ভারতের পর এবার নারী নির্যাতন নিয়ে বাংলাদেশে আলোচনার ঝড়- নারী নির্যাতনের আরও খবর ১৪-এর পাতায় by গাফফার খান চৌধুরী
নারী নির্যাতন নিয়ে ভারতের পর এবার বাংলাদেশেও আলোচনার ঝড় বইছে। যদিও সংশ্লিষ্টদের তরফ থেকে বলা হচ্ছে অতীতেও নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এখনও ঘটছে।
ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে। কিন্তু বর্তমানে বিষয়টিকে যেভাবে ইস্যু হিসেবে তৈরি করার চেষ্টা চলছে তার নেপথ্যে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। স্পর্শকাতর এমন বিষয়কে ইস্যু হিসেবে গড়ে তুলতে পরিকল্পিতভাবে এমন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে রীতিমত রহস্যের জন্ম দিয়েছে। ইস্যুটিকে পুঁজি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলারও চেষ্টা করে যাচ্ছে কোন কোন মহল। তারা ইস্যুটিকে ব্যাপকভাবে দেশে বিদেশে প্রচারে আনার চেষ্টাও করে যাচ্ছে। এ জন্য রীতিমত মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করারও অভিযোগ পর্যন্ত উঠেছে কোন কোন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। নারী নির্যাতনের বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।গত ১৬ ডিসেম্বর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হয় এক মেডিক্যাল ছাত্রী। আহত মেয়েটিকে উদ্ধার করে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ১১ দিন জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিঙ্গাপুরেই মারা যান। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। দিল্লীর একটি আদালতে এ ব্যাপারে দায়েরকৃত মামলার শুনানি শনিবার শুরু হয়েছে। পুলিশের এক হাজার পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে ৫ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, হত্যার অভিযোগসহ প্রমাণাদি মুছে ফেলার অভিযোগ করা হয়েছে।
এমন আলোচিত ঘটনার পর পরই গত ৭ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর থানাধীন আউশনারা ইউনিয়নের এক বাড়িতে এক কিশোরীকে নিয়ে যায় কয়েকজন। ওই বাড়িতেই প্রায় ৩ দিন আটকে রেখে কিশোরীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। এতে অসুস্থ হয়ে পড়লে কিশোরীকে মধুপুরের রসুলপুর এলাকায় ফেলে দেয় নির্যাতনকারীরা।
১০ ডিসেম্বর কিশোরী উদ্ধার হয়। এ ব্যাপারে কিশোরীর ভাই মধুপুর থানায় অভিযোগ করেন। থানা পুলিশ বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানান। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এদিনই ভোরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেফতার করে টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেফতাকৃতরা হচ্ছে, ঘটনার প্রধান হোতা যুবদল নেতা মনিরুজ্জামান মনি। মধুপুরের সুপ্তি কম্পিউটারের মালিক। এই কম্পিউটার দোকান থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। দলিল লেখক শাজাহান আলী। সে সুপ্তি কম্পিউটারে নিয়মিত দলিলের কাজ করাত। আরেকজন এসএম নুরুজ্জামান ওরফে গেদা। সেও সুপ্তি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করত। গেদার সঙ্গেই আলোচিত কিশোরীর বান্ধবী বীথি আক্তার ইভা ওরফে সাথীর সঙ্গে পরিচয়। অপরজন হারুন-উর-রশীদ।
গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন গ্রামে নাটক, যাত্রাপালা করত। সেই উদ্দেশ্যেই গ্রামের অসহায় নিরীহ মেয়েদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নাটকে অভিনয় করাত। এরপর যৌন নির্যাতন চালাত তাদের উপর। যৌন নির্যাতনের চিত্র ভিডিও করে রাখা হতো যুবদল নেতা মনির মালিকানাধীন সুপ্তি কমিম্পউটারে। ইতোমধ্যেই সুপ্তি কম্পিউটার থেকে অশ্লীল ভিডিও ও বেশকয়েকটি সিডি, দুইটি কম্পিউটার ও দুইটি ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে ২ দিন মধুপুরেই কিশোরীর চিকিৎসা হয়। এরপর ১২ ডিসেম্বর কিশোরীকে টাঙ্গাইল সদর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে এখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে কিশোরী।
এমন ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সরকার ধর্ষিতা কিশোরীকে সব ধরনের সহযোগিতা করার ঘোষণা দেয়। সরকারের এমন ঘোষণার পর ৩ জানুয়ারি কিশোরীর চিকিৎসা তদারকের জন্য ৭ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠিত হয়। মেয়েটির অবস্থা খানিকটা উন্নতির দিকে।
এদিকে ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক কারণে আন্দোলন করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই ৪০টি সংগঠন ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। সংগঠনগুলো দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দেশে অতীতেও নারী শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। অতীতে অধিকাংশ নারী শিশু নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতরা গ্রেফতার হয়নি। আবার গ্রেফতার হলেও নানা কারণে পার পেয়ে গেছে। নারী নির্যাতনের ঘটনা বর্তমানেও ঘটছে। কিন্তু হালে কোন নারী নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত কেউ রেহাই পায়নি। এসব ধর্ষকদের ছাড়াতে বা সুবিধা দিতে কেউ সুপারিশ করতে সাহস করেনি। এক্ষেত্রে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুবই কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অতীতের তুলনায় বর্তমানে নারী নির্যাতনের বিষয়কে অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জন্য মধুপুরে কিশোরী নির্যাতনের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতার সম্পৃক্ততা থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোন কিছু না ভেবেই তাদের তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করেছে। এক্ষেত্রে অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে দেখা হয়েছে।
কিন্তু বর্তমানে নারী নির্যাতনের বিষয়কে অধিক প্রচার দেয়ার চেষ্টা করছে স্বাধীনতাবিরোধীরা। কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে তারা সরকারের সময় ক্ষেপনের চেষ্টা করছে। নারী নির্যাতনকে ইস্যু বানিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে রীতিমত মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিগুলো। বেশ কয়েকটি উগ্র ইসলামী ও মৌলবাদী সংগঠনসহ একটি বিশেষ ইসলামিক দলের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনকে ইস্যু বানানোর জন্য মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া এসব রাজনৈতিক সংগঠনগুলো টাকার পাশাপাশি সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে রীতিমত জনবল নিয়োজিত করছে। পুরো বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।
No comments