ওয়াশিংটনের যন্ত্রণা! by এরিক এস মারগোলিস
ভেনিজুয়েলার ২ কোটি ৯০ লাখ মানুষ তাদের অবিসংবাদিত অসুস্থ নেতা হুগো শাভেজের রোগমুক্তির জন্য প্রার্থনা করছে। ২০১১ সালে কিউবায় চতুর্থবারের মতো ক্যান্সার অপারেশনের পর থেকে শাভেজ শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত মারাত্মক জটিলতায় ভুগছিলেন।
ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করাটা যে কোনো মানুষের জন্যই অত্যন্ত যন্ত্রণাকর। তবে শাভেজের দীর্ঘমেয়াদি এই অসুস্থতা ভেনিজুয়েলা ও কিউবায় বাড়তি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে।
শাভেজের নেতৃত্বের স্টাইল তাকে দক্ষিণ আমেরিকার সমাজতান্ত্রিক 'বলিভারিয়ান বিপ্লবের' নেতৃত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই সাবেক সেনা কর্মকর্তা ভেনিজুয়েলার তেল সম্পদকে দেশের জনগণের উন্নতিতে ব্যবহার করার প্রত্যয় ঘোষণা করেন। দেশটির মাথাপিছু আয় এখন ১৩ হাজার ডলার। তবে এখনও ভেনিজুয়েলার অনেক মানুষ দৈনিক দুই ডলারে জীবনধারণ করেন। তারাই আবার শাভেজের একনিষ্ঠ সমর্থক।
শাভেজের এই মারাত্মক অসুখ ভেনিজুয়েলায় রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ১০ জানুয়ারি ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট পদে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য তার শপথ নেওয়ার কথা ছিল। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের মৃত্যু হলে ভেনিজুয়েলার সংবিধান অনুযায়ী নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়া নিয়ম। তবে শাভেজ যদি এভাবে কিউবায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকেন তখন কী করা হবে তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। তখন কি ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন?
ভেনিজুয়েলা যদি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশ না হতো তাহলে এসব স্থানীয় বিষয় হিসেবেই থাকত। তবে এ ক্ষেত্রে ভেনিজুয়েলাকে ভাগ্যবানই বলতে হবে। ধারণা করা হয়, ভেনিজুয়েলায় জ্বালানি তেলের মজুদ সৌদি আরবের মজুদকে ছাড়াতে পারে। দেশটি বিশ্বের অষ্টম জ্বালানি তেল রফতানিকারক এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে প্রধান প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনকারী।
যুত্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘ ও তিক্ত সম্পর্কের পরও ভেনিজুয়েলা আমেরিকার একটি প্রধান জ্বালানি তেল সরবরাহকারী দেশ হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। ভেনিজুয়েলা এখন যুক্তরাষ্ট্রের পেট্রোলিয়াম পরিশোধনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান 'সিটগো'র মালিক। কিউবার নেতৃত্বও গভীর উদ্বেগের সঙ্গে হুগো শাভেজের স্বাস্থ্য সংকটের দিকে তাকিয়ে আছে। ভেনিজুয়েলা কিউবাকে দৈনিক ১৫ হাজার বিবিএল জ্বালানি তেলসহ বার্ষিক সাড়ে তিনশ' কোটি ডলার সাবসিডি দিয়ে থাকে। ভেনিজুয়েলা কিউবার বড় তেল শোধনাগার নির্মাণ করছে। এটির নির্মাণ সম্পন্ন হলে তেল শোধনের ক্ষেত্রে দেশটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। জ্বালানি তেলের বিনিময়ে কিউবা ভেনিজুয়েলাকে ৩০ হাজার চিকিৎসকের সেবা দিচ্ছে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পূর্ব পর্যন্ত দেশটি কমিউনিস্ট কিউবাকে বিনা পয়সায় জ্বালানি তেল সরবরাহ করত। কিউবা তার পেট্রোলিয়াম চাহিদা মেটানোর জন্য পুরোপুরি সোভিয়েত তেল সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল ছিল। শাভেজ সবসময়ই কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর একজন একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। তাই সোভিয়েত তেল সাহায্য বন্ধ হওয়ার পর শাভেজ কিউবার সাহায্যে এগিয়ে আসেন। এতে যুক্তরাষ্ট্র রাগে ফুঁসতে থাকে। ওয়াশিংটন শাভেজের সমাজতান্ত্রিক দলের বিরোধীদের সমর্থনে এগিয়ে যায়। শাভেজের বিরোধী বড়লোক ও মধ্যবিত্তদের তার বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন খেপিয়ে তোলার চেষ্টা করে।
শাভেজ ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ে পরাজিত হলে বা প্রেসিডেন্সি চালানোর মতো সামর্থ্য তার অসুস্থতার কারণে যদি না থাকে তাহলে কিউবায় ভেনিজুয়েলার তেল সহায়তা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেতে পারে , এমনকি নির্বাচনে দক্ষিণপন্থিরা বিজয়ী হলে এই সহায়তা পুরোপুরি বন্ধও করে দেওয়া হতে পারে। তখন কিউবা মারাত্মক সংকটজনক পরিস্থিতিতে পড়বে। খোলা বাজার থেকে জ্বালানি তেল কেনার মতো বৈদেশিক মুদ্রা কিউবার কাছে নেই। হাভানা এমন দুর্দশায় পড়লে রাশিয়ার নেতা ভ্লাদিমির পুতিন তখন ক্ষিপ্রগতিতে ওয়াশিংটনকে খোঁচানোর পথ পেয়ে যেতে পারেন। ককেসাস অঞ্চল এবং অতি সম্প্রতি সিরিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ওয়াশিংটনের রাশিয়ার পায়ে পা বাধিয়ে ঝগড়া বাধানোর প্রত্যুত্তর হিসেবে মস্কো এই পথ গ্রহণ করতে পারে। রাশিয়া কিউবাকে তখন বিপদ থেকে উদ্ধারে এগিয়ে যেতে পারে। তাইওয়ান বা দক্ষিণ চীন সাগরে চীনকে ওয়াশিংটনের চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রত্যুত্তর হিসেবে চীনও এই একই পথে হাঁটতে পারে। ধারণা করুন তো! মার্কিন সপ্তম নৌবহর যেভাবে তাইওয়ান প্রণালিতে টহল দেয় একইভাবে চীনা নৌবাহিনীর জাহাজ যদি মিয়ামির অদূরে টহল দেয় তখন কেমন হবে। শাভেজ দ্রুত সেরে উঠুন। তিনি ওয়াশিংটনের জন্য আসলে একটা বড় যন্ত্রণা।
এরিক এস. মারগোলিস :প্রবীণ মার্কিন সাংবাদিক। খালিজ টাইমস থেকে ভাষান্তরিত
শাভেজের নেতৃত্বের স্টাইল তাকে দক্ষিণ আমেরিকার সমাজতান্ত্রিক 'বলিভারিয়ান বিপ্লবের' নেতৃত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই সাবেক সেনা কর্মকর্তা ভেনিজুয়েলার তেল সম্পদকে দেশের জনগণের উন্নতিতে ব্যবহার করার প্রত্যয় ঘোষণা করেন। দেশটির মাথাপিছু আয় এখন ১৩ হাজার ডলার। তবে এখনও ভেনিজুয়েলার অনেক মানুষ দৈনিক দুই ডলারে জীবনধারণ করেন। তারাই আবার শাভেজের একনিষ্ঠ সমর্থক।
শাভেজের এই মারাত্মক অসুখ ভেনিজুয়েলায় রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ১০ জানুয়ারি ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট পদে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য তার শপথ নেওয়ার কথা ছিল। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের মৃত্যু হলে ভেনিজুয়েলার সংবিধান অনুযায়ী নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়া নিয়ম। তবে শাভেজ যদি এভাবে কিউবায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকেন তখন কী করা হবে তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। তখন কি ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন?
ভেনিজুয়েলা যদি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশ না হতো তাহলে এসব স্থানীয় বিষয় হিসেবেই থাকত। তবে এ ক্ষেত্রে ভেনিজুয়েলাকে ভাগ্যবানই বলতে হবে। ধারণা করা হয়, ভেনিজুয়েলায় জ্বালানি তেলের মজুদ সৌদি আরবের মজুদকে ছাড়াতে পারে। দেশটি বিশ্বের অষ্টম জ্বালানি তেল রফতানিকারক এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে প্রধান প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনকারী।
যুত্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘ ও তিক্ত সম্পর্কের পরও ভেনিজুয়েলা আমেরিকার একটি প্রধান জ্বালানি তেল সরবরাহকারী দেশ হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। ভেনিজুয়েলা এখন যুক্তরাষ্ট্রের পেট্রোলিয়াম পরিশোধনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান 'সিটগো'র মালিক। কিউবার নেতৃত্বও গভীর উদ্বেগের সঙ্গে হুগো শাভেজের স্বাস্থ্য সংকটের দিকে তাকিয়ে আছে। ভেনিজুয়েলা কিউবাকে দৈনিক ১৫ হাজার বিবিএল জ্বালানি তেলসহ বার্ষিক সাড়ে তিনশ' কোটি ডলার সাবসিডি দিয়ে থাকে। ভেনিজুয়েলা কিউবার বড় তেল শোধনাগার নির্মাণ করছে। এটির নির্মাণ সম্পন্ন হলে তেল শোধনের ক্ষেত্রে দেশটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। জ্বালানি তেলের বিনিময়ে কিউবা ভেনিজুয়েলাকে ৩০ হাজার চিকিৎসকের সেবা দিচ্ছে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পূর্ব পর্যন্ত দেশটি কমিউনিস্ট কিউবাকে বিনা পয়সায় জ্বালানি তেল সরবরাহ করত। কিউবা তার পেট্রোলিয়াম চাহিদা মেটানোর জন্য পুরোপুরি সোভিয়েত তেল সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল ছিল। শাভেজ সবসময়ই কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর একজন একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। তাই সোভিয়েত তেল সাহায্য বন্ধ হওয়ার পর শাভেজ কিউবার সাহায্যে এগিয়ে আসেন। এতে যুক্তরাষ্ট্র রাগে ফুঁসতে থাকে। ওয়াশিংটন শাভেজের সমাজতান্ত্রিক দলের বিরোধীদের সমর্থনে এগিয়ে যায়। শাভেজের বিরোধী বড়লোক ও মধ্যবিত্তদের তার বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন খেপিয়ে তোলার চেষ্টা করে।
শাভেজ ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ে পরাজিত হলে বা প্রেসিডেন্সি চালানোর মতো সামর্থ্য তার অসুস্থতার কারণে যদি না থাকে তাহলে কিউবায় ভেনিজুয়েলার তেল সহায়তা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেতে পারে , এমনকি নির্বাচনে দক্ষিণপন্থিরা বিজয়ী হলে এই সহায়তা পুরোপুরি বন্ধও করে দেওয়া হতে পারে। তখন কিউবা মারাত্মক সংকটজনক পরিস্থিতিতে পড়বে। খোলা বাজার থেকে জ্বালানি তেল কেনার মতো বৈদেশিক মুদ্রা কিউবার কাছে নেই। হাভানা এমন দুর্দশায় পড়লে রাশিয়ার নেতা ভ্লাদিমির পুতিন তখন ক্ষিপ্রগতিতে ওয়াশিংটনকে খোঁচানোর পথ পেয়ে যেতে পারেন। ককেসাস অঞ্চল এবং অতি সম্প্রতি সিরিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ওয়াশিংটনের রাশিয়ার পায়ে পা বাধিয়ে ঝগড়া বাধানোর প্রত্যুত্তর হিসেবে মস্কো এই পথ গ্রহণ করতে পারে। রাশিয়া কিউবাকে তখন বিপদ থেকে উদ্ধারে এগিয়ে যেতে পারে। তাইওয়ান বা দক্ষিণ চীন সাগরে চীনকে ওয়াশিংটনের চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রত্যুত্তর হিসেবে চীনও এই একই পথে হাঁটতে পারে। ধারণা করুন তো! মার্কিন সপ্তম নৌবহর যেভাবে তাইওয়ান প্রণালিতে টহল দেয় একইভাবে চীনা নৌবাহিনীর জাহাজ যদি মিয়ামির অদূরে টহল দেয় তখন কেমন হবে। শাভেজ দ্রুত সেরে উঠুন। তিনি ওয়াশিংটনের জন্য আসলে একটা বড় যন্ত্রণা।
এরিক এস. মারগোলিস :প্রবীণ মার্কিন সাংবাদিক। খালিজ টাইমস থেকে ভাষান্তরিত
No comments