জিএসপি পুনর্বহাল এখনই নয় by কাউসার মুমিন
জিএসপি ফিরে পেলো না বাংলাদেশ। অন্তত ২০১৪
সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার কোন
সম্ভাবনাও নেই। জিএসপি পুনর্বহাল সংক্রান্ত কমিটি কর্তৃক বাংলাদেশের শ্রমিক
অধিকার ও শ্রমিক নিরাপত্তা উন্নয়নে গৃহীত সার্বিক পদক্ষেপ, সিদ্ধান্ত
বাস্তবায়নের গতি ও সরকারের আন্তরিকতা পর্যালোচনা শেষে জিএসপি কমিটির পক্ষে
বুধবার অপরাহ্ণে এমনটিই জানালো যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে
এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী মাইকেল ফ্রোমেন বলেন,
বাংলাদেশের শ্রমমান উন্নয়নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি রয়েছে। তা সত্ত্বেও
সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায় জিএসপি ফিরে পাওয়ার পূর্বশর্ত
হিসেবে শ্রমিক অধিকার বাস্তবায়ন ও শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ইতিপূর্বে
যুক্তরাষ্ট্র প্রদত্ত ‘কর্মপরিকল্পনা’ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার
প্রতিশ্রুত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এখনও অনেক পিছিয়ে। এ বিষয়ে এখনও অনেক কিছু
করার আছে। তিনি আরও বলেন, এখনও বিপুল সংখ্যক কারখানা পরিদর্শন করা হয়নি।
শ্রম আইনের যে সংস্কার প্রয়োজন সে বিষয়ে অগ্রগতি নেই। শ্রমিকদের ওপর হয়রানি
অব্যাহত আছে। শ্রমিক নেতারা যারা শ্রমিকদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেন তাদের
ওপর সহিংসতা অব্যাহত আছে। এসব বিষয়ে বাংলাদেশকে এখনও অনেক কিছু করতে হবে।
তাই বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা এখনই পুনর্বহাল না করার পক্ষে সিদ্ধান্ত
নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের শ্রম
পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মানের না হওয়ায় এবং শ্রমিক অধিকার ও নিরাপত্তা
নিশ্চিতকরণে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বারবার
তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার আন্তরিক না হওয়ায় এবং এ বিষয়ে দৃশ্যত
কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত গত বছর জুন মাসে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশের জিএসপি
সুবিধা স্থগিত করেন। পরবর্তীকালে বাংলাদেশকে এ সুবিধা দেয়ার বিষয়ে মার্কিন
প্রেসিডেন্ট কর্তৃক পুনর্বিবেচনার পূবশর্ত হিসেবে বাংলাদেশের শ্রম
পরিস্থিতির উন্নয়নে একটি ‘কর্মপরিকল্পনা’ বেঁধে দেয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের
পক্ষ থেকে। ওই কর্মপরিকল্পনার আলোকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ভাষায়
‘আমেরিকার দেয়া শর্তের ৯৮ ভাগ বাস্তবায়ন’ শেষ করে গত আগস্টে বাংলাদেশের
জিএসপি সুবিধা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানায় সরকার। এমনকি জিএসপি ফিরে পেতে
গত মাসের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ম্যারাথন দৌড়ঝাঁপ করে গেছেন খোদ
বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেই। এ বিষয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আলোচনা
অনুষ্ঠানে তখন বাণিজ্যমন্ত্রী জিএসপি ফিরে পাওয়ার পক্ষে প্রবল আশাবাদ
ব্যক্ত করেন। মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে বলেন, বাংলাদেশের
সংশোধিত শ্রম আইন বাস্তবায়নের ধীরগতি, বিপুল সংখ্যক পোশাক কারখানার এখনও
নিরাপত্তা পরিদর্শন সম্পন্ন না হওয়া এবং নিজস্ব অধিকার আদায়ে চেষ্টায় রত
শ্রমিকদের ওপর এখনও অব্যাহতভাবে চলমান সহিংসতা ও দায়িত্ব পালনে হেনস্তার
মতো বিষয়গুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভীষণ উদ্বিগ্ন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে
বাংলাদেশী পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা জিএসপি পুনর্বহাল বিষয়ে
আগামী ডিসেম্বরে আরেকটি পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে মার্কিন
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওদিকে বাংলাদেশে যা কিছু অগ্রগতি হয়েছে তা-ও তুলে ধরা
হয়। বলা হয়, ২০১৩ সালের জুন থেকে বাংলাদেশে গার্মেন্ট খাতে প্রায় ১২০টি
নতুন শ্রমিক ইউনিয়ন নিবন্ধিত হয়েছে। শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি
অভিযোগ কমেছে। এমনি কিছু অগ্রগতি হয়েছে। ওদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনাকে উদ্বেগ জানিয়ে একটি চিঠি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ৬
সিনেটর। তারা গার্মেন্ট খাতে শ্রমিক নেতাদের হয়রানি বৃদ্ধির ঘটনায় এমন
উদ্বেগ জানিয়েছেন।
ওদিকে ভারতের দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস জানায়, ভারতের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে। ২০১৪ সালের প্রথম ৪ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৬ শতাংশ। গত বছর রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর কারখানার শ্রমপরিবেশ উন্নত করার বিষয়ে বিদেশী ক্রেতাদের অব্যাহত অভিযোগের কারণে যখন বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি কমেছে, তখনই ভারত থেকে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পেলো। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সকে উদ্ধৃত করে রিপোর্টে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে চীন থেকে পোশাক রপ্তানি খাতে আয় বেড়েছে ০.৬৮ শতাংশ। তবে ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে ভিয়েতনাম ও ভারত থেকে পোশাক রপ্তানি থেকে আয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত গার্মেন্টস শিল্পে বেশ শক্ত অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি থেকে আয় কমেছে ০.২১ শতাংশ। সাধারণত আমেরিকায় গড়ে ১-২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে থাকা ভারতীয় পোশাক রপ্তানি থেকে আয় এই বছরের প্রথম চার মাসে হুট করে ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়াটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আর ভিয়েতনামের বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫.৫১ শতাংশ। এদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার পোশাক রপ্তানি থেকে আয় কমেছে ব্যাপক আকারে। যুক্তরাষ্ট্রে এ বছর ইন্দোনেশিয়ার পোশাক রপ্তানি কমেছে প্রায় ৪ দশমিক ১১ শতাংশ। তবে সামগ্রিকভাবে আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি থেকে আয়ের পরিমান বেড়েছে প্রায় ৩ শতাংশ। ভারতীয় পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের একটি সংগঠনের সাধারণ সমপাদক ডিকে নায়ার বলেন, ভারত ও ভিয়েতনাম লাভমান হচ্ছে মূলত বাংলাদেশের রানা প্লাজা ধসের কারণে। উল্লেখ্য, আমেরিকায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি থেকে আয় রানা প্লাজা ট্র্যজেডির আগে গড়ে ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আর এখন কমছে। তবে বাংলাদেশের পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। ইইউ’তে বাংলাদেশের পোশাক স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পায়। উল্লেখ্য, রানা প্লাজা ধসের আগেই আমেরিকান ক্রেতারা অর্ডার দেয়ায়, আমেরিকায় রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে এখনও এটি বড় কোন প্রভাব ফেলেনি। তবে ভবিষ্যতে যে আরও বড় কোন দুর্যোগ অপেক্ষা করছে না, কে বলতে পারে?
ওদিকে ভারতের দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস জানায়, ভারতের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে। ২০১৪ সালের প্রথম ৪ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৬ শতাংশ। গত বছর রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর কারখানার শ্রমপরিবেশ উন্নত করার বিষয়ে বিদেশী ক্রেতাদের অব্যাহত অভিযোগের কারণে যখন বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি কমেছে, তখনই ভারত থেকে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পেলো। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সকে উদ্ধৃত করে রিপোর্টে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে চীন থেকে পোশাক রপ্তানি খাতে আয় বেড়েছে ০.৬৮ শতাংশ। তবে ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে ভিয়েতনাম ও ভারত থেকে পোশাক রপ্তানি থেকে আয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত গার্মেন্টস শিল্পে বেশ শক্ত অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি থেকে আয় কমেছে ০.২১ শতাংশ। সাধারণত আমেরিকায় গড়ে ১-২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে থাকা ভারতীয় পোশাক রপ্তানি থেকে আয় এই বছরের প্রথম চার মাসে হুট করে ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়াটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আর ভিয়েতনামের বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫.৫১ শতাংশ। এদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার পোশাক রপ্তানি থেকে আয় কমেছে ব্যাপক আকারে। যুক্তরাষ্ট্রে এ বছর ইন্দোনেশিয়ার পোশাক রপ্তানি কমেছে প্রায় ৪ দশমিক ১১ শতাংশ। তবে সামগ্রিকভাবে আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি থেকে আয়ের পরিমান বেড়েছে প্রায় ৩ শতাংশ। ভারতীয় পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের একটি সংগঠনের সাধারণ সমপাদক ডিকে নায়ার বলেন, ভারত ও ভিয়েতনাম লাভমান হচ্ছে মূলত বাংলাদেশের রানা প্লাজা ধসের কারণে। উল্লেখ্য, আমেরিকায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি থেকে আয় রানা প্লাজা ট্র্যজেডির আগে গড়ে ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আর এখন কমছে। তবে বাংলাদেশের পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। ইইউ’তে বাংলাদেশের পোশাক স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পায়। উল্লেখ্য, রানা প্লাজা ধসের আগেই আমেরিকান ক্রেতারা অর্ডার দেয়ায়, আমেরিকায় রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে এখনও এটি বড় কোন প্রভাব ফেলেনি। তবে ভবিষ্যতে যে আরও বড় কোন দুর্যোগ অপেক্ষা করছে না, কে বলতে পারে?
ওদিকে পাকিস্তানের দ্য নিউজ জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নেও এ বছরের প্রথম চার মাসে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান জিএসপি সুবিধা ভোগ করলেও ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেছনে পড়ে যাচ্ছে এ দু’টি দেশ। এ বিষয়ে পাকিস্তানের রপ্তানিকারকদের মধ্যে এক রকম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ওদিকে গতকালই দুপুরে জিএসপি পুনর্বহাল করা হবে মার্কিন সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সংসদ ভবনে সাংবাদিকদের বলেছেন, আমেরিকায় বাংলাদেশি পণ্যের জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) বা অবাধ বাজার সুবিধা বিষয়ে মার্কিন প্রতিবেদনের সঙ্গে বাস্তবতার কোন মিল নেই। বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে এ মুহূর্তে শ্রমিকদের ব্যাপারে বাইরে থেকে যা ভাবা হচ্ছে বাস্তবের সঙ্গে তার কোন মিল নেই। কারখানার পরিবেশ অনেক ভালো। যারা বাইরে থেকে এসেছেন তারাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
No comments