শীর্ষ অর্থনৈতিক দেশের দোড়গোড়ায় চীন
চীন বিশ্ব অর্থনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। জাপানকে টপকে চীন ইতোমধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিশ্বের দরবারে আবির্ভূত হয়েছে। চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উর্ধগতি আর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নানা সঙ্কট চীনকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিণত করতে হয়ত খুব বেশি সময় লাগবে না।
আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বলে ভবিষ্যতবাণী করেছে। প্যারিসভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা ও পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ‘অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ (ওইসিডি)। তাদের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ এই যে, এ বছরের শেষ নাগাদ চীনের অর্থনীতি ইউরো জোনের দেশগুলোর সম্মিলিত অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাবে। আর ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে। সংগঠনটির মতে, আগামী পঞ্চাশ বছরে বিশ্বের জিডিপি বাড়বে বার্ষিক ৩ শতাংশ হারে। ২০২৫ সাল নাগাদ চীন এবং ভারতের সম্মিলিত জিডিপি ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার সম্মিলিত জিডিপিকে ছাড়িয়ে যাবে। বৈশ্বিক মন্দার সময়ে চীনের অর্থনীতিতেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা ধীরগতি পরিলক্ষিত হয়েছিল। তবে চীনের অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা ও পদক্ষেপগুলো সময়োচিত ছিল বিধায় দেশটিকে অর্থনৈতিক মন্দা বরণ করতে হয়নি। মূলত শিল্প উৎপাদনের প্রবৃদ্ধিই এই ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। কিছু সময়ের জন্য চীনের প্রবৃদ্ধিতে নিম্নগতি বিরাজমান থাকলেও বিগত অক্টোবর মাস থেকে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গতির সঞ্চার হয়েছে। অবকাঠামো খাতে এবং শিল্প উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ বাড়ায় চীনের অর্থনীতি সচল হয়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। চীন সর্বক্ষেত্রেই প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশটিকে খুব কম পরিমাণ পণ্যই আমদানি করতে হয়। রফতানি বাণিজ্যের ওপর ভিত্তি করেই চীনের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছে। বছর প্রতি রফতানির হার বাড়ছে। চীন যে আগামী চার বছরের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হবে অর্থনীতিবিদদের এই পূর্বাভাসকে সমর্থন দিচ্ছে রফতানি হারের ক্রমবৃদ্ধি। চীনের শিল্প উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির উর্ধগতি, রফতানি বাণিজ্যের উর্ধগতির যে ধারা দেখা যাচ্ছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছে যাওয়া অসম্ভব নয় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ১৮তম কংগ্রেসেও অর্থনীতিকে গতিশীল ও প্রবৃদ্ধির হার বাড়াানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী চেন ডেমিং এ বছরের মধ্যেই প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে সাত শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির এই ধারাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের প্রধান ঝাং পিং বলেছেন, ‘চীনের উন্নয়ন হতে হবে আরও বেশি সুষম, ভারসাম্যপূর্ণ, সমন্বিত ও টেকসই। দেশের কোটি কোটি মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করার জন্যই উন্নয়নকে এভাবে এগিয়ে নিতে হবে। প্রবৃদ্ধির হার বাড়ছে। কিন্তু তাই বলে আমরা আমাদের তৎপরতা কমিয়ে দেবো না। কেননা অর্থনীতি এখনও শক্তিশালী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বর্তমানে বিশ্বে চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট, নতুন পরিস্থিতি ও অর্থনীতির সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য সবসময়ই নিজেদের প্রস্তুত রাখব।’ অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র যদিও এখনও বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে টিকে আছে। কিন্তু ঋণ করা সম্পত্তির ওপর ভিত্তি করে সারা বিশ্বের মধ্যে অর্থনৈতিক অবস্থানকে শীর্ষ পর্যায়ে ধরে রাখা সত্যিই দুষ্কর। দেশটির প্রায় ১৬ লাখ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের বোঝা এর অবস্থান ধরে রাখার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিবন্ধক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্র এই ঋণের বোঝার কারণে যেমন নিজেদের শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে পারবে না। তাছাড়া দিন দিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। এই চিত্রই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দুরবস্থাকে ফুটিয়ে তুলছে। আবার সাম্প্রতিক জাপানের অর্থনৈতিক অবস্থার নিম্নগতির কারণে এই দেশটিরও শীর্ষপর্যায়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীরগতি আর চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উর্ধগতিই চীন যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশে উন্নীত হচ্ছে বিশ্লেষকদের এই পূর্বাভাসকেই সমর্থন দেয়। বিশাল জনসংখ্যার এই দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশে পরিণত হলে সমগ্র এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।মো: আরিফুর রহমান
No comments