চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীদের হাতে একে-৪৭ একে-২২ by মহিউদ্দীন জুয়েল
একে-৪৭, একে-২২ কিংবা এম-১৬। এসব
শক্তিশালী মারণাস্ত্র এখন সন্ত্রাসীদের হাতে। খোদ পুলিশের অনেক সদস্যই
দেখেননি এসব অস্ত্র। অথচ তা এখন হাতবদল হয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে অপহরণ, খুন,
ছিনতাইসহ লোকজনকে জিম্মি করার কাজে। চট্টগ্রামে গত ৮ মাসে ধরা পড়া ৪৮টি
অবৈধ অস্ত্র নিয়ে পাওয়া গেছে এমনি চাঞ্চল্যকর তথ্য।
কোথা থেকে আসছে এসব অস্ত্র তার কোন হদিস বের করতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে সম্প্রতি নগর পুলিশ কমিশনার দায়িত্ব নিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার কমাবেন। আর তাই শহরজুড়ে বেড়েছে তল্লাশি। সূত্র জানায়, সন্ত্রাসীদের হাতে অবৈধ অস্ত্র ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন পুলিশ প্রশাসন। অভ্যন্তরীণ সভায়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে তাদের মধ্যে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে একনলা, দোনলা বন্দুক, রিভলবার ও শটগানও রয়েছে।
কোথা থেকে আসছে এসব অস্ত্র তার কোন হদিস বের করতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে সম্প্রতি নগর পুলিশ কমিশনার দায়িত্ব নিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার কমাবেন। আর তাই শহরজুড়ে বেড়েছে তল্লাশি। সূত্র জানায়, সন্ত্রাসীদের হাতে অবৈধ অস্ত্র ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন পুলিশ প্রশাসন। অভ্যন্তরীণ সভায়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে তাদের মধ্যে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে একনলা, দোনলা বন্দুক, রিভলবার ও শটগানও রয়েছে।
গত ২২শে সেপ্টেম্বর রাতে নগরীর বায়েজিদ থানা পুলিশ অস্ত্রসহ আটক করে মনজুর আলম নামের এক ব্যক্তিকে। এ সময় তার কাছ থেকে পাওয়া যায় আমেরিকার তৈরী ৭.৬৫ বোরের পিস্তলসহ গুলি। ২০শে সেপ্টেম্বর দুপুরে বায়েজিদ এলাকা থেকে ধরা হয় মোস্তাক নামের আরও এক অস্ত্র ব্যবসায়ীকে। পরে তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৩টি এলজি। এ সময় আটককৃত ব্যক্তি গাড়ি চালিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, নিজের শরীরের সঙ্গে অস্ত্রগুলো বেঁধে তিনি কুমিল্লায় যাচ্ছিলেন। সেখানে এক কাঠ ব্যবসায়ীর কাছে এগুলো বিক্রি করার কথা ছিল।
গত ১০ই সেপ্টেম্বর শাহ আমানত সেতু এলাকায় পাওয়া যায় আরও দু’টি এলজি। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হন আবদুর রহমান। তার গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের মহেশখালীতে। একই ভাবে আগস্ট মাসে দু’টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয় আবুল কাশেমের কাছ থেকে। সে ধরা পড়ে কর্ণফুলী থানা পুলিশের হাতে। বেশ কয়েক মাস আগে সিআরবি এলাকায় অস্ত্র বিক্রির সময় ধরা পড়ে রাশেদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি।
২০শে জুলাই চট্টগ্রামের হাটহাজারীর লাঙ্গলমোড়া এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় গোলাগুলির এক পর্যায়ে পাওয়া যায় এসএমজি, দু’টি ম্যাগাজিন ও গুলি। আটক করা হয় দু’জনকে। ফটিকছড়ির সরকারদলীয় প্রয়াত সাংসদ রফিকুল আনোয়ারের ভাইপো ফাহাদুল আনোয়ারের কাছ থেকে পুলিশ উদ্ধার করে বেশ কয়েকটি অস্ত্র। গ্রেপ্তারের পরপরই ফটিকছড়ির নানুপুরে তাকে নিয়ে অভিযানে নামেন তারা। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গ্রামের বাড়ির গোপন জায়গা থেকে পাওয়া যায় বিদেশী দোনলা বন্দুক। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, তার কাছে তিনটি অস্ত্র ছিল। চলতি বছরের গত ১লা আগস্ট তিন রাউন্ড গুলি ও একটি পিস্তল ফেলে সে পালিয়ে যায়। তা উদ্ধার করে ফটিকছড়ি থানা পুলিশ। এসব অস্ত্র সে কিনতো চকরিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুল হক সাঈদীর কাছ থেকে। সাঈদী কিছুদিন আগে ভুয়া কাগজ দিয়ে অস্ত্র কিনতে গিয়ে ঢাকায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মঈন উদ্দিন বলেন, ফাহাদের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা বিচারাধীন। গত ১৬ই আগস্ট অক্সিজেন এলাকা থেকে একটি শটগান ও মাইক্রোবাসসহ তার তিন বন্ধু পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। তবে ওই গাড়ি থেকে সে পালিয়ে যায়। অস্ত্র হাতে পেলে সে যে কোন সময় অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে। অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।
ফটিকছড়ির এলাকাবাসী জানান, সর্বশেষ এক ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে গুলি করতে গিয়ে ফেঁসে যায় সে। আর এ ঘটনার পর থেকে সে পলাতক ছিল। পুলিশ ওই সময় উদ্ধার করে তার ফেলে যাওয়া অস্ত্রটি। ৫ বছর ধরে তার বিরুদ্ধে সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগে তাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে পত্রিকার প্রথম পাতায় ধরিয়ে দেয়ার বিজ্ঞাপন ছাপান ফটিকছড়ির ভুক্তভোগীরা। ফাহাদ এলাকায় মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এ ছাড়া ফটিকছড়ির সাধারণ মানুষের পুকুর ও দিঘির মাছ লুটেও নেতৃত্ব দেয় সে। ঈদের আগে ফাহাদুল আনোয়ার প্রবাসী ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, দানবীয় শিল্পপতি এবং দুবাই বঙ্গবন্ধু পরিষদের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরুন্নবী রোশনের কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না পেয়ে ঈদের পরে ফটিকছড়ির নানুপুর জিলানী মসজিদের সামনে নুরুন্নবী রোশনকে গুলি করতে উদ্যত হয়। এ সময় নুরুন্নবী রোশনের ১০ বছর বয়সী ছেলে সঙ্গে ছিল।
সূত্র জানায়, গত ৮ মাসে চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৮টি অবৈধ অস্ত্র ধরা পড়েছে। মূলত কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে আসছে এসব অস্ত্র। সেখানকার একটি সিন্ডিকেট চট্টগ্রামসহ সারা দেশের সন্ত্রাসীদের কাছে ১০,০০০ থেকে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করছে অস্ত্রগুলো। তবে এসব ঘটনার মধ্যে রাউজানের গুজরা ইউনিয়নের বড়ঠাকুরপাড়া থেকে পাওয়া একে-৪৭ রাইফেল, একটি ম্যাগাজিন ও ৫৮ রাউন্ড ৭.৬২ এমএম পিস্তলের গুলি উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বিগ্ন ছড়িয়ে পড়েছে তাদের মধ্যে।
একই ভাবে কর্ণফুলী নদীর মেরিন একাডেমি এলাকা থেকে ৪টি বিদেশী অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গুলি উদ্ধার করে কোস্টকার্ড। পরে র্যাবের দু’টি অভিযানে উদ্ধার হয় একটি সাব-মেশিন কারবাইন (এসএমসি) ও একটি একে-৪৭ রাইফেল। আর পুলিশ উদ্ধার করেছে একে-৪৭ এবং নাইন এমএম পিস্তল। সর্বশেষ চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছেন নগরীতে। পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে নতুনভাবে ছক কষছি চট্টগ্রামে। কোন অপরাধীকে এখানে অপকর্ম করতে দেবো না। ছিনতাই, খুন, রাহাজানি কিংবা অপহরণ কোন কিছুই করে কেউ পার পাবে না। নতুন সন্ত্রাসীদের নামের তালিকা দেখে তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার নিয়ে কাজ শুরু করেছি। অন্যদিকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সব সময় তৎপর রয়েছে পুলিশ। যখনি আমরা খবর পাচ্ছি তখনি আটক করছি তাদের।
No comments