শীতের পিঠাপুলি
শীতের হাওয়াকে সঙ্গে নিয়ে এসে গেছে পিঠা খাওয়ার মজা। সারাবছর পিঠা খাওয়া হলেও শীতেরদিনে গরম গরম ভাপা পিঠা ও দুধচিতই খাওয়ার স্বাদই আলাদা। খেজুড় গুড় তো পাওয়া যায় সারা শীতকালই। তাই দিয়েও তৈরি করুন মজার পিঠা ও ক্ষীর।
ভাপা পিঠা যা লাগবে : আতপ চালের গুঁড়া ৪ কাপ, নারকেল কুরানো আধা কাপ, লবণ ২ চা চামচ, খেজুর গুড় ১ কাপ।যেভাবে করবেন : চালের গুঁড়া মিহি চালুনিতে চেলে নিয়ে গুঁড়ায় লবণ মেশান। এরপর এমন আন্দাজে পানি ছিটিয়ে মেশান যেন গুঁড়ি ভেজা মনে হয় অথচ দলা না বাঁধে। পানি মেশাবার পর গুঁড়া আবার চেলে নিন। ভাপা পিঠা তৈরির জন্য পাত্র পাওয়া যায়। তাতে অর্ধেকের বেশি পানি ফুটতে দিন। ঢেকে দিন।
পিঠা তৈরির জন্য ছোট দুটি বাটি নিন। বাটিতে গুঁড়া দিয়ে মাঝে কিছু নারকেল ও গুড় দিয়ে আবার গুঁড়া দিয়ে ভরে দিন। হাত দিয়ে সমান করে দিন। চাপ দেবেন না। পাতলা ভেজা কাপড়ের টুকরো দিয়ে বাটি ঢেকে, বাটির নিচের কাপড় ধরে বাটি উল্টে ফুটানো পানির পাত্রের মুখে বসিয়ে বাটি তুলে কাপড়টি দিয়ে পিঠা ঢেকে উপর ঢাকনা দিন। ৪-৫ মিনিট পর কাপড়সহ পিঠা তুলে কাপড়ে ছাড়িয়ে ঢাকা দেয়া পাত্রে পিঠা রেখে ঢাকা দিন। একইভাবে অন্য বাটিও গুঁড়া দিয়ে ভরবেন। প্রতিবার কাপড়ের টুকরা পানিতে ধুয়ে নেবেন।
গুড় ও নারকেল বাদ দিয়ে ভাপা পিঠা তৈরি করে মাংস বা ঘন দুধ দিয়ে খাওয়া যায়।
দুধে সিদ্ধ চিতই
যা লাগবে : চালের গুঁড়া ২ কাপ, লবণ আধা চা চামচ, গুড় দেড় কাপ, ঘন দুধ ২ লিটার
যেভাবে করবেন : দেড় কাপ পানিতে গুড় জ্বাল দিয়ে ছেঁকে রাখুন। চালের গুঁড়ায় লবণ ও এককাপ পানি দিয়ে মসৃণ করে মেখে নিন। পাতলা হলে আরও গুঁড়া মেশান। বেশি পাতলা বা ঘন যেন না হয়।
চিতই পিঠার খোলায় সামান্য তেল মাখিয়ে খোলা গরম করুন। খোলা গরম হলে দুই টেবিল চামচ গোলা দিয়ে ঢেকে দিন। ঢাকনার চারপাশে পানি ছিটিয়ে দিন। ৩-৪ মিনিট পর পিঠা তুলে গুড়ের সিরায় ভেজান। এভাবে সব পিঠা ভেজানো হলে চুলায় দিয়ে কিছুক্ষণ জ্বাল দিন। এরপর নামিয়ে ঠা-া করে ঘন দুধ দিয়ে একরাত ভিজিয়ে রাখুন (চিতই পিঠা ছোট ছোট ছিদ্র হলে এবং পিঠার মাঝখানে ফুললে সে পিঠা ঠিক হবে)। চিতই পিঠা দুধে না ভিজিয়ে ভাজি, ভুনা মাংস, কলিজা কারি দিয়েও খাওয়া যায়।
গোকুল পিঠা
যা লাগবে : ১. গোলার জন্য ময়দা ১ কাপ, চালের গুঁড়া আধা কাপ, তেল ২ টেবিল চামচ, দুধ আধা কাপ।
২. পুরের জন্য নারকেল কোরা ১ কাপ, ক্ষীর আধা কাপ, চিনি আধা কাপ।
৩. রসের জন্য চিনি ১ কাপ, পানি ১ কাপ।
যেভাবে করবেন : ১. গোলার সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে ভাল করে ফেটিয়ে নিন। গোলাটা যেন বেশি পাতলা না হয়। এই গোলাটা আগের দিন রাতে করে রাখলে ভাল হয়। তৈরি করার সময় আর একবার ভাল করে ফেটিয়ে নিতে হবে।
২. পুরের সব উপকরণ একটা পাত্রে মিশিয়ে একটু কম আঁচে ভাল করে নেড়ে নেবেন। যখন দেখবেন মিশ্রণটা চিটচিটে হয়ে গেছে তখন আঁচ থেকে নামিয়ে ঠা-া করে নিন। ঠা-া হলে আন্দাজমতো পুর নিয়ে প্রথমে গোল করে তারপর একটু চাপ দিয়ে চ্যাপ্টা করে রেখে দিন।
৩. চিনি ও পানি একসঙ্গে মিশিয়ে আঁচে বসিয়ে জ্বাল দিন, যখন রসটা মাঝারি গাঢ় হবে তখন আঁচ থেকে নামিয়ে নিন।
এবার কড়াইয়ে আধা কাপ তেল গরম করে একটা একটা তৈরি করে রাখা পুর ময়দার গোলায় ডুবিয়ে তেলে ভেজে তুলুন। সব ক’টা ভাজা হলে তৈরি করে রাখা চিনির রসের মধ্যে দিয়ে দিন। যখন দেখবেন ভেতরে রস ঢুকে গেছে তখন রস থেকে তুলে আলাদা পাত্রে রাখুন।
পাটিসাপটা
যা লাগবে : ১. গোলার জন্য ময়দা ১ কাপ, চালের গুঁড়া ১ কাপ, তেল ২ টেবিল চামচ, চিনি ৪ টেবিল চামচ, দুধ ১ কাপ।
২. পুরের জন্য নারকেল কোরা ২ কাপ, খোয়া ক্ষীর ১ কাপ, চিনি ১০০ গ্রাম।
যেভাবে করবেন : ১. গোলার সব উপকরণ ভাল করে মিশিয়ে খুব ভাল করে ফেটিয়ে নিন। গোলাটা যেন একটু পাতলা হয় নইলে তাওয়াতে ছড়াতে অসুবিধা হবে। প্রয়োজনে দুধ আরও একটু বেশি মেশাতে পারেন।
২. একটা পাত্র চুলায় বসিয়ে একটু গরম হলে প্রথমে চিনি ঢালুন। চিনির সঙ্গে ২ টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে নিন। যখন চিনি গলে যাবে তখন চিনির মধ্যে নারকেল কোরা ও ক্ষীর মিশিয়ে পাক দিন। সমস্ত মিশ্রণটা যখন ভালমতো চিটচিটে হয়ে যাবে তখন নামিয়ে নিন। একটু ঠা-া হলে এই মিশ্রণ থেকে লম্বা লম্বা করে আপনার পছন্দমতো পাঠিসাপটার পুর তৈরি করে রাখুন।
এবার আঁচে ননস্টিক তাওয়া বসিয়ে গরম করে সামান্য তেল ছড়িয়ে গোলার মিশ্রণ থেকে ১ চামচ (ডাল তোলা চামচ) গোলা তাওয়ায় ঢেলে ছড়িয়ে দিনÑ এমনভাবে ছড়াবেন যেন একটা গোল রুটির মতো দেখতে হয়। তলাটা একটু ভাজা হলে খুন্তি দিয়ে তলাটা তাওয়া থেকে ছাড়িয়ে নিন। এবার পুরটা গোলায় রুটির একধারে রেখে গোলাটা একধার থেকে গুটিয়ে নিন। খুন্তি দিয়ে চাপ দিয়ে চ্যাপ্টা করে একটু বাদামি রং হলে নামিয়ে নিন।
নতুন গুড়ের ক্ষীর
যা লাগবে : আতপ চাল আধা কাপ, দুধ দেড় লিটার, খেজুর গুড় পৌনে ১ কাপ
যেভাবে করবেন : চাল ধুয়ে আধ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর হাত দিয়ে কচলে চাল ভেঙ্গে দিয়ে পানিসহ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে জ্বাল দিন। চাল সিদ্ধ হলে মাঝে মাঝে নেড়ে দিন।
গুড় ভেঙে নিন। ক্ষীর ঘন হলে নামিয়ে অল্প অল্প গুড় দিয়ে নাড়ুন। সব গুড় দেয়া শেষ হলে আবার মৃদু আঁচে বসান। ঘন ঘন নাড়ুন। কয়েকবার ফুটে উঠলে নামিয়ে নিন। পরিবেশন পাত্রে ঢেলে উপরে পেস্তা বাদাম কুচি দিয়ে সাজান। চাল এমন আন্দাজ পানিতে ভেজাবেন যেন চালের সমান পানি হয় (দুধ চুলা থেকে নামিয়ে একটু ঠা-া করে গুড় দেবেন)।
মেরীনা চৌধুরী
No comments