তবু বন্ধ হবে না নির্যাতন by আসিফ নজরুল
এ বছরের জানুয়ারিতে পাকিস্তানে গিয়ে এক
বিব্রতকর অভিজ্ঞতা হয় আমার। পাকিস্তানে আমার গমনের উদ্দেশ্য ছিল
নির্যাতনবিরোধী একটি আঞ্চলিক সেমিনারে অংশগ্রহণ। সেমিনারে সার্ক দেশগুলো
ছাড়াও তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।সেমিনারে
সেশনগুলোতে বিভিন্ন দেশের নির্যাতনবিরোধী আইন ও বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে
আলোচনা করা হয়।
এসব সেমিনারে যা হয়, একপর্যায়ে আমরা সবাই উপলব্ধি করি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সার্কভুক্ত দেশগুলোর পরিস্থিতিতে আসলে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কার পুলিশ ও সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর নির্যাতনের বিবরণ শুনে আমরা যখন স্তব্ধ হয়ে আছি, তখন ভারতের প্রখ্যাত মানবাধিকারকর্মী জিতেন দেশাই আমাদের শোনালেন ভারতে মাওবাদী ও ইসলামিস্টদের ওপর সরকারি বাহিনীগুলোর নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা। বাংলাদেশের পরিস্থিতিও ভিন্ন কিছু নয়। কিন্তু বাংলাদেশ পরিস্থিতির আলোচনার শেষে পাকিস্তানি আইনজীবী আমাকে প্রশ্ন করলেন, ‘তোমাদের দেশে তো নির্যাতনবিরোধী আইন হয়েছে। পরিস্থিতি কি একটুও বদলায়নি তাতে?’
সাবের হোসেন চৌধুরী প্রস্তাবিত নির্যাতনবিরোধী একটি খসড়া আইনের কথা জানতাম। ২০০২ সালে বিএনপি সরকারের আমলে নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি ২০০৮ সাল থেকে এই আইনটি সংসদে পাস করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু অনেক বছর ধরে তেমন কোনো সাড়া পাননি তাঁর দলের লোকদের থেকেও। এই আইনটি কি অবশেষে সংসদে পাস হয়েছে? আমি অবাক হয়ে আবিষ্কার করি, আমার জানাই নেই এটি। পরে ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখি, আসলে তা-ই। ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর এটি পাস হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন সংসদে কী হচ্ছে তা নিয়ে মানুষের আগ্রহ ছিল না। বরং আগ্রহ আর আতঙ্ক ছিল রাজপথের সরকারি বাহিনী আর বিরোধী দলের সশস্ত্র মোকাবিলা নিয়ে, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকেন্দ্রিক অনিশ্চয়তা নিয়ে। দমন আর পীড়নে সিদ্ধহস্ত হয়ে ওঠা একটি সরকারের আমলে এ ধরনের একটি আইন হঠাৎ পাস হলো কীভাবে?
ঢাকায় ফিরে আমি পরিচিত ব্যক্তিদের ফোন করি। এই আইনের বিষয়বস্তু দূরের কথা, এটি যে তখন পাস হয়েছে, সেই খবরই জানতেন না এমনকি মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা অনেকে। এই আইনটি পাস হওয়ার প্রায় আট মাস হতে চলল। আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, তবু এটি নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ নেই কারও। আইনটিতে বর্ণিত পদ্ধতিতে নির্যাতন থেকে সুরক্ষা পাওয়ার চেষ্টা নেই কোনো। এর অন্তর্নিহিত কারণ এটিও হতে পারে যে এই আইনটি প্রয়োগের পরিবেশই দেশে নেই আর! খুবই করুণ লাগবে শুনতে, কিন্তু সম্ভবত এটি এমন একটি আইন, যা পাস হওয়ার আগেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে।
২.
২০১৩
সালের আইনটির পোশাকি নাম নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন।
বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সাল থেকে দেশে যেকোনো ধরনের নির্যাতন ও নিষ্ঠুর
শাস্তি নিষিদ্ধ করেছে। নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক চুক্তিটিও বাংলাদেশ বহু
আগে অনুসমর্থন করেছিল। কাজেই এ ধরনের একটি আইন প্রণয়নের সাংবিধানিক এবং
আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশের ছিল। আইনটিতে তা উল্লেখও করা হয়েছে।
শুনলে অনেকের ভ্রু কুঁচকে উঠতে পারে যে এই আইনটি করা হয়েছে র্যাব, বিজিবি, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর নির্যাতন থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য ও নির্যাতকদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার জন্য। এই আইন যুদ্ধ, জঙ্গিবাদ দমন, রাজনৈতিক অরাজকতা কোনো অজুহাতেই নির্যাতককে দায়মুক্তি প্রদান করে না এবং নির্যাতনের প্ররোচনা, সহায়তা ও প্রচেষ্টা—সবকিছু অপরাধভুক্ত করেছে।
এই আইন মূলত বিচারিক আদালতের সামনে হাজির কোনো আসামিকে নির্যাতনের অভিযোগ করার সুবিধা প্রদান করেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে বিচারক তাৎক্ষণিকভাবে একজন চিকিৎসক কর্তৃক অভিযোগকারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার এবং চিকিৎসক কর্তৃক প্রদত্ত বক্তব্যের ভিত্তিতে অভিযুক্ত নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে পুলিশকে মামলা গ্রহণ করার নির্দেশ দিতে পারেন। আইনটিতে নির্যাতনকারীর দ্রুত বিচার এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে নির্যাতনকারীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, জরিমানা এবং নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করার বিধান রয়েছে।
এই আইনে ভালো বিধান আরও বহু আছে। এতে বিশেষ করে হেফাজতে মৃত্যুর ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক অভিযোগ আনার সুযোগ রয়েছে, অভিযোগকারীর নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, নির্যাতনের আশঙ্কা থাকলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিচার শেষ হওয়ার আগেই সাত দিন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ডিটেনশন দেওয়ার বিধান রয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন লাভের সুযোগ সীমিত করা হয়েছে এবং মামলার আপসরফার সুযোগ নাকচ করা হয়েছে।
চমৎকার এবং ভালো একটি আইন। কিন্তু আমরা তলিয়ে দেখলে দেখব, এই আইনেও প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ নানা কারণে এখন দুরূহ হয়ে পড়েছে বাংলাদেশে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এমনভাবে দলীয়করণ, নিয়ন্ত্রিত বা বশীভূত করা হয়েছে যে এই আইনের কার্যকারিতা এখনই প্রশ্নবিদ্ধ করার কারণ রয়েছে।
৩.
নির্যাতনবিরোধী আইনটির সাফল্য বহুলাংশে নির্ভর করে নিম্ন আদালতের স্বাধীন সত্তার ওপর। এই স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য বহু সংগ্রাম বাংলাদেশে হয়েছিল, নতুন নতুন কিছু আইনও হয়েছিল। তার পরও বর্তমান সরকারের আমলে নিম্ন আদালতে পদায়ন, পদোন্নতি ও বদলির বহু ঘটনা ঘটেছে, যাতে সরকারের ইচ্ছার সুস্পষ্ট প্রতিফলন আমরা দেখেছি। যেমন অতীতে ঢাকার একজন জেলা জজকে নিয়োগ করা হয় কয়েক শ সিনিয়র বিচারককে ডিঙিয়ে।
সম্প্রতি স্বাধীন সত্তা প্রকাশে সাহসী কিছু নিম্ন আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপও গ্রহণ করতে দেখা গেছে সরকারের পক্ষ থেকে। যেমন তারেক রহমানকে দুর্নীতি মামলায় খালাস প্রদানকারী বিচারকের বিরুদ্ধে প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে মাঠে নামতে দেখা গেছে। এর চেয়েও যা উদ্বেগজনক র্যাবের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের নির্দেশ প্রদানকারী একজন বিচারকের অপরাধ আমলে নেওয়ার ক্ষমতা সঙ্গে সঙ্গে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। উচ্চ আদালত নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত সাত খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত র্যাব কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়ার পরপরই স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে এর বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা গেছে, আইনমন্ত্রীকে সতর্কতা জানাতে দেখা গেছে। উচ্চ আদালত তাঁদের এসব মানহানিমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেননি, কারণ হয়তো এটিই যে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবেশ নেই দেশে।
এমনই এক বাস্তবতায় কোনো অভিযোগকারীর বক্তব্য শুনে নির্যাতনের ঘটনার বিচারে নিম্ন আদালত কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো অগ্রসর হতে পারেন। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তি র্যাব, পুলিশ বা অন্য কোনো বাহিনীর দাপুটে কর্মকর্তা হলে, সরকারের বিশেষ পছন্দের লোক হলে বা রাজনৈতিকভাবে সম্পর্কিত হলে, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আদেশ দেওয়ার পরিবেশ রয়েছে কি দেশে? মামলা হলেও এই মামলায় তেমন কারও শাস্তি হবে কি? নির্যাতনবিরোধী মামলায় চিকিৎসক ও তদন্তকারী কর্মকর্তার পেশাদারি ও নিরপেক্ষতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত এই সমাজে এসব গুণাবলিসম্পন্ন মানুষজন পাওয়া যাবে কি দেশে সব সময়?
নির্যাতন বন্ধে ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ মামলায় আমরা উচ্চ আদালতকে নির্যাতন বন্ধে নানা নির্দেশ দিতে দেখেছি। এসব নির্দেশ আইনের সমতুল্য। কিন্তু এসব নির্দেশ মানা হয়নি, কারও এ নিয়ে তেমন মাথাব্যথাও নেই। বরং ২০০২ সালে প্রদত্ত এসব নির্দেশের পর দেশে নির্যাতনের পরিমাণ ও ভয়াবহতা আরও বেড়েছে বলে অনেকের অভিযোগ। নির্যাতিত ব্যক্তি ও তাঁর পরিবারের আইনি প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে নির্যাতিত ব্যক্তিকে গুম করে দিয়ে। হেফাজতে মৃত্যুর দায় এড়াতে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এটিই বেমালুম অস্বীকার করা হয়েছে। নির্যাতিত বা নিহত ব্যক্তির পরিবারকে মামলা করার অপরাধে হয়রানি, ভোগান্তি ও হুমকির শিকার হতে হয়েছে নানাভাবে।
শুনলে অনেকের ভ্রু কুঁচকে উঠতে পারে যে এই আইনটি করা হয়েছে র্যাব, বিজিবি, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর নির্যাতন থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য ও নির্যাতকদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার জন্য। এই আইন যুদ্ধ, জঙ্গিবাদ দমন, রাজনৈতিক অরাজকতা কোনো অজুহাতেই নির্যাতককে দায়মুক্তি প্রদান করে না এবং নির্যাতনের প্ররোচনা, সহায়তা ও প্রচেষ্টা—সবকিছু অপরাধভুক্ত করেছে।
এই আইন মূলত বিচারিক আদালতের সামনে হাজির কোনো আসামিকে নির্যাতনের অভিযোগ করার সুবিধা প্রদান করেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে বিচারক তাৎক্ষণিকভাবে একজন চিকিৎসক কর্তৃক অভিযোগকারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার এবং চিকিৎসক কর্তৃক প্রদত্ত বক্তব্যের ভিত্তিতে অভিযুক্ত নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে পুলিশকে মামলা গ্রহণ করার নির্দেশ দিতে পারেন। আইনটিতে নির্যাতনকারীর দ্রুত বিচার এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে নির্যাতনকারীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, জরিমানা এবং নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করার বিধান রয়েছে।
এই আইনে ভালো বিধান আরও বহু আছে। এতে বিশেষ করে হেফাজতে মৃত্যুর ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক অভিযোগ আনার সুযোগ রয়েছে, অভিযোগকারীর নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, নির্যাতনের আশঙ্কা থাকলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিচার শেষ হওয়ার আগেই সাত দিন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ডিটেনশন দেওয়ার বিধান রয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন লাভের সুযোগ সীমিত করা হয়েছে এবং মামলার আপসরফার সুযোগ নাকচ করা হয়েছে।
চমৎকার এবং ভালো একটি আইন। কিন্তু আমরা তলিয়ে দেখলে দেখব, এই আইনেও প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ নানা কারণে এখন দুরূহ হয়ে পড়েছে বাংলাদেশে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এমনভাবে দলীয়করণ, নিয়ন্ত্রিত বা বশীভূত করা হয়েছে যে এই আইনের কার্যকারিতা এখনই প্রশ্নবিদ্ধ করার কারণ রয়েছে।
৩.
নির্যাতনবিরোধী আইনটির সাফল্য বহুলাংশে নির্ভর করে নিম্ন আদালতের স্বাধীন সত্তার ওপর। এই স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য বহু সংগ্রাম বাংলাদেশে হয়েছিল, নতুন নতুন কিছু আইনও হয়েছিল। তার পরও বর্তমান সরকারের আমলে নিম্ন আদালতে পদায়ন, পদোন্নতি ও বদলির বহু ঘটনা ঘটেছে, যাতে সরকারের ইচ্ছার সুস্পষ্ট প্রতিফলন আমরা দেখেছি। যেমন অতীতে ঢাকার একজন জেলা জজকে নিয়োগ করা হয় কয়েক শ সিনিয়র বিচারককে ডিঙিয়ে।
সম্প্রতি স্বাধীন সত্তা প্রকাশে সাহসী কিছু নিম্ন আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপও গ্রহণ করতে দেখা গেছে সরকারের পক্ষ থেকে। যেমন তারেক রহমানকে দুর্নীতি মামলায় খালাস প্রদানকারী বিচারকের বিরুদ্ধে প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে মাঠে নামতে দেখা গেছে। এর চেয়েও যা উদ্বেগজনক র্যাবের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের নির্দেশ প্রদানকারী একজন বিচারকের অপরাধ আমলে নেওয়ার ক্ষমতা সঙ্গে সঙ্গে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। উচ্চ আদালত নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত সাত খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত র্যাব কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়ার পরপরই স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে এর বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা গেছে, আইনমন্ত্রীকে সতর্কতা জানাতে দেখা গেছে। উচ্চ আদালত তাঁদের এসব মানহানিমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেননি, কারণ হয়তো এটিই যে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবেশ নেই দেশে।
এমনই এক বাস্তবতায় কোনো অভিযোগকারীর বক্তব্য শুনে নির্যাতনের ঘটনার বিচারে নিম্ন আদালত কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো অগ্রসর হতে পারেন। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তি র্যাব, পুলিশ বা অন্য কোনো বাহিনীর দাপুটে কর্মকর্তা হলে, সরকারের বিশেষ পছন্দের লোক হলে বা রাজনৈতিকভাবে সম্পর্কিত হলে, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আদেশ দেওয়ার পরিবেশ রয়েছে কি দেশে? মামলা হলেও এই মামলায় তেমন কারও শাস্তি হবে কি? নির্যাতনবিরোধী মামলায় চিকিৎসক ও তদন্তকারী কর্মকর্তার পেশাদারি ও নিরপেক্ষতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত এই সমাজে এসব গুণাবলিসম্পন্ন মানুষজন পাওয়া যাবে কি দেশে সব সময়?
নির্যাতন বন্ধে ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ মামলায় আমরা উচ্চ আদালতকে নির্যাতন বন্ধে নানা নির্দেশ দিতে দেখেছি। এসব নির্দেশ আইনের সমতুল্য। কিন্তু এসব নির্দেশ মানা হয়নি, কারও এ নিয়ে তেমন মাথাব্যথাও নেই। বরং ২০০২ সালে প্রদত্ত এসব নির্দেশের পর দেশে নির্যাতনের পরিমাণ ও ভয়াবহতা আরও বেড়েছে বলে অনেকের অভিযোগ। নির্যাতিত ব্যক্তি ও তাঁর পরিবারের আইনি প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে নির্যাতিত ব্যক্তিকে গুম করে দিয়ে। হেফাজতে মৃত্যুর দায় এড়াতে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এটিই বেমালুম অস্বীকার করা হয়েছে। নির্যাতিত বা নিহত ব্যক্তির পরিবারকে মামলা করার অপরাধে হয়রানি, ভোগান্তি ও হুমকির শিকার হতে হয়েছে নানাভাবে।
৪.
ভালো
একটি আইন তাই তেমনভাবে আশাবাদী করে না আমাদের। ভালো ভালো আইন দিয়ে এ
দেশে তথ্য কমিশন ও মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে, দুর্নীতি দমন
কমিশন, নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশে
মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি তাতে ঠেকানো যায়নি, আইনের শাসন বা গণতন্ত্র
সংহত করা যায়নি, অস্ত্র, কালোটাকা আর ক্ষমতার দম্ভে বড় কোনো আঁচড়
কাটাও যায়নি।
আইন বা প্রতিষ্ঠান আসলে ছুরির মতো।ছুরি দিয়ে বহু ভালো কাজ হয়, আবার খুনখারাবিও করা যায়। ছুরি কার হাতে, তার ওপর নির্ভর করে এর ব্যবহার।
আমাদের আইন আর প্রতিষ্ঠান আসলে কার বা কাদের হাতে? আমরা কি নিরাপদ তাদের কাছে?
আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আইন বা প্রতিষ্ঠান আসলে ছুরির মতো।ছুরি দিয়ে বহু ভালো কাজ হয়, আবার খুনখারাবিও করা যায়। ছুরি কার হাতে, তার ওপর নির্ভর করে এর ব্যবহার।
আমাদের আইন আর প্রতিষ্ঠান আসলে কার বা কাদের হাতে? আমরা কি নিরাপদ তাদের কাছে?
আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments