ব্যস্ত জীবনে আনন্দঘন অবসর
এখন নাগরিক জীবনযাপনে ব্যস্ততা সবাইকে রীতিমতো অস্থির করে রাখছে। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য একটু সময় দেবার ফুরসত হয় না অনেকের। মানুষ যন্ত্র বা রোবটের মতো নয় কোনভাবেই।
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কাজের ফাঁকে অবসর দরকার। সবাই শত ব্যস্ততার ফাঁকে নিজের জন্য অবসর সময় বের করে নেয় ঠিকই। কাজের অনেক ব্যস্ততার ফাঁকে মনের মাঝে ভেসে ওঠে প্রিয়জনের মুখটি। মোবাইল ফোনের দিকে চোখ থাকে, কখন তার ফোন আসে। দুদ- তার সঙ্গে কথা বলার পর মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায়। প্রিয় মানুষকে দূরে রাখলে তার জন্য মনটা কেবলই অস্থির হয়। সারাদিনের অনেক ব্যস্ততা শেষে যখন বাড়ি ফেরে মানুষ তখন ক্লান্তির ভারে শরীর নুয়ে আসতে চায়, প্রাণ খুলে কথা বলা, প্রিয় মানুষটির চোখে চোখ রেখে মনের কিছু একান্ত অনুভূতি প্রকাশ করার ইচ্ছাটাও মরে যায়। এ কারণে নাগরিক ব্যস্ততার মধ্যে মানুষ যখন ছুটির দিনগুলো পায় শুধুমাত্র নিজের জন্য তখনও নানা ব্যস্ততা থাকে। এগুলো ঘরোয়া কাজের ব্যস্ততা। যেমন বাজার করা, ঘরের নানা কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। সপ্তাহের কর্মদিবসগুলোতে সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে যখন নাগরিক জীবনের মানুষগুলো বাড়ি ফেরে তখন কাজের ক্লান্তিতে মন খুলে হাসারও সুযোগ পায় না। তাই বেশিরভাগ মানুষ এখন ছুটির দিনে কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়ে ঘরের কোণে। গুটিয়ে রাখতে চায় নিজেদের। চুটিয়ে অবসর মুহূর্তগুলো উপভোগের ইচ্ছাটা মরে যায় অনেক টেনশন এবং ব্যস্ততার চাপে। একটু গভীরভাবে চিন্তা করুন। আপনার প্রিয়জনকে দেবার মতো এটুকুই শ্রেষ্ঠ সময়। তাই অলসতা ত্যাগ করে চুটিয়ে আনন্দফুর্তি করুন। সময়টাকে উপভোগ করুন। দেখবেন, সপ্তাহান্তের এই নিরন্তর ব্যস্ততায় ছুটে বেড়ানোর আমেজে বাকি পুরো সপ্তাহ কেটে যাবে নিচ্ছিদ্র আবরণে ভর করে।? কয়েক দিন আগে থেকেই পরিকল্পনা করুন কিভাবে কাটাবেন ছুটির দিনগুলো। একটা চেক লিস্ট তৈরি করুন। সময়টাকে আগেই গুছিয়ে নিন যাতে এর অপচয় না হয় এবং সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়।
? ছুটির দিনগুলোতে দু’জনে মিলে কাটাবেন না দল ভারি করতে সঙ্গে আরও কাউকে নেবেন, চিন্তাভাবনা করুন। যদি অন্য কাউকে নিতে হয় তাহলে তাকে জানিয়ে দিন আপনার রুচি, পছন্দ-অপছন্দ। আপনার সঙ্গে বেড়াতে গেলে আপনার রুচি ও পছন্দের বিপরীতে কিছু করা যাবে না, সতর্ক করে দিন। চেষ্টা করুন ব্যাচেলরদের এই প্রোগ্রামে না রাখতে। অহেতুক এদের ডেকে এনে বোর করার কোন মানে হয় না।
? সময়টুকু ভাগ করে নিন। কোথায় যাবেন, কেন যাবেন, সেখানে গিয়ে কি কি করবেন; এগুলোর প্রোগ্রাম-সিডিউল আগে থেকে ঠিক করে নিন। বেড়াতে গিয়ে খুব বেশি দৌড়ঝাঁপের প্রয়োজন নেই। তাহলে ক্লান্তির কারণে ছুটির পরদিন অফিসের ঝক্কিঝামেলা সামলানো কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
? ঢাকার বাইরে কোথাও যেতে চাইলে ট্রান্সপোর্টের ব্যাপারে বিশেষ নজর দিতে হবে। বেড়াতে যেতেই যদি দিনের অর্ধেকটা সময় চলে যায় তাহলে সেখানে গিয়ে মজা করবেন কখন? তবে হ্যাঁ, লং ড্রাইভে যেতে চাইলে সেটা ভিন্ন ব্যাপার।
? ছুটির দিনে কোথাও যাবার সময় সঙ্গে পছন্দের জিনিসগুলো নিয়ে নিন। যেমন খুব প্রিয় কোন খাবার, প্রিয় ড্রিংকস, ল্যাপটপ, এমপি থ্রি, ক্যামেরা, সিডি, প্রিয় কোন লেখকের বই।
? বেড়াতে যাবেন তার একটা আমেজ আগের দিন রাতেই নিয়ে রাখুন। এতে সকালবেলা আলাদা একটা আনন্দময় অনুভূতি উপভোগ করবেন। অল্পবিস্তর পরিশ্রম আর গায়ে লাগবে না।
? বেড়াতে যাবার আগে প্রিয়জনের জন্য কোন সারপ্রাইজ গিফট রাখতে পারেন। যেটা স্পটে গিয়ে দেবেন। তবে অনেক বন্ধুবান্ধব মিলে গেলে এটা একটা একটু খেলো মনে হতে পারে।
? দু’জনে একটু কাছাকাছি কিছুটা সময় কাটান। সেটা হতে পারে প্রকৃতির নির্জনে অথবা ঘরের কোণে। যদি সে আপনাকে কিছু বলতে চায় কিংবা তাকে আপনার কিছু বলার থাকে তবে এটাই শ্রেষ্ঠ সময় হবে।
? প্রকৃতিকে উপভোগের পাশাপাশি আপনার প্রিয় মানুষটিকেও উপভোগ করুন। তার মাঝে লুকিয়ে থাকা সুন্দর বিষয় ও উপাদানগুলো নাগরিক ব্যস্ততায় হয়ত খুঁজে বের করা সম্ভব হয় না। ছুটির দিনে একান্ত মুহূর্তগুলোতে তার সুন্দর বিষয়গুলো খুঁজে বের করুন। এতে করে পরস্পরের প্রতি ভালবাসা বাড়বে।
? শুধুমাত্র বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়িয়ে নয় ঘরে বসেও ছুটির দিনটি চমৎকারভাবে কাটানো যেতে পারে। ছুটির দিনগুলোতে অনেকেই বাসায় ভাল খাবারদাবার রান্না করে। পছন্দের আইটেম বাজার থেকে এনে জম্পেশ রান্না হয়। খাওয়াদাওয়ার ব্যস্ততায় সময়টা কোনদিকে পেরিয়ে যায় টের পাওয়া যায় না। এতে করে বাড়িতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয়। কিন্তু একটু ধীরে ধীরে পরিকল্পনা মাফিক সব কিছু সাজানো হলে বাড়িতে বসেই ছুটির দিনটি উপভোগ করা যায়।
? ছুটির দিনগুলো বাড়িতে থাকলে পছন্দের সিনেমাটি দেখে নিতে পারেন ডিভিটিতে। এখানে তাড়াহুড়া নেই। টেনশন ফ্রি হয়ে ছবি দেখার মজাটাই আলাদা। ছবি দেখার প্রোগ্রামটি একটু ভিন্নভাবে আয়োজন করা যায়। যেদিন বাইরে থেকে পছন্দের খাবারদাবার আনতে পারেন। সিনেমা দেখার সময় সঙ্গে নিতে পারেন পপকনর্, গরম কফি, অথবা কোল্ড ড্রিংকস।
? ছুটির দিনে বাইরে সিনেমা হলে গিয়েও ছবি দেখা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভাল পরিবেশসমৃদ্ধ সিনেমা হলে না গেলে ছুটির আনন্দ মাটি হয়ে যেতে পারে।
? ছুটির দিনে বাড়িতে রান্নাবান্নায় কোন নতুনত্ব আনতে পারেন। এটাও খুব ভাল আয়োজন হবে। এক্ষেত্রে সবাই মিলেমিশে কাজগুলো করলে বাড়তি আনন্দ যোগ হতে পারে।
? ছুটির দিনে বিকেলে চায়ের টেবিলে পুরনো ছবির অ্যালবাম খুলে বসতে পারেন। এর মাধ্যমে সবাই খুব কাছাকাছি থেকে একটা নস্টালজিক সন্ধ্যা কাটাতে পারেন।
? বিয়ের পর ছুটির দিনটা অনেকের কাছে একটু বিশ্রাম মনে হয়। হ্যাঁ, প্রয়োজনবোধ করলে বিশ্রাম নিতে পারেন। জীবনে বিশ্রামেরও প্রয়োজন আছে। ছুটির দিনগুলো নিরিবিলিভাবে একটু বিশ্রাম না হয় নিলেন। তবে এই বিশ্রামটুকু বৈচিত্র্যপূর্ণ ও আনন্দময় করে তোলার উপায় রয়েছে। শুধু গল্পে গল্পে কাটিয়ে দিতে পারেন পুরো সময়।
বন্ধুবান্ধবদের ছুটির দিনে বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে আনতে পারেন কিংবা নিজেরা অতিথি হয়ে তাদের কারও বাড়িতে হাজির হতে পারেন। সবাই যদি একটা একটা করে খাবারের আইটেম নিয়ে আসে তাহলে আড্ডাটা বেশ জমে উঠতে পারে। সারা দিন বিশ্রাম নেবার পরে ক্লান্ত বিকেলে কাছাকাছি পার্ক-লেকের ধারে কিংবা নদীর পারে ঘুরতে গেলেও মনটা ফুরফুরে, তরতাজা হয়ে উঠবে।
? ছুটির দিনে বিকেলে পছন্দের খাবারের দোকানে যেতে পারেন। কিংবা রিক্সায় সঙ্গে প্রিয়জনকে নিয়ে চক্কর দিয়ে হাওয়া খেতে পারেন। এরপর প্রিয় খাবার দোকানে একটু খাওয়াদাওয়া সেরে রাতে বাসায় ফিরতে পারেন অনেক উষ্ণমধুর স্মৃতি নিয়ে।
এভাবে ছুটির দিনগুলো আনন্দ উপভোগের মধ্যে কাটালে পরদিন অফিস করতে আর বোর লাগবে না। নতুন উদ্যমে চাঙ্গা মন, ঝরঝরে শরীর নিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন। আবার কবে আসবে সেই আনন্দময় উপভোগ্য ছুটির দিন তার প্রতীক্ষায় আপনার মন আনচান করবে। তেমনি আরেকটি জমজমাট ছুটির দিন কাটানোর জন্য পরিকল্পনা শুরু করে দিন।
ফারহানা তাসনিম
মডেল : সনি ও বৈশাখী
No comments