উভয় সংকট by আসিফ আহমেদ
মহাজোট সরকার চার বছর শেষ করে আজ ৭ জানুয়ারি পাঁচ বছরে পা রাখল। তাদের বিরোধী হিসেবে পরিচিত বিএনপির এক বড়মাপের নেতা বলেছেন, ২০১৩ সাল হবে মহাজোট সরকারের বিদায়ের বছর।
যদি সংবিধান মানা হয় এবং যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়, তাহলে অন্যথা হওয়ার কথা নয়। সংবিধান মেনে নির্বাচনের পথে যাওয়া ছাড়া আওয়ামী লীগের মতো দলের বিকল্প নেই। যেমন নেই বিএনপির মতো দলের। এটা কেবল করতে পারে সামরিক বাহিনী। বাংলাদেশে কয়েকবার এটা ঘটেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট খন্দকার মোশতাক ক্ষমতায় বসেছিলেন সামরিক শাসন জারি করে। এর প্রেক্ষাপট ছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড। এইচএম এরশাদ ক্ষমতায় বসেছিলেন নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে। তার প্রথম কাজ ছিল সংবিধান স্থগিত করা। আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদকে কাজে লাগিয়ে এটা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে তাদের সংবিধান সংশোধন করতে হবে, যাতে সময়মতো নির্বাচন অনুষ্ঠান না করেও আরও কিছু সময় ক্ষমতায় থাকা যায়। এমন পথে চললে সেটা আত্মঘাতী হবে, তাতে সন্দেহ নেই। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি এমন আত্মঘাতী পথে চলার চেষ্টা করেছিল। তারা ১৯৯১ সালে গঠিত জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করে। আওয়ামী লীগসহ বিরোধীরা তাতে অংশ নেয়নি। জনগণ তাদের প্রতি সমর্থন দেয়। ফলে নির্বাচন পরিণত হয় প্রহসনে। বেশিরভাগ সংসদীয় আসনে ভোট কেন্দ্রগুলো ফাঁকা পড়ে থাকে। নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতায় বিএনপির কিছু লোক ব্যালটে সিল দিয়ে ভোটের বাক্স ভরেছিল বটে এবং জাতীয় সংসদের প্রায় সব আসনে বিএনপি জয়ীও হয়। শেষ পর্যন্ত বিএনপি মাত্র মাসখানেক ক্ষমতায় থাকতে পারে। এ ধরনের নির্বাচনে গঠিত সংসদ সংবিধান সংশোধন করে, যাতে আওয়ামী লীগের দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা স্থান পায়। খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না। কিন্তু জনগণ চায়। বিএনপি এবং তাদের মিত্র জামায়াতে ইসলামীও এ ধরনের ব্যবস্থা চাইছে। আওয়ামী লীগ যদি বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে এবং তাতে জয়ীও হয় _ তাহলেও নির্বাচন যতই 'নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু' বলে দাবি করা হোক না কেন, তার ফল দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য করানো কঠিন। যদি তাদের দেশ পরিচালনায় সাফল্যের নজির থাকত ভূরি ভূরি, তাহলে এসব প্রশ্ন তেমন বড় হয়ে সামনে আসত না। তারা ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়ী হয়েছিল। জনগণের প্রত্যাশা ছিল, খালেদা জিয়া যেসব ভুল করেছিলেন তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। 'হাওয়া ভবন' আর হবে না। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ভালো মানুষ হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটেছে বলে জনগণ মনে করে না। তাই তারা মনে করে, মহাজোটকে নিরপেক্ষ কারও কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েই নির্বাচনে ভোটারদের মুখোমুখি হতে হবে।
বিএনপির দাবিও অভিন্ন। তবে বিএনপির সমস্যা হচ্ছে ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তাদের কর্মকাণ্ড ছিল একেবারেই হতাশাব্যঞ্জক। ক্ষমতায় না থাকা পরের বছরগুলোতে দলটি নিজেদের সুপথে নিয়ে এসেছে, সেটা জনগণ এখন পর্যন্ত মনে করছে না। আর এ কারণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে তাদের দাবি ন্যায্য হলেও দল হিসেবে তারা দলের কর্মী-সমর্থকদের বাইরে থাকা নিরপেক্ষ জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে যদি এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে, তাহলে আওয়ামী লীগ প্রকৃতই বিপদে পড়বে। অন্যদিকে বর্তমানে ক্ষমতাসীনরা যদি জনমতের তোয়াক্কা না করে একতরফা নির্বাচনের পথে চলতে চেষ্টা করে, তাহলে নিজেদেরও বিপদ বাড়বে, দেশের জন্যও সৃষ্টি হবে নতুন সংকট। বাংলাদেশ এখন এ সংকটের মুখোমুখি।
আওয়ামী লীগ এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না। কিন্তু জনগণ চায়। বিএনপি এবং তাদের মিত্র জামায়াতে ইসলামীও এ ধরনের ব্যবস্থা চাইছে। আওয়ামী লীগ যদি বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে এবং তাতে জয়ীও হয় _ তাহলেও নির্বাচন যতই 'নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু' বলে দাবি করা হোক না কেন, তার ফল দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য করানো কঠিন। যদি তাদের দেশ পরিচালনায় সাফল্যের নজির থাকত ভূরি ভূরি, তাহলে এসব প্রশ্ন তেমন বড় হয়ে সামনে আসত না। তারা ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়ী হয়েছিল। জনগণের প্রত্যাশা ছিল, খালেদা জিয়া যেসব ভুল করেছিলেন তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। 'হাওয়া ভবন' আর হবে না। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ভালো মানুষ হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটেছে বলে জনগণ মনে করে না। তাই তারা মনে করে, মহাজোটকে নিরপেক্ষ কারও কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েই নির্বাচনে ভোটারদের মুখোমুখি হতে হবে।
বিএনপির দাবিও অভিন্ন। তবে বিএনপির সমস্যা হচ্ছে ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তাদের কর্মকাণ্ড ছিল একেবারেই হতাশাব্যঞ্জক। ক্ষমতায় না থাকা পরের বছরগুলোতে দলটি নিজেদের সুপথে নিয়ে এসেছে, সেটা জনগণ এখন পর্যন্ত মনে করছে না। আর এ কারণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে তাদের দাবি ন্যায্য হলেও দল হিসেবে তারা দলের কর্মী-সমর্থকদের বাইরে থাকা নিরপেক্ষ জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে যদি এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে, তাহলে আওয়ামী লীগ প্রকৃতই বিপদে পড়বে। অন্যদিকে বর্তমানে ক্ষমতাসীনরা যদি জনমতের তোয়াক্কা না করে একতরফা নির্বাচনের পথে চলতে চেষ্টা করে, তাহলে নিজেদেরও বিপদ বাড়বে, দেশের জন্যও সৃষ্টি হবে নতুন সংকট। বাংলাদেশ এখন এ সংকটের মুখোমুখি।
No comments