খ্যাপাটে বুড়োর খ্যাপামি দেখছে বিশ্ব by রিয়াজ মিলটন
বিখ্যাত নাট্যকার শেঙ্পিয়ার আরব বংশোদ্ভূত; তাঁর আসল নাম শেখ জুবায়ের। আমেরিকানদের পূর্বপুরুষরা হচ্ছেন উত্তর আফ্রিকার লোক। এর নামকরণ করা হয়েছে 'আমির কা' নামের একজনের নামানুসারে।_
এমন সব উদ্ভট তথ্য এবং তত্ত্বের উদ্ভাবক লিবিয়ার চার দশকেরও বেশি সময়ের শাসক কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি। পোশাকের ক্ষেত্রে রুচি তার বিচিত্র, থাকেন একদল নারী দেহরক্ষীর নিরাপত্তায় এবং মাঝে মাঝেই এমন উদ্ভট সব প্রবচন ঝাড়া তার অভ্যাস। নিজেকে তিনি অভিহিত করেন আরব নেতাদের নেতা, আফ্রিকার রাজাদের রাজা এবং মুসলমানদের ইমাম বলে।
তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পশ্চিমাসমর্থিত রাজা প্রথম ইদ্রিসকে হটিয়ে ১৯৬৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর ক্ষমতা দখল করেন গাদ্দাফি। জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রের ধুয়া তুলে তরুণ গাদ্দাফি নিজেকে দ্রুতই প্রতিষ্ঠা করেন এক বিপ্লবী, অভাবনীয় এবং বর্ণাঢ্য নেতা হিসেবে। নিজেকে মিসরের প্রেসিডেন্ট এবং আরব জাতীয়তাবাদের নেতা গামাল আবদেল নাসেরের অনুসারী হিসেবে প্রচার করেন। কখনো তিনি নিজেকে দাবি করেন মাও সে তুং, স্টালিন কিংবা হিটলারের ভক্ত বলে।
১৯৪২ সালে সারতের কাছাকাছি এক মরুভূমিতে বেদুইন তাঁবুতে জন্ম গাদ্দাফির। পশ্চিমারা আরবের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত এমন কথা বলে ক্ষমতা গ্রহণের অল্পকালের মধ্যেই পশ্চিমাদের খেপিয়ে তোলেন তিনি। গাদ্দাফির নেতৃত্বে লিবিয়া আন্তর্জাতিকভাবে প্রথম একঘরে হয় ১৯৮৮ সালে স্কটল্যান্ডের লকারবির আকাশে আমেরিকার বিমানে হামলার পর। দীর্ঘদিন পশ্চিমা অবরোধে থাকার পর ওই হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হওয়ায় অবশেষে ২০০৩ সালে পশ্চিমাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো হয়। হামলায় ২০৭ জন নিহত হয়। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাদ্দাফি আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ সময় আরবের মধ্যে এক ঐক্য গড়ে তোলার সাধনায় লিপ্ত হন তিনি।
গাদ্দাফির পতনের দাবিতে কয়েক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চলছে লিবিয়ায়। দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বেনগাজিসহ দেশটির বেশির ভাগেরই নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে বিরোধীদের হাতে। এ অবস্থায় খ্যাপাটে প্রকৃতির গাদ্দাফির পাগলামি ও নৃশংসতা আবারও দেখতে পাচ্ছে বিশ্ববাসী। রাজধানী ত্রিপোলির গ্রিন স্কয়ারে গত শুক্রবার তিনি হাজির হন সমর্থকদের সামনে। সমর্থকদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত অথচ আতঙ্কে হিম ধরানো বক্তব্যে তিনি বিক্ষোভকারীদের কঠোর হাতে দমনের অঙ্গীকার করে বলেন, 'তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমরা তাদের পরাজিত করব। যদি প্রয়োজন হয় আপনাদের জন্য অস্ত্রভাণ্ডার খুলে দেব।' যে ইসলামকে ভিত্তি করে তিনি তাঁর মসনদ ধরে রেখেছিলেন সেই ইসলামেরই ধ্বজাধারী আরেক গোষ্ঠী তালেবানকে তিনি বিক্ষোভের মদদদানের অভিযোগ তোলেন। সামনাসামনি তাকে দেখলে চমকে উঠতে হয়। প্রায়ই রঙচঙে ঢিলেঢালা পোশাক পরেন। আমাজনিয়ান স্টাইলে সজ্জিত উচ্চপর্যায়ের দেহরক্ষী পরিবেষ্টিত থাকেন। যখন উর্দি পরেন তখন তাঁর জামা, কাঁধ ও টুপি থাকে সোনালি সুতায় কাজ করা এবং মেডেলে সজ্জিত।
ব্রিটেনে সামরিক প্রশিক্ষণ পাওয়া সেনা কর্মকর্তা ও 'গ্রিন বুক' নামের একটি বইয়ের লেখক গাদ্দাফি ভালোবাসেন নারীসঙ্গ। তাঁর খ্যাপামির আরেক নিদর্শন তাঁর ঐতিহ্যবাহী বেদুইন তাঁবু। রাষ্ট্রীয় অতিথিদের তাঁবুর নিচেই আপ্যায়িত করতে পছন্দ করেন তিনি। এমনকি বিদেশ সফরেও বাদ যায় না তাঁবু ও নারী। ২০০৭ সালে প্যারিস সফরে সঙ্গে নিয়ে যান তাঁবু। সেখানের সরকারি অতিথি ভবনের বাগানে খাটানো হয় তাঁর ২০০ বর্গফুটের তাঁবুটি।
গত বছর আগস্টে ইতালি সফরে গিয়ে সৃষ্টি করেন এক বিতর্ক। তিনি বলেন, 'ইউরোপের সবার ধর্ম হওয়া উচিত ইসলাম।' রোমে ৫০০ তরুণীকে তার বক্তৃতা শোনার জন্য অর্থ প্রদান করা হয় বলে শোনা যায়। রসিকতা করতে ছাড়েন না মিত্রদের নিয়েও। ২০০৫ সালে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসসহ কয়েকজন আরব নেতা ও ফিলিস্তিনিদের তিনি 'ইডিয়ট' বলে সম্বোধন করেন। প্রয়াত সৌদি বাদশাহ ফাহাদের মুখের ওপর একবার সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়েছিলেন তিনি। তিনি হাতে সাদা গ্লাভস পরেন যাতে 'জনগণের রক্তরঞ্জিত কয়েকজন আরব নেতার হাত তাকে স্পর্শ করতে না হয়।' আজ জনগণের রক্তে নিজের হাতই রঞ্জিত করছেন তিনি। জাতিসংঘের মতে, গাদ্দাফির সরকারি বাহিনী ও সমর্থকদের হাতে দুই হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে গত কয়েক দিনে। সূত্র: এএফপি।
তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পশ্চিমাসমর্থিত রাজা প্রথম ইদ্রিসকে হটিয়ে ১৯৬৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর ক্ষমতা দখল করেন গাদ্দাফি। জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রের ধুয়া তুলে তরুণ গাদ্দাফি নিজেকে দ্রুতই প্রতিষ্ঠা করেন এক বিপ্লবী, অভাবনীয় এবং বর্ণাঢ্য নেতা হিসেবে। নিজেকে মিসরের প্রেসিডেন্ট এবং আরব জাতীয়তাবাদের নেতা গামাল আবদেল নাসেরের অনুসারী হিসেবে প্রচার করেন। কখনো তিনি নিজেকে দাবি করেন মাও সে তুং, স্টালিন কিংবা হিটলারের ভক্ত বলে।
১৯৪২ সালে সারতের কাছাকাছি এক মরুভূমিতে বেদুইন তাঁবুতে জন্ম গাদ্দাফির। পশ্চিমারা আরবের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত এমন কথা বলে ক্ষমতা গ্রহণের অল্পকালের মধ্যেই পশ্চিমাদের খেপিয়ে তোলেন তিনি। গাদ্দাফির নেতৃত্বে লিবিয়া আন্তর্জাতিকভাবে প্রথম একঘরে হয় ১৯৮৮ সালে স্কটল্যান্ডের লকারবির আকাশে আমেরিকার বিমানে হামলার পর। দীর্ঘদিন পশ্চিমা অবরোধে থাকার পর ওই হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হওয়ায় অবশেষে ২০০৩ সালে পশ্চিমাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো হয়। হামলায় ২০৭ জন নিহত হয়। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাদ্দাফি আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ সময় আরবের মধ্যে এক ঐক্য গড়ে তোলার সাধনায় লিপ্ত হন তিনি।
গাদ্দাফির পতনের দাবিতে কয়েক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চলছে লিবিয়ায়। দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বেনগাজিসহ দেশটির বেশির ভাগেরই নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে বিরোধীদের হাতে। এ অবস্থায় খ্যাপাটে প্রকৃতির গাদ্দাফির পাগলামি ও নৃশংসতা আবারও দেখতে পাচ্ছে বিশ্ববাসী। রাজধানী ত্রিপোলির গ্রিন স্কয়ারে গত শুক্রবার তিনি হাজির হন সমর্থকদের সামনে। সমর্থকদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত অথচ আতঙ্কে হিম ধরানো বক্তব্যে তিনি বিক্ষোভকারীদের কঠোর হাতে দমনের অঙ্গীকার করে বলেন, 'তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমরা তাদের পরাজিত করব। যদি প্রয়োজন হয় আপনাদের জন্য অস্ত্রভাণ্ডার খুলে দেব।' যে ইসলামকে ভিত্তি করে তিনি তাঁর মসনদ ধরে রেখেছিলেন সেই ইসলামেরই ধ্বজাধারী আরেক গোষ্ঠী তালেবানকে তিনি বিক্ষোভের মদদদানের অভিযোগ তোলেন। সামনাসামনি তাকে দেখলে চমকে উঠতে হয়। প্রায়ই রঙচঙে ঢিলেঢালা পোশাক পরেন। আমাজনিয়ান স্টাইলে সজ্জিত উচ্চপর্যায়ের দেহরক্ষী পরিবেষ্টিত থাকেন। যখন উর্দি পরেন তখন তাঁর জামা, কাঁধ ও টুপি থাকে সোনালি সুতায় কাজ করা এবং মেডেলে সজ্জিত।
ব্রিটেনে সামরিক প্রশিক্ষণ পাওয়া সেনা কর্মকর্তা ও 'গ্রিন বুক' নামের একটি বইয়ের লেখক গাদ্দাফি ভালোবাসেন নারীসঙ্গ। তাঁর খ্যাপামির আরেক নিদর্শন তাঁর ঐতিহ্যবাহী বেদুইন তাঁবু। রাষ্ট্রীয় অতিথিদের তাঁবুর নিচেই আপ্যায়িত করতে পছন্দ করেন তিনি। এমনকি বিদেশ সফরেও বাদ যায় না তাঁবু ও নারী। ২০০৭ সালে প্যারিস সফরে সঙ্গে নিয়ে যান তাঁবু। সেখানের সরকারি অতিথি ভবনের বাগানে খাটানো হয় তাঁর ২০০ বর্গফুটের তাঁবুটি।
গত বছর আগস্টে ইতালি সফরে গিয়ে সৃষ্টি করেন এক বিতর্ক। তিনি বলেন, 'ইউরোপের সবার ধর্ম হওয়া উচিত ইসলাম।' রোমে ৫০০ তরুণীকে তার বক্তৃতা শোনার জন্য অর্থ প্রদান করা হয় বলে শোনা যায়। রসিকতা করতে ছাড়েন না মিত্রদের নিয়েও। ২০০৫ সালে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসসহ কয়েকজন আরব নেতা ও ফিলিস্তিনিদের তিনি 'ইডিয়ট' বলে সম্বোধন করেন। প্রয়াত সৌদি বাদশাহ ফাহাদের মুখের ওপর একবার সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়েছিলেন তিনি। তিনি হাতে সাদা গ্লাভস পরেন যাতে 'জনগণের রক্তরঞ্জিত কয়েকজন আরব নেতার হাত তাকে স্পর্শ করতে না হয়।' আজ জনগণের রক্তে নিজের হাতই রঞ্জিত করছেন তিনি। জাতিসংঘের মতে, গাদ্দাফির সরকারি বাহিনী ও সমর্থকদের হাতে দুই হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে গত কয়েক দিনে। সূত্র: এএফপি।
No comments