দুই কোটি টাকায় খাল উদ্ধার ও খননের পর আগেরই দশা by অরূপ দত্
প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ করে রাজধানীর কল্যাণপুর খালের কিছু অংশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খনন করা হয়েছিল। কিন্তু খালটির অবস্থার উন্নতি হয়নি। আবার অনেকটা ভরাট ও পাড়ের অংশ দখল হয়ে গেছে।
প্রকল্পের কাজেও উঠেছে অনিয়মের অভিযোগ। প্রধান খালসহ কল্যাণপুরের চারটি খালের দৈর্ঘ্য প্রায় আট কিলোমিটার। ওয়াসা প্রায় দুই বছরে বিপুল অর্থ ব্যয়ে এর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। এর মধ্যে মাজার রোডের পশ্চিমে গেদারটেকসহ আশপাশের এলাকা থেকে ‘ক’ খালের উচ্ছেদে ৯৫ লাখ টাকা খরচ হয়। এটি নন্দারবাগে শুরু হয়ে দক্ষিণ দিকে প্রধান খালে মিশেছে। উচ্ছেদের পর খালটি খনন করা হয় ৮৩ লাখ টাকায়। ১৬টি দল ১৬টি অংশে কাজ করে। তবে কোনো কোনো দল সঠিকভাবে কাজ করেনি—এমন অভিযোগও রয়েছে।খালের অবস্থা এখন: সম্প্রতি বসুপাড়া মৌজায় গিয়ে দেখা যায়, খনন করা হয়েছে—খালের এমন অনেক জায়গা ভরাট হয়ে গেছে। কিছু স্থানে আদৌ খনন করা হয়েছে কি না, তা বোঝার উপায় নেই। নতুন করে গড়ে উঠেছে বস্তিঘর ও মুরগির খামার। খাল ভরাট করে আবাসন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেকে আরও স্থাপনা তোলার তোড়জোড়ও করছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান এ বিষয়ে বলেন, বিভিন্ন সময় উচ্ছেদের পর এ খাল আবারও বেদখল হয়ে গেছে। ওয়াসা রামচন্দ্রপুর খালসহ কয়েকটি খাল দখলমুক্ত করে রক্ষণাবেক্ষণ করছে। পরিদর্শন করে কল্যাণপুর খালের বিষয়েও তিনি যথাসম্ভব ব্যবস্থা নেবেন।
গণক্রয় আইন ভঙ্গ: কল্যাণপুর ‘ক’ খাল খনন বিষয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি ধরা পড়ে কাজের প্রায় দুই বছর পর। গণক্রয় আইন অনুসারে, সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে জরুরি কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা যায়। এর আওতায় ‘রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন’ (আরএফকিউ) পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকার কাজ বিনা দরপত্রে ‘স্পট কোটেশন’-এর ভিত্তিতে করা যায়। ১৬টি দলের মাধ্যমে কল্যাণপুর ‘ক’ খালের প্রতিটি ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের ১৬টি অংশের খননকাজের জন্য কাজপিছু চার লাখ ৯৮ হাজার ১০৮ টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়। কিন্তু কার্যাদেশ দেওয়ার সময় প্রাক্কলিত দর ভেঙে বাড়তি খরচ যোগ হয়। প্রতিটি কাজে পাঁচ লাখ ১৯ হাজার থেকে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার পর্যন্ত খরচ করা হয়। খননকাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৭৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। খরচ করা হয় ৮৩ লাখ ৪৯২ টাকা।
এ ছাড়া পাঁচ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের দরপত্রগুলো অনুমোদনের ক্ষমতা উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের (উৎপাদন ও সংরক্ষণ) হলেও তা মান্য করা হয়নি। প্রকল্প পরিচালক নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মো. রুহুল আমিন সাবেক এক প্রধান প্রকৌশলীকে দিয়ে (বর্তমানে অবসরে) বাড়তি দরে কার্যাদেশ দেন।
এই অনিয়মের জন্য ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান গত বছর ৩ সেপ্টেম্বর শেখ মো. রুহুল আমিনের কাছে লিখিতভাবে কৈফিয়ত তলব করেন। ২৩ অক্টোবর তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। এ বিষয়ে ওয়াসার এমডি গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছে কৈফিয়ত তলবের পর বিভাগীয় মামলা করা হয়। এখন মামলার রায়ের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে কয়েকবার প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে অভিযুক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মো. রুহুল আমিনকে পাওয়া যায়নি। বেশ কয়েকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কাজ হয়নি। রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে অতীতে রাজধানীর অন্য খাল খননের বিষয়েও অভিযোগ উঠেছিল। এতে তাঁকে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাসহ সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। তবে হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে আদালত তাঁকে কাজে নিযুক্ত করার নির্দেশ দেন।
No comments