তিন হাজার ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাকে বাড়ি করে দেয়া হচ্ছে- বীরাঙ্গনারা অগ্রাধিকার পাবেন
সারাদেশের প্রায় ৩ হাজার ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাকে পাকা বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছে সরকার। প্রতিটি বাড়ির সঙ্গে স্যানিটেশন সুবিধার জন্য একটি করে শৌচাগার (টয়লেট) তৈরি করে দেয়া হবে। পানি সমস্যা সমাধানে বসানো হবে ১টি করে নলকূপ।
ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন সমস্যার সমাধান ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকার এসব উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। তবে এ সুবিধা পেতে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি নির্মাণ করার জন্য উপযোগী জমি প্রদান করতে হবে। সারাদেশে এমন কিছু মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন যাঁদের নিজস্ব ১ শতক জমিও নেই, সরকার তাঁদের খাস জমি প্রদান করে তাতে বাড়ি নির্মাণ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকার জমিও কিনে দেবে। মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্দেশনানুযায়ী করা তালিকা অনুযায়ী সারাদেশে এমন অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২৯৭১। ইতোমধ্যে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দুই মুক্তিযোদ্ধার জন্য ২টি পাকা বাড়ি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গৃহীত ‘ভূমিহীন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন’ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৮ কোটি টাকা। ২০১২ সালের জুলাই থেকে চালু হওয়া ৩ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পটির মেয়াদ ’১৫ সালের জুনে শেষ হবে। সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। ৫০০ বর্গফুট আয়তনের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি বাড়ি তৈরি করতে ব্যয় হবে ৮ লাখ টাকা।বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য মুক্তিযোদ্ধা নির্বাচনের জন্য প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে সহসভাপতি, সমাজসেবা কর্মকর্তা, পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা, মাধ্যমিক বা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সদস্যসহ উপজেলা ডেপুটি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ যাচাই-বাছাই শেষে সারাদেশের প্রায় ৩ হাজার অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরি করেছে।
সারাদেশে ১ লাখ ৮০ হাজার জনেরও বেশি মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। আনুপাতিক হারে এ বাড়ি তৈরি করা হবে অর্থাৎ যে উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেশি সে উপজেলায় বেশি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। সে অনুযায়ী গড়ে প্রতি ৬০ থেকে ৬৫ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে থেকে ১ জন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাকে এ বাড়ি তৈরি করে দেয়া হচ্ছে।
এ তালিকায় বীরাঙ্গনাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব মৃত মুক্তিযোদ্ধার ৫০ শতক জমির মালিকানা ছিল এমন মুক্তিযোদ্ধাদের বিধবা স্ত্রী এ সুবিধা পাবেন। তবে মৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সন্তানাদিরা মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য হিসেবে কোন প্রকার সুযোগসুবিধা গ্রহণ করলে তা প্রযোজ্য হবে না। মুক্তিযোদ্ধার উপার্জনক্ষম কোন ছেলে না থাকলে, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, যিনি সম্মানী ভাতা ছাড়া কোন রাষ্ট্রীয় সুযোগসুবিধা পাননি, বসতভিটা আছে কিন্তু কোন কৃষি বা বাণিজ্যিক জমি কিংবা সম্পদ নেই, বা যে সব মুক্তিযোদ্ধার বসতভিটায় কেবল কুঁড়েঘর রয়েছে, যিনি বাঁচার তাগিদে অসম্মানজনক পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন, যিনি অন্যের বাড়ি বা জমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন এমন মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমান অর্থবছরে চালু হওয়া প্রকল্পটি ইতোমধ্যে সারাদেশের ৮২ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা মন্ত্রণালয়ের হাতে এসে পৌঁছেছে। এ তালিকা অনুসারে ইতোমধ্যেই বাড়ি নির্মাণ শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের প্রাপ্ত তালিকানুযাযী বাড়ি নির্মাণ শুরু করা হবে। সূত্রমতে, এ বছর অর্থ বরাদ্দের পর তালিকা তৈরি করে কিছু সংখ্যক বাড়ি নির্মাণ করা গেলেও আগামী অর্থবছরে সারাদেশের অধিকাংশ বাড়ি নির্মাণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে হস্তান্তর করার সম্ভাবনা রয়েছে। কয়েকটি স্থানে ইতোমধ্যে বাড়ি নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব) এ বি এম তাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী ‘তিনি বেঁচে থাকতে যাদের ত্যাগে অর্জিত এ দেশ, সেই মুক্তিযোদ্ধাদের কাউকে কষ্ট করে মরতে দেবেন না। কোন মুক্তিযোদ্ধাই আর অস্বচ্ছল থাকবেন না।’ এরই অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে তালিকা করে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেয়ার জন্য ৩ হাজার অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাকে বাড়ি তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরও বাড়ানোর চিন্তা রয়েছে।
No comments