গা ছাড়া হরতাল- অসংখ্য ককটেল গাড়ি ভাংচুর আগুন
পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার মধ্য দিয়ে সারাদেশে রবিবার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে।
র্যাব-পুলিশের কড়া প্রহরার মধ্যে পিকেটারদের রাজপথে নামার জোরাল চেষ্টা না থাকায় এই হরতাল ছিল নিরুত্তাপ। হরতালে বিশৃঙ্খলার দায়ে রাজধানীসহ সারাদেশে ১৮ দলীয় জোটের ২ শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতদের মধ্যে কাউকে কাউকে পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকিদের মধ্যে বেশ ক’জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে শাস্তি দেয়া হয়েছে। হরতাল চলাকালে আহত হয়েছে অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী। হরতালে বিশৃঙ্খলা এড়াতে ভোর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয় র্যাব-পুলিশ। তবে এর মধ্যেও হরতালসমর্থকরা ফকিরাপুলে ২টি সিএনজি, মিরপুরে দুটি বাস ও শাঁখারীবাজারে একটি গাড়ি ও বাবুবাজারে একটি মাইক্রোবাস আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এছাড়া আরামবাগ, আজিমপুর, বাংলামোটর, নিউমার্কেট, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার এলাকায় একটি করে গাড়িতে আগুন দেয় হরতাল সমর্থকরা। ফকিরাপুল, খিলগাঁও, জজকোর্ট, তেজগাঁও, পান্থপথ ও বাড্ডায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় হরতালকারীরা। বিভিন্ন স্থানে হরতালের সমর্থনে বিক্ষিপ্ত মিছিল করলেও পুলিশী বাধায় দ্রুত ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে সকালে যানবাহন কম চললেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে যানবাহনের সংখ্যাও। তবে দিনভর প্রচুর রিকশা ও অটোরিকশা চলতে দেখা যায়। গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে না গেলেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। হরতাল চলাকালে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সচিবালয়সহ বিভিন্ন অফিস-আদালত, ব্যাংক, বীমা ও শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। স্থলবন্দরগুলোতেও স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে।সকাল ৬টায় মিরপুর ৬ নম্বর বাজারের পাশে ইউনাইটেড পরিবহনের একটি বাসে হরতাল সমর্থকরা আগুন দেয়। এ সময় হরতালকারীদের ছোড়া ককটেল বিস্ফোরণে বাসের চালক আহত হন। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৬টায় মিরপুরে প্রশিকা ভবনের সামনে একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার ব্রিগেডের একটি গাড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময়ে মিরপুর কমার্স কলেজের সামনে কাছাকাছি সময়ে ৪ থেকে ৫টি হাতবোমার বিস্ফারণ ঘটে। একই সময় মিরপুর ১০ নম্বর গোলচক্করের কাছে হরতালসমর্থকরা একটি বাসে আগুন দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে একজনকে আটক করে।
সকাল পৌনে ৭টায় তেজগাঁও কলেজের সামনে ছাত্রদলের কর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় পিকেটাররা। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ২ জনকে আটক করে।
সকাল সাড়ে ৭টায় পান্থপথ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে হরতালসমর্থকদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় নাশকতার চেষ্টাকালে বনানী কাঁচাবাজারের কাছ থেকে দুই হরতালসমর্থককে আটক করে পুলিশ। সকাল ১০টায় শাঁখারীবাজারে হরতাল সমর্থকদের একটি ঝটিকা মিছিল চলার সময় একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেয়া হয়। পুলিশ ধাওয়া দিলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সোয়া ১০টায় ধানম-ি ৬ নম্বরের বেপজা কমপ্লেক্সের সামনে একটি সিএনজি অটোরিক্সা ভাংচুর করে হরতাল সমর্থকরা।এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করা হয়। সকাল সাড়ে দশটায় হরতালের সমর্থনে খিলগাঁওয়ে একটি মিছিল হলে পুলিশ মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় খিলগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি ইউনুস মৃধাকে আটক করে পুলিশ।
বেলা ১১টায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদল কমলাপুর কন্টিনেন্টাল টার্মিনালের সামনে ঝটিকা মিছিল করে ৫ থেকে ৬টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। দুপুর ১২টায় মালিবাগ রেলক্রসিংয়ের সন্নিকটে খিদমাহ হাসপাতালের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দুপুর সাড়ে ১২টায় বাবুবাজারের দুম্বা মসজিদ এলাকায় হরতাল সমর্থকরা ঝটিকা মিছিল বের করে একটি মাইক্রোবাসে আগুন দেয়। এ সময় কয়েকটি ককটেল ফাটায় তারা। এর পর একাধিক কাভার্ড ভ্যান ভাংচুর করে হরতালকারীরা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করে। সকালে বাসাবোর কদমতলা এলাকাতেও ঝটিকা মিছিল করে হরতালকারীরা। এ সময় চটের বস্তায় আগুন দিয়ে রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করে পুলিশী বাধায় ব্যর্থ হয়। দুপুর দেড়টায় পল্টন থানা যুবদল ফকিরাপুল পানির ট্যাঙ্কের সামনে মিছিল করে ২টি সিএনজি ভাংচুর ও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় এক সিএনজি ড্রাইভার আহত হন।
অন্যান্য হরতালের মতো রবিবারও নয়া পল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে র্যাব-পুলিশের কড়া প্রহরা থাকায় ভেতরে অবস্থান করা নেতাকর্মীরা রাজপথে নামার চেষ্টা করেনি। তবে মাঝে মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, ও অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম বিএনপি কার্যালয়ের গেটে অবস্থান করে মিডিয়াকর্মীদের কাছে হরতালের পক্ষে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এছাড়া মাঝেমধ্যে জাতীয় সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু, রাশেদা বেগম হীরা, শাম্মী আক্তার ও আশিফা আশরাফী পাপিয়া রাস্তায় নেমে হেঁটে হেঁটে সেøাগান দিয়ে আবার ভেতরে চলে যান। কখনও কখনও এই পাঁচ নারী সংসদ সদস্য বিএনপি কার্যালয়ের গেটে প্রতিবাদী গান গেয়ে সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় ছাত্রদলের কিছু নারীকর্মী তাদের পেছনে থেকে হরতালের পক্ষে সেøাগান দেন।
বেলা আড়াইটায় বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সামনে পরপর চারটি শক্তিশালী ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ চার রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিকরাও দ্রুত সেখান থেকে সরে পড়েন।
হরতাল চলাকালে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, সরকারের এজেন্টরা যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। পুলিশ ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের রাস্তায় মিছিল করতে বাধা দিয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ রেখেছে। তারপরও জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালন করেছে। এজন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ। তিনি বলেন, বিরোধী দলকে কর্মসূচী পালনে বাধা দিয়ে সরকার গণতন্ত্রকে খাঁচায় বন্দী করে রেখেছে।
বিকেল তিনটায় মালিবাগের সাফেনা হাসপাতালের সামনে হরতাল সমর্থকরা ৪টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পাশের গলি থেকে স্বেচ্ছাসেবক দল একটি মিছিল নিয়ে প্রধান সড়কে এসে চলন্ত সুপ্রভাত বাসে চারটি ককটেল নিক্ষেপ করে। এতে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুটি রিকশাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় একটি রিকশা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যায়। বাসের যাত্রীদের কেউ কেউ ভয়ে জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়।
সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে একটি ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে আরও ২টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ জুলহাসউদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে।
হরতাল চলাকালে সকালেই যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, তেজগাঁও, ধানম-ি ও মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করে যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। রাজধানীর বাড্ডা, তেজগাঁও ও ধানম-ি এলাকায় হরতালের সমর্থনে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর চালিয়েছে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। বাড্ডা সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে একটি মিছিল থেকে সাত-আটটি গাড়ি ভাংচুর করে তারা। এ সময় একটি সিএনজিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পরে স্থানীয় জনতা আগুন নিভিয়ে ফেলে। তেজগাঁও রেললাইনের কাছে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়ার চেষ্টা করে তারা। যাত্রাবাড়ী মাছের বাজার এলাকায় সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এ সময় যাত্রাবাড়ীতে শিবির-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে শিবিরকর্মীরা। পুলিশ প্রায় ৩০ শিবিরকর্মীকে আটক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
সকাল সাড়ে ৬টায় পুলিশের সঙ্গে পান্থপথে ধাওয়া ও পাল্টাধাওয়া হয় হরতাল সমর্থকদের। এখানে ছাত্রদল মিছিল করে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। সকাল সাড়ে ৯টায় শাখারিবাজার এলাকায় একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেয় পিকেটাররা। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় ৩ জনকে আটক করে পুলিশ। সকাল সোয়া ১০টায় নাশকতার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রাজারবাগ এলাকা থেকে পুলিশ ২৫ জনকে আটক করে। এদের মধ্যে ১৭ জনকে পল্টন থানায় এবং ৮ জনকে শাহজাহানপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
হরতালের শেষ সময়ে রাজধানীর আরামবাগে ৬টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান হয়েছে। মতিঝিলের নটরডেম কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২টি ককটেল বিস্ফোরণ পুলিশের সামনেই ঘটান হয়েছে। আরামবাগের একটি গলি থেকে স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি প্রধান সড়কে এসে নটরডেম কলেজের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এ সময় চারটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। পরে পুলিশ চলে এলে আরও ২টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মিছিলকারীরা পালিয়ে যায়।
হরতালের সমর্থনে রাজধানীর বাসাবো এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেছে জামায়াত-শিবির। এ সময় তারা একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। সকাল সাড়ে আটটার দিকে জামায়াত-শিবিরের অর্ধশত নেতাকর্মীর একটি মিছিল বাসাবো বালুর মাঠ এলাকা থেকে শুরু হয়ে কদমতলার দিকে যায়। এ সময় তারা সিটি করর্পোরেশনের একটি ময়লার গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-১১-০৬৪২) ভাংচুর করে এবং এক পর্যায়ে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালায়। পিকেটাররা মিছিল থেকে আশপাশের বাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে তারা দুটি ইজিবাইকও ভাংচুর করে। অন্যান্য এলাকার মতো হরতালের দিন সকাল থেকেই মাঠে নেমে পড়ে পুরনো ঢাকার পিকেটাররা। ভোরবেলায় যাত্রাবাড়ী কুতুবপুর এলাকায় হরতালের পক্ষে মিছিল বের করে শিবির ক্যাডাররা। ওই এলাকায় রাস্তার ওপর টায়ার জালিয়ে তারা অবরোধ সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে তারা পালিয়ে যায়। সকাল আটটার দিকে ধোলাইখাল এলাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ৮টি ককটেল নিক্ষেপ করে। এতে ওই এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হাতবোমার শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে ককটেল নিক্ষেপকারীরা পালিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ও রবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরদিকে জজকোর্টের দক্ষিণে পোগজ স্কুলের সামনে থেকে একটি ঝটিকা মিছিল বের করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি শাঁখারীবাজার মোড়ে এসে একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেয়। তাৎক্ষণিক পুলিশ এগিয়ে গিয়ে গাড়িতে পানি নিক্ষেপ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এর আগে প্রাইভেটকারের বেশির ভাগ অংশ পুড়িয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দু’জনকে আটক করে। দু’জনকে আটক করার বিষয়টি সংবাদকর্মীদের নিশ্চিত করেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুবকর সিদ্দিক।
এদিকে হরতালের সমর্থনে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সকাল ৮টা থেকে জজকোর্ট প্রাঙ্গণে কয়েক দফা মিছিল বের করে। একপর্যায়ে মিছিলটি রাস্তায় বের হয়ে আসে। তখন মিছিলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা চালায় বলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন। এতে আটজন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে ঢাকা বারের আইনজীবী এইচএম মাসুম ও আজিজুল ইসলাম বাচ্চুকে বেসরকারী ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মিছিলকারী এক আইনজীবী জানান, বেলা দেড়টার দিকে পুরনো জজকোর্ট ভবন ও নতুন ভবনের মাঝখানের গলি দিয়ে মিছিল নিয়ে রাস্তার দিকে এগোলে অন্য পাশে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে থাকা কবি নজরুল কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা হামলা করে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিত-ার এক পর্যায়ে ঢিল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১০ থেকে ১২টি কাঁদানে গ্যাসের শেল মারে। প্রায় আধা ঘণ্টা ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এ সময় পুলিশ শটগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ঘটনার পরপরই ঢাকার জজকোর্ট এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
হরতালের সমর্থনে সুপ্রীমকোর্ট জাতীয়তাবদী আইনজীবী ফোরাম এক সমাবেশ ও মিছিল করে। তবে দলের হরতালের দিনে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে কয়েকটি বেঞ্চ বসেছে। কিছু মামলার শুনানিও হয়েছে। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার মাহাবুবউদ্দিন খোকন, রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রমুখ।
হরতালবিরোধী মিছিল ॥ ১৮ দলীয় জোটের হরতাল চলাকালে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগ কার্যালয় ঘিরে ছিল নেতাকর্মীদের ভিড়। পাশাপাশি ছিল হরতালবিরোধী মিছিলও। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে হরতালবিরোধী মিছিল নিয়ে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। সকাল ১১টায় বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে দিয়ে বাংলাদেশ বামফ্রন্ট একটি হরতালবিরোধী মিছিল বের করে। বেলা ১২টার পর মগবাজার যুবলীগও একটি হরতালবিরোধী মিছিল বের করে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও আহম্মদ হোসেন এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আসলামুল হক আসলামসহ বিভিন্ন সারির নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হরতালবিরোধী মিছিলে অংশ নিতে দেখা গেছে। হরতাল চলাকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই ছিলেন বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
No comments