বিচারপতিদেরও সম্পদের হিসাব- শেখর ইমতিয়াজ
নবনিযুক্ত মাননীয় প্রধান বিচারপতি
মোহাম্মদ ফজলুল করিম। তিনি শপথ নেয়ার আগের দিন সাংবাদিকদের সাথে খোলামেলা
কথা বলেন। তাঁর মতে, বিচারপতিদের সম্পদের বিবরণী জমা দেয়া উচিত স্বচ্ছতার
কারণেই।
পাশর্্ববতর্ী দেশ ভারতের বিচারপতিরা তাঁদের
সম্পদের বিবরণী জমা দিয়ে থাকেন। নতুন প্রধান বিচারপতি অভিমত ব্যক্ত করেন,
আমাদের দেশে বিচারপতিদের সম্পদের বিবরণী জমা দেয়ার কোন বিধান নেই। এ
ব্যাপারে কেউ দাবিও উত্থাপন করেননি, তবে সম্পদের বিবরণী জমা দেয়া উচিত।
তাঁর এই অভিমত বাসত্মবায়িত হলে জাতি পাবে স্বচ্ছতার সম্মানজনক বৈশিষ্ট্য।
সততা ও সদাচরণের মহিমায় ভূষিত হবেন সকল বিচারপতি। কারণ গণতান্ত্রিক
ঐতিহ্যের জন্য স্বচ্ছতার কোন বিকল্প নেই। আর এটি যদি শীর্ষ পর্যায় থেকে
শুরম্ন হয় তাহলে তার বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে এবং প্রসারিত হবে
প্রয়োগযোগ্যতাও।
২০০৯ সালের মার্চের শুরম্নতে আমরা দেখতে পাই, ভারতের প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রীমকোর্টের ২১ জন বিচারপতি নিজেদের সম্পত্তির হিসাব ঘোষণা করেন। বিচারপতিরা স্বেচ্ছায় তা করেন। প্রধান বিচারপতি নিজের, পারিবারিক এবং স্ত্রীর মোট ৬টি জমি-বাড়ির বিবরণী প্রকাশ করেন। এনাকুলামে ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার একটি ফ্যাট, সাড়ে চার লাখ টাকার বসত জমি মিলিয়ে ১৮ লাখ ৮ হাজার টাকার বাড়ি-জমির হিসাব দেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর বা তাঁর স্ত্রীর কোন ফিক্সড ডিপোজিট নেই। একটি গাড়ি রয়েছে। স্বর্ণালঙ্কারেরও উলেস্নখ আছে। পরবর্তী সম্ভাব্য প্রধান বিচারপতির কোন গাড়ি নেই। মুম্বাইয়ে তাঁর ২০ লাখ টাকার ফ্যাট রয়েছে। বিয়ের সময় তিনি যে গয়না পেয়েছিলেন তার বর্তমান মূল্য এক লাখ টাকা। তাঁর মোট ৪১ লাখ ১৫ হাজার টাকার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। এই হিসাবটুকু উলেস্নখ করার কারণ হচ্ছে, ভারতে জাতীয় তথ্য কমিশন রায় দেয় যে, সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিরাও তথ্য জানার অধিকার আইনের আওতায় পড়েন। তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ প্রকাশ্যে জানাতে হবে। সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতিও তথ্য জানার অধিকার আইনের আওতায় পড়েন। বাংলাদেশে এমনতর আইন তৈরি করে গণতন্ত্র ঐতিহ্যের পথে চলা শুরম্ন করবে। নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই যে তাঁর অভিমত প্রকাশ করেছেন তা স্পষ্ট হয়েছে দেশবাসীর কাছে।
পরিতাপের বিষয়, সরকার ঘোষিত অনেক উদ্যোগই বাসত্মবায়নের মুখ দেখে না। এই যেমন মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝুলে আছে নীতিমালা তৈরির জটিলতায়। হিসাব বিবরণী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিজ উদ্যোগে, নাকি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমতিসাপেৰে খতিয়ে দেখবে সে বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরা দ্বিধাবিভক্ত থাকায় চূড়ানত্ম হচ্ছে না নীতিমালাটি। বর্তমান সরকারের মেয়াদকাল এক বছরের অধিক হলেও এখনও মন্ত্রী-এমপিদের সম্পত্তির হিসাব নেয়া সম্ভব হয়নি। অথচ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ২০০৮-এ বলা আছে : প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য ও তাদের পরিবারের সম্পদের হিসাব ও আয়ের উৎস প্রতিবছর জনসমৰে প্রকাশ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ বিষয়ে সংসদে ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী সরকার কর্তৃক যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে একটি খসড়াও তৈরি হয়। খসড়ায় বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের বিবরণীতে ব্যক্তিমালিকানাধীন অথবা অংশীদারি ব্যবসার মূলধনের উলেস্নখ করতে হবে। আর কারও যদি কোন কোম্পানির পরিচালক হিসাবে শেয়ার থাকে সে ৰেত্রে কোম্পানির নাম ও শেয়ারের পরিমাণসহ যাবতীয় তথ্য জানাতে হবে। কৃষি ও অকৃষি জমিসহ পস্নট, ফ্যাটের সংখ্যা ও পরিমাণ এবং এর ক্রয়মূল্য, ব্যবসাবহিভর্ূত অর্থসম্পদ, কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণসহ যাবতীয় অস্থাবর ও স্থাবর সম্পত্তির বিবরণ দেয়ার প্রসত্মাব করা হয়েছে এ খসড়ায়। মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্যই সম্পদের হিসাব জনসমৰে প্রকাশ করার ব্যাপারে একমত। সমস্যা দেখা দিয়েছে এমপিদের নিয়ে। কারণ দুদকের বিষয়টি মাথায় রেখে নির্বাচনের আগে এমপিরা তাঁদের ও পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব যতদূর সম্ভব সীমিত আকারে দাখিল করেছিলেন।
আবার আদালতের দিকে তাকানো যাক। বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জল ইসলাম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর পরই দীর্ঘদিনের দুনর্ীতি ও অনিয়মের অভিযোগ থেকে হাইকোর্টকে মুক্ত করতে নতুন ফৌজদারি মামলা শুনানির জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করেন। মামলা আদালতে তুলতে এবং আদেশের কপি ও নথি সংশিস্নষ্ট শাখায় না পাঠিয়ে কারসাজি করাসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে চার বেঞ্চ অফিসারকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। জামিনজনিত দুনর্ীতি ও অনিয়ম চিহ্নিত করতে হাইকোর্টের দু'জন বিচারপতিকে নিয়ে একটি তদনত্ম কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জল ইসলাম আলোচিত কিছু বেঞ্চ পুনর্বিন্যাস ও পুনর্গঠন করে দায়িত্ব পুনর্গঠন করেন। হাইকোর্টের চিত্রটি তখন খুব করম্নণ অবস্থায় তদনত্ম কমিটির কাছে ধরা পড়ে। জানা যায়, তদ্বির, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাত করে হাইকোর্টের ২৪ বেঞ্চ অফিসার কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে ওঠেন।
২০০৮ সালের দিকে তাকালে দেখা যায়, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুনর্ীতি; চার বিচারকের নামে মামলা; দুনর্ীতির দায়ে চট্টগ্রামের বিচারক মোঃ গোলাম রাব্বানীকে বাধ্যতামূলক অবসর; পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা জজের বিরম্নদ্ধে ঘুষ, দুনর্ীতি ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ ইত্যাদি। এছাড়া বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিচারপতি নিয়োগের যেসব কলঙ্কিত ঘটনার জন্ম হয়েছে তা তো বর্ণনাতীত।
বিদায়ী প্রধান বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মামলা দ্রম্নত এবং দৰতার সঙ্গে নিষ্পত্তি করতে হবে। বিচারপতিগণ জনগণের হয়ে কাজ করবেন। তাঁদের নিজস্ব কোন ৰমতা নেই। জনগণের ৰমতাই তাঁদের ৰমতার মূল উৎস। দেশকে এগিয়ে নিতে বিচারপতি, আইনজীবীর পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও বিশাল ভূমিকা রয়েছে। বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জল ইসলাম তাঁর প্রধান বিচারপতিত্বের স্বল্প সময়েও দু'টি গুরম্নত্বপূর্ণ মামলার পৌরোহিত্য করেন। তিনি ইতিহাসের ব্যক্তিত্ব হয়ে রইলেন।
বর্তমান মহাজোট সরকার প্রধান বিচারপতি নিয়োগে কোন অনিয়ম না করায় একটি অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি হলো। আপীল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমকেই প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয় এ সরকার। এ নিয়োগে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা পর্যনত্ম চমকে গেছেন। বর্তমান সরকার কোন নিয়মের ব্যত্যয় না ঘটানোর ফলে বিচারকার্য গতিশীল হবে বলে সবাই ধারণা করছেন। প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম সাংবাদিকদের জানান, কোন বিচারপ্রাথর্ীকে অবিচারের শিকার হতে দেবেন না। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর আনত্মরিকতার অভাব থাকবে না। তিনিও অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন এবং তা সমাধানেরও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
দেশের আমজনতা, যাঁরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশী এবং যাঁরা গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তাঁরা নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির প্রথমোক্ত অভিমতকে শ্রদ্ধার সঙ্গে মূল্যায়ন করছেন। বিচারপতিদের সম্পদের বিবরণী জমা দিলে সত্যিই স্বচ্ছতা আসবে গণতন্ত্র চর্চায়। দেশবাসীর কোন অনাকাঙ্ৰিত কৌতূহল জন্ম নেবে না; বিচারপ্রাথর্ী এবং বিচারপতিদের মধ্যে এক অভাবনীয় শোভনতার অঙ্গীকার সৃষ্টি হবে।
২০০৯ সালের মার্চের শুরম্নতে আমরা দেখতে পাই, ভারতের প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রীমকোর্টের ২১ জন বিচারপতি নিজেদের সম্পত্তির হিসাব ঘোষণা করেন। বিচারপতিরা স্বেচ্ছায় তা করেন। প্রধান বিচারপতি নিজের, পারিবারিক এবং স্ত্রীর মোট ৬টি জমি-বাড়ির বিবরণী প্রকাশ করেন। এনাকুলামে ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার একটি ফ্যাট, সাড়ে চার লাখ টাকার বসত জমি মিলিয়ে ১৮ লাখ ৮ হাজার টাকার বাড়ি-জমির হিসাব দেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর বা তাঁর স্ত্রীর কোন ফিক্সড ডিপোজিট নেই। একটি গাড়ি রয়েছে। স্বর্ণালঙ্কারেরও উলেস্নখ আছে। পরবর্তী সম্ভাব্য প্রধান বিচারপতির কোন গাড়ি নেই। মুম্বাইয়ে তাঁর ২০ লাখ টাকার ফ্যাট রয়েছে। বিয়ের সময় তিনি যে গয়না পেয়েছিলেন তার বর্তমান মূল্য এক লাখ টাকা। তাঁর মোট ৪১ লাখ ১৫ হাজার টাকার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। এই হিসাবটুকু উলেস্নখ করার কারণ হচ্ছে, ভারতে জাতীয় তথ্য কমিশন রায় দেয় যে, সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিরাও তথ্য জানার অধিকার আইনের আওতায় পড়েন। তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ প্রকাশ্যে জানাতে হবে। সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতিও তথ্য জানার অধিকার আইনের আওতায় পড়েন। বাংলাদেশে এমনতর আইন তৈরি করে গণতন্ত্র ঐতিহ্যের পথে চলা শুরম্ন করবে। নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই যে তাঁর অভিমত প্রকাশ করেছেন তা স্পষ্ট হয়েছে দেশবাসীর কাছে।
পরিতাপের বিষয়, সরকার ঘোষিত অনেক উদ্যোগই বাসত্মবায়নের মুখ দেখে না। এই যেমন মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝুলে আছে নীতিমালা তৈরির জটিলতায়। হিসাব বিবরণী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিজ উদ্যোগে, নাকি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমতিসাপেৰে খতিয়ে দেখবে সে বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরা দ্বিধাবিভক্ত থাকায় চূড়ানত্ম হচ্ছে না নীতিমালাটি। বর্তমান সরকারের মেয়াদকাল এক বছরের অধিক হলেও এখনও মন্ত্রী-এমপিদের সম্পত্তির হিসাব নেয়া সম্ভব হয়নি। অথচ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ২০০৮-এ বলা আছে : প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য ও তাদের পরিবারের সম্পদের হিসাব ও আয়ের উৎস প্রতিবছর জনসমৰে প্রকাশ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ বিষয়ে সংসদে ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী সরকার কর্তৃক যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে একটি খসড়াও তৈরি হয়। খসড়ায় বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের বিবরণীতে ব্যক্তিমালিকানাধীন অথবা অংশীদারি ব্যবসার মূলধনের উলেস্নখ করতে হবে। আর কারও যদি কোন কোম্পানির পরিচালক হিসাবে শেয়ার থাকে সে ৰেত্রে কোম্পানির নাম ও শেয়ারের পরিমাণসহ যাবতীয় তথ্য জানাতে হবে। কৃষি ও অকৃষি জমিসহ পস্নট, ফ্যাটের সংখ্যা ও পরিমাণ এবং এর ক্রয়মূল্য, ব্যবসাবহিভর্ূত অর্থসম্পদ, কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণসহ যাবতীয় অস্থাবর ও স্থাবর সম্পত্তির বিবরণ দেয়ার প্রসত্মাব করা হয়েছে এ খসড়ায়। মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্যই সম্পদের হিসাব জনসমৰে প্রকাশ করার ব্যাপারে একমত। সমস্যা দেখা দিয়েছে এমপিদের নিয়ে। কারণ দুদকের বিষয়টি মাথায় রেখে নির্বাচনের আগে এমপিরা তাঁদের ও পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব যতদূর সম্ভব সীমিত আকারে দাখিল করেছিলেন।
আবার আদালতের দিকে তাকানো যাক। বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জল ইসলাম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর পরই দীর্ঘদিনের দুনর্ীতি ও অনিয়মের অভিযোগ থেকে হাইকোর্টকে মুক্ত করতে নতুন ফৌজদারি মামলা শুনানির জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করেন। মামলা আদালতে তুলতে এবং আদেশের কপি ও নথি সংশিস্নষ্ট শাখায় না পাঠিয়ে কারসাজি করাসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে চার বেঞ্চ অফিসারকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। জামিনজনিত দুনর্ীতি ও অনিয়ম চিহ্নিত করতে হাইকোর্টের দু'জন বিচারপতিকে নিয়ে একটি তদনত্ম কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জল ইসলাম আলোচিত কিছু বেঞ্চ পুনর্বিন্যাস ও পুনর্গঠন করে দায়িত্ব পুনর্গঠন করেন। হাইকোর্টের চিত্রটি তখন খুব করম্নণ অবস্থায় তদনত্ম কমিটির কাছে ধরা পড়ে। জানা যায়, তদ্বির, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাত করে হাইকোর্টের ২৪ বেঞ্চ অফিসার কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে ওঠেন।
২০০৮ সালের দিকে তাকালে দেখা যায়, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুনর্ীতি; চার বিচারকের নামে মামলা; দুনর্ীতির দায়ে চট্টগ্রামের বিচারক মোঃ গোলাম রাব্বানীকে বাধ্যতামূলক অবসর; পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা জজের বিরম্নদ্ধে ঘুষ, দুনর্ীতি ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ ইত্যাদি। এছাড়া বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিচারপতি নিয়োগের যেসব কলঙ্কিত ঘটনার জন্ম হয়েছে তা তো বর্ণনাতীত।
বিদায়ী প্রধান বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মামলা দ্রম্নত এবং দৰতার সঙ্গে নিষ্পত্তি করতে হবে। বিচারপতিগণ জনগণের হয়ে কাজ করবেন। তাঁদের নিজস্ব কোন ৰমতা নেই। জনগণের ৰমতাই তাঁদের ৰমতার মূল উৎস। দেশকে এগিয়ে নিতে বিচারপতি, আইনজীবীর পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও বিশাল ভূমিকা রয়েছে। বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জল ইসলাম তাঁর প্রধান বিচারপতিত্বের স্বল্প সময়েও দু'টি গুরম্নত্বপূর্ণ মামলার পৌরোহিত্য করেন। তিনি ইতিহাসের ব্যক্তিত্ব হয়ে রইলেন।
বর্তমান মহাজোট সরকার প্রধান বিচারপতি নিয়োগে কোন অনিয়ম না করায় একটি অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি হলো। আপীল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমকেই প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয় এ সরকার। এ নিয়োগে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা পর্যনত্ম চমকে গেছেন। বর্তমান সরকার কোন নিয়মের ব্যত্যয় না ঘটানোর ফলে বিচারকার্য গতিশীল হবে বলে সবাই ধারণা করছেন। প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম সাংবাদিকদের জানান, কোন বিচারপ্রাথর্ীকে অবিচারের শিকার হতে দেবেন না। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর আনত্মরিকতার অভাব থাকবে না। তিনিও অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন এবং তা সমাধানেরও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
দেশের আমজনতা, যাঁরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশী এবং যাঁরা গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তাঁরা নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির প্রথমোক্ত অভিমতকে শ্রদ্ধার সঙ্গে মূল্যায়ন করছেন। বিচারপতিদের সম্পদের বিবরণী জমা দিলে সত্যিই স্বচ্ছতা আসবে গণতন্ত্র চর্চায়। দেশবাসীর কোন অনাকাঙ্ৰিত কৌতূহল জন্ম নেবে না; বিচারপ্রাথর্ী এবং বিচারপতিদের মধ্যে এক অভাবনীয় শোভনতার অঙ্গীকার সৃষ্টি হবে।
No comments