শিক্ষকদের জন্য শাহেদের ‘হাট’ by হাসান ফেরদৌস
শাহেদ ইসলাম সেই রকম একজন মানুষ, যাঁর নেশা অনবরত নতুন কিছু করা, নতুন কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া। কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র, ফলে ইন্টারনেট ব্যাপারটা খুব ভালো বোঝেন। এর সম্ভাবনা কতটা বিস্তৃত, সে সম্বন্ধে শুধু বইয়ের বিদ্যা নয়, হাতেকলমে তা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন।
অনলাইনে নানা রকম পণ্যের বাণিজ্য করছেন, আবার শিক্ষকদের জন্যও তৈরি করেছেন দারুণ এক ভার্চুয়াল বাজার।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সেন্ট জন’স বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সময়েই বিডিবাজার ডট কম নামে ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসায়িক উদ্যোগ নেন শাহেদ। দক্ষিণ এশিয়ার চলচ্চিত্র, সিডি, হরেক রকম গয়না, এমনকি রান্নার সাজ-সরঞ্জাম পর্যন্ত এই ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটা করা যায়। সেটা ১৯৮৮ সালের কথা।
শিক্ষাজীবন শেষে আরও নানা রকম পেশাদারি কাজে হাত দিয়েছেন, কাজ করেছেন নানা বাণিজ্যিক সংস্থার সঙ্গে। এসবের মধ্য উল্লেখযোগ্য ব্লু ক্রস অ্যান্ড ব্লু শিলড—আমেরিকার বিখ্যাত স্বাস্থ্য বিমা প্রতিষ্ঠান। ২০০৩ সালে শুরু করেন নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এসজে ইনোভেশন। এক দশক পর শাহেদের ব্যবসা এখন ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আরও তিনটি দেশ—বাংলাদেশ, ভারত ও ইউক্রেনে।
ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে নানা রকম বাণিজ্যিক ‘সার্ভিস’ দিয়ে থাকে শাহেদের প্রতিষ্ঠান। যেমন: ওয়েব ডিজাইন, ওয়েবসাইটের রক্ষণাবেক্ষণ, ডেটা এন্ট্রি ইত্যাদি। তার এই ‘আউটসোর্সিং’-এর ব্যবসায় এই তিন দেশ মিলিয়ে প্রায় ৭৫ জন উচ্চ শিক্ষিত কম্পিউটার কর্মী কাজ করছেন।
শাহেদের এই সাফল্য অবশ্য তাঁর একার নয়। স্ত্রী শাহেরা চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়েই এসজে ইনোভেশন চালু করেছিলেন। সিলেটের মেয়ে শাহেরা, কিন্তু বড় হয়েছেন ইংল্যান্ডে। শাহেদের মতো তিনিও কম্পিউটারে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। বিয়ের পর তাঁরা দুজনে মিলে গড়ে তুলেছেন এই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ব্যবসার ব্যবস্থাপনার আসল দায়িত্ব শাহেরার। তাঁরা দুজন নিজেদের প্রতিষ্ঠানের সব দেশের কর্মীদের নিয়ে আগামী কিছুদিনের মধ্যে গোয়ায় যাচ্ছেন। অবকাশ কাটানো একটা উদ্দেশ্য, কিন্তু আসল উদ্দেশ্য বিভিন্ন দেশের কর্মীদের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ, বাণিজ্যিক সম্ভাবনার নতুন ক্ষেত্র অন্বেষণ। ফলে, রথ দেখাও হবে, কলা বেচাও।
শাহেদ অন্য আরেকটি বড় কাজের সঙ্গে জড়িত, যাকে বলা যায় শিক্ষকদের হাট বা মার্কেটপ্লেস। সত্যি সত্যি হাট নয়, এটি একটি ‘ভার্চুয়াল হাট’। নাম ‘টিচার্স পে টিচার্স’। অনেকটা ই-বে-র মতো, যেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোনো জিনিস বিকিকিনি করা যায়। তফাত হলো, এখানে মূলত শিক্ষকেরা কেনাবেচা করতে পারেন। কারও নিজের নতুন বই, নতুন কোনো পাঠ্যসূচি অথবা পাঠ-সহায়ক গ্রন্থ। বিশ্বজুড়ে শিক্ষকদের জন্য এই হাটের কথা প্রথম ভাবেন নিউইয়র্কের স্কুল শিক্ষক পল এডেলম্যান। শুরু করেছিলেন ২০০৬ সালে। লোকের নজরে পড়েছিল, কিন্তু আহামরি কিছু নয়। চার বছর পর, বাংলাদেশের শাহেদ ইসলাম এই হাটে যোগ দেওয়ার ফলে তা এখন একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। শুধু ২০১২ সালেই এই সংস্থার মোট ব্যবসার পরিমাণ ৩০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। শাহেদ এই সংস্থার অন্যতম অংশীদার ও প্রধান কারিগরি কর্মকতা (সিটিও)। ২৮ জন্য প্রযুক্তকর্মী সরাসরি শাহেদের নেতৃত্বে এই ওয়েবসাইটটি চৌ-প্রহর চালু রাখছেন।
শাহেদের সঙ্গে তাঁর কাজ নিয়ে কথা হলো। একদম সাদাসিধে মানুষ। বাংলাদেশের সিলেটে লেখাপড়া করেছেন, তাঁর সব প্রিয় স্মৃতি এখনো সেই সিলেট শহর নিয়ে। নিয়মিত ঢাকার যান। একদল তরতাজা তরুণকে নিয়ে ঢাকার অফিস গড়ে তুলেছেন। ছেলেগুলো মেধাবী। গত কয়েক বছরে অবশ্য একটা ভিন্ন মেজাজ তাঁর নজরে এসেছে। তরুণদের মেধার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে শ্রম। ‘সেটাই বাংলাদেশের জন্য আশার কথা’, বললেন শাহেদ।
আমিই বাংলাদেশ নিয়ে পরামর্শ ও তথ্য যোগাযোগ: ab@prothom-alo.info
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সেন্ট জন’স বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সময়েই বিডিবাজার ডট কম নামে ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসায়িক উদ্যোগ নেন শাহেদ। দক্ষিণ এশিয়ার চলচ্চিত্র, সিডি, হরেক রকম গয়না, এমনকি রান্নার সাজ-সরঞ্জাম পর্যন্ত এই ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটা করা যায়। সেটা ১৯৮৮ সালের কথা।
শিক্ষাজীবন শেষে আরও নানা রকম পেশাদারি কাজে হাত দিয়েছেন, কাজ করেছেন নানা বাণিজ্যিক সংস্থার সঙ্গে। এসবের মধ্য উল্লেখযোগ্য ব্লু ক্রস অ্যান্ড ব্লু শিলড—আমেরিকার বিখ্যাত স্বাস্থ্য বিমা প্রতিষ্ঠান। ২০০৩ সালে শুরু করেন নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এসজে ইনোভেশন। এক দশক পর শাহেদের ব্যবসা এখন ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আরও তিনটি দেশ—বাংলাদেশ, ভারত ও ইউক্রেনে।
ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে নানা রকম বাণিজ্যিক ‘সার্ভিস’ দিয়ে থাকে শাহেদের প্রতিষ্ঠান। যেমন: ওয়েব ডিজাইন, ওয়েবসাইটের রক্ষণাবেক্ষণ, ডেটা এন্ট্রি ইত্যাদি। তার এই ‘আউটসোর্সিং’-এর ব্যবসায় এই তিন দেশ মিলিয়ে প্রায় ৭৫ জন উচ্চ শিক্ষিত কম্পিউটার কর্মী কাজ করছেন।
শাহেদের এই সাফল্য অবশ্য তাঁর একার নয়। স্ত্রী শাহেরা চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়েই এসজে ইনোভেশন চালু করেছিলেন। সিলেটের মেয়ে শাহেরা, কিন্তু বড় হয়েছেন ইংল্যান্ডে। শাহেদের মতো তিনিও কম্পিউটারে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। বিয়ের পর তাঁরা দুজনে মিলে গড়ে তুলেছেন এই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ব্যবসার ব্যবস্থাপনার আসল দায়িত্ব শাহেরার। তাঁরা দুজন নিজেদের প্রতিষ্ঠানের সব দেশের কর্মীদের নিয়ে আগামী কিছুদিনের মধ্যে গোয়ায় যাচ্ছেন। অবকাশ কাটানো একটা উদ্দেশ্য, কিন্তু আসল উদ্দেশ্য বিভিন্ন দেশের কর্মীদের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ, বাণিজ্যিক সম্ভাবনার নতুন ক্ষেত্র অন্বেষণ। ফলে, রথ দেখাও হবে, কলা বেচাও।
শাহেদ অন্য আরেকটি বড় কাজের সঙ্গে জড়িত, যাকে বলা যায় শিক্ষকদের হাট বা মার্কেটপ্লেস। সত্যি সত্যি হাট নয়, এটি একটি ‘ভার্চুয়াল হাট’। নাম ‘টিচার্স পে টিচার্স’। অনেকটা ই-বে-র মতো, যেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোনো জিনিস বিকিকিনি করা যায়। তফাত হলো, এখানে মূলত শিক্ষকেরা কেনাবেচা করতে পারেন। কারও নিজের নতুন বই, নতুন কোনো পাঠ্যসূচি অথবা পাঠ-সহায়ক গ্রন্থ। বিশ্বজুড়ে শিক্ষকদের জন্য এই হাটের কথা প্রথম ভাবেন নিউইয়র্কের স্কুল শিক্ষক পল এডেলম্যান। শুরু করেছিলেন ২০০৬ সালে। লোকের নজরে পড়েছিল, কিন্তু আহামরি কিছু নয়। চার বছর পর, বাংলাদেশের শাহেদ ইসলাম এই হাটে যোগ দেওয়ার ফলে তা এখন একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। শুধু ২০১২ সালেই এই সংস্থার মোট ব্যবসার পরিমাণ ৩০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। শাহেদ এই সংস্থার অন্যতম অংশীদার ও প্রধান কারিগরি কর্মকতা (সিটিও)। ২৮ জন্য প্রযুক্তকর্মী সরাসরি শাহেদের নেতৃত্বে এই ওয়েবসাইটটি চৌ-প্রহর চালু রাখছেন।
শাহেদের সঙ্গে তাঁর কাজ নিয়ে কথা হলো। একদম সাদাসিধে মানুষ। বাংলাদেশের সিলেটে লেখাপড়া করেছেন, তাঁর সব প্রিয় স্মৃতি এখনো সেই সিলেট শহর নিয়ে। নিয়মিত ঢাকার যান। একদল তরতাজা তরুণকে নিয়ে ঢাকার অফিস গড়ে তুলেছেন। ছেলেগুলো মেধাবী। গত কয়েক বছরে অবশ্য একটা ভিন্ন মেজাজ তাঁর নজরে এসেছে। তরুণদের মেধার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে শ্রম। ‘সেটাই বাংলাদেশের জন্য আশার কথা’, বললেন শাহেদ।
আমিই বাংলাদেশ নিয়ে পরামর্শ ও তথ্য যোগাযোগ: ab@prothom-alo.info
No comments