ফেলানী হত্যার দুই বছর পূর্তি আজ
কুড়িগ্রামে ফেলানী হত্যার ২ বছরপূর্তি আজ সোমবার। এই দিনে ভারত থেকে বাংলাদেশের ফুলবাড়ী সীমান্তের অনন্তপুর এলাকায় কাঁটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে পার হয়ে নিজ বাড়িতে আসার সময় বিএসএফের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয় কিশোরী ফেলানী।
এ সময় প্রায় ৪ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থেকে বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারায় ফেলানী। সে দিনের বিএসএফের সেই মর্মান্তিক ঘটনা শুধু ফেলানির পরিবারকে নয়, বিশ্ববিবেককেও কাঁদিয়েছে। ফেলানীর মৃত্যু উপলক্ষে পারিবারিকভাবে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। রবিবার সকালে অনন্তপুর গ্রামে ফেলানীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক করুণ দৃশ্য। একসময় ফেলানীকে নিয়ে সারাপৃথিবীর মানুষের মাঝে হৈচৈ পড়লেও এখন তাদের আর কেউ খোঁজখবর রাখে না। সে সময় তার মা-বাবাকে অনেকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু কেউ রাখেনি। অনন্তপুর গ্রামের যুবক বিশ্বজিত রায় বলেন, আমাদের বাড়ি সীমান্তলাগোয়া গ্রামে। নানা কাজে সীমান্তে যেতে হয়। নিজের গরু-ছাগলটা সীমান্তে যায় ঘাস খেতে। সেটা আনতে গেলেই বিএসএফ চোরাকারবারি ভেবে গুলি করে, ধরে নিয়ে যায়। এ কারণে তাদের গ্রামের মানুষ এখনও আতঙ্কে কাটায়। ফেলানীর মা জাহানারা বেগম জানান, আমার মতো যেন আর কোন মায়ের বুক খালি না হয়। আর কোন মাকে যেন স্বপ্ন পুড়ে ছারখার হতে না হয়।ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম জানান, সরকারীভাবে অনেক সহায়তা দেয়ার কথা থাকলেও তার সবটা রাখা হয়নি। এখনও ফেলানীর কবরটা বেঁধে দেয়া হয়নি, ফেলানীর নামে একটা রাস্তার নামকরণের কথা থাকলেও সেটার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সংসারে অভাব অনটনের কারণে এ বছর ফেলানীর মৃত্যুবার্ষিকীর মিলাদ দেয়ারও সামর্থ্য নেই তাদের।
কুড়িগাম-১ আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজার রহমান জানান, দেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তি স্বাক্ষরের পরও কুড়িগ্রামের সীমান্তের মানুষ আশা করছে এবার সীমান্তে শান্তি ফিরে আসবে। বন্ধ হবে গুলির শব্দ। কিন্তু তা হয়নি। এখনও দেশের বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠছে বিএসএফের বিরুদ্ধে। বিজিবি সূত্র জানায়, ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ অবধি শুধু কুড়িগ্রামে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী মারা গেছে ৭ জন, ফায়ারিং হয়েছে ৫৬ বার, আহত ১ জন। বিএসএফের হাতে আটক হয়েছে ১১১ জন, এখনও ভারতীয় জেলে বন্দী আছে এই জেলার ৮১ জন। আবার বাংলাদেশের জেলে ভারতে আটক আছে ১৪ জন, তার মধ্যে ফেরত দেয়া হয়েছে ৮ জনকে, এখনও বন্দী আছে ৬ জন।
সীমান্তে আর গুলি চালাবে নাÑ ভারত সরকারের এমন আশ্বাসে এক সময় খুশি হলেও আশ্বস্ত হতে পারেনি সীমান্তঘেঁষা কুড়িগ্রামের মানুষ। এখনও বিনা উস্কানিতে বিএসএফ গুলি করেছে, সীমান্তের ওপারে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালাচ্ছে অমানবিক কায়দায়। এ জন্য অনন্তপুরসহ জেলার সীমান্ত গ্রামের মানুষ আজও সীমান্তসংলগ্ন তাদের জমিতে যেতে সাহস পায় না।
No comments