আতঙ্ক-বিষাদ-ঘরে চুলা জ্বলে না চার দিন
রাজেন্দ্রপুর-কাপাসিয়া সড়কের জামিরার চর একটি ছোট বাজার। রাস্তার উত্তর দিকে দোকানের পাশে সাইনবোর্ড, 'বড়টেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়'। এ স্কুলের সরু রাস্তা ধরেই বড়টেক গ্রাম, গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের নিভৃতপল্লী।
রাস্তা ধরে এক কিলোমিটারের মতো এগোতেই চোখে পড়ল একটি ছোট্ট ঘরকে ঘিরে জটলা। ভিড়ের কারণ জানতে চাইলে একজন বলল, 'আপনারা যেই বাড়িতে যাইবেন, এইটাই সেই মেয়ের বাড়ি!'
বাইরে কৌতূহলী এলাকাবাসীর এমন ভিড় অথচ ভেতরে সুনসান নীরবতা। ঘরের পাশে দুই তরুণ-তরুণী দাঁড়িয়ে। সবাই সরে গেলেও তারা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকল। তরুণীর চোখ যেন ঘুমে ঢুলুঢুলু। মুখে ক্লান্তির ছাপ। পায়ে ফোলা জখমের চিহ্ন। হাতে পোড়া দাগ। একজন প্রতিবেশী ইশারায় দেখিয়ে দিল মেয়েটিকে। 'বোন, আমরা ঢাকা থেকে এসেছি। তোমার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।' কালের কণ্ঠের দুজন প্রতিবেদকের এমন কথায় মেয়েটি নির্লিপ্ত। ভয়ে তার মাথা নত, লালচে হয়ে আছে মুখমণ্ডল। বারবার একই কথা বলার পর অবশেষে নীরবতা ভেঙে বলল, 'আমি কথা বলতে পারব না।' যদিও সে অভয় পাওয়ার পর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে আর্তি প্রকাশ করে, 'আমি বিচার চাই।' জানা গেল, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি তার ভাই সোবহান। পেশায় রিকশাচালক। ঘরের পাশেই পড়ে আছে তাঁর ভাঙা রিকশাটি। তাদের বাবা মাটি কাটার কাজ করেন। মা মাঝেমধ্যে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। অভাবের এ সংসারে গত চার দিন চুলা জ্বলে না। ঘরের কোণে পড়ে আছে নোংরা হাঁড়ি-পাতিল। মেঝেতে দুটি আলু। সোবহান জানান, মা-বাবা কোথায় গেছেন তা জানা নেই তাঁদের। 'বিপদের' কারণে ঘরে রান্না হয় না।
কয়েকজন গ্রাসবাসী জানায়, গ্রামের আর কয়েকটি মেয়ের মতোই ছিল এই কিশোরীর জীবন। কিন্তু জীবিকার সন্ধানে ঘর থেকে বের হয়ে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে এখন সে বাড়িতে বন্দি জীবন কাটাচ্ছে। বাড়িতে চুলা না জ্বলায় প্রতিবেশীরা খাবার নিয়ে আসে।
নির্যাতিত মেয়ের ভাই সোবহান সরল প্রকৃতির। তিনি জানান, তাঁর বোনকে অমানুষিক নির্যাতন করে বাড়ির পাশে ফেলে রাখা হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, তারা নির্যাতিত মেয়েটিকে সংবাদকর্মীদের কাছ থেকে আড়াল করার জন্য মাঝেমধ্যেই উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কখনো থানা, কখনো বা আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতে। আর বাড়িতে কেউ এলে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দেওয়া যাবে না বলেও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। কথা বললেই মেয়েটিকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার, তার ভাই সোবহান ও বাবাকে বাড়ির বাইরে গেলে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে আসার পর মেয়েটি অনেকটা ছটফট করছে। ঘরে খাবার নেই। অন্যদিকে কাজল মোল্লার লোকজনের প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি। সব মিলিয়ে এ পরবিারের প্রতিটি মুহূর্ত পার হচ্ছে আতঙ্কের মধ্য দিয়ে। কাজল ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই বাড়ির চারপাশে সরকারদলীয় লোকজনকে দিয়ে পাহারা বসিয়েছেন। এ কারণে সংবাদকর্মীরা নির্যাতিত মেয়েটির বাড়িতে গেলে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের স্থানীয় নেতারা বাড়িতে ঢুকে পড়েন। সংবাদকর্মীরা যতক্ষণ ওই বাড়িতে থাকেন, ততক্ষণ নেতারাও থাকেন।
স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব কৃষক আবু হানিফ জানান, মেয়েটিকে নির্যাতন করে রাস্তার পাশে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলেও তারা ক্ষান্ত হয়নি। এখন বাড়িতে এসেও নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তাদের এসব চাপে মেয়েটির কী অবস্থা হবে, তা বলা যাচ্ছে না।
পুলিশ এসেও তাদের পক্ষ নিয়ে চলে গেল। তারা স্থানীয় লোকজনকে কথা বলতে দেয়নি। এমনকি মেয়ের লিখিত জবানবন্দি নেওয়ার সময় তার মা-বাবাকেও উপস্থিত রাখা হয়নি। সব বাধা-বিপত্তির মধ্যেও মেয়েটি সংবাদকর্মীদের কাছে সত্য কথা বলে দেওয়ায় তার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে প্রতিবেশীরাও। গতকাল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সংবাদকর্মীদের কাছে স্থানীয় লোকজন অনেকটা লুকিয়ে এ বিষয়ে তথ্য দেয়।
মেয়ের ভাই সোবহান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ভাই, আমরা গরিব মানুষ বলে কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ করতে পারি না। আমার বোন কিছুটা সুস্থ হয়ে সব বিষয়েই কথা বলেছে। সব জানাজানি হলে তাকে বিয়ে দেওয়া যাবে না। আবার আমাকে কাজলের লোকজন কয়েকবার বলেছে, ঘটনা সম্পর্কে কিছু না বলতে। এসব নিয়ে কারো কাছে কিছু বললে মেরে ফেলবে। এর পরও আমার বোনের ওপর এ নির্যাতনের বিচার চাই।' এসব কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি আর কথা বলতে চাননি।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে পৌঁছে দেখা গেল, মেয়েটির বাবা কাজে গেছেন। তবে তাঁর স্ত্রী কোথায় এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারেনি। স্থানীয় লোকজন জানায়, গতকাল দুপুর পর্যন্ত নির্যাতিত কিশোরীকে না পেয়ে তার মা হন্যে হয়ে তাকে খুঁজছিলেন। মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসার খবর হয়তো পাননি তিনি। তাকে দুপুর ১২টার দিকে বাড়িতে ফেরত দেওয়া হয়। বিকেলে বাড়ি ফিরে মেয়েকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে এ দম্পতি। এ দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি প্রতিবেশীরাও।
বাইরে কৌতূহলী এলাকাবাসীর এমন ভিড় অথচ ভেতরে সুনসান নীরবতা। ঘরের পাশে দুই তরুণ-তরুণী দাঁড়িয়ে। সবাই সরে গেলেও তারা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকল। তরুণীর চোখ যেন ঘুমে ঢুলুঢুলু। মুখে ক্লান্তির ছাপ। পায়ে ফোলা জখমের চিহ্ন। হাতে পোড়া দাগ। একজন প্রতিবেশী ইশারায় দেখিয়ে দিল মেয়েটিকে। 'বোন, আমরা ঢাকা থেকে এসেছি। তোমার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।' কালের কণ্ঠের দুজন প্রতিবেদকের এমন কথায় মেয়েটি নির্লিপ্ত। ভয়ে তার মাথা নত, লালচে হয়ে আছে মুখমণ্ডল। বারবার একই কথা বলার পর অবশেষে নীরবতা ভেঙে বলল, 'আমি কথা বলতে পারব না।' যদিও সে অভয় পাওয়ার পর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে আর্তি প্রকাশ করে, 'আমি বিচার চাই।' জানা গেল, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি তার ভাই সোবহান। পেশায় রিকশাচালক। ঘরের পাশেই পড়ে আছে তাঁর ভাঙা রিকশাটি। তাদের বাবা মাটি কাটার কাজ করেন। মা মাঝেমধ্যে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। অভাবের এ সংসারে গত চার দিন চুলা জ্বলে না। ঘরের কোণে পড়ে আছে নোংরা হাঁড়ি-পাতিল। মেঝেতে দুটি আলু। সোবহান জানান, মা-বাবা কোথায় গেছেন তা জানা নেই তাঁদের। 'বিপদের' কারণে ঘরে রান্না হয় না।
কয়েকজন গ্রাসবাসী জানায়, গ্রামের আর কয়েকটি মেয়ের মতোই ছিল এই কিশোরীর জীবন। কিন্তু জীবিকার সন্ধানে ঘর থেকে বের হয়ে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে এখন সে বাড়িতে বন্দি জীবন কাটাচ্ছে। বাড়িতে চুলা না জ্বলায় প্রতিবেশীরা খাবার নিয়ে আসে।
নির্যাতিত মেয়ের ভাই সোবহান সরল প্রকৃতির। তিনি জানান, তাঁর বোনকে অমানুষিক নির্যাতন করে বাড়ির পাশে ফেলে রাখা হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, তারা নির্যাতিত মেয়েটিকে সংবাদকর্মীদের কাছ থেকে আড়াল করার জন্য মাঝেমধ্যেই উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কখনো থানা, কখনো বা আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতে। আর বাড়িতে কেউ এলে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দেওয়া যাবে না বলেও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। কথা বললেই মেয়েটিকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার, তার ভাই সোবহান ও বাবাকে বাড়ির বাইরে গেলে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে আসার পর মেয়েটি অনেকটা ছটফট করছে। ঘরে খাবার নেই। অন্যদিকে কাজল মোল্লার লোকজনের প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি। সব মিলিয়ে এ পরবিারের প্রতিটি মুহূর্ত পার হচ্ছে আতঙ্কের মধ্য দিয়ে। কাজল ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই বাড়ির চারপাশে সরকারদলীয় লোকজনকে দিয়ে পাহারা বসিয়েছেন। এ কারণে সংবাদকর্মীরা নির্যাতিত মেয়েটির বাড়িতে গেলে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের স্থানীয় নেতারা বাড়িতে ঢুকে পড়েন। সংবাদকর্মীরা যতক্ষণ ওই বাড়িতে থাকেন, ততক্ষণ নেতারাও থাকেন।
স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব কৃষক আবু হানিফ জানান, মেয়েটিকে নির্যাতন করে রাস্তার পাশে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলেও তারা ক্ষান্ত হয়নি। এখন বাড়িতে এসেও নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তাদের এসব চাপে মেয়েটির কী অবস্থা হবে, তা বলা যাচ্ছে না।
পুলিশ এসেও তাদের পক্ষ নিয়ে চলে গেল। তারা স্থানীয় লোকজনকে কথা বলতে দেয়নি। এমনকি মেয়ের লিখিত জবানবন্দি নেওয়ার সময় তার মা-বাবাকেও উপস্থিত রাখা হয়নি। সব বাধা-বিপত্তির মধ্যেও মেয়েটি সংবাদকর্মীদের কাছে সত্য কথা বলে দেওয়ায় তার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে প্রতিবেশীরাও। গতকাল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সংবাদকর্মীদের কাছে স্থানীয় লোকজন অনেকটা লুকিয়ে এ বিষয়ে তথ্য দেয়।
মেয়ের ভাই সোবহান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ভাই, আমরা গরিব মানুষ বলে কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ করতে পারি না। আমার বোন কিছুটা সুস্থ হয়ে সব বিষয়েই কথা বলেছে। সব জানাজানি হলে তাকে বিয়ে দেওয়া যাবে না। আবার আমাকে কাজলের লোকজন কয়েকবার বলেছে, ঘটনা সম্পর্কে কিছু না বলতে। এসব নিয়ে কারো কাছে কিছু বললে মেরে ফেলবে। এর পরও আমার বোনের ওপর এ নির্যাতনের বিচার চাই।' এসব কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি আর কথা বলতে চাননি।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে পৌঁছে দেখা গেল, মেয়েটির বাবা কাজে গেছেন। তবে তাঁর স্ত্রী কোথায় এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারেনি। স্থানীয় লোকজন জানায়, গতকাল দুপুর পর্যন্ত নির্যাতিত কিশোরীকে না পেয়ে তার মা হন্যে হয়ে তাকে খুঁজছিলেন। মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসার খবর হয়তো পাননি তিনি। তাকে দুপুর ১২টার দিকে বাড়িতে ফেরত দেওয়া হয়। বিকেলে বাড়ি ফিরে মেয়েকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে এ দম্পতি। এ দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি প্রতিবেশীরাও।
No comments