আইপিএফএফ প্রকল্প হোঁচট খেল বিশ্বব্যাংকের কারণে by হামিদ-উজ-জামান মামুন
প্রথম পর্যায়ে স্বার্থক বাস্তবায়নের পর দ্বিতীয় পর্যায়ে এসে হোঁচট খেয়েছে ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এ্যান্ড ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (আইপিএফএফ) প্রকল্প। বিশ্বব্যাংকের অর্থ ব্যয় করতে না পারার ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে একটি অবস্থান পত্র দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে অন্যান্য কারণ থাকলেও বিশ্বব্যাংকের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তনের কারণেই এমনটি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। সূত্র জানায়, ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এ্যান্ড ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (আইপিএফএফ) প্রকল্পটি প্রথম পর্যায়ে (জানুয়ারি ২০০৭ থেকে ডিসেম্বর ২০১১ পর্যন্ত।) অন-লেন্ডিং কার্যক্রম অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে শেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময় ব্যয় করা হয় ৫ কোটি মার্কিন ডলার। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কিছু বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্পে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ হিসেবে এ অর্থ বিতরণ করা হয়। এর ফলে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে এবং আরও ২৫ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ করে। এর মধ্যে ৭০ লাখ মার্কিন ডলার কারিগরি সহায়তা খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু নানা কারণে প্রকল্পের দ্বিতীয় মেয়াদের বাস্তবায়ন অগ্রগতি অত্যন্ত শ্লথ হয়ে পড়ে। এ মেয়াদে বর্তমান পর্যন্ত শুধুমাত্র নতুন একটি প্রকল্পে ১০ লাখ ৪৩ হাজার মার্কিন ডলার ঋণ প্রদান করা হয়েছে। ফলে অন-লেন্ডিং-এর সমুদয় অর্থ প্রকল্পের মেয়াদকালীন সময়ের মধ্যে ব্যবহার করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে প্রকল্পটির মেয়াদ এক বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করাসহ আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন এনে ফিন্যান্সিং এগ্রিমেন্ট সংশোধন করা হয়েছে।প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায়ের বাস্তবায়ন অগ্রগতি এবং প্রথম পর্যায়ে এত স্বার্থক বাস্তবায়নের পর দ্বিতীয় পর্যায়ে কেন এখন আর এগুতে পারছে না সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা চেয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে একটি চিঠি দেয়া হয় প্রকল্প পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আবুল কাসেমের কাছে। এতে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ একটি অবস্থানপত্র প্রণয়ন করে জরুরী ভিত্তিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হলো। উক্ত অবস্থানপত্র পাওয়া গেলে অর্থমন্ত্রীর জন্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হবে।
এ প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রীর জিজ্ঞাসার ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক ও ডেপুটি গবর্নর আবুল কাসেম। গত ২ জানুয়ারি এ চিঠি দেয়া হয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে। এতে দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন এত করুণ হওয়ার কারণ সম্পর্কে ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, প্রথমত, পাইপলাইনে থাকা দু’টি সম্ভাবনাময় প্রকল্পে অর্থায়নের লক্ষ্য নিয়ে আইপিএফএফ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়েছিল। প্রথমটি সামিট বিবিয়ানা বিদ্যুত প্রকল্প ১ ও ২ অর্থায়নের পরিমাণ মোট ১১ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। যেটি দরপত্র সংক্রান্ত জটিলতায় বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে সম্মত হয়নি এবং দ্বিতীয়টি নিউ মুরিং কন্টেনার টার্মিনাল প্রকল্প, যার ব্যয় ৬ কোটি মার্কিন ডলার। যেটি এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক দরপত্র সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। উক্ত প্রকল্প দুটিতে অর্থায়ন হলে অন-লেন্ডিং-এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যবহার করা সম্ভব হতো।
দ্বিতীয়ত, বৃহৎ প্রকল্পে ম্যান্ডেট নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বিশ্বব্যাংক ২০১২ সালের ১৪ জুন এইড মেমোরিস-এর মাধ্যমে বৃহৎ প্রকল্পে অর্থায়ন হঠাৎ তাদের অবস্থান পরিবর্তন করায় আইপিএফএফ প্রকল্পে দ্বিতীয় মেয়াদে বরাদ্দ ২৫ কোটি মার্কিন ডলার অর্থায়ন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তৃতীয়ত, আইপিএিফএফ প্রকল্প শুধু সরকার কর্তৃক অনুমোদিত পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পে অর্থায়ন করতে পারে। পিপিপি অফিসের সিইও নিয়োগসহ উক্ত অফিসকে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করতে বেশ কিছু সময় ব্যয় হওয়া এবং পিপিপি প্রকল্পের পাইপলাইনে অর্থায়নযোগ্য প্রকল্প না থাকায় অন-লেন্ডিং কম্পোনেন্ট ব্যবহার ধীর গতির অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, আইপিএফএফ প্রকল্প হতে অন-লেন্ডিং কম্পোনেন্টের ব্যবহারের অগ্রগতি ধীর হলেও প্রকল্পের টিএ কম্পোনেন্ট হতে নবগঠিত পিপিপি অফিসকে সম্পূর্ণ কার্যক্ষম করার লক্ষ্যে দ্রব্য ও সেবা সরবরাহসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সামর্থ্য ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণ এবং পিপিপি বাস্তবায়নের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম সম্পূর্ণ করা হয়েছে। বর্তমানে পিপিপি অফিসে একজন দক্ষ সিইও নিয়োগসহ পিপিপি অফিস পূর্ণ্যোদমে কার্যক্রম শুরু করায় শীঘ্রই পিপিপি পাইপলাইনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রকল্প আনয়ন সম্ভব হবে। এর মাধ্যদিয়ে প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অন-লেন্ডিং-এর সমুদয় অর্থ ব্যবহার সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
No comments