এডিপি বাস্তবায়নে বেহাল দশা- ব্যর্থতা ঢাকতে আইএমইডির তথ্যের গরমিল; ‘অর্থ ব্যবহারের সক্ষমতাও কমে আসছে’ by হামিদ সরকার
দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলেও সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। অতীতের বছরগুলোর তুলনায় চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাস্তবায়নের হার মাত্র ৯ শতাংশ। উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরও গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এই হার ১১ শতাংশ দেখানো হয়েছিল। কিন্তু এবার বাস্তবায়নের হার কম হওয়ায় আগের বছরের প্রথম প্রান্তিকের হার ১ শতাংশ কমিয়ে ১০ শতাংশ দেখানো হয়েছে পরিবীণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ হিসাবে। এমনকি বিদেশী সহায়তার অর্থ ব্যয় করার পাশাপাশি স্থানীয় মুদ্রা ব্যয়ের সক্ষমতাও ক্রমে কমে আসছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তিন মাসে এডিপি বাস্তবায়নে হতাশাজনক অবস্থা বিরাজ করছে। বিশাল আকারের এডিপি করা হলেও অর্থবছরের সূচনাতেই জুলাই মাসে এটির বাস্তবায়নে করুণ অবস্থা দেখা গেছে। শুরুতেই বাস্তবায়ন হার শতভাগ করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে নানা কথা বলেছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কিন্তু বাস্তবে সেসব উদ্যোগ চোখে পড়েনি। অন্য দিকে নিজেদের ব্যর্থতা চাপা দেয়ার জন্য গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে যেখানে ১১ শতাংশ দেখানো হয়েছিল, এবার আইএমইডির প্রতিবেদনে সে হার কমিয়ে ১০ শতাংশ দেখানো হয়েছে; যাতে করে ব্যবধানটি ১ শতাংশ হয়। কিন্তু আইএমইডির প্রতিবেদনে দুই ধরনের তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হয়েছে।
২০১৩-১৪ র্অথবছরের প্রথম তিন মাসে বাস্তবায়নের হার ছিল ১১ শতাংশ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৩ শতাংশ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে ১১ শতাংশ। যখন রাজনৈতিক চরম অস্থিরতা ও সহিংসতা ছিল সে সময়েও বাস্তবায়নের গতি থাকলেও এখন স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে এডিপি বাস্তবায়ন চরম হতাশাজনক। স্থানীয় মুদ্রা ব্যয়ে করুণ অবস্থা বিরাজ করছে এ বছর। ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে স্থানীয় অর্থ ব্যবহারের হার ছিল ১৫ শতাংশ, পরের বছর ২০১২-১৩ তে সেটা কমে আসে ১৪ শতাংশে এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আরো কমে দাঁড়ায় ১২ শতাংশে। আর চলতি বছর একই সময়ে এই হার হলো মাত্র ১০ শতাংশ। তিন বছরে এই অর্থ ব্যবহারের সক্ষমতা ক্রমেই কমে আসছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্যানুযায়ী গত তিন মাসে বরাদ্দ পাওয়া সবচেয়ে বড় ১০ মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়নে বেহাল দশা বিরাজ করছে। তা ছাড়া তিন মাস পেরিয়ে গেলেও চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দকৃত কোনো অর্থই খরচ করতে পারেনি চারটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ৪৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দের অনুকূলে কোনো অর্থ ব্যয় হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনও এডিপি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে পারেনি। এমনকি এডিপি বাস্তবায়নের কাজ শুরুই করতে পারেনি তারা। এবারের প্রস্তাবিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই সর্ববৃহৎ এডিপি। জুলাই মাসে মাত্র ২ ভাগ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। সেই হিসাবে এক ধরনের হতাশা দিয়েই ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন শুরু করল। তবে ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে একই সময়ে এক শতাংশ বেশি এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরেও প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অগ্রগতি ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ। প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) অর্থব্যয় এবং এডিপির অগ্রগতির হার ছিল মাত্র ২৭ শতাংশ। এবার তার চেয়েও বেহাল অবস্থা।
এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তিন মাসে বরাদ্দের ৪৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, এটির বাস্তবায়ন হার ৩৪ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগেও এডিপি বাস্তবায়নে বেহাল চিত্র বিরাজ করছে। বৃহৎ ১০ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে মাত্র তিনটির এডিপি বাস্তবায়ন ১০ শতাংশের বেশি। অপর সাত মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন জাতীয় গড় ৯ শতাংশের সমান বা আরো কম। স্থানীয় সরকার বিভাগ সবচেয়ে বেশি ১৩ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে ব্যয় করেছে দুই হাজার ৮১ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন হার ১৬ শতাংশ। ৯ হাজার এক কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ ব্যয় করতে পেরেছে মাত্র ৭১০ কোটি টাকা। উন্নয়ন অগ্রাধিকারে সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া বিদ্যুৎ বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন তিন মাসে ৮ শতাংশ। রেলপথ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার ৬ শতাংশ।
আইএমইডির সর্বশেষ হিসাবে তিন মাসে এডিপি বাস্তবায়নে সাত হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। বিদেশী সহায়তার তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। আর সংস্থাগুলোর তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা।
সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনীতির সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে বিশ্বব্যাংকের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ২০১৫ সালে সার্বিক অর্থনীতির েেত্র বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তার মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) গুণগত বাস্তবায়ন বাড়ানো অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, এডিপি বাস্তবায়ন হারও কম। এডিপি ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়নে কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। প্রবৃদ্ধি ৭.৩ শতাংশ করতে হলে এডিপি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যেমন, পদ্মা সেতু, ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে, ডাবল ট্র্যাক অব ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে, মেট্রোরেল, বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকার প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে তাতে বিনিয়োগ ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। প্রকৃত পক্ষে এই প্রবৃদ্ধি ৬.২ শতাংশের বেশি হবে না। তার বিশ্লেষণ ছিল, এ বছর বিনিয়োগ হার ২৮.৭ শতাংশ থেকে ৩৪ শতাংশ করার কথা বলেছে সরকার। কিন্তু এ ধরনের বৃদ্ধির হারের কোনো নজির নেই। সরকারি বিনিয়োগের মানও বাড়েনি। আর ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে হলে বিনিয়োগ দ্রুত বাড়া দরকার। কোনোভাবেই ৫ শতাংশ বিনিয়োগ বৃদ্ধি এক বছরে সম্ভব নয়। ফলে প্রবৃদ্ধি ৬.২ শতাংশের বেশি হবে না।
অর্থনীতিবিদ ও বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখতের মতে, পদ্মা সেতুর মতো বেশ কিছু বড় প্রকল্প রয়েছে এবার। সেগুলো শুরু হলে হয়তো বাস্তবায়নের হার বাড়বে। তা ছাড়া প্রথম দিকে প্রকল্পের ডিজাইনসহ বেশ কিছু কারণে বাস্তবায়ন কম হয়। তিনি বলেন, বর্তমানে বিনিয়োগ ও এডিপি বাস্তবায়নের যে হার তাতে ৭.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে সরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি।
এ দিকে গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের বাস্তবায়ন হার এ বছর এসে ১ শতাংশ কমিয়ে দেখানোর বিষয়ে আইএমইডির ব্যাখ্যা জানার জন্য ভারপ্রাপ্ত সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকারকে মুঠোফোনে কল করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অন্য একজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, এটা সচিব স্যারই ভালো বলতে পারবেন। আমি জানি না। তথ্যের গরমিলের ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও পরিকল্পনা সচিব ভুঁইয়া সফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তিন মাসে এডিপি বাস্তবায়নে হতাশাজনক অবস্থা বিরাজ করছে। বিশাল আকারের এডিপি করা হলেও অর্থবছরের সূচনাতেই জুলাই মাসে এটির বাস্তবায়নে করুণ অবস্থা দেখা গেছে। শুরুতেই বাস্তবায়ন হার শতভাগ করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে নানা কথা বলেছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কিন্তু বাস্তবে সেসব উদ্যোগ চোখে পড়েনি। অন্য দিকে নিজেদের ব্যর্থতা চাপা দেয়ার জন্য গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে যেখানে ১১ শতাংশ দেখানো হয়েছিল, এবার আইএমইডির প্রতিবেদনে সে হার কমিয়ে ১০ শতাংশ দেখানো হয়েছে; যাতে করে ব্যবধানটি ১ শতাংশ হয়। কিন্তু আইএমইডির প্রতিবেদনে দুই ধরনের তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হয়েছে।
২০১৩-১৪ র্অথবছরের প্রথম তিন মাসে বাস্তবায়নের হার ছিল ১১ শতাংশ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৩ শতাংশ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে ১১ শতাংশ। যখন রাজনৈতিক চরম অস্থিরতা ও সহিংসতা ছিল সে সময়েও বাস্তবায়নের গতি থাকলেও এখন স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে এডিপি বাস্তবায়ন চরম হতাশাজনক। স্থানীয় মুদ্রা ব্যয়ে করুণ অবস্থা বিরাজ করছে এ বছর। ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে স্থানীয় অর্থ ব্যবহারের হার ছিল ১৫ শতাংশ, পরের বছর ২০১২-১৩ তে সেটা কমে আসে ১৪ শতাংশে এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আরো কমে দাঁড়ায় ১২ শতাংশে। আর চলতি বছর একই সময়ে এই হার হলো মাত্র ১০ শতাংশ। তিন বছরে এই অর্থ ব্যবহারের সক্ষমতা ক্রমেই কমে আসছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্যানুযায়ী গত তিন মাসে বরাদ্দ পাওয়া সবচেয়ে বড় ১০ মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়নে বেহাল দশা বিরাজ করছে। তা ছাড়া তিন মাস পেরিয়ে গেলেও চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দকৃত কোনো অর্থই খরচ করতে পারেনি চারটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ৪৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দের অনুকূলে কোনো অর্থ ব্যয় হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনও এডিপি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে পারেনি। এমনকি এডিপি বাস্তবায়নের কাজ শুরুই করতে পারেনি তারা। এবারের প্রস্তাবিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই সর্ববৃহৎ এডিপি। জুলাই মাসে মাত্র ২ ভাগ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। সেই হিসাবে এক ধরনের হতাশা দিয়েই ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন শুরু করল। তবে ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে একই সময়ে এক শতাংশ বেশি এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরেও প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অগ্রগতি ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ। প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) অর্থব্যয় এবং এডিপির অগ্রগতির হার ছিল মাত্র ২৭ শতাংশ। এবার তার চেয়েও বেহাল অবস্থা।
এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তিন মাসে বরাদ্দের ৪৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, এটির বাস্তবায়ন হার ৩৪ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগেও এডিপি বাস্তবায়নে বেহাল চিত্র বিরাজ করছে। বৃহৎ ১০ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে মাত্র তিনটির এডিপি বাস্তবায়ন ১০ শতাংশের বেশি। অপর সাত মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন জাতীয় গড় ৯ শতাংশের সমান বা আরো কম। স্থানীয় সরকার বিভাগ সবচেয়ে বেশি ১৩ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে ব্যয় করেছে দুই হাজার ৮১ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন হার ১৬ শতাংশ। ৯ হাজার এক কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ ব্যয় করতে পেরেছে মাত্র ৭১০ কোটি টাকা। উন্নয়ন অগ্রাধিকারে সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া বিদ্যুৎ বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন তিন মাসে ৮ শতাংশ। রেলপথ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার ৬ শতাংশ।
আইএমইডির সর্বশেষ হিসাবে তিন মাসে এডিপি বাস্তবায়নে সাত হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। বিদেশী সহায়তার তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। আর সংস্থাগুলোর তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা।
সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনীতির সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে বিশ্বব্যাংকের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ২০১৫ সালে সার্বিক অর্থনীতির েেত্র বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তার মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) গুণগত বাস্তবায়ন বাড়ানো অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, এডিপি বাস্তবায়ন হারও কম। এডিপি ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়নে কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। প্রবৃদ্ধি ৭.৩ শতাংশ করতে হলে এডিপি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যেমন, পদ্মা সেতু, ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে, ডাবল ট্র্যাক অব ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে, মেট্রোরেল, বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকার প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে তাতে বিনিয়োগ ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। প্রকৃত পক্ষে এই প্রবৃদ্ধি ৬.২ শতাংশের বেশি হবে না। তার বিশ্লেষণ ছিল, এ বছর বিনিয়োগ হার ২৮.৭ শতাংশ থেকে ৩৪ শতাংশ করার কথা বলেছে সরকার। কিন্তু এ ধরনের বৃদ্ধির হারের কোনো নজির নেই। সরকারি বিনিয়োগের মানও বাড়েনি। আর ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে হলে বিনিয়োগ দ্রুত বাড়া দরকার। কোনোভাবেই ৫ শতাংশ বিনিয়োগ বৃদ্ধি এক বছরে সম্ভব নয়। ফলে প্রবৃদ্ধি ৬.২ শতাংশের বেশি হবে না।
অর্থনীতিবিদ ও বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখতের মতে, পদ্মা সেতুর মতো বেশ কিছু বড় প্রকল্প রয়েছে এবার। সেগুলো শুরু হলে হয়তো বাস্তবায়নের হার বাড়বে। তা ছাড়া প্রথম দিকে প্রকল্পের ডিজাইনসহ বেশ কিছু কারণে বাস্তবায়ন কম হয়। তিনি বলেন, বর্তমানে বিনিয়োগ ও এডিপি বাস্তবায়নের যে হার তাতে ৭.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে সরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি।
এ দিকে গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের বাস্তবায়ন হার এ বছর এসে ১ শতাংশ কমিয়ে দেখানোর বিষয়ে আইএমইডির ব্যাখ্যা জানার জন্য ভারপ্রাপ্ত সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকারকে মুঠোফোনে কল করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অন্য একজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, এটা সচিব স্যারই ভালো বলতে পারবেন। আমি জানি না। তথ্যের গরমিলের ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও পরিকল্পনা সচিব ভুঁইয়া সফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
No comments