মন খুলে বলছি- পরামর্শ দিচ্ছেন মোঃ জহির উদ্দিন, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী সহকারী অধ্যাপক সাইকোথেরাপি বিভাগ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

আমর বয়স ৩৮। ইদানীং কাপড় ধুতে গেলে বারবার মনে হয় কাপড়গুলো পরিষ্কার হয়নি। যত ধুই ততই মনে হয় আবার ধুতে হবে। এটা কি আমার কোন রোগ? -তাপস, মহাখালী ঢাকা।
এটি একটি অমূলক সন্দেহ যা গুরম্নত্ব দেয়া উচিত নয়। এরকম মনে হলেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ধরে কাপড় না ধুয়ে স্বাভাবিকভাবে কাপড় ধুয়ে শেষ করবেন। মনের মধ্যে খুতখুতানি থাকুক। সময় গেলে এটি চলে যাবে।

আমার বয়স ৩৯। আজকাল প্রায়ই আমার মাথা গরম হয়ে আসে। কি কারণে এমন হচ্ছে?
-সুলতানা, পাহাড়তলী চট্টগ্রামন।

কেন মাথা গরম হয় তা বের করতে হবে। কোন শারীরিক কারণে হলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। যদি টেনশনে হয় তবে টেনশন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রাণখুলে কথা বললে, টেনশনের কারণগুলোর সমাধান করলে, নেতিবাচক চিনত্মা কম করলে, ইতিবাচক চিনত্মা করলে, খারাপ ঘটনা মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকলে এবং মেডিটেশন বা রিল্যাক্সেশন ব্যায়াম করলে টেনশন কমে আসে।
সোস্যাল ফোবিয়া বিষয়টি আসলে কি?
-ফৌজিয়া, মিরপুর, ঢাকা।

সোস্যাল ফোবিয়া একধরণের মানসিক সমস্যা যেখানে মানুষ লোকসমাজ এড়িয়ে চলে। তারা মানুষের সামনে গেলে তাদের মধ্যে নানা ধরণের উৎকন্ঠার লণ তৈরী হয়। যেমন, বুক ধরফড় করা, বুকে ব্যাথা, হাত-পা কাপা, শ্বাসকষ্ট, অসুস্থতার অনুভূতি, বমি বমি লাগা, পেটে অস্বসত্মি হওয়া, পায়খানা বা প্রস্রাবের বেগ পাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, মাথা ব্যথা, ভয় ইত্যাদি। এর ফলে সোস্যাল ফোবিয়া যাদের আছে তারা মানুষজনের সঙ্গ এড়িয়ে চলে। সচরাচর তারা এক দুইজন লোক সহ্য করতে পারে। পরিচিতজন এবং পরিবারের সদস্যদের সামনে তারা সাধারণত সহজ থাকতে পারে। কিন্তু বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সমনে (ছেলেরা মেয়েদের সামনে এবং মেয়েরা ছেলেদের সামনে), উচ্চপদস্থ মানুষদের সামনে (যেমন, শিক, জনপ্রতিনিধি, নেতা), যেখানে বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ একসাথে আছেন তাদের সামনে এবং যেখানে অন্যরা তাকে মূল্যায়ণ করতে পারেন সেখানে (যেমন, পরীার কমিটি) সোস্যাল ফোবিয়ার মানুষেরা যেতে চাননা, সম্ভব হলে এড়িয়ে যান। এড়িয়ে যাবার ফলে তাদের সমস্যা আরো শক্তিশালী হয়। এই রোগীগেদের মধ্যে আরেকদল মানুষ আছেন যারা মনে করেন যে, তাদের নিয়ে অন্যরা সমালোচনা করবে বা তাদের সম্পর্কে খারাপ ভাববে। তারা মনে নিজেদেরকে অন্যদের সামনে নিকৃষ্ট মনে করেন। ফলে এই ভয়ে তারা মানুষের সাথে মিশেননা। সোস্যাল ফেবিয়া সমাধান করতে হলে কারো সামাজিক দতার অভাব থাকলে তার দতা শিখতে হবে। সমাজে যারা সামাজিক ভাবে দ হিসাবে পরিচিত তাদেরকে পর্যবেণ করে সামাজিক দতা শিখা যায়। এছাড়া চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীরা সামাজিক দতা শিখানোর জন্য 'সামজিক দতা প্রশিণ গ্রম্নপ' পরিচালনা করে থাকেন যেখানে একটি সিলেবাস অনুসরণ করে সামাজিক দতা প্রশিণ দেয়া হয়। যারা সামাজিক পরিস্থিতি বা লোকসমাজ এড়িয়ে যাচ্ছেন তাদের উচিত এড়িয়ে না গিয়ে আরো বেশী করে এসব পরিস্থিতিতে যাওয়া। এভাবে গেলে ভয় ভেঙে যাবে। রোগও ভাল হয়ে যাবে। যারা নিজেদেরকে ছোট ভেবে বা অন্যরা খারাপ ভাববে এই চিন্তা করে মানুষের সাথে মিশছেন না তাদের এই ধরণের চিন্তা বাদ দিতে হবে। যতণ কেউ সত্যিই খারাপ কিছু না বলছে ততণ খারাপ বলবে এমন কোন প্রমাণ নেই। অগ্রিম নেতিবাচক চিন্তা বাদ দিতে হবে। যদি কিছুতেই মাথা থেকে নেতিবাচক চিনত্মা বাদ দিতে না পারেন তবে কগনেটিভ বিহেভিয়র থেরাপি নিতে পারেন। এটি এমন এক ধরণের চিকিৎসা যেখানে যু্িক্ত তর্ক ব্যবহার করে এবং রোগীকে দিয়ে কাজ করিয়ে মাথাার নেতিবাচক চিনত্মাগুলো দূর করার ব্যবস্থা করা হয়। এই চিনত্মা দূর হলে সমাজ ভীতিও দূর হবে। এই চিকিৎসার অংশ হিসাবে রিল্যাক্সেশন বলে এক ধরণের ব্যায়াম করানো হয় যাতে সোস্যাল ফোবিয়ার ফলে সৃষ্ট উৎকন্ঠার লণগুলো কমে যায়।

আপনার সমস্যা লিখে পাঠান
ঠিকানা
মনখুলে বলছি
যাপিত জীবন
দৈনিক জনকণ্ঠ
২৪/এ নিউ ইস্কাটন রোড, ঢাকা

No comments

Powered by Blogger.