কলসেন্টার সমাচার by তৌফিক অপু
হঠাৎ করেই লিমন নিজের ভেতর এক ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করে। বিবিএ থার্ড সেমিস্টার শেষ। হাতে কিছু সময় রয়েছে বটে, কিন্তু পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় কোন পরিকল্পনাই যেন আঁটতে পারছে না।
শর্ট ট্যুর কিংবা লং ট্যুর কোনটাতেই আগ্রহ পাচ্ছে না। জমানো যে টাকা আছে তা খরচ হয়ে গেলে পরে বিপদে পড়তে হবে ভেবে খরচও করতে ইচ্ছে করছে না। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, বাসায় টাকা চাইতে এখন আর ভাল লাগে না। যে কারণে কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করছে। কিন্তু পড়ালেখা শেষ না হওয়াতে ভাল চাকরির জন্যও চেষ্টা চালাতে পারছে না। তাছাড়া পার্টটাইম জব এদেশে তেমন নেই। কিছু টিউশনি হাতে ছিল, কিন্তু তাও এখন বন্ধ। সব মিলিয়ে এক রকম অস্বস্তিতে দিন কাটছে। যেভাবে দিন দিন খরচ বাড়ছে তাতে করে কত আর বাসা থেকে টাকা চাওয়া যায়। এমন সময় বন্ধু আসিফ অফার করে কলসেন্টারে কাজ করার জন্য। পড়াশোনার পাশাপাশি এখানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। যা পড়াশোনার কোন ব্যাঘাত ঘটাবে না। স্টুডেন্টদের জন্য কলসেন্টারে জব খুবই সুইটেবল। কথাটা মনে ধরল লিমনের। কিন্তু কিভাবে পাওয়া যাবে চাকরিটা জানতে চাইলে আসিফ কয়েকটি ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেয়। এবং অনলাইনে আবেদন করতে বলে। কথা মতো কাজ করে লিমন এবং সন্ধান পায় একটি পার্টটাইম জবের। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কলসেন্টার জব। ছাত্রাবস্থায় এ কাজটি করা যায় বেশ আনন্দের সঙ্গে। তাছাড়া সেলারিও বেশ ভাল। গ্রামীণফোন কলসেন্টারের কর্মরত বিবিএ’র শেষবর্ষের ছাত্র প্রিন্স জানান, প্রায় বছরখানেক হলো এখানে আছেন তিনি। প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা সার্ভিস দিতে হয়। মাসে ১৫০০০ টাকা সেলারি তোলেন। যা ছাত্রদের জন্য বেশ আকর্ষণীয়। তাছাড়া সরাসরি কাস্টমার রিলেটেড প্রোগ্রাম বলে কাজটাও বেশ চ্যালেঞ্জিং এবং মজার। কলসেন্টারের চাকরির মূল যোগ্যতা সুন্দর ভয়েস। বিবিএ পড়া অবস্থায় এখানে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়। চাকরির পরিবেশ বেশ ভাল। ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে নির্বিঘেœ কাজ করা যায়। তাছাড়া ট্রান্সপোর্ট সুবিধা পাওয়া যায়। বাংলাদেশে পার্টটাইম জব খুব বেশি নেই। তার মধ্যে কলসেন্টার বেশ মানানসই একটা জব। যেমন এ মুহূর্তে গ্রামীণফোন কলসেন্টারে নিয়োগ চলছে। স্টুডেন্ট অনলাইনে আবেদন করতে পারবে। প্রাথমিক বাছাইয়ে ভোকাল বা ভয়েস টেস্ট নেয়া হয়। ভয়েস টেস্টে উন্নীত হলে ভাইভার জন্য ডাকা হয়। ভাইভাতে চূড়ান্ত করা হয় কাকে নেয়া হবে। প্রসেসিং খুবই ইজি। ঘাবড়ানোর কোন কিছু নেই। প্রয়োজন শুধু নিজেকে প্রস্তুত রাখা। টেলিকমিউনিকেশন সব কোম্পানিতেই কলসেন্টার রয়েছে। বিস্তৃত হচ্ছে এর পরিধি। এখন টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি ছাড়াও বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের গ্রাহকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর কিংবা সাহায্য সহোযোগিতার জন্য কলসেন্টার চালু করেছে। যা সত্যিকার অর্থেই ইতিবাচক দিক। যেমন ইউনিলিভার, স্কয়ার, স্বপ্ন বিভিন্ন ব্যাংক তাদের নিজস্ব কলসেন্টার চালু করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানির প্রমোশনাল কাজ করে দেয়ার জন্যও বেশ কিছু কলসেন্টার রয়েছে। যাদের কাজই হচ্ছে কোম্পানির প্রচার প্রচারণায় অংশ নেয়া। এবং সবগুলো কাজই দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করছে গ্রাজুয়েশন লেভেলের স্টুডেন্টরা। ছাত্রাবস্থায় কাজের প্রতি শ্রদ্ধা এবং পড়াশোনার গতি আরও একধাপ এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে পার্টটাইম জব খুবই উপকারী। সত্যিকার অর্থেই পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
No comments