ছাত্রলীগের গুলিতে শিশু নিহত
ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ
হয়ে এক শিশু নিহত হওয়ার ঘটনায় ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে গেছে ময়মনসিংহের
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও
সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের মধ্যে তিন দিন ধরে চলা সংঘর্ষ গতকাল শনিবার দুপুরে
যুদ্ধের রূপ নেয়।
এ সময় ক্যাম্পাসের ভেতর একটি মাঠে গরু
চরানোরত পাশের বয়রা গ্রামের ১০ বছরের শিশু রাব্বীসহ তিন গ্রামবাসী
গুলিবিদ্ধ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্রও সংঘর্ষে আহত হন। বিকেলে মাথায়
গুলিবিদ্ধ শিশুটির মৃত্যুর খবরে আশপাশের গ্রামবাসী বিশ্ববিদ্যালয়ের
সোহরাওয়ার্দী, ফজলুল হক ও শাহজালাল হলে ভাঙচুর চালায় এবং ঈশা খাঁ হল ও শহীদ
জামাল হোসেন হলের অনেক কক্ষে আগুন লাগিয়ে দেয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে ছাত্রদের এবং আজ সকাল ৮টার মধ্যে ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। গ্রামবাসী লাঠিসোঁটা নিয়ে ঘিরে রাখায় ক্যাম্পাস এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছিল। রাতে ক্যাম্পাস ছাড়ার সময় গ্রামবাসী আশরাফুল হক হলের ছাত্রলীগ সেক্রেটারি আনোয়ার হোসেনসহ কয়েকজনকে বেধড়ক পেটায়।
পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল হক বলেন, 'ছাত্রলীগের ঘটনাটি দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন। এই মুহূর্তে আমাদেরই নিরাপত্তা নেই। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা আমরা কেমনে দেব। তাই তাদের হল ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।'
সন্ধ্যায় ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ চার ছাত্রকে আটক করে। এরা হলেন- কায়সার (ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ), জয় (শামসুল হক হলের ছাত্র), ইমরান সরকার (ফজলুল হক হলের ছাত্র) ও তারেক আজিজ (আশরাফুল হক হলের ছাত্র)।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। একই সঙ্গে ওই কমিটির সভাপতি সামসুদ্দিন আল আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুজ্জামান ইমনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আধিপত্য বিস্তার, পূর্বশত্রুতা, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যে প্রশাসন ও ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের ভাগাভাগি নিয়ে এ সংঘর্ষ শুরু হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া বর্তমান কমিটির মেয়াদ আগামী এপ্রিল মাসে শেষ হওয়ার কথা। তাই নতুন কমিটি গঠন নিয়েও এ সংঘর্ষ বাধতে পারে বলে সন্দেহ করছে অনেকে। চার দিন ধরে এ সংঘর্ষ চললেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনোরকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সংঘর্ষের সময় পুলিশকে নীরব দর্শকের ভূমিকায় দেখা গেছে।
তিন দিন ধরে সংঘর্ষ চললেও কেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিল না- এ প্রশ্নে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, 'আমরা ক্যাম্পাসে পুলিশ এনেছিলাম। পুলিশ আরেকটু উদ্যোগী হলে হয়তো এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যেত।' কোতোয়ালি থানার ওসি ফজলুল করিম বলেন, 'আমার হাতে যে পরিমাণ ফোর্স ছিল, তা দিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সম্ভব হয়নি।'
গতকালের সংঘর্ষ : আগের তিন দিনের সংঘর্ষের ধারাবাহিকতায় গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের জব্বার মোড়ে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতা-কর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে আবার সংঘর্ষ শুরু করে। রামদা, হকিস্টিক, রড ইত্যাদি নিয়ে দুই গ্রুপ পাল্টাপাল্টি হামলা চালায়। চলতে থাকে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সংঘর্ষে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদক গ্রুপের নেতা শাহীন মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান খোকন এবং সভাপতি গ্রুপের নেতা গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক এস এম রায়হান ও সাজ্জাতের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়। হামলায় জাকারিয়া, পারভেজ, প্রিন্স, নাইম, নাজমুল, নিপুণ, অনুপ, তানভীর, শাকিল, বাপ্পি, সোহেল, সুমন, আকিব, কুশল, আল আমিন প্রমুখ নেতা-কর্মীকে অংশ নিতে দেখা যায়।
সংঘর্ষ সম্পর্কে বহিষ্কৃত সভাপতি শামসুদ্দিন আল আজাদ বলেন, 'আমার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের বিরোধ এ ঘটনার মূল কারণ নয়। মধ্যম সারির কিছু নেতা-কর্মীর উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য এ ঘটনা ঘটেছে। ওর কারো কথা শোনে না।'
উচিত শিক্ষা দেওয়া দরকার : শিশু রাব্বীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের মানুষ। শত শত গ্রামবাসী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ মোড়ে এসে জমায়েত হয়। তারা বারবার হলের দিকে যেতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান ও গ্রামের মুরব্বিরা নিবৃত্ত করেন। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের দিকে আসা বলাকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ফসিলের মোড়ে অবরোধ করে লোকজন। তবে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মালেক ট্রেনটি ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৪টার দিকে রাব্বী মারা যায়। তার মৃত্যুর খবর পৌঁছার পরপরই ক্ষুব্ধ লোকজন বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো বিভিন্ন হলে হামলা চালাতে থাকে। এ সময় তারা ঈশা খাঁ, শহীদ জামাল হোসেন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শহীদ শামসুল হক হলের বিভিন্ন রুমে অগ্নিসংযোগ করে। এলাকার আবদুল হালিম নামে বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, 'ওরা পড়তে নয়, আইছে মাস্তানি করতে। বাপ-মায়ের কাছ থাইক্যা টাকা আইনা এইখানে করে চাঁন্দাবাজি। এদের উচিত শিক্ষা দেওয়া দরকার।'
হলগুলোর বিভিন্ন কক্ষে ছাত্রদের কম্পিউটার, আসবাবপত্র ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় রাতে আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ সত্ত্বেও গ্রামবাসী ক্যাম্পাস ত্যাগের সময় বেশ কিছু ছাত্রকে মারধর করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত সাড়ে ১০টা থানায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানান কোতোয়ালি ডিউটি অফিসার এ এস আই কমল কুমার রায়।
আগের তিন দিনও সংঘর্ষ চলে : স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, গত বুধবারও ক্যাম্পাসের কে আর মার্কেটে সভাপতি সামসুদ্দিন আল আজাদ নিয়ন্ত্রিত বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আসে। এ সময় সেখানে যায় সাধারণ সম্পাদক রফিকুজ্জামান ইমন নিয়ন্ত্রিত ঈশা খাঁ হলের নেতা-কর্মীরা। সভাপতি গ্রুপ চড়াও হলে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের আটজন আহত হয়। এ ঘটনার জের ধরে পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে করিম ভবন এলাকায় সাধারণ সম্পাদক সমর্থক কর্মীরা সভাপতি নিয়ন্ত্রিত বঙ্গবন্ধু হলের কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের নিবিড় নামের এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। এ ঘটনার জেরে উভয় গ্রুপের নেতা-কর্মীরা রামদা, হকিস্টিক, রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দিতে থাকে। প্রতিশোধ নিতে সভাপতি সমর্থকরা সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের রানা নামে এক কর্মীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরের দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় সাধারণ সম্পাদক সমর্থক নেতা ও বাকৃবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান খোকন ও শহীদ নাজমুল আহসান হলের সভাপতি জাকারিয়া আলম মোটরসাইকেলে করে জব্বারের মোড়ে গেলে সভাপতি সমর্থকরা হামলা চালিয়ে তাদের আহত করে। এরপর সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ নিয়ন্ত্রিত ছয়টি হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক, রামদাসহ বিভিন্ন দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জব্বারের মোড়ের দিকে অগ্রসর হয়। এক পর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় কমপক্ষে ১৪টি গুলির শব্দ শোনা যায়। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে রাহাত, সুজয় কুণ্ডুসহ উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ১২ নেতা-কর্মী আহত হয়। তাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় হেলথ কেয়ার সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে ছাত্রদের এবং আজ সকাল ৮টার মধ্যে ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। গ্রামবাসী লাঠিসোঁটা নিয়ে ঘিরে রাখায় ক্যাম্পাস এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছিল। রাতে ক্যাম্পাস ছাড়ার সময় গ্রামবাসী আশরাফুল হক হলের ছাত্রলীগ সেক্রেটারি আনোয়ার হোসেনসহ কয়েকজনকে বেধড়ক পেটায়।
পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল হক বলেন, 'ছাত্রলীগের ঘটনাটি দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন। এই মুহূর্তে আমাদেরই নিরাপত্তা নেই। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা আমরা কেমনে দেব। তাই তাদের হল ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।'
সন্ধ্যায় ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ চার ছাত্রকে আটক করে। এরা হলেন- কায়সার (ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ), জয় (শামসুল হক হলের ছাত্র), ইমরান সরকার (ফজলুল হক হলের ছাত্র) ও তারেক আজিজ (আশরাফুল হক হলের ছাত্র)।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। একই সঙ্গে ওই কমিটির সভাপতি সামসুদ্দিন আল আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুজ্জামান ইমনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আধিপত্য বিস্তার, পূর্বশত্রুতা, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যে প্রশাসন ও ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের ভাগাভাগি নিয়ে এ সংঘর্ষ শুরু হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া বর্তমান কমিটির মেয়াদ আগামী এপ্রিল মাসে শেষ হওয়ার কথা। তাই নতুন কমিটি গঠন নিয়েও এ সংঘর্ষ বাধতে পারে বলে সন্দেহ করছে অনেকে। চার দিন ধরে এ সংঘর্ষ চললেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনোরকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সংঘর্ষের সময় পুলিশকে নীরব দর্শকের ভূমিকায় দেখা গেছে।
তিন দিন ধরে সংঘর্ষ চললেও কেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিল না- এ প্রশ্নে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, 'আমরা ক্যাম্পাসে পুলিশ এনেছিলাম। পুলিশ আরেকটু উদ্যোগী হলে হয়তো এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যেত।' কোতোয়ালি থানার ওসি ফজলুল করিম বলেন, 'আমার হাতে যে পরিমাণ ফোর্স ছিল, তা দিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সম্ভব হয়নি।'
গতকালের সংঘর্ষ : আগের তিন দিনের সংঘর্ষের ধারাবাহিকতায় গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের জব্বার মোড়ে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতা-কর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে আবার সংঘর্ষ শুরু করে। রামদা, হকিস্টিক, রড ইত্যাদি নিয়ে দুই গ্রুপ পাল্টাপাল্টি হামলা চালায়। চলতে থাকে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সংঘর্ষে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদক গ্রুপের নেতা শাহীন মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান খোকন এবং সভাপতি গ্রুপের নেতা গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক এস এম রায়হান ও সাজ্জাতের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়। হামলায় জাকারিয়া, পারভেজ, প্রিন্স, নাইম, নাজমুল, নিপুণ, অনুপ, তানভীর, শাকিল, বাপ্পি, সোহেল, সুমন, আকিব, কুশল, আল আমিন প্রমুখ নেতা-কর্মীকে অংশ নিতে দেখা যায়।
সংঘর্ষ সম্পর্কে বহিষ্কৃত সভাপতি শামসুদ্দিন আল আজাদ বলেন, 'আমার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের বিরোধ এ ঘটনার মূল কারণ নয়। মধ্যম সারির কিছু নেতা-কর্মীর উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য এ ঘটনা ঘটেছে। ওর কারো কথা শোনে না।'
উচিত শিক্ষা দেওয়া দরকার : শিশু রাব্বীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের মানুষ। শত শত গ্রামবাসী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ মোড়ে এসে জমায়েত হয়। তারা বারবার হলের দিকে যেতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান ও গ্রামের মুরব্বিরা নিবৃত্ত করেন। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের দিকে আসা বলাকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ফসিলের মোড়ে অবরোধ করে লোকজন। তবে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মালেক ট্রেনটি ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৪টার দিকে রাব্বী মারা যায়। তার মৃত্যুর খবর পৌঁছার পরপরই ক্ষুব্ধ লোকজন বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো বিভিন্ন হলে হামলা চালাতে থাকে। এ সময় তারা ঈশা খাঁ, শহীদ জামাল হোসেন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শহীদ শামসুল হক হলের বিভিন্ন রুমে অগ্নিসংযোগ করে। এলাকার আবদুল হালিম নামে বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, 'ওরা পড়তে নয়, আইছে মাস্তানি করতে। বাপ-মায়ের কাছ থাইক্যা টাকা আইনা এইখানে করে চাঁন্দাবাজি। এদের উচিত শিক্ষা দেওয়া দরকার।'
হলগুলোর বিভিন্ন কক্ষে ছাত্রদের কম্পিউটার, আসবাবপত্র ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় রাতে আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ সত্ত্বেও গ্রামবাসী ক্যাম্পাস ত্যাগের সময় বেশ কিছু ছাত্রকে মারধর করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত সাড়ে ১০টা থানায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানান কোতোয়ালি ডিউটি অফিসার এ এস আই কমল কুমার রায়।
আগের তিন দিনও সংঘর্ষ চলে : স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, গত বুধবারও ক্যাম্পাসের কে আর মার্কেটে সভাপতি সামসুদ্দিন আল আজাদ নিয়ন্ত্রিত বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আসে। এ সময় সেখানে যায় সাধারণ সম্পাদক রফিকুজ্জামান ইমন নিয়ন্ত্রিত ঈশা খাঁ হলের নেতা-কর্মীরা। সভাপতি গ্রুপ চড়াও হলে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের আটজন আহত হয়। এ ঘটনার জের ধরে পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে করিম ভবন এলাকায় সাধারণ সম্পাদক সমর্থক কর্মীরা সভাপতি নিয়ন্ত্রিত বঙ্গবন্ধু হলের কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের নিবিড় নামের এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। এ ঘটনার জেরে উভয় গ্রুপের নেতা-কর্মীরা রামদা, হকিস্টিক, রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দিতে থাকে। প্রতিশোধ নিতে সভাপতি সমর্থকরা সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের রানা নামে এক কর্মীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরের দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় সাধারণ সম্পাদক সমর্থক নেতা ও বাকৃবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান খোকন ও শহীদ নাজমুল আহসান হলের সভাপতি জাকারিয়া আলম মোটরসাইকেলে করে জব্বারের মোড়ে গেলে সভাপতি সমর্থকরা হামলা চালিয়ে তাদের আহত করে। এরপর সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ নিয়ন্ত্রিত ছয়টি হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক, রামদাসহ বিভিন্ন দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জব্বারের মোড়ের দিকে অগ্রসর হয়। এক পর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় কমপক্ষে ১৪টি গুলির শব্দ শোনা যায়। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে রাহাত, সুজয় কুণ্ডুসহ উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ১২ নেতা-কর্মী আহত হয়। তাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় হেলথ কেয়ার সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
No comments