গ্যাস সংকট- সমাধানে চাই সমন্বিত উদ্যোগ
সারাদেশেই এখন গ্যাস সংকট চলছে। রাজধানীতে এ সংকট আরও বেশি। শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। গ্যাস কোম্পানিগুলো এবং পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বলছে, শীত মৌসুমে গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ সময় সরবরাহে ঘাটতি অন্য মৌসুমের চেয়ে বেশি হয়।
এ সময় সার কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করতে হয় পুরোমাত্রায়। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও বিত্তবানদের ঘর গরম রাখতে হিটার বা ফায়ারপ্লেস ব্যবহারের জন্য গ্যাসের প্রয়োজন পড়ে। শীতে গ্যাস জমে যাওয়া অথবা বাসাবাড়ির জন্য আগে সংযোগ নেওয়া পুরনো পাইপ সরু হওয়ার কারণে গ্যাসের চাপ কম থাকলে অনেক সময় গ্রহীতাদের কাছে সরবরাহই পেঁৗছে না। শনিবার সমকালে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে রাজধানী ও সারাদেশে তীব্র গ্যাস সংকটের কারণ হিসেবে উলি্লখিত বিষয়গুলোকেই তুলে ধরা হয়েছে। এ কথা সত্য যে, বর্তমান সরকারের আমলে গ্যাসের উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু এই বৃদ্ধির সুফলটা সবাই আনুপাতিক হারে পাচ্ছেন কি-না সেটা নিশ্চিত করা দরকার। তদুপরি গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধির হারের সঙ্গে তাল রেখে প্রয়োজনীয় উৎপাদন কতটুকু, দেশের মজুদ থেকে চাহিদা মেটানো সম্ভব কি-না, এ জন্য নতুন উৎসের সন্ধান করতে হবে কি-না, সে ব্যাপারেও সুদূরপ্রসারী নীতি থাকা দরকার। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু রাখতে যে পরিমাণ গ্যাস খরচ হয়, সেটা সামাল দেওয়া এবং নতুন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করলে কোথা থেকে বাড়তি গ্যাসের জোগান দেওয়া হবে, সে ব্যাপারেও মাথা ঘামানো উচিত। এটা ঠিক যে, সরকার দীর্ঘদিন নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ রেখে গ্যাসের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হতে দেয়নি। কিন্তু এতে দেশের আবাসন শিল্প এবং গ্যাসভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার সম্ভাবনা কি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি? যারা দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সংযোগের প্রহর গুনছেন, নাগরিক হিসেবে তাদেরও এই সংযোগ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, শুষ্ক মৌসুমে গ্যাস সংকট ততটা তীব্র থাকবে না। তারপরও ঘাটতির কারণে সংকট কিন্তু থাকছেই। দেশের শিল্প-বাণিজ্যে আরও গতি আনতে হলে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। তবে উত্তোলন বৃদ্ধি ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা বাড়িয়ে এবং অপচয় রোধ করে এ সংকটকে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়। যেসব বাসাবাড়ির সংযোগ লাইন সরু পাইপ দিয়ে করা, সেগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে মোটা পাইপ যুক্ত করে সরবরাহে গতি আনা যায়। শীতে যাতে পাইপে গ্যাস জমে যেতে না পারে, সে ব্যাপারেও আধুনিক প্রযুক্তিগত উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে সরবরাহ পদ্ধতির সঙ্গেই। একই সঙ্গে গ্যাস চুরি বন্ধ করতে হবে। গ্যাস অপচয়ও রোধ করতে হবে। আর এসব পদক্ষেপকে একটি সমন্বিত ব্যবস্থার অধীনে এনে সুদূরপ্রসারী কার্যকর জ্বালানি নীতি-কৌশল প্রয়োগ করা যায়। এতে গৃহস্থালি পর্যায়ে গ্যাস ব্যবহারকারীরা যেমন ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবেন, তেমনি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরাও নির্বিঘ্ন সরবরাহ পেয়ে উপকৃত হবেন। তবে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করেও পাইপে গ্যাস সরবরাহের ওপর চাপ কমিয়ে আনা যায়। এ জন্য পাইপ এবং সিলিন্ডারের গ্যাসের ক্ষেত্রে মূল্য বৈষম্য একটি বিরাট সমস্যা। এ ব্যাপারে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। এটা ঠিক যে, সাধারণ মানুষ সরকারের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো অজুহাত শুনতে চায় না। তারা চায় নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ। জনগণের এ ধরনের মনোভাব উপলব্ধি করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
No comments