বিনিয়োগে ১১ বাধা by মিজান চৌধুরী
দেশে বিনিয়োগের চাকা থমকে আছে এগারো প্রতিবন্ধকতার কারণে। এসব বাধার কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। দেশী বিনিয়োগও বাড়ছে না। বিনিয়োগ না থাকায় কর্মসংস্থানের পথও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। তবু এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বড় ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও। তিনি বলেছেন, টাকা পাচারের কারণে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমছে। বিদেশে টাকা পাচারের সব ধরনের পথ বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ না পাওয়া, ঋণের অপ্রাপ্যতা, ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চ হার, অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি না পাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ব্যবসা শুরু, কর প্রদান, বিদেশে টাকা পাচার, বৈদেশিক বাণিজ্য ও সম্পত্তি নিবন্ধন জটিলতা এবং চুক্তির বাস্তবায়ন জটিলতার কারণে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, বিনিয়োগের জন্য সর্বপ্রথম দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। কিন্তু নতুন করে ফের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা শুরু হয়েছে। ফলে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক, আইএফসির রিপোর্টে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থার সূচক কমেছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায়ও বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সূচক ভালো নয়।
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগের জন্য নীতিগতভাবে উদারীকরণ করলে হবে না। বিনিয়োগের জন্য এটি কতটুকু সহায়কা তা বিবেচনা করতে হবে।
বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ : বিনিয়োগের অন্যতম সূচক বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা (আইএফসি) তাদের গবেষণা রিপোর্টে বলেছে, বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অবস্থান বাংলাদেশের। বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এত হয়রানি ও বিলম্ব হয় না। দেশের একজন উদ্যোক্তাকে বিদ্যুতের সংযোগ পেতে ৯টি স্থানে ধরনা দিতে হয়। বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে বাংলাদেশে।
ব্যাংক ঋণের অপ্রাপ্যতা : উদ্যোক্তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী ঋণ পাচ্ছেন না। ব্যাংক ঋণ পেতে তারা অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন। ব্যাংক ঋণ না দেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় ঋণের প্রবৃদ্ধি থেকে। বিনিয়োগ বাড়লে ঋণের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হয়। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়, ঋণের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়েছে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
ব্যাংকাররা জানান, নতুনভাবে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না। বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের দিকে আসছে না। ফলে ব্যাংক ঋণে এই ঋণাত্মক ধারা দেখা দিয়েছে।
ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ : ব্যাংক ঋণের অপ্রাপ্যতার সঙ্গে যোগ হয়েছে ঋণের উচ্চ সুদ। এই অতিমাত্রা সুদের হার বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। এই উচ্চ সুদ নিয়ে বিনিয়োগ করে উদ্যোক্তারা লাভবান হচ্ছেন না। ফলে নতুন করে ব্যাংক ঋণ নিয়ে বিনিয়োগে যাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা।
দেশবন্ধু সুগার মিলের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা যুগান্তরকে বলেন, দেশে কোনো শিল্প ব্যাংক নেই। ফলে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ না দিলে শিল্পায়নে বিনিয়োগ হবে না। কর্মসংস্থানও হবে না। এর ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি থমকে দাঁড়াবে। টেকসই জিডিপির জন্য সিঙ্গেল ডিজিটে সুদের হার নির্ধারণ, জমি, গ্যাস ও বিদ্যুতের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা : বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় বাধা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। গত বছর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিনিয়োগ কমেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের রায়কে কেন্দ্র করে চলতি বছর আবার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বিএনপির পক্ষ থেকে আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ফলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ফের বিনিয়োগকারীদের মাঝে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট কাজী আকরাম হোসেন এক বার্তায় বলেছেন, লাগাতার হরতালসহ যে কোনো নেতিবাচক কার্যক্রম দেশের ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলবে এবং বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন।
টাকা পাচার : বিদেশে টাকা পাচারের পথ তৈরি হওয়ায় বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমছে- এমন আভাস দিয়েছেন খোদ অর্থমন্ত্রী। সরকার মনে করছে, বিশ্বের অনেক দেশে টাকা চলে যাওয়ায় বিনিয়োগ বাড়ছে না। গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) তথ্যমতে, ২০১১ সালে ১১৬ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১০ সালে ২১৯ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০০৯ সালে বিদেশে অর্থ পাচার হয়েছে ১০৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এছাড়া ২০০৮ সালে ১৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার, ২০০৭ সালে ২৫৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, ২০০৬ সালে ২৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার ও ২০০৫ সালে ৬৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার সমপরিমাণের অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়েছে।
ব্যবসা সংক্রান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে বিলম্ব : ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশে গড়ে ৪১টি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয় এবং এক হাজার ৪৪২ দিন পর্যন্ত লেগে যায়। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে।
সম্পত্তি নিবন্ধন : দেশে কোনো উদ্যোক্তা যদি সম্পত্তি নিবন্ধন করতে চান, তাহলে তাকে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই নিবন্ধন করতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আর অন্য কোনো দেশে এ ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয় না। একজন উদ্যোক্তার সম্পত্তি নিবন্ধন করতে আটটি ধাপ সম্পন্ন করতে হয়। এতে সময় লাগে ১৪৪ দিন।
নতুন ব্যবসা শুরুতে জটিলতা : নতুন ব্যবসা শুরু করার মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ বাংলাদেশে খুবই খারাপ। প্রতিষ্ঠানের নাম যাচাই-বাছাই করা, রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে নিবন্ধন, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) নিবন্ধন, ব্যাংক হিসাব খোলা, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নেয়া, লাইসেন্স নেয়াসহ ৯টি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এতে সময় লাগে গড়ে সাড়ে ১৯ দিন।
বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট : বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ভালো হয়নি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের অবস্থা ভালো হলেও বাংলাদেশের খুব বেশি উন্নতি হয়নি। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা (ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন-আইএফসি) বৈশ্বিক সূচক তা প্রকাশ করেছে। তাতে ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৩তম। সেই হিসাবে বৈশ্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান তিন ধাপ পিছিয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, পলিসিগত দিক থেকে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা সহজ আছে। কিন্তু দুর্বল অবকাঠামো, ব্যাংক ঋণের সুদ, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে বিনিয়োগ হচ্ছে না।
বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও। তিনি বলেছেন, টাকা পাচারের কারণে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমছে। বিদেশে টাকা পাচারের সব ধরনের পথ বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ না পাওয়া, ঋণের অপ্রাপ্যতা, ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চ হার, অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি না পাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ব্যবসা শুরু, কর প্রদান, বিদেশে টাকা পাচার, বৈদেশিক বাণিজ্য ও সম্পত্তি নিবন্ধন জটিলতা এবং চুক্তির বাস্তবায়ন জটিলতার কারণে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, বিনিয়োগের জন্য সর্বপ্রথম দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। কিন্তু নতুন করে ফের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা শুরু হয়েছে। ফলে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক, আইএফসির রিপোর্টে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থার সূচক কমেছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায়ও বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সূচক ভালো নয়।
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগের জন্য নীতিগতভাবে উদারীকরণ করলে হবে না। বিনিয়োগের জন্য এটি কতটুকু সহায়কা তা বিবেচনা করতে হবে।
বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ : বিনিয়োগের অন্যতম সূচক বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা (আইএফসি) তাদের গবেষণা রিপোর্টে বলেছে, বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অবস্থান বাংলাদেশের। বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এত হয়রানি ও বিলম্ব হয় না। দেশের একজন উদ্যোক্তাকে বিদ্যুতের সংযোগ পেতে ৯টি স্থানে ধরনা দিতে হয়। বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে বাংলাদেশে।
ব্যাংক ঋণের অপ্রাপ্যতা : উদ্যোক্তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী ঋণ পাচ্ছেন না। ব্যাংক ঋণ পেতে তারা অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন। ব্যাংক ঋণ না দেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় ঋণের প্রবৃদ্ধি থেকে। বিনিয়োগ বাড়লে ঋণের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হয়। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়, ঋণের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়েছে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
ব্যাংকাররা জানান, নতুনভাবে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না। বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের দিকে আসছে না। ফলে ব্যাংক ঋণে এই ঋণাত্মক ধারা দেখা দিয়েছে।
ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ : ব্যাংক ঋণের অপ্রাপ্যতার সঙ্গে যোগ হয়েছে ঋণের উচ্চ সুদ। এই অতিমাত্রা সুদের হার বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। এই উচ্চ সুদ নিয়ে বিনিয়োগ করে উদ্যোক্তারা লাভবান হচ্ছেন না। ফলে নতুন করে ব্যাংক ঋণ নিয়ে বিনিয়োগে যাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা।
দেশবন্ধু সুগার মিলের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা যুগান্তরকে বলেন, দেশে কোনো শিল্প ব্যাংক নেই। ফলে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ না দিলে শিল্পায়নে বিনিয়োগ হবে না। কর্মসংস্থানও হবে না। এর ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি থমকে দাঁড়াবে। টেকসই জিডিপির জন্য সিঙ্গেল ডিজিটে সুদের হার নির্ধারণ, জমি, গ্যাস ও বিদ্যুতের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা : বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় বাধা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। গত বছর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিনিয়োগ কমেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের রায়কে কেন্দ্র করে চলতি বছর আবার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বিএনপির পক্ষ থেকে আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ফলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ফের বিনিয়োগকারীদের মাঝে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট কাজী আকরাম হোসেন এক বার্তায় বলেছেন, লাগাতার হরতালসহ যে কোনো নেতিবাচক কার্যক্রম দেশের ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলবে এবং বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন।
টাকা পাচার : বিদেশে টাকা পাচারের পথ তৈরি হওয়ায় বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমছে- এমন আভাস দিয়েছেন খোদ অর্থমন্ত্রী। সরকার মনে করছে, বিশ্বের অনেক দেশে টাকা চলে যাওয়ায় বিনিয়োগ বাড়ছে না। গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) তথ্যমতে, ২০১১ সালে ১১৬ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১০ সালে ২১৯ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০০৯ সালে বিদেশে অর্থ পাচার হয়েছে ১০৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এছাড়া ২০০৮ সালে ১৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার, ২০০৭ সালে ২৫৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, ২০০৬ সালে ২৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার ও ২০০৫ সালে ৬৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার সমপরিমাণের অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়েছে।
ব্যবসা সংক্রান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে বিলম্ব : ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশে গড়ে ৪১টি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয় এবং এক হাজার ৪৪২ দিন পর্যন্ত লেগে যায়। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে।
সম্পত্তি নিবন্ধন : দেশে কোনো উদ্যোক্তা যদি সম্পত্তি নিবন্ধন করতে চান, তাহলে তাকে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই নিবন্ধন করতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আর অন্য কোনো দেশে এ ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয় না। একজন উদ্যোক্তার সম্পত্তি নিবন্ধন করতে আটটি ধাপ সম্পন্ন করতে হয়। এতে সময় লাগে ১৪৪ দিন।
নতুন ব্যবসা শুরুতে জটিলতা : নতুন ব্যবসা শুরু করার মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ বাংলাদেশে খুবই খারাপ। প্রতিষ্ঠানের নাম যাচাই-বাছাই করা, রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে নিবন্ধন, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) নিবন্ধন, ব্যাংক হিসাব খোলা, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নেয়া, লাইসেন্স নেয়াসহ ৯টি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এতে সময় লাগে গড়ে সাড়ে ১৯ দিন।
বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট : বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ভালো হয়নি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের অবস্থা ভালো হলেও বাংলাদেশের খুব বেশি উন্নতি হয়নি। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা (ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন-আইএফসি) বৈশ্বিক সূচক তা প্রকাশ করেছে। তাতে ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৩তম। সেই হিসাবে বৈশ্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান তিন ধাপ পিছিয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, পলিসিগত দিক থেকে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা সহজ আছে। কিন্তু দুর্বল অবকাঠামো, ব্যাংক ঋণের সুদ, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে বিনিয়োগ হচ্ছে না।
No comments