বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষী আব্দুল ওহাবের ইন্তেকাল
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষী আব্দুল ওহাব হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সোমবার সকালে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের সলিমাবাদ গ্রামের নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিলস্নাহি...রাজিউন)।
তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তিনি স্ত্রী, ৪ ছেলে, ২ মেয়েসহ আত্মীয়স্বজন ও অসংখ্য বন্ধুবান্ধব রেখে গেছেন। তিনি ১৯৬৩ সালের ১০ মার্চ পাকিস্তান আর্টিলারি কোরে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে বারর্কি সেক্টরে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এর পর ১৯৭১ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে যশোর সেনানিবাস থেকে পালিয়ে এসে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার বাতেন বাহিনীতে যোগ দেন। বাতেন বাহিনীর সঙ্গে তিনি ভারতের মাইনকারচরে ট্রেনিংয়ে অংশ নেন। ট্রেনিং শেষ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন জামালপুর জেলার কামালপুর, মহিন্দগঞ্জ সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি ঢাকার শাহবাগ বাংলাদেশ বেতার ভবনে চাকরির কারণে ডিউটিতে ছিলেন। এ কারণে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার সাী ছিলেন। এরপর তিনি ১৯৮১ সালে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসরে যান।১৯৯৭ সালের ১১ এপ্রিল আরজ আলী মাতব্বরের রচনা সমগ্র পড়ার অপরাধে মুক্তিযোদ্ধা ওহাবকে স্থানীয় ফতোয়াবাজরা ফতোয়ার মাধ্যমে তার মৃতু্যদ- ঘোষণা করে। পরে সচেতন এলাকাবাসীর কারণে মৃতু্যদ- কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। মৃতু্যদ- কার্যকর করতে না পেরে ফতোয়াবাজরা বিুব্ধ হয়ে ওহাবকে জুতাপেটা করে। সেই সঙ্গে তাঁর গলায় জুতার মালা পরিয়ে সমগ্র গ্রাম ঘুরিয়ে গ্রামছাড়া করে। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানান বাংলাদেশে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি আসলাম উদ্দিন। বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান, নাট্যকার মামুনুর রশীদ মামুন, ত্রৈমাসিক পত্রিকার সম্পাদক মিজানুর রহমান, শিাবার্তার সম্পাদক এএন রাশেদা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, বিজ্ঞান চেতনা পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক আইয়ুব হোসেন প্রমুখ অংশ নেন। সমাবেশ থেকে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদনত্ম ও দোষীদের শাসত্মি দাবি করা হয় এবং দেশ থেকে ফতোয়াবাজি বন্ধের দাবি জানানো হয়। ওহাবকে জুতা পেটা ও জুতার মালা পরিয়ে সমগ্র গ্রাম ঘুরিয়েই ফতোয়াবাজরা ানত্ম হয়নি। তারা সে সময় নাগরপুর থানায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে তাঁর বিরম্নদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলাটি ২ বছর চলার পর টাঙ্গাইলের আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব মৃতু্যর আগ পর্যনত্ম মুক্তবুদ্ধি, মুক্ত চিনত্মার চর্চা ও প্রচার করেছেন।
No comments