙালি কমিউনিটির মাঝে দিন দিন বাংলা গানের কদর বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বিয়েশাদি থেকে শুরু করে যে কোনো সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিনোদনের অন্যতম উৎস হল সঙ্গীত। লন্ডন শহরসহ ব্রিটেনের বিভিন্ন ছোট-বড় সবক’টি শহরের প্রবাসী বাঙালি কমিউনিটির মানুষজনের নিত্যদিনের আনন্দের সঙ্গী হলেন ওই শিল্পীরা। আর এই শিল্পীরা সঙ্গীত গেয়ে যারা প্রবাসীদের নিজ দেশের ঐতিহ্য, শেকড় সন্ধান আর নাড়ির টানের তৃপ্তি দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের নিয়েই আমার আজকের এই প্রতিবেদন।
নূরজাহান শিল্পী
বিলেতের তরুণ প্রজন্মের প্রতিভা নূরজাহান শিল্পী। প্রবাসের মাটিকে অল্প কয়েক বছরেই জয় করে নিয়েছেন সঙ্গীত চর্চায়। আজকের বিলেতের মাটিতে হাজার হাজার দর্শককে মাতিয়ে তুলতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছেন তিনি। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন পাইলট হয়ে আকাশে আকাশে উড়ে বেড়ানো, আর শিক্ষাজীবনে মা-বাবার স্বপ্ন একজন সফল প্রকৌশলী হয়ে দেশ এবং জনগণের সেবা করে যাবেন। কিন্তু এক সময় সুরের সঙ্গে দর্শক আর শ্রোতাদের অক্লান্ত ভালোবাসার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে নূরজাহান শিল্পী নিজেই একজন আদর্শ সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করেছেন।।
খুব অল্প সময়ে নূরজাহান প্রবাসে এসে বিলেতের বিভিন্ন কমিউনিটির সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে জাগিয়ে তুলেছেন। আজীবন গানের মধ্যেই তিনি বেঁচে থাকতে চান। তার গানের সুরে সুরে মানুষ ভেসে যায় আবেগে। বাবা-মা আদর করে সেই ছোট্টবেলা থেকেই নাম রেখেছিলেন শিল্পী।
শিল্পীর পিতা এমএ বারী ঢাকা গাজীপুরের জয়দেবপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। ২ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে নূরজাহান এক ভাইকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে বসবাস করছেন। নানাবাড়ির সবাই ছিলেন সাংস্কৃতিক জগতের মানুষ; মূলত তাদের অনুপ্রেরণা আর মা-বাবার উৎসাহই আজকের সফলতা নূরজাহানের। বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে তিনি ৩ বছরের কোর্স শেষে পুরোদমে সঙ্গীত জগতে পদার্পণ করেন।
নজরুল সঙ্গীত ও আধুনিক গান তার প্রিয় হলেও বিলেতে এসে দর্শক-শ্রোতাদের চাহিদায় আধুনিক ফোক গান আর বাউল গানের প্রতি তার ঝোক বেড়েছে। ৬/৭ বছর থেকেই তিনি গানে তালিম শুরু করেন। তার ওস্তাদ ছিলেন কৃতিশচন্দ দাশ। বিলেতে তিনি বাংলা গানের পাশাপাশি হিন্দি গান করে থাকেন। বাঙালি কমিউনিটি ছাড়াও পাকিস্তানি এবং ইন্ডিয়ান কমিউনিটিতে তার গান খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
নূরজাহান শিল্পীর কয়েকটি অ্যালবাম রয়েছে- এর মধ্যে ‘সময় সুযোগ’ এবং লন্ডনে মিক্স অ্যালবাম ‘টেমস নদীর তীরে’। বিলেতের আগামী প্রজন্মের কাছে বাংলা গান আর বাংলা সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে তিনি সঙ্গীত স্কুল তৈরি করবেন। নতুনরা আসবেন গানের জগতে এ জন্য তাদের উৎসাহ দিতে হবে। তবেই আগামী প্রজন্ম বিলেতে ধরে রাখতে পারবে বাংলা গানকে।
রৌশনআরা মনি
ব্রিটেনের ৩ দশকের বাংলা সঙ্গীতের ইতিহাস তৈরি করা একটি নাম রৌশন আরা মনি। শৈশব থেকে নিজ ইচ্ছা আর বোনের একমাত্র উৎসাহের মাধ্যমে রৌশন আরা মনি নিজকে সৃষ্টি করেছেন একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে। তার রয়েছে গায়কি কণ্ঠ। কোকিল কণ্ঠের অধিকারী বলে প্রবাসের মাঠিতে খুব বেশি পরিচিত তিনি। শুধু গানের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। জনপ্রিয় উপস্থাপিকা হিসেবে পরিচিতি রয়েছে বিলেতজুড়ে। কবিতা, গান, নাটকসহ বিলেতের সাহিত্য ও সংস্কৃতির সর্বক্ষেত্রেই রৌশন আরা মনির পদচারণা চোখে পাড়ার মতো।
সানরাইজ রেডিও ( ইন্ডিয়ান রেডিও)-এর বাংলা বিভাগের উপস্থাপক হিসেবে দীর্ঘদিন তিনি কাজ করেছেন। মূলত লন্ডনের আজকের সাংস্কৃতি অঙ্গনকে যারা খুব কষ্ট করে উর্বর করেছেন তাদের কয়েকজনের মধ্যে রৌশন আরা মনি একজন। তার একক গানের সিডি ‘নিঝুম রাত’ এক সময় জনপ্রিয় ছিল ব্রিটেনজুড়ে। মঞ্চ নাটক করেছেন এর মধ্যে ‘ক্ষত বিক্ষত’ ছিল দর্শকপ্রিয়। রেডিওতে রৌশন আরা মনির অনেক নাটক রয়েছে।
সঙ্গীত জীবনে রৌশন আরা মনির সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে ১৯৮৬ সালে ‘সেইভ দ্য চিল্ডেন’-এর আয়োজনে ৭০টি দেশের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বাংলায় গান করা। তাছাড়া তিনি ২০০৯ সালে বাউল সম্রাট শাহ্ আবদুল করিমের অসুস্থতার জন্য গান গেয়ে ফান্ড তৈরি করেছিলেন ১০ হাজার পাউন্ড। চ্যানেল এস-এর আয়োজনে এ ফান্ডের সব অর্থ বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীসহ সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের হাতে শাহ্ আবদুল করিমের চিকিৎসার জন্য দান করা হয়। রৌশন আরা মনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড সঙ্গীতশিল্পী আজম খানের চিকিৎসার জন্য গান গেয়ে ফান্ড তৈরি করেন প্রায় ২ লাখ টাকা। সেই সময় আজম খানের মেয়ের হাতে তুলে দেন চিকিৎসার জন্য। শিল্পীদের চিকিৎসাসেবার জন্য গান গেয়ে ব্রিটেন থেকে টাকা তুলে দিতে পারায় তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেন।
রৌশন আরা মনি মনে করেন, বিলেতে আরও ভালো মানের শিল্পীর প্রয়োজন রয়েছে। নতুন নতুন শিল্পীর সৃষ্টি হোক, তারাই আগামীতে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ধরে রাখবে। এটা তার নিজের জন্যই নয়, এই প্রবাসে তার দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির দীর্ঘ পথকে করবে পরিচিত। তার স্বপ্ন আগামীতে বাংলাদেশের পথশিশুদের নিয়ে কাজ করবেন।
ফখরুল আলম, লিভারপুল থেকে
No comments