আরও এক গ্রেফতার, চারজন রিমান্ডে দুই কলেজছাত্র বহিষ্কার- সাভারে ছাত্রী ধর্ষণ
সাভারে কলেজছাত্রী ধর্ষণ ও ভিডিওচিত্র ধারণের ঘটনায় বান্ধবীসহ গ্রেফতারকৃত ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালত ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে শুক্রবার গভীররাতে আরও এক ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে। তাকেও ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে শনিবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়। ঘটনার মূলহোতা জাহিদুল ইসলাম রাজুসহ মামলার অন্য আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এ ঘটনার সঙ্গে প্রাথমিকভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ২ ছাত্রকে বহিষ্কার করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ভিকটিম বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘ওসিসি’ বিভাগে ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে রিলিজ পাবার পরদিন জবানবন্দী প্রদানের জন্য তাকে আদালতে নেয়া হবে।দায়ের করা মামলায় মোট ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও দু’জনের সংশ্লিষ্টতার কথা লিপিবব্ধ করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলো সিংগাইর উপজেলার আজিমপুর এলাকার শাহিন (২৫), একই উপজেলার কাংসা এলাকার শামীম (২৪), লুৎফর (২৩), সুজন (২৫) আলীম (২৫) ও মাসুদ (২৪)।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সাভার মডেল থানার এসআই আশরাফুল আলম জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মামলা দায়ের হওয়ার পর পুলিশের একাধিক টিম আসামিদের গ্রেফতারে একযোগে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। এর মধ্যে প্রথমে তিনি ও তাঁর সহকর্মী এসআই এমদাদুল মামলার ৫নং আসামি দানেশ (৩৫) ও ৯নং আসামি সূচী ওরফে লিজাকে (১৮) সিংগাইর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার গভীররাতে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে দানেশকে সিংগাইর ডিগ্রী কলেজসংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত যাত্রার আসর থেকে কৌশলে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয়। লিজাকে গ্রেফতার করা হয় কাংসা এলাকাস্থ তাদের বাড়ি থেকে। এসআই কায়সার মাতুব্বর একই রাতে ঘটনাস্থল সাভার পৌর এলাকার তালবাগ মহল্লার (বাড়ি নং-৬৩/৫) জনৈক আব্দুর রহমানের মালিকানাধীন ভাড়া দেয়া ব্যাচেলর মেস থেকে রায়হান ও মহিদুরকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে রায়হান তার নিজের নামে মেস ভাড়া নিয়ে সহযোগীদের নিয়ে বেশ কিছুদিন যাবত এ ধরনের অপকর্ম চালিয়ে আসছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। শুক্রবার রাত একটার দিকে ঘটনার সঙ্গে থাকার অভিযোগে সিংগাইরের জার্মিতা ইউনিয়নের বকচর গ্রামের সুমন আলীর পুত্র ওয়াসিমকে (১৮) মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে গ্রেফতার করা হয়। ওয়াসিম এ বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।
তিনি আরও জানান, ভিকটিম বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘ওসিসি’ বিভাগে ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে রিলিজ পাবার পরদিন জবানবন্দী প্রদানের জন্য তাকে আদালতে নেয়া হবে। গ্রেফতারকৃত দানেশের মোবাইল ফোন থেকে ভিডিওচিত্রটি উদ্ধার করা হয়।
এদিকে ঘটনার মূলহোতা ও মামলার প্রধান আসামি পলাতক জাহিদুল ইসলাম রাজু (২২) ও গ্রেফতারকৃত মহিদুর রহমানকে (২৪) সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বহিষ্কার করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে জাহেদ ওই কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ও মহিদুর এইচএসসি (মানবিক বিভাগ) পরীক্ষার্থী। জাহিদুল বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থানার কাকচিরা এলাকার খাসতবক গামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ইলিয়াস খান জানান, শনিবার গবর্নিং বডির জরুরীসভায় তাদের বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে আজীবন বহিষ্কারের জন্য তাদের ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করা হবে। সাভার মডেল থানার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মশিউদ্দৌলা রেজা জানান, এ চক্রটি বেশ কয়েকদিন ধরে এ ধরনের অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। তারা ধর্ষণের ভিডিওচিত্র ধারণ করে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন ভিসিডির দোকানে সরবরাহ করে আসছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
No comments