অস্থিতিশীল চালের বিশ্ব বাজার 0 ঙ্ বিপুল মজুদ নিয়েও সঙ্কটে পড়তে পারে দেশ 0 আনত্মর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেও চালের দাম বেড়েছে 0 ওএমএস, কাবিখা বাজারে প্রভাব ফেলতে পারবে না
কাওসার রহমান চালের বিশ্ব বাজার অস্থিতিশীল। অভ্যনত্মরীণ বাজারও উর্ধমুখী। গত ছয় মাসে দেশে বাণিজ্যিকভিত্তিতে কোন চাল আমদানি হয়নি। সতর্কতার সঙ্গে ব্যবস্থাপনা করতে না পারলে বিপুল মজুদ নিয়েও দেশ খাদ্য সঙ্কটে পড়তে পারে।
বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এ বছর বিশ্বে খাদ্যশস্যের উৎপাদন কম হয়েছে। ভারতে খাদ্যশস্য উৎপাদন প্রায় দেড় কোটি টন কম হয়েছে। এ কারণে ভারত দীর্ঘদিন পর আনত্মর্জাতিক বাজার থেকে চাল আমদানি করছে। তবে এ চাল সরকারীভাবে আমদানি না করে বেসরকারীভাবে আমদানিকে উৎসাহিত করছে। এজন্য চালের শুল্কহার ৭০ শতাংশ হ্রাস করেছে। উৎপাদন ঘাটতির কারণে ফিলিপিন্সও বিশ্ব বাজার থেকে ২০ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানির সিদ্ধানত্ম নিয়েছে। এ জন্য আনত্মর্জাতিক দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। এ ছাড়া উরম্নগুয়ে, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাতেও খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ফলে জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (ফাও) হিসেব অনুযায়ী, এ বছর (২০০৯-১০) সালে বিশ্বে চালের উৎপাদন প্রায় তিন শতাংশ কম হবে। বিশ্বব্যাপী চাল উৎপাদন কম হওয়ায় সম্প্রতি আনত্মর্জাতিক বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ দাম আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্তমানে থাইল্যান্ডে প্রতিটন চালের দাম প্রায় ছয় শ' মার্কিন ডলারে পেঁৗছেছে। ভারতে চালের দাম ৪৩০ ডলার।
আনত্মর্জাতিক বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারেও চালের দাম বেড়ে গেছে। এ মূল্য বৃদ্ধির জন্য কুয়াশাকে দায়ী করা হলেও মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে শীতের শুরম্নতেই। বর্তমানে প্রতিকেজি মোটা চাল ঢাকার খুচরা বাজারে ২৬ থেকে ২৮ টাকা ও মাঝারিমানের চাল ৩২ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। সরকারী হসত্মক্ষেপের ঘোষণায় এ মূল্য গত কয়েকদিন ধরে স্থিতিশীল থাকলেও বাজারের আচরণ খুব সুবিধাজনক নয়। যে কোন সময় চালের দাম আরও একদফা বাড়তে পারে। এমন আশঙ্কাই করছেন চাল বিক্রেতারা।
চালের এই হঠাৎ মূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানীর হাট-বাজার ও গণপরিবহনগুলোতে মানুষ চালের এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের সমালোচনায় মুখর। শীতে সবজির দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকলেও চালের এই মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। অথচ বর্তমানে দেশে সর্বোচ্চ পরিমাণ খাদ্যশস্যের মজুদ রয়েছে। সরকারী পর্যায়ে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টন খাদ্যশস্যের মজুদ রয়েছে। আরও আড়াই লাখ টন চাল ও গম আমদানি করা হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠেছে বাম্পার ফলনের পরও খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে। গত বছর বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বোরো উৎপাদন হয়েছে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ টন। খরার কারণে এ বছর আউশ উৎপাদন কম হলেও শেষ পর্যনত্ম আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ দাবি করছে। সরকারী হিসেবে আউশ উৎপাদন হয়েছে ১৭ লাখ টন। আর আমনের উৎপাদন ছাড়িয়ে গেছে এক কোটি ৩০ লাখ টন। কৃষি বিভাগ বলছে, প্রথমদিকে খরার কবলে পড়লেও শেষদিকের বৃষ্টিতে আমনের আবাদ ভাল হয়েছে। ৫৮ লাখ হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আমন আবাদ হয় ৫৪ লাখ হেক্টর। হেক্টরপ্রতি ফলন হয়েছে প্রায় দুই দশমিক ৪৫ টন। সে হিসেবে আমনের উৎপাদন দাঁড়ায় এক কোটি ৩২ লাখ টন। বর্তমানে আমনের ভরা মৌসুম চলছে। এই অবস্থায় চালের হঠাৎ করে মূল্য বৃদ্ধিতে সরকারের খাদ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অবশ্য খাদ্যমন্ত্রী ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক বলছেন, কুয়াশার কারণে মিলগুলোর চাল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে চালের দাম বেড়েছে। কুয়াশা কেটে গিয়ে রোদ উঠলে চালের দাম কমে যাবে। তবে দাম না কমলে সরকার বাজারে হসত্মক্ষেপ করবে। ইতোমধ্যে সরকার চালের বাজারের রাশ টেনে ধরতে টেস্ট রিলিফ ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী চালু করেছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীতে দুই লাখ টন এবং টেস্ট রিলিফ কর্মসূচীতে এক লাখ টন চাল ছাড় করেছে। এ সব কর্মসূচীতে আরও চাল দেয়া হবে।
এ বছর দেশে বাণিজ্যিকভিত্তিতে কোন চাল আমদানি হয়নি। আনত্মর্জাতিক বাজারের চেয়ে স্থানীয় বাজারে দাম কম থাকায় এবং দেশে চালের মজুদ থাকায় বেসরকারী উদ্যোগে দেশে চাল আমদানি হয়নি। অন্যান্য বছর ২০ থেকে ৩০ লাখ টন পর্যনত্ম চাল আমদানি হয়েছে দেশে। এ কারণে অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর চালের বাড়তি সরবরাহ কম। স্থানীয় উৎপাদিত চালও মিল মালিক ও বড় মহাজনদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য খুব সতর্কতার সঙ্গে খাদ্য ব্যবস্থাপনা করা জরম্নরী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশে বিপুল পরিমাণ খাদ্য ঘাটতি আমাদের বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আনত্মর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য টিআর, কাবিখা বা ওএমএস যথেষ্ট নয়। এ কর্মসূচীতে সীমিতসংখক অতি দরিদ্র মানুষ উপকৃত হয়। কিনত্ম বাজারে তার খুব একটা প্রভাব পড়ে না। ২০০৭-০৮ সালে এ কৌশল কাজে আসেনি। তাই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে। ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলেই খাদ্যশস্যের দাম বাড়িয়ে দেবে। আর ওই মূল্য বৃদ্ধিতে কৃষকের কোন উপকারে আসবে না। কারণ চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বড় মহাজন ও চাল মিল মালিকরা। প্রতিবেশী দেশে বিপুল পরিমাণ চালের ঘাটতির কারণে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণকারীদের ওপর কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। অন্যথায় আনত্মর্জাতিক বাজারের কারণেই দেশে চালের সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে। ২০০৭ সালের মতো বাজারে পর্যাপ্ত চালের মজুদ থাকার পরও দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে। কারণ, এবার চাল রফতানিকারক দেশ চাল আমদানি করছে। ফলে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ডক্টর উত্তম কুমার দেব বলেন, দেশের খাদ্য পরিস্থিতি ভাল। তবে চালের দাম বেড়েছে। এটা কৃষকদের জন্য ইনসেনটিভ হিসেবে কাজ করবে। তবে চালের দাম যাতে আর না বাড়ে সেদিকে তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখতে হবে। খাদ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারকে সব সময় আনত্মর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখতে হবে। গত বছরের চেয়ে এবার বিশ্বে খাদ্যশস্য উৎপাদন কম হয়েছে। ভারতে দেড় কোটি টন চাল কম উৎপাদিত হয়েছে। ফিলিপিন্সও এবার বেশি খাদ্যশস্য আমদানি করছে। এ কারণে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের প্রতি জোর দিতে হবে। সামনে বোরো ফসল। এ ফসলের বাম্পার ফলনের জন্য সার ও সেচ সুবিধা প্রদানসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
চালের মূল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে যে উৎপাদন খরচ সে অনুযায়ী প্রতি কেজি চালের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে থাকা উচিত। তবে দাম আরও কমাতে হলে ধানের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। প্রযুক্তির প্রসার ঘটিয়ে নতুন জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে খরচ কমিয়ে আনতে হবে। ইতোমধ্যে সরকার নন-ইউরিয়া সারের দাম কমিয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ফলনের ওপরও।
বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এ বছর বিশ্বে খাদ্যশস্যের উৎপাদন কম হয়েছে। ভারতে খাদ্যশস্য উৎপাদন প্রায় দেড় কোটি টন কম হয়েছে। এ কারণে ভারত দীর্ঘদিন পর আনত্মর্জাতিক বাজার থেকে চাল আমদানি করছে। তবে এ চাল সরকারীভাবে আমদানি না করে বেসরকারীভাবে আমদানিকে উৎসাহিত করছে। এজন্য চালের শুল্কহার ৭০ শতাংশ হ্রাস করেছে। উৎপাদন ঘাটতির কারণে ফিলিপিন্সও বিশ্ব বাজার থেকে ২০ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানির সিদ্ধানত্ম নিয়েছে। এ জন্য আনত্মর্জাতিক দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। এ ছাড়া উরম্নগুয়ে, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাতেও খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ফলে জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (ফাও) হিসেব অনুযায়ী, এ বছর (২০০৯-১০) সালে বিশ্বে চালের উৎপাদন প্রায় তিন শতাংশ কম হবে। বিশ্বব্যাপী চাল উৎপাদন কম হওয়ায় সম্প্রতি আনত্মর্জাতিক বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ দাম আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্তমানে থাইল্যান্ডে প্রতিটন চালের দাম প্রায় ছয় শ' মার্কিন ডলারে পেঁৗছেছে। ভারতে চালের দাম ৪৩০ ডলার।
আনত্মর্জাতিক বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারেও চালের দাম বেড়ে গেছে। এ মূল্য বৃদ্ধির জন্য কুয়াশাকে দায়ী করা হলেও মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে শীতের শুরম্নতেই। বর্তমানে প্রতিকেজি মোটা চাল ঢাকার খুচরা বাজারে ২৬ থেকে ২৮ টাকা ও মাঝারিমানের চাল ৩২ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। সরকারী হসত্মক্ষেপের ঘোষণায় এ মূল্য গত কয়েকদিন ধরে স্থিতিশীল থাকলেও বাজারের আচরণ খুব সুবিধাজনক নয়। যে কোন সময় চালের দাম আরও একদফা বাড়তে পারে। এমন আশঙ্কাই করছেন চাল বিক্রেতারা।
চালের এই হঠাৎ মূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানীর হাট-বাজার ও গণপরিবহনগুলোতে মানুষ চালের এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের সমালোচনায় মুখর। শীতে সবজির দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকলেও চালের এই মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। অথচ বর্তমানে দেশে সর্বোচ্চ পরিমাণ খাদ্যশস্যের মজুদ রয়েছে। সরকারী পর্যায়ে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টন খাদ্যশস্যের মজুদ রয়েছে। আরও আড়াই লাখ টন চাল ও গম আমদানি করা হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠেছে বাম্পার ফলনের পরও খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে। গত বছর বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বোরো উৎপাদন হয়েছে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ টন। খরার কারণে এ বছর আউশ উৎপাদন কম হলেও শেষ পর্যনত্ম আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ দাবি করছে। সরকারী হিসেবে আউশ উৎপাদন হয়েছে ১৭ লাখ টন। আর আমনের উৎপাদন ছাড়িয়ে গেছে এক কোটি ৩০ লাখ টন। কৃষি বিভাগ বলছে, প্রথমদিকে খরার কবলে পড়লেও শেষদিকের বৃষ্টিতে আমনের আবাদ ভাল হয়েছে। ৫৮ লাখ হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আমন আবাদ হয় ৫৪ লাখ হেক্টর। হেক্টরপ্রতি ফলন হয়েছে প্রায় দুই দশমিক ৪৫ টন। সে হিসেবে আমনের উৎপাদন দাঁড়ায় এক কোটি ৩২ লাখ টন। বর্তমানে আমনের ভরা মৌসুম চলছে। এই অবস্থায় চালের হঠাৎ করে মূল্য বৃদ্ধিতে সরকারের খাদ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অবশ্য খাদ্যমন্ত্রী ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক বলছেন, কুয়াশার কারণে মিলগুলোর চাল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে চালের দাম বেড়েছে। কুয়াশা কেটে গিয়ে রোদ উঠলে চালের দাম কমে যাবে। তবে দাম না কমলে সরকার বাজারে হসত্মক্ষেপ করবে। ইতোমধ্যে সরকার চালের বাজারের রাশ টেনে ধরতে টেস্ট রিলিফ ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী চালু করেছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীতে দুই লাখ টন এবং টেস্ট রিলিফ কর্মসূচীতে এক লাখ টন চাল ছাড় করেছে। এ সব কর্মসূচীতে আরও চাল দেয়া হবে।
এ বছর দেশে বাণিজ্যিকভিত্তিতে কোন চাল আমদানি হয়নি। আনত্মর্জাতিক বাজারের চেয়ে স্থানীয় বাজারে দাম কম থাকায় এবং দেশে চালের মজুদ থাকায় বেসরকারী উদ্যোগে দেশে চাল আমদানি হয়নি। অন্যান্য বছর ২০ থেকে ৩০ লাখ টন পর্যনত্ম চাল আমদানি হয়েছে দেশে। এ কারণে অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর চালের বাড়তি সরবরাহ কম। স্থানীয় উৎপাদিত চালও মিল মালিক ও বড় মহাজনদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য খুব সতর্কতার সঙ্গে খাদ্য ব্যবস্থাপনা করা জরম্নরী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশে বিপুল পরিমাণ খাদ্য ঘাটতি আমাদের বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আনত্মর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য টিআর, কাবিখা বা ওএমএস যথেষ্ট নয়। এ কর্মসূচীতে সীমিতসংখক অতি দরিদ্র মানুষ উপকৃত হয়। কিনত্ম বাজারে তার খুব একটা প্রভাব পড়ে না। ২০০৭-০৮ সালে এ কৌশল কাজে আসেনি। তাই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে। ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলেই খাদ্যশস্যের দাম বাড়িয়ে দেবে। আর ওই মূল্য বৃদ্ধিতে কৃষকের কোন উপকারে আসবে না। কারণ চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বড় মহাজন ও চাল মিল মালিকরা। প্রতিবেশী দেশে বিপুল পরিমাণ চালের ঘাটতির কারণে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণকারীদের ওপর কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। অন্যথায় আনত্মর্জাতিক বাজারের কারণেই দেশে চালের সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে। ২০০৭ সালের মতো বাজারে পর্যাপ্ত চালের মজুদ থাকার পরও দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে। কারণ, এবার চাল রফতানিকারক দেশ চাল আমদানি করছে। ফলে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ডক্টর উত্তম কুমার দেব বলেন, দেশের খাদ্য পরিস্থিতি ভাল। তবে চালের দাম বেড়েছে। এটা কৃষকদের জন্য ইনসেনটিভ হিসেবে কাজ করবে। তবে চালের দাম যাতে আর না বাড়ে সেদিকে তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখতে হবে। খাদ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারকে সব সময় আনত্মর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখতে হবে। গত বছরের চেয়ে এবার বিশ্বে খাদ্যশস্য উৎপাদন কম হয়েছে। ভারতে দেড় কোটি টন চাল কম উৎপাদিত হয়েছে। ফিলিপিন্সও এবার বেশি খাদ্যশস্য আমদানি করছে। এ কারণে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের প্রতি জোর দিতে হবে। সামনে বোরো ফসল। এ ফসলের বাম্পার ফলনের জন্য সার ও সেচ সুবিধা প্রদানসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
চালের মূল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে যে উৎপাদন খরচ সে অনুযায়ী প্রতি কেজি চালের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে থাকা উচিত। তবে দাম আরও কমাতে হলে ধানের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। প্রযুক্তির প্রসার ঘটিয়ে নতুন জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে খরচ কমিয়ে আনতে হবে। ইতোমধ্যে সরকার নন-ইউরিয়া সারের দাম কমিয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ফলনের ওপরও।
No comments