সফলদের স্বপ্নগাথা- চলো গড়ি সুন্দর পৃথিবী by লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও
সবার আগে না-হয় আমার পরিবারের একটা গল্প বলি। আমার দাদা জার্মানিতে থাকতেন। তিনি একটি কয়লাখনিতে কাজ করতেন, সেই খনির মালিক শিল্পপতিকে নিয়েই এই গল্প।
খনির কালো ধোঁয়া যাতে শহরের পরিবেশ দূষিত করতে না পারে, সে জন্য কর্তৃপক্ষ উঁচু চিমনির ব্যবস্থা করতে শিল্পপতিকে চাপ দিচ্ছিল। নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও একসময় তিনি রাজি হলেন। চিমনি যখন তৈরি করা হচ্ছিল, তখন শিল্পপতি হঠাৎ বললেন, চিমনি যদি গির্জার চূড়ার চেয়ে বেশি উঁচু হয়, তবে তা হবে ধর্মের প্রতি চরম অবমাননা। আসলে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল নিজের অর্থ সাশ্রয় করা। একসময় বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়াতে ছড়াতে তাঁর খনির শ্রমিকেরা তো অসুস্থ হলেনই, পুরো শহরের পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ল। আমার দাদাও ছিলেন সেই অসুস্থ হয়ে পড়া শ্রমিকদের একজন।
এভাবেই এক নির্বোধ শিল্পপতি শুধু নিজের পয়সা বাঁচাতে গিয়ে গোটা শহরের পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করেছিলেন।
বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর পরিবেশ আজ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। আমাদের সুপেয় পানির উৎসগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সাগর দূষিত হয়ে পড়ছে, জলাভূমিগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বিপুল মৎস্যভান্ডার বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
আমরা কীভাবে এমন অবস্থায় এসে পড়লাম? খুব সহজভাবে বলতে গেলে, সেই শিল্পপতি যেমন বর্তমানকে ভেবে ভবিষ্যৎকে নষ্ট করে ফেলেছিলেন, ঠিক সেভাবে আমরাও এই পৃথিবীকে বিষাক্ত করে ফেলছি। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে গিয়ে আমরা পৃথিবীর অনবায়নযোগ্য শক্তি ও সম্পদের ভান্ডার নিঃশেষ করে ফেলছি। নিজের হাতে নিজেরাই পৃথিবীর ধ্বংস ডেকে আনছি।
সমস্যা হচ্ছে, পৃথিবীর পরিবেশ যতটুকু কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে, তার চেয়ে অনেক বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রতিনিয়ত বায়ুমণ্ডলে নির্গত হচ্ছে। এই অতিরিক্ত গ্যাসের ফলে পৃথিবীর অভ্যন্তরে তাপমাত্রা ক্রমাগত বেড়েই চলছে।
দৈনন্দিন জীবনে তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বাড়লে বা কমলে তা আমাদের কাছে ধরা পড়ে না। কিন্তু পৃথিবীজুড়ে সর্বত্র যদি তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি বেড়ে যায়, তাহলে তা এক মহাদুর্যোগের সৃষ্টি করতে পারে। এই ভয়াবহ পরিণতি আমাদের ঠেকাতেই হবে।
আমার দাদার সময়ে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির কথা ভাবাও যেত না। চিমনির ধোঁয়া কিংবা দূষণ ছাড়া শক্তি উৎপাদন করা যাবে, এ ছিল স্বপ্নের অতীত। কিন্তু এখন আমাদের হাতে ন্যান-প্রযুক্তি আছে, যা দিয়ে আমরা নবায়নযোগ্য উৎস থেকে শক্তি সংগ্রহ করতে পারি। সৌরশক্তি এখন আর নতুন কোনো ধারণা নয়, নানা জায়গায় নানাভাবে তা সফলভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বায়ুশক্তিও ভালো সম্ভাবনা দেখাচ্ছে, আর হাইড্রোজেনকে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহারের প্রযুক্তি এক নতুন ভবিষ্যতের সূচনা করেছে।
কিন্তু আমরা যত দিন না এই প্রযুক্তিগুলোর সঠিক ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি, সবাইকে এর আওতায় নিয়ে আসতে পারছি, তত দিন এর সত্যিকারের সুফল পাওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ বাস করে, কিন্তু গোটা পৃথিবীর বর্জ্যের ৪০ শতাংশ এই একটি দেশ থেকেই উৎপাদিত হয়। তাই বিশেষজ্ঞরা বলেন, পৃথিবীর সব মানুষ যদি মার্কিনদের মতো জীবনযাপন করত, তাহলে তাদের রসদ জোগাতে আরও দুটো নতুন পৃথিবীর দরকার হতো। ভাবা যায়?
যথেষ্ট হয়েছে! এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না। আমাদের নিজেদের কাজের মাধ্যমে নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে এবং তা করতে হবে এখন থেকেই। এ চেতনা শুধু একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সবার মধ্যে এমনভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে, যাতে তা আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে; যাতে করে পরিবেশ, সরকারের নীতি আর সাধারণ মানুষের জীবন—এই বিষয়গুলো এক সুতায় গাঁথা থাকে। আমরা চাই বা না চাই, বাস্তবতা মাথায় রেখে এই শতকে পরিবেশকে আমাদের প্রাধান্য দিতেই হবে।
সূত্র: ইন্টারনেট।
আর্থ ডে ২০০০ উপলক্ষে দেওয়া বক্তৃতার নির্বাচিত অংশের অনুবাদ: অঞ্জলি সরকার
এভাবেই এক নির্বোধ শিল্পপতি শুধু নিজের পয়সা বাঁচাতে গিয়ে গোটা শহরের পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করেছিলেন।
বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর পরিবেশ আজ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। আমাদের সুপেয় পানির উৎসগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সাগর দূষিত হয়ে পড়ছে, জলাভূমিগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বিপুল মৎস্যভান্ডার বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
আমরা কীভাবে এমন অবস্থায় এসে পড়লাম? খুব সহজভাবে বলতে গেলে, সেই শিল্পপতি যেমন বর্তমানকে ভেবে ভবিষ্যৎকে নষ্ট করে ফেলেছিলেন, ঠিক সেভাবে আমরাও এই পৃথিবীকে বিষাক্ত করে ফেলছি। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে গিয়ে আমরা পৃথিবীর অনবায়নযোগ্য শক্তি ও সম্পদের ভান্ডার নিঃশেষ করে ফেলছি। নিজের হাতে নিজেরাই পৃথিবীর ধ্বংস ডেকে আনছি।
সমস্যা হচ্ছে, পৃথিবীর পরিবেশ যতটুকু কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে, তার চেয়ে অনেক বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রতিনিয়ত বায়ুমণ্ডলে নির্গত হচ্ছে। এই অতিরিক্ত গ্যাসের ফলে পৃথিবীর অভ্যন্তরে তাপমাত্রা ক্রমাগত বেড়েই চলছে।
দৈনন্দিন জীবনে তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বাড়লে বা কমলে তা আমাদের কাছে ধরা পড়ে না। কিন্তু পৃথিবীজুড়ে সর্বত্র যদি তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি বেড়ে যায়, তাহলে তা এক মহাদুর্যোগের সৃষ্টি করতে পারে। এই ভয়াবহ পরিণতি আমাদের ঠেকাতেই হবে।
আমার দাদার সময়ে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির কথা ভাবাও যেত না। চিমনির ধোঁয়া কিংবা দূষণ ছাড়া শক্তি উৎপাদন করা যাবে, এ ছিল স্বপ্নের অতীত। কিন্তু এখন আমাদের হাতে ন্যান-প্রযুক্তি আছে, যা দিয়ে আমরা নবায়নযোগ্য উৎস থেকে শক্তি সংগ্রহ করতে পারি। সৌরশক্তি এখন আর নতুন কোনো ধারণা নয়, নানা জায়গায় নানাভাবে তা সফলভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বায়ুশক্তিও ভালো সম্ভাবনা দেখাচ্ছে, আর হাইড্রোজেনকে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহারের প্রযুক্তি এক নতুন ভবিষ্যতের সূচনা করেছে।
কিন্তু আমরা যত দিন না এই প্রযুক্তিগুলোর সঠিক ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি, সবাইকে এর আওতায় নিয়ে আসতে পারছি, তত দিন এর সত্যিকারের সুফল পাওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ বাস করে, কিন্তু গোটা পৃথিবীর বর্জ্যের ৪০ শতাংশ এই একটি দেশ থেকেই উৎপাদিত হয়। তাই বিশেষজ্ঞরা বলেন, পৃথিবীর সব মানুষ যদি মার্কিনদের মতো জীবনযাপন করত, তাহলে তাদের রসদ জোগাতে আরও দুটো নতুন পৃথিবীর দরকার হতো। ভাবা যায়?
যথেষ্ট হয়েছে! এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না। আমাদের নিজেদের কাজের মাধ্যমে নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে এবং তা করতে হবে এখন থেকেই। এ চেতনা শুধু একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সবার মধ্যে এমনভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে, যাতে তা আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে; যাতে করে পরিবেশ, সরকারের নীতি আর সাধারণ মানুষের জীবন—এই বিষয়গুলো এক সুতায় গাঁথা থাকে। আমরা চাই বা না চাই, বাস্তবতা মাথায় রেখে এই শতকে পরিবেশকে আমাদের প্রাধান্য দিতেই হবে।
সূত্র: ইন্টারনেট।
আর্থ ডে ২০০০ উপলক্ষে দেওয়া বক্তৃতার নির্বাচিত অংশের অনুবাদ: অঞ্জলি সরকার
No comments