একের ভেতরে তিন! by মারুফ ইসলাম
লিজাকে আমরা চিনি ‘ক্লোজআপ ওয়ান’ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। কিন্তু খেলাধুলা আর পড়ালেখার ক্ষেত্রেও তাঁর সমান দাপট। ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় বৃহত্তর ময়মনসিংহে চ্যাম্পিয়ন হয়ে খেলছেন জাতীয় পর্যায়ে।
আর লেখাপড়া? পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তিসহ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক দুটোতেই পেয়েছেন জিপিএ-৫। এখন পড়ছেন বিবিএতে।
কি গানে, কি খেলায়, কি পড়ালেখায়—সব খানে আছেন তিনি। শুধু আছেন নয়, বরং বলা ভালো, আছেন সদর্পে ও স্বমহিমায়। তিনি গানের পাখি লিজা। পুরো নাম সানিয়া সুলতানা।
‘ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্র্রতিযোগিতায় ২০০৮ সালে চ্যাম্পিয়ন শিরোপা। ২০০৬ সালে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় দেশাত্মবোধক ও পল্লিগীতি—দুই ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদক। গানের অ্যালবাম বেরিয়েছে মিশ্র ১০টি ও একক একটি। এ ছাড়া প্লেব্যাক করেছেন চারটি চলচ্চিত্রে। ব্যাডমিন্টন খেলায় ময়মনসিংহ জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এখন খেলছেন ঢাকার জাতীয় প্রতিযোগিতায়। তার আগে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ছিলেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে পেয়েছেন বৃত্তি। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে পেয়েছেন জিপিএ-৫। পড়ছেন বিবিএ সপ্তম সেমিস্টারে, ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। এখন পর্যন্ত ফলাফল সিজিপিএ-৪-এর মধ্যে ৩.৯০।
গানের জগৎ, খেলার মাঠ আর শিক্ষাঙ্গনকে সমানতালে দাপিয়ে বেড়ানো কি এতই সহজ? আসলে লিজাকে দেখলে যে কারও মনেই এই প্রশ্ন দেখা দেবেই দেবে। কারণ, গান-খেলা-লেখাপড়া—এই তিন বিষয়কে তিনি যেন ‘ডাল-ভাত’ বানিয়ে ফেলেছেন! সত্যিই কি তাই? লিজা এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে অন্যভাবে বললেন, ‘আমার প্রতিদিনের রুটিন শুনুন। সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠেই হারমোনিয়াম নিয়ে বসা। সাড়ে আটটা পর্যন্ত রেওয়াজ করা। তারপর নাকে-মুখে কিছু গুঁজে দিয়েই ভার্সিটিতে দৌড়। বিকেল নাগাদ বাসায় ফিরে কোনোমতে পোশাক পাল্টেই আবার দে ছুট ব্যাডমিন্টন কোর্টে। প্র্যাকটিস শেষে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা। একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার হারমোনিয়াম নিয়ে বসা। আধা ঘণ্টা রেওয়াজ করে ফের পাঠ্যবই নিয়ে বসা। এর মধ্যে আবার কোনো কোনো দিন থাকে মঞ্চে শো করার তাগাদা কিংবা স্টুডিওতে গানের রেকর্ডিং। এবার আপনিই বলুন, কাজটা কঠিন নাকি সহজ?’
প্র্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে মিটিমিটি হাসছেন তিনি। তাঁর ‘কর্মমুখর’ দিনের রুটিন শুনে আমরা নির্দ্বিধায় কবুল করি ‘কঠিনেরে’ ভালোবেসেছেন তিনি।
কিন্তু কখন থেকে? প্রশ্ন শুনে লিজা এবার স্মৃতিতে ডুব দেন। মুহূর্তেই পৌঁছে যান ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে, যেখানে ফেলে এসেছেন তাঁর শৈশব-কৈশোর ও জন্মের বীজ। লিজা বলতে শুরু করেন, ‘আমার গানের শুরুটা বেশ ছোটবেলায়। তখন গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি। এই স্কুলে সংগীত পরীক্ষা দিতে হতো। তো পরীক্ষার দিন এত ভালো গাইলাম যে, স্যার আমার বাবাকে ডেকে বললেন, “মেয়েকে গান শেখান। ওর গানের গলা বেশ ভালো।”’
শিক্ষকের সেদিনের কথা যে নিছক প্রশংসা ছিল না, লিজা তার প্রমাণ দিয়েছিলেন কদিন বাদেই। জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় সেই ছোট্ট মেয়েটি দু-দুটি স্বর্ণপদক জয় করেছিলেন।
জানা গেল গানের শুরুটা। খেলার শুরুটা তবে কবে?
‘ব্যাডমিন্টন খেলার শুরুও বেশ কাকতালীয়ভাবে। গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে তখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। একদিন আমাদের ক্রীড়া শিক্ষক বললেন, লিজা, একটু খেলে দেখো তো। খেললাম। আর আশ্চর্যজনকভাবে ওই খেলায় যে প্রতিবছর চ্যাম্পিয়ন হয়, তাকেই হারিয়ে দিলাম। ম্যাডাম বললেন, ‘তোকে দিয়েই হবে।’
ম্যাডামের কথা ততক্ষণাৎ মনে গেঁথে নিলেন ওই কিশোরী। এরপর ক্লাস সিক্স থেকে কলেজ পর্যন্ত টানা বৃহত্তর ময়মনসিংহ ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন শিরোপা ধরে রেখে ম্যাডামের কথার যথার্থতার প্রমাণ রাখলেন তিনি।
এসবের পাশাপাশি পড়ালেখাতেও রেখে চলেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। তাই বুঝি তাঁর ভবিষ্যৎ স্বপ্নও পড়ালেখাকে ঘিরেই।
সেটা কেমন? ‘বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখি আমি। বলতে পারেন, বাবার কাছ থেকেই পেয়েছি এই স্বপ্নের বীজ।’ বলে রাখা ভালো, লিজার বাবা হেলাল উদ্দিন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা। মা নার্গিস সুলতানা। পরিবারে আছে আরও একজন, সে লিজার ছোট ভাই।
‘তবে পেশাজীবনে আমি যা-ই হই না কেন, গান আর খেলা ছাড়ছি না কিন্তু।’ কৌতুকের সুরে নয়, বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতেই কথাটা বললেন লিজা।
নাহ্! লিজার গন্তব্য পরিমাপ করা মুশকিল! তবে এটা নিশ্চিত, সে কথায় রয়েছে বহুদূর যাওয়ার সম্ভাবনা।
কি গানে, কি খেলায়, কি পড়ালেখায়—সব খানে আছেন তিনি। শুধু আছেন নয়, বরং বলা ভালো, আছেন সদর্পে ও স্বমহিমায়। তিনি গানের পাখি লিজা। পুরো নাম সানিয়া সুলতানা।
‘ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্র্রতিযোগিতায় ২০০৮ সালে চ্যাম্পিয়ন শিরোপা। ২০০৬ সালে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় দেশাত্মবোধক ও পল্লিগীতি—দুই ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদক। গানের অ্যালবাম বেরিয়েছে মিশ্র ১০টি ও একক একটি। এ ছাড়া প্লেব্যাক করেছেন চারটি চলচ্চিত্রে। ব্যাডমিন্টন খেলায় ময়মনসিংহ জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এখন খেলছেন ঢাকার জাতীয় প্রতিযোগিতায়। তার আগে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ছিলেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে পেয়েছেন বৃত্তি। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে পেয়েছেন জিপিএ-৫। পড়ছেন বিবিএ সপ্তম সেমিস্টারে, ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। এখন পর্যন্ত ফলাফল সিজিপিএ-৪-এর মধ্যে ৩.৯০।
গানের জগৎ, খেলার মাঠ আর শিক্ষাঙ্গনকে সমানতালে দাপিয়ে বেড়ানো কি এতই সহজ? আসলে লিজাকে দেখলে যে কারও মনেই এই প্রশ্ন দেখা দেবেই দেবে। কারণ, গান-খেলা-লেখাপড়া—এই তিন বিষয়কে তিনি যেন ‘ডাল-ভাত’ বানিয়ে ফেলেছেন! সত্যিই কি তাই? লিজা এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে অন্যভাবে বললেন, ‘আমার প্রতিদিনের রুটিন শুনুন। সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠেই হারমোনিয়াম নিয়ে বসা। সাড়ে আটটা পর্যন্ত রেওয়াজ করা। তারপর নাকে-মুখে কিছু গুঁজে দিয়েই ভার্সিটিতে দৌড়। বিকেল নাগাদ বাসায় ফিরে কোনোমতে পোশাক পাল্টেই আবার দে ছুট ব্যাডমিন্টন কোর্টে। প্র্যাকটিস শেষে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা। একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার হারমোনিয়াম নিয়ে বসা। আধা ঘণ্টা রেওয়াজ করে ফের পাঠ্যবই নিয়ে বসা। এর মধ্যে আবার কোনো কোনো দিন থাকে মঞ্চে শো করার তাগাদা কিংবা স্টুডিওতে গানের রেকর্ডিং। এবার আপনিই বলুন, কাজটা কঠিন নাকি সহজ?’
প্র্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে মিটিমিটি হাসছেন তিনি। তাঁর ‘কর্মমুখর’ দিনের রুটিন শুনে আমরা নির্দ্বিধায় কবুল করি ‘কঠিনেরে’ ভালোবেসেছেন তিনি।
কিন্তু কখন থেকে? প্রশ্ন শুনে লিজা এবার স্মৃতিতে ডুব দেন। মুহূর্তেই পৌঁছে যান ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে, যেখানে ফেলে এসেছেন তাঁর শৈশব-কৈশোর ও জন্মের বীজ। লিজা বলতে শুরু করেন, ‘আমার গানের শুরুটা বেশ ছোটবেলায়। তখন গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি। এই স্কুলে সংগীত পরীক্ষা দিতে হতো। তো পরীক্ষার দিন এত ভালো গাইলাম যে, স্যার আমার বাবাকে ডেকে বললেন, “মেয়েকে গান শেখান। ওর গানের গলা বেশ ভালো।”’
শিক্ষকের সেদিনের কথা যে নিছক প্রশংসা ছিল না, লিজা তার প্রমাণ দিয়েছিলেন কদিন বাদেই। জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় সেই ছোট্ট মেয়েটি দু-দুটি স্বর্ণপদক জয় করেছিলেন।
জানা গেল গানের শুরুটা। খেলার শুরুটা তবে কবে?
‘ব্যাডমিন্টন খেলার শুরুও বেশ কাকতালীয়ভাবে। গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে তখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। একদিন আমাদের ক্রীড়া শিক্ষক বললেন, লিজা, একটু খেলে দেখো তো। খেললাম। আর আশ্চর্যজনকভাবে ওই খেলায় যে প্রতিবছর চ্যাম্পিয়ন হয়, তাকেই হারিয়ে দিলাম। ম্যাডাম বললেন, ‘তোকে দিয়েই হবে।’
ম্যাডামের কথা ততক্ষণাৎ মনে গেঁথে নিলেন ওই কিশোরী। এরপর ক্লাস সিক্স থেকে কলেজ পর্যন্ত টানা বৃহত্তর ময়মনসিংহ ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন শিরোপা ধরে রেখে ম্যাডামের কথার যথার্থতার প্রমাণ রাখলেন তিনি।
এসবের পাশাপাশি পড়ালেখাতেও রেখে চলেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। তাই বুঝি তাঁর ভবিষ্যৎ স্বপ্নও পড়ালেখাকে ঘিরেই।
সেটা কেমন? ‘বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখি আমি। বলতে পারেন, বাবার কাছ থেকেই পেয়েছি এই স্বপ্নের বীজ।’ বলে রাখা ভালো, লিজার বাবা হেলাল উদ্দিন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা। মা নার্গিস সুলতানা। পরিবারে আছে আরও একজন, সে লিজার ছোট ভাই।
‘তবে পেশাজীবনে আমি যা-ই হই না কেন, গান আর খেলা ছাড়ছি না কিন্তু।’ কৌতুকের সুরে নয়, বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতেই কথাটা বললেন লিজা।
নাহ্! লিজার গন্তব্য পরিমাপ করা মুশকিল! তবে এটা নিশ্চিত, সে কথায় রয়েছে বহুদূর যাওয়ার সম্ভাবনা।
No comments