মুগদায় যুবককে জবাই, আটক ৭
রাজধানীর মুগদায় এক যুবককে জবাই করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। নিহত যুবকের নাম কাউসার হাওলাদার (৩০)। ঘটনার পর পুলিশ তার লাশের পাশ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি রক্তমাখা ছোরা উদ্ধার করেছে।
নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টায় পুলিশ মুগদা থানাধীন উত্তর মুগদার ১৩৫/১/এ নম্বর বাড়ির দোতলার সিঁড়ি থেকে কাউসারের রক্তাক্ত জবাই করা লাশ উদ্ধার করে। পরে পুলিশ তার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহতের চাচা আনোয়ার পারভেজ জনকণ্ঠকে জানান, কাউসার কমলাপুরে জালালাবাদ নামে একটি বেসরকারী অফিসে চাকরি করত। গত ৫ বছর ধরে সে উত্তর মুগদার ১৩৫/১/৭ নম্বর বাড়ির নিচতলায় লন্ড্রি দোকানি আলমগীরের সাবলেট হিসেবে বসবাস করছিল। দীর্ঘদিন ধরে একই গলির ১৩৫/১/এ নম্বর হোল্ডিংয়ের নিশি-নিশাদ ভবনের দোতলার ভাড়াটিয়া শামসুদ্দিন তুষারের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল। ওই বাসায় কাউসার নিয়মিত যাতায়াত করত। তিনি জানান, শুক্রবার রাতে কাউসার তার বন্ধু শামসুদ্দিন তুষারের সঙ্গে দেখা করতে ওই নিশি-নিশাদ ভবনের বাসায় যায়। ওই ভবনের সিঁড়ির মাঝখানে দুটি বাড়ির মধ্যে যাতায়াতের একটি পথ রয়েছে। নিহতের চাচা আনোয়ার আরও জানান, পরে খবর পেয়ে তিনিসহ স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তার ভাতিজার রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে থানায় জানান। ওই পথেই যে কেউ তার ভাতিজা কাউসারকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করেছে। কে বা কারা কি কারণে কাউসারকে খুন করেছে তা তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বলতে পারেননি। স্থানীয়রা জানান, কাউসারের বন্ধু শামসুদ্দিন তুষারের বাসায় প্রতিনিয়ত মাদকের আসর বসত। এদিকে পুলিশ নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে অভিযান চালিয়ে নিহতের বন্ধু শামসুদ্দিন তুষার ও তার স্ত্রী শিলা তুষার এবং আলমগীর ও তার স্ত্রী সুমাসহ ৭ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোঃ গোলাম রসুল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জনকণ্ঠকে জানান, উত্তর মুগদার ১৩৫/১/এ নম্বর হোল্ডিংয়ের আরব বেকারি বিল্ডিংয়ের দোতলার ছাদে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন কাউসার। দুর্বৃত্তরা তাকে জবাইয়ের পর পেটে-পিঠে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যা নিশ্চিত করে ঘটনাস্থলে লাশ রেখে পালিয়ে যায়। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছোরা ফেলে যায় তারা। পরে ঘটনাস্থল থেকে ওই রক্তমাখা ছোরা উদ্ধার করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তার ধারণা, মাদক ব্যবসা বা সেবনকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হাতে কাউসার খুন হতে পারেন। এ হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা জড়িত থাকতে পারে। এদিকে পুলিশের হাতে আটক নিহতের বন্ধু শামসুদ্দিন তুষার নিজেকে কাউসার হত্যার সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করে জনকণ্ঠকে জানান, শুক্রবার রাতে বন্ধু কাউসার ১টি বিয়ারক্যান নিয়ে তার বাসায় যায়। এরপর তারা দু’জন গল্প-গুজব করতে করতে ওই বিয়ার পান শেষে তাকে বসিয়ে রেখে বাইরে বের হয়ে যান। তার কিছুক্ষণ পরই তিনি চিৎকার- ও হৈচৈ শুনতে পান। এ সময় তিনি সামনে গিয়ে বন্ধু কাউসারকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তখন তিনি তাঁকে বাঁচানোর জন্য হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টাকালে দেখেন, কাউসারের গলা কাটা ও পেটের নাড়িভুড়ি বের হওয়া রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে লাশ উদ্ধারসহ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মুগদা থানায় যোগাযোগ করা হলে ওসি (তদন্ত) ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জনকণ্ঠকে জানান, নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বন্ধু শামসুদ্দিন তুষারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জানা গেছে, নিহত কাউছারের পিতার নাম মোঃ সুলতান হাওলাদার। তার বাড়ি বরিশাল জেলার সাহেবহাট থানার নৈপত্রি গ্রামে।
No comments