৪২ দেশ, দুই শতাধিক ছবি শিশুদের জন্য উন্মুক্ত- আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উসব শুরু by মোরসালিন মিজান
প্রথমেই স্বীকার করে নেয়া উচিত হবে, শিশুদের জন্য অত ভাববার সময় আমাদের হয় না। যে যার ‘জমিদারি’ নিয়ে থাকি। হাতি-ঘোড়া মারার কাজ চলে সারাবছর। ফলে আমাদের শিশুরা বঞ্চিতের ব্যথা বুকে বড় হয়।
তাদের নিজস্ব চিন্তা সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটাতে পারে না। বহু দিন ধরেই চলছে এ অবস্থা। তবে হ্যাঁ, কিছু ব্যতিক্রমও আছে। সেসব ব্যতিক্রমের অন্যতম একটি আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। আজ সে আলোচনা। অনেকেই জানেন, গত কয়েক বছর ধরে ‘ফ্রেমে ফ্রেমে আগামীর স্বপ্ন’ সেøাগানে দেশব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করা হয়ে আসছে। আয়োজকÑ চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ। অতীত সাফল্যের ধার বাহিকতায় শনিবার থেকে শুরু হয়েছে এবারের উৎসব।বিকেলে রাজধানী ঢাকার সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার চত্বরে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন উৎসব উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সোসাইটির সভাপতি শিশুদের অত্যন্ত পছন্দের মানুষ লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, উৎসব পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম, বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি প্যাসকেল ভিলেনিউভ, কানাডিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা ন্যান্সি ট্রিট্স বটকিনসহ এক ঝাঁক শিশুকিশোর। এখানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশনা, পতাকা উত্তোলন, পায়রা ও বেলুন ওড়ানোর পর বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। এতে ব্যানার ফেস্টুন হাতে অংশ নেয় ক্ষুদে চলচ্চিত্রপ্রেমী ও নির্মাতারা। শোভাযাত্রাটি টিএসসি চত্বর হয়ে জাতীয় জাদুঘরে এসে শেষ হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বটি ছিল শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে। এ পর্বে প্রদ্বীপ প্রজ্বলন, আলোচনা ছাড়াও ছিল চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন। প্রথম দিন দেখানো হয় বাংলাদেশী নির্মাতা রায়হান আহম্মেদের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ওয়াটার ফর লাইফ।’ স্পেনের চলচ্চিত্র উই আর্ট ওয়াটার ফাউন্ডেশনের প্রতিযোগিতা বিভাগে পুরস্কারপ্রাপ্ত এই চলচ্চিত্র হলভর্তি ছেলেমেয়ে দারুণ উপভোগ করে। পরে দেখানো হয় সুইজারল্যান্ডের ‘দ্য উইন্ডো’, রাশিয়ার ‘অ্যাম্বিশাস’ ও নেদাল্যান্ডসের ‘টনি টেন।’
উৎসবে বিভিন্ন দিনে সারাদেশের মোট ২২টি ভেন্যুতে ৪২টি দেশের দুই শতাধিক শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। ঢাকায় মূল উৎসব কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহƒত হবে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার চত্বর ও শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন। এছাড়াও ঢাকার ৭টি ভেন্যুতে ছবি দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকার বাইরেও একযোগে শুরু হয়েছে উৎসব। চট্টগ্রামে ৭টি, রাজশাহীতে ৪টি এবং রংপুর, খুলনা, সিলেট ও বরিশালে ১টি করে ভেন্যু রয়েছে। এসব ভেন্যতে প্রতিদিন সকাল ১১টা, দুপুর ২টা, বিকেল ৪টা ও সন্ধ্যা ৬টায় মোট ৪টি করে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবের সকল প্রদর্শনী শিশুদের জন্য উন্মুক্ত। এবারও তারা নানান স্বাদের ছবি দেখার দুর্লভ সুযোগ পাবে। এখানেই শেষ নয়, যেসব স্কুলের নিজস্ব পরিবহন নেই অথবা পরিবহন ভাড়া করার সামর্থ্য নেই তাদের জন্য উৎসব কর্তৃপক্ষ পরিবহনের ব্যবস্থা করেছে।
সব মিলিয়ে শিশুকিশোরদের জন্য দারুণ এক উৎসব। শনিবার রাজধানীর প্রধান ভেন্যুতে গিয়ে দেখা যায়, শিশুকিশোরের রাজত্ব। উৎসবের সকল কাজ তারা নিজেরাই করছে। এবার সারাদেশ থেকে ১২৫ জনের মতো শিশু প্রতিনিধি ঢাকায় এসেছে। ছবি দেখা ছাড়াও শিশু প্রতিনিধিদের জন্য সপ্তাহব্যাপী আয়োজনে থাকবে ওয়ার্কশপ, সেমিনার, বিশিষ্টজনদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলাপচারিতাসহ নানান আয়োজন। এবারের উৎসবে বিদেশী অতিথিদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, কানাডার চলচ্চিত্রকার ন্যান্সি ট্রিট্স বটকিন ও প্রযোজক মার্ক শেক্টার, সিঙ্গাপুরের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র সমালোচক ও সংগঠক ফিলিপ চিয়াহ, যুক্তরাজ্যের ড্যানিয়েল স্মিথ ও ইতালির চলচ্চিত্র নির্মাতা গিউসেপ ক্যারিয়েরি।
আয়োজক সূত্র জানায়, শিশুদের জন্য উৎসবের অন্যতম আকর্ষণীয় বিভাগটি হচ্ছে বাংলাদেশের শিশুদের নির্মিত চলচ্চিত্রের প্রতিযোগিতা বিভাগ। এ বিভাগে জমা পড়ে শতাধিক চলচ্চিত্র। সেগুলোর মধ্য থেকে নির্বাচকম-লী ৬০টি ছবিকে প্রদর্শনের জন্য মনোনীত করেছে। সেরা পাঁচটিকে দেয়া হবে পুরস্কার। ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও পরবর্তী ছবি নির্মাণের জন্য ২৫ হাজার টাকার আর্থিক প্রণোদনা পাবে তারা।
এদিকে আগামীকাল সোমবার বিকেল ৪টায় চট্টগ্রামের থিয়েটার ইন্স্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে একটি অংশগ্রহণমূলক আলোচনাসভা। এতে মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাজ্যের নির্মাতা ড্যানিয়েল স্মিথ। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। সেমিনারে মূল আলোচক ও সঞ্চালক হিসেবে থাকবে শিশুরাই। অনন্যসাধারণ এই উৎসবের পর্দা নামবে ২৫ জানুয়ারি। এ সময়ের মধ্যে যত খুশি ছবি দেখার সুযোগ। সুযোগটি নিশ্চয়ই কাজে লাগাবে শিশুরা।
No comments