বিশ্ব অর্থনীতিতে ঋণসীমা ও ঋণসঙ্কট
বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রভাব বলার অপেক্ষা রাখে না। বিগত তিন বছর ধরে যে বৈশ্বিক মন্দা বিরাজ করছে এর মূল কারণ ইউরোপজুড়ে ঋণ সঙ্কট আর যুক্তরাষ্ট্র্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীর গতি।
ইউরো অঞ্চল জুড়ে ঋণ সঙ্কট মোকাবেলায় যে ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার প্রভাবে ইউরোপজুড়ে দেখা দেয় বেকারত্ব। সৃষ্টি হয় দরিদ্রতা। গ্রীস, ইতালী, স্পেন, পর্তুগালসহ অন্য সব দেশই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে গ্রীসের সরকারী তহবিল প্রায় শূন্যর কোঠায় পৌঁছে যায়। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গ্রীসকে ঋণ সহায়তা দিয়ে জোড়াতালির মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। ইউরোপের অন্য সকল দেশকেও অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এমনকি ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ জামার্নীর প্রবৃদ্ধিও নিম্নমুখী। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ এই সকল মোকাবেলা করার চেষ্টা করছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ফিসক্যাল ক্লিফ সমস্যার মুখোমুখি হন। অনেক আলোচনার পর রিপাবলিকানরা ব্যয় সংকোচন নীতির পরিবর্তে ধনীদের ওপর করের বোঝা বাড়ানোর পদক্ষেপ মেনে নেয়। তথাকথিত ‘ফিসক্যাল ক্লিফ’ বা ‘খাদে পড়ার’ হাত থেকে মার্কিন অর্থনীতি আপাতত রক্ষা পেলেও সামনে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। ফেডারেল সরকারকে ট্যাক্স রিটার্ন পরিশোধ করতে হবে ৮৬ বিলিয়ন ডলার; স্বাস্থ্যসেবা তথা মেডিকেয়ারের বিল পরিশোধ করতে হবে ৭৩ বিলিয়ন; সোস্যাল সিকিউরিটি বিল ৬১ বিলিয়ন; ঋণের সুদ ৩৮ বিলিয়ন; প্রতিরক্ষা খাতের বিল পরিশোধ ২৯ বিলিয়ন; ফুড স্ট্যাম্প, হাউজিং; ওয়েলফেয়ার খাতে ২২ বিলিয়ন, কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি ২০ বিলিয়ন, শিক্ষা খাতে ১৭ বিলিয়ন এবং অন্যান্য খাতে ১০৬ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। মোট অর্থ পরিশোধ করতে হবে ৪৫২ বিলিয়ন ডলার। অথচ রেভিনিউ আসবে মাত্র ২৭৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে ১৭৫ বিলিয়ন ডলার। এ ঘাটতি মোকাবেলা করা ওবামা প্রশাসনের জন্য সত্যিই কঠিন। এরই মধ্যে একটি বড় ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছে ওবামা প্রশাসন। ইতোমধ্যে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। এ ঋণসীমা আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা কিন্তু এখন পর্যন্ত ঋণসীমা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। স্পষ্টতই যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। ইউরোপের ক্রমবর্ধমান ঋণসঙ্কট ও যুক্তরাষ্ট্রের ঋণসীমা বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের সঙ্কট সৃৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিশ্চিন লাগার্দে। যুক্তরাষ্ট্রের ঋণসীমা নিয়ে বিতর্ক মীমাংসিত না হলে এবং ইইউ তাদের অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটাতে না পারলে আবারও বিশ্ব অর্থনীতিতে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। অন্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর অর্থনীতির আকার বৃহৎ। তাই এ দুই অঞ্চলের সমস্যার যথাযথ সমাধান না করতে পারলে অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়ানো কঠিন হয়ে যাবে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আফ্রিকাসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে। তাই অর্র্থনীতিবিদরা যুক্তরাষ্ট্রের ঋণসীমা দ্রুত নির্ধারণ এবং ইউরোপের ঋণ সঙ্কট উত্তোরণকে বিশ্বের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক রাখার জন্য অতীব জরুরী বলে বিবেচনা করছেন। আর এই সমস্যার যদি আশু সমাধান না করা যায় তবে বিশ্ব অর্থনীতিকে আরও করুণ পরিণতির দিকে যেতে হবে।আনোয়ার হোসেন
No comments