তুমি সাংবাদিক হইছ? আগে তো দেশপ্রেমিক ছিলা! by তুষার আবদুল্লাহ
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র অর্ণব মেনে নিতে
পারছে না যে, সাংবাদিকরাও দেশপ্রেমিক। তার কাছে সাংবাদিক স্রেফ সাংবাদিক।
সাংবাদিকের কোনো মানবিক গুণাবলি নেই। অনুজ রিপোর্টার পারমিতা’র ছাত্র সে।
পারমিতার হাতেই অ, আ জ্ঞান তার। অর্নব পারমিতার হাতে মাইক্রোফন দেখেই
সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে, তার গুরু এখন আর দেশপ্রেমিক নেই। যুক্তি হলো, আগে
পারমিতা মানুষকে বাঁচাতো। এখন সে আর মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করে না। শুধু
ছবি’ই তুলে যেতে থাকে। অর্ণবের ভাবনায় মানুষকে হাসপাতালে না নিয়ে যে শুধু
ছবিই তুলে যায়, সে কোনোভাবেই দেশপ্রেমিক হতে পারে না। অর্ণবকে পারমিতা হয়তো
সাংবাদিকতার অ, আ শেখায়নি, শেখাতে মানবিক বিষয়গুলোতে ওর দৃষ্টি ফেরাতে
চেয়েছিল।কিন্তু অর্ণব যে প্রশ্নটি তুলেছে, সেটি সাংবাদিকতা নিয়ে সাম্প্রতিক
সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের বিষয়।যা নৈতিকতা এবং অনৈতিকতা’র
দাঁড়িপাল্লাতে ঝুলছে অনেক দিন ধরেই।একেকবার একেক দিকে হেলে পড়ে মতামত। যখন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিশ্বজিৎকে হত্যা করলো ছাত্রলীগ, তখন সেখানে
কর্তব্যরত সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়েও এই প্রশ্নটি উঠেছিল। বলা হয়েছিল সেখানে
উপস্থিত সাংবাদিকরা যদি ছাত্রলীগকে ফেরাতেন,তাহলে হয়তো নির্মমভাবে প্রাণ
দিতে হতো না বিশ্বজিৎকে।কিন্তু সাংবাদিকরা সেই কাজটি না করে বিশ্বজিতের
মৃত্যু পর্যন্ত ছবি তুলেই গেছেন।বিশ্বজিতের মৃত্যুর পর সাংবাদিকদেরই একটি
পক্ষ বলেছেন- সাংবাদিক হিসেবে যে দায়িত্বটি পালন করার সেটিই তারা করেছেন।
এবং করেছেন বলেই বিশ্বজিৎ হত্যাকারীদের ছবি দেখে গ্রেপ্তার করা গেছে।
তাদেরকে থামানোর দায়িত্ব সাংবাদিকের নয়। অন্যপক্ষ বলছে, সাংবাদিকরা যখন
দেখতে পেলো যে ছাত্রলীগের কর্মীরা বিশ্বজিৎকে মেরে ফেলতেই উদ্যত হয়েছে। তখন
তাদেরকে থামানো উচিত ছিলো। যদি বিষয়টা কেবল মারধোরের মধ্যে থাকতো তাহলে,
সাংবাদিকরা ছবি তোলাতেই দায়িত্ব সীমিত রাখতে পারতেন।
সেখানেই শেষ নয়। চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার সময়েও ঐ একই প্রশ্ন উঠছে। সাংবাদিকদের সামনে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষকে ঝলসে দেয়া, বার্ন ইউনিটে যখন মানুষ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে তখন সেখানে দাঁড়িয়ে লাইভ করা বা পিটিসি(পিস টু ক্যামেরা) দেয়া, এগুলো অনৈতিক বলেই প্রশ্ন উঠছে নিরন্তর।
একটি বাসে পেট্রোলবোমা ছোড়া হবে সেই খবর পেয়ে গিয়ে বসে থাকা, পেট্রোলবোমা ছোড়ার দৃশ্য ধারণ করা। রিকশায় ককটেল মারা খবর আগে থেকে পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ছবি’টির জন্য। এগুলো সাংবাদিকতার নৈতিকতার মধ্যে পড়ে কিনা তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। যদিও সাংবাদিকদেরই একটি অংশ বলছে সোর্সের কাছে খবর পেয়ে গিয়ে সাংবাদিক আগে থেকে অপেক্ষা করতেই পারেন। কিন্তু কেবল টিভি বা পত্রিকার ক্যামেরায় ছবি দেয়ার জন্য যদি কারো শরীর ঝলসে যায়, তাহলে তো নৈতিকতার প্রশ্ন উঠবেই। যার শরীরের ৬০ ভাগেরেও বেশি পুড়ে গেছে, জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে যে, তার অনুভূতি জানা, তার সামনে দাঁড়িয়ে পিটিসি দেয়া কতোটা সমর্থনযোগ্য?
এখানে আবারো সাংবাদিকতাকে নৈতিকতার দাঁড়িপাল্লায় তোলা হচ্ছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ‘বোকা বাক্সে’র মতোই কাজটি করে যাচ্ছে মহা উৎসাহে। বোকামি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা এখন তুঙ্গে।এই কাজটি করার জন্য রিপোর্টারদের দায়ী করতে পারছি খুব কমই।কারণ এক-দুইবার তারা ভুল করে বা ইচ্ছে করে এই এধরনের কাজ করে ফেলতেই পারে। কিন্তু যাদের হাত দিয়ে খবরটি প্রকাশ বা প্রচার হলো, তাদের দায় বেশি।তারা কেন প্রশ্রয় দিচ্ছেন? এটাতো সম্পাদকীয় নীতি’র অংশ। যদিও এখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মূল সম্পাদকীয় নীতি হচ্ছে অনুকরণ। এই অনুকরণ নীতি নিয়ে চলছে যেসব টেলিভিশন চ্যানেল সেখানে অগোছালোপনা, বোকামি অপ্রতাশিত হতে পারে না।
অর্ণব খুদে দর্শক। কিন্তু তার পর্যবেক্ষণকে অশ্রদ্ধা করার সুযোগ নেই। রিপোর্টাররা যে টেলিভিশন নামক বাক্সটিতে যেমন খুশি তেমন করে যাচ্ছে, টেলিভিশনকর্তারা প্রতিযোগিতা,টিআরপি ধরে রাখার দোহাই তুলে বাক্সটিকে যেভাবে ব্যবহার করছেন, তার অসংগতিটা অর্নবের চোখেও পড়েছে।এই কাজগুলো করতে গিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো নৈতিকতা, ঠিক-বেঠিকের কাণ্ডজ্ঞান ভুলে বসে আছে, তা মনে করিয়ে দিতেই হয়তো অর্ণবের কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হয়েছে: ‘তুমি তো সাংবাদিক হয়ে গেছো!’ অর্থাৎ, দেশপ্রেমিকের বা মানবিক গুণাবলীশূন্য হয়ে পড়ছেন সংবাদকর্মী বা রিপোর্টাররা।খুদে দর্শক অর্ণব আমাদের সেই ভাবনার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
সেখানেই শেষ নয়। চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার সময়েও ঐ একই প্রশ্ন উঠছে। সাংবাদিকদের সামনে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষকে ঝলসে দেয়া, বার্ন ইউনিটে যখন মানুষ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে তখন সেখানে দাঁড়িয়ে লাইভ করা বা পিটিসি(পিস টু ক্যামেরা) দেয়া, এগুলো অনৈতিক বলেই প্রশ্ন উঠছে নিরন্তর।
একটি বাসে পেট্রোলবোমা ছোড়া হবে সেই খবর পেয়ে গিয়ে বসে থাকা, পেট্রোলবোমা ছোড়ার দৃশ্য ধারণ করা। রিকশায় ককটেল মারা খবর আগে থেকে পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ছবি’টির জন্য। এগুলো সাংবাদিকতার নৈতিকতার মধ্যে পড়ে কিনা তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। যদিও সাংবাদিকদেরই একটি অংশ বলছে সোর্সের কাছে খবর পেয়ে গিয়ে সাংবাদিক আগে থেকে অপেক্ষা করতেই পারেন। কিন্তু কেবল টিভি বা পত্রিকার ক্যামেরায় ছবি দেয়ার জন্য যদি কারো শরীর ঝলসে যায়, তাহলে তো নৈতিকতার প্রশ্ন উঠবেই। যার শরীরের ৬০ ভাগেরেও বেশি পুড়ে গেছে, জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে যে, তার অনুভূতি জানা, তার সামনে দাঁড়িয়ে পিটিসি দেয়া কতোটা সমর্থনযোগ্য?
এখানে আবারো সাংবাদিকতাকে নৈতিকতার দাঁড়িপাল্লায় তোলা হচ্ছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ‘বোকা বাক্সে’র মতোই কাজটি করে যাচ্ছে মহা উৎসাহে। বোকামি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা এখন তুঙ্গে।এই কাজটি করার জন্য রিপোর্টারদের দায়ী করতে পারছি খুব কমই।কারণ এক-দুইবার তারা ভুল করে বা ইচ্ছে করে এই এধরনের কাজ করে ফেলতেই পারে। কিন্তু যাদের হাত দিয়ে খবরটি প্রকাশ বা প্রচার হলো, তাদের দায় বেশি।তারা কেন প্রশ্রয় দিচ্ছেন? এটাতো সম্পাদকীয় নীতি’র অংশ। যদিও এখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মূল সম্পাদকীয় নীতি হচ্ছে অনুকরণ। এই অনুকরণ নীতি নিয়ে চলছে যেসব টেলিভিশন চ্যানেল সেখানে অগোছালোপনা, বোকামি অপ্রতাশিত হতে পারে না।
অর্ণব খুদে দর্শক। কিন্তু তার পর্যবেক্ষণকে অশ্রদ্ধা করার সুযোগ নেই। রিপোর্টাররা যে টেলিভিশন নামক বাক্সটিতে যেমন খুশি তেমন করে যাচ্ছে, টেলিভিশনকর্তারা প্রতিযোগিতা,টিআরপি ধরে রাখার দোহাই তুলে বাক্সটিকে যেভাবে ব্যবহার করছেন, তার অসংগতিটা অর্নবের চোখেও পড়েছে।এই কাজগুলো করতে গিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো নৈতিকতা, ঠিক-বেঠিকের কাণ্ডজ্ঞান ভুলে বসে আছে, তা মনে করিয়ে দিতেই হয়তো অর্ণবের কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হয়েছে: ‘তুমি তো সাংবাদিক হয়ে গেছো!’ অর্থাৎ, দেশপ্রেমিকের বা মানবিক গুণাবলীশূন্য হয়ে পড়ছেন সংবাদকর্মী বা রিপোর্টাররা।খুদে দর্শক অর্ণব আমাদের সেই ভাবনার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
>>তুষার আবদুল্লাহ, পরিচালক (বার্তা) সময় টেলিভিশন
No comments