আজ শহীদ আসাদ দিবস
আজ রবিবার শহীদ আসাদ দিবস। ছাত্রনেতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ১৯৬৯ সালের এই দিনে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা কর্মসূচীর আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
প্রতিবাদে সচিবালয়, দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকাসহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। সারা দেশে গণজাগরণ সৃষ্টির এক পর্যায়ে এই আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। আসাদের মৃত্যুর পর ঢাকায় আইয়ুবগেট ও এ্যাভিনিউর নাম পরিবর্তন করে আসাদগেট ও আসাদ এ্যাভিনিউ রাখে এ দেশের বিপ্লবী জনতা। আসাদ দিবস উপলক্ষে আজ রবিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজয়ের বাংলার পাদদেশ থেকে মিছিল নিয়ে আসাদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবে। বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রবেশ পথের পাশে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে।দিবসটি উপলক্ষে আসাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।
দেশমাতৃকার জন্য জীবন উৎসর্গ করায় আসাদুজ্জামানের আত্মদানকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান। তিনি একই সঙ্গে আসাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। রাষ্ট্রপতি বাণীতে আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে আসাদের আত্মদান ছিল একটি মাইলফলক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ২০ জানুয়ারি একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এদিন ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছাত্রনেতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, পাকিস্তানী শাসকদের বৈষম্যমূলক আচরণ, শোষণ এবং নিপীড়ন-নির্যাতনে বাংলার মানুষ যখন দিশেহারা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ছয় দফা তখন বাঙালীর মুক্তির দিশারী হয়ে আবির্ভূত হয়। ছয় দফার পক্ষে প্রবল জনমতের জোয়ার দেখে আতঙ্কিত সামরিক জান্তা আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী মামলা দায়ের করে যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। এর প্রতিবাদে গর্জে ওঠে সারা বাংলার মানুষ। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে ছাত্র-জনতার এক সমাবেশে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র আসাদুজ্জামান। আসাদের আত্মত্যাগ চলমান আন্দোলনকে বেগবান করে। পরে গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার আইয়ুব খানের পতন হয়। আসাদসহ আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
আসাদ দিবস উপলক্ষে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া বাণীতে বলেন, মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে শহীদ আসাদের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো হবে। বিএনপি প্রধান বলেন, ‘আমি ৬৯-এর গণআন্দোলনের মহান শহীদ আসাদুজ্জামানের অমলিন স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করি।’ তিনি বলেন, আমাদের স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে শহীদ আসাদ এক চিরস্মরণীয় নাম। সামরিক স্বৈরশাসনের কবল থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে অকুতোভয় এ বীর সেনানী রাজপথে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁদের এ ত্যাগের বিনিময়ে স্বৈরশাসনের পতন ত্বরান্বিত হয়েছিল, অর্জিত হয়েছিল এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। গণতন্ত্রের জন্য শহীদ আসাদের আত্মদান পরবর্তীকালে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি বলেন, একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন শহীদ আসাদুজ্জামান। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে আমরা যদি এদেশের মানুষের মৌলিক ও মানবিক অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলেই তাঁর প্রতি দেখানো হবে যথাযথ সম্মান। বেগম জিয়া বলেন, আজকের এ দিনে আমি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও গণতন্ত্রকে শক্তিশালীকরণই সবচেয়ে জরুরী কাজ বলে মনে করি। আর এ জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম অপর এক বাণীতে বলেন, শহীদ আসাদ দিবসে এই হোক আমাদের দৃপ্ত শপথ।
No comments