ঋতু বদলে শিশু by খাদিজা মহসীন
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। গ্রীষ্ম বর্ষা শীত প্রধানত এই তিনটি ঋতুই আমাদের দেশে প্রভাব বিস্তার করে বেশি। এই প্রভাব বিস্তার একদিকে যেমন প্রকৃতির উপর পড়ে তেমনি অন্যদিকে মানুষের শরীর ও মনের ওপর গভীর রেখাপাত করে।
ঋতুর পরিবর্তনে শরীরের ও মনের এই পরিবর্তন কখনও ভাল কখনও বা কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই আমাদের এই সময় একটু সতর্ক থাকতে হয়। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা সমস্যার মুখোমুখি হন বেশি। কারণ উভয়ের শরীরেই প্রয়োজনের তুলনায় প্রতিরোধ ৰমতা কম থাকে। বিশেষ করে এই ঋতু পরিবর্তনের সময় নবজাত শিশুসহ সকল শিশুকে নিয়েই মাকে সতর্ক থাকতে হয়। শিশুরা বেশি স্পর্শকাতরে বলে এই সময়গুলোতে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। গরমকালে শিশুদের খোলামেলা পোশাকে রাখা উচিত। ভয়েলের নরম কাপড়ের পোশাক শিশুদের জন্য আরামদায়ক। অহেতুক পোশাকের বাহুল্য শিশুর স্বাভাবিক আচরণে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। ফলে শিশু অশ্বসত্মিবোধ করে। তাছাড়া শিশুরা বেশি গরম বোধ করে সেটা মাকে মনে রাখতে হবে। তাই শিশুর পোশাক যাতে হাল্কা হয়, শিশুর চলাফেরা যাতে সহজ হয় সেদিকে মায়ের সতর্ক দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। আমাদের দেশে গ্রীষ্মের প্রচ- দাবদাহ অনেক সময় শিশুর শরীরে ঘাম, ঘামাচি ও ঘামাচি জাতীয় ৰতের সৃষ্টি হয়। শিশুর ঘামাচি শিশুর শরীরে এক কষ্টদায়ক অনুভূতি। এই কষ্টকর অনুভূতি থেকে শিশুকে রৰার জন্য ঘামাচি পাউডার ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত শিশুকে গোসল করিয়ে পরিষ্কার করে শিশুর সমসত্ম শরীরে ভাল করে ঘামাচি পাউডার মাখিয়ে দিতে হবে। তাহলে শিশু কিছুটা আরাম পাবে। আর ঘামাচি হলে শিশুর গায়ে তেল দেয়ার প্রয়োজন নেই। এটা শিশুর জন্যে একটি অস্বসত্মিকর ব্যাপার। গরম জনিত কারণে শিশুর দেহে ৰত সৃষ্টি হলে বা ফোঁড়া হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আবার গরমে ডায়রিয়াজনিত সমস্যাও দেখা দেয়। এ সব সমস্যার জন্য প্রয়োজন মায়ের সতর্কতা। ছোট শিশুদের অভ্যাস থাকে যে কোন জিনিষ মুখে দেয়ার। তাই শিশু যাতে নোংরা কোন জিনিস মুখে না দেয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তা ছাড়া বাসি কোন খাবার, ঠা-া খাবার কখনই শিশুকে দেয়া উচিত নয়। সব সময় বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে। মায়ের বুকের দুধের কোন বিকল্প নেই। এর বাইরে যদি বোতলে দুধ খাওয়াতে হয় তা হলে প্রতিবার দুধ খাওয়ানোর আগে বোতল গরম পানিতে কমপৰে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে জীবাণু মুক্ত করতে হবে।গ্রীষ্মের পরই আসে বর্ষা। একদিকে দুঃসহ গরম অন্যদিকে বৃষ্টির শীতল আমেজ এই দুই বৈপরীত্য শিশুকে সমস্যার মধ্যে রাখে। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের শরীরেও অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। সর্দি কাশি জ্বর জ্বর ভাব এ সময় হতেই পারে। একটু সতর্ক থাকলেই এই সব সমস্যা থেকে মায়েরা মুক্তি পেতে পারেন। শিশুরা পানি নিয়ে খেলতে খুব ভাল বাসে। লৰ্য রাখতে হবে যেন শিশু বেশিৰণ পানিতে না থাকে। কেননা একটু অসতর্ক হলেই হতে পারে বড় ধরনের সমস্যা। বুকে সর্দি বসা বা নিউমোনিয়া যাতে না হয় সে জন্য মাকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। গ্রীষ্ম বর্ষার পরেই শরৎ হেমনত্ম কাটিয়ে আসে শীত বসনত্ম। বর্ষার থেকে শীতের আগমনেও শিশুর শরীরে প্রতিক্রিয়া হয়। সর্দি-কাশি, জ্বর এগুলোর জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত যত্ন। কেননা শীতের শুষ্কতা অনেক সময় শিশুকে নিস্পৃহ নিরানন্দ করে তোলে। এই সময় শীতের তীব্রতা বেশি হলে গরম কাপড় উলের সোয়েটার দিয়ে শিশুকে সাচ্ছন্দ্য রাখার চেষ্টা করতে হবে। গোসলের আগে শিশুর গায়ে অলিভ অয়েল বা সরিষার তেল মালিশ করতে হবে। অনেক সময় তীব্র শীতে হাত-পা ফেটে যায়। এর থেকে মুক্তি চাইলে অলিভ অয়েল বা গিস্নসারিন সমসত্ম শরীরে মাখিয়ে দিতে পারেন। এ সময় বাতাসে জলীয়বাষ্প কম থাকে বলে সবার শরীর শুষ্ক হয়ে পড়ে, তাই টাটকা ফল, শাক-শব্জির সঙ্গে প্রচুর পানিও শিশুকে খাওয়াতে হবে। মায়ের সঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
"কথায় বল যতনে রতন মেলে।"
শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাই শিশুদের জন্য আমাদের করণীয় অনেক কিছু। সুস্থ এবং নিরাপদ জীবন শিশুর অধিকার। সেই অধিকার যাতে ৰুণ্ন না হয় সে দায়িত্ব আপনার, আমার সবার। আসুন শিশুদের সুস্থ্যসুন্দর জীবনের অঙ্গীকারে আমরা এগিয়ে আসি।
No comments