এবারও ভারতের কাছে ৬ উইকেটে হার শাকিবদের
বিশেষ প্রতিনিধি শাকিব আল হাসানের দশম ওভারের শেষ ডেলিভারিকে এক পা বেরিয়ে মিড উইকেট আর ওয়াইড লং অনের মাঝখান দিয়ে সপাটে চালিয়েই দৌড়ে এ প্রানত্মে চলে আসলেন ভিরাট কোহলি।
ফিল্ডারের নাগালের বাইরে দিয়ে বল চলে গেল সীমানার ওপারে। মুহূর্তে দু'হাত ওপরে তুলে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠলেন এ ভারতীয় উইলোবাজ। এ আনন্দ, এ উলস্নাস সেঞ্চুরি পূরণের। অল্প সময়ের ক্যারিয়ারে সোমবার দ্বিতীয় সেঞ্চুরির নাগাল পেয়ে কোহলি উদ্বেলিত। কিন্তু এর পাশাপাশি আরও একটা বড় ঘটনাও ঘটল। তবে অনেকটাই নীরবে-নিভৃতে। ভিরাট কোহলির ঐ শটটাই ছিল উইনিং শট। ঐ বাউন্ডারিতে নিশ্চিত হলো ভারতের জয়। অর্থাৎ কোহলির সেঞ্চুরি হতে দরকার ছিল ডবল আর ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল তিন রানের। এক ঢিলে দুই পাখি শিকারের মতো বাউন্ডারি হাঁকালেন কোহলি। সেঞ্চুরি পূরণের সঙ্গে দল জেতানোও হলো। কিন্তু তা নিয়ে ভারতীয় শিবিরে কোনই উচ্ছ্বাস ছিল না। কেন থাকবে? ৬ উইকেটের জয় আর ৪২ বল আগে শেষ হওয়া কোন ম্যাচ শেষে আবেগ-উত্তেজনার আর কিইবা থাকতে পারে। কোহলি আর সুরেশ রায়না লাফাতে লাফাতে নয়, ধীর পায়েই সাজঘরে গিয়ে পেঁৗছলেন। সেখানে পেঁৗছানোর পরও জয়োৎসব হলো না, হলো কোহলি বন্দনা। সিনিয়ররা এসে পিঠ চাপড়ে দিলেন। 'ভারত মাতা কি জয়' শেস্নাগানের পরিবর্তে 'ওয়েল ডান। কীপ ইট আপ' মার্কা সংলাপে ভরে উঠল ভারতীয় ড্রেসিংরম্নম। ম্যাচের যা অবস্থা ছিল, তাতে ভারতের জয়ই ছিল স্বাভাবিক। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়নি বাংলাদেশ জিতবে। এতটুকু প্রতিদ্বন্দ্বিতাও হয়নি। ভারতীয়রা বেশ সহজেই জিতেছে।অন্যদিকে শাকিব, তামিম, ইমরম্নল, আশরাফুল, রকিবুল, মুশফিকুর, রিয়াদ, নাইম ও সফিউলরা গুটি গুটি পায়ে পেঁৗছে গেলেন ড্রেসিংরম্নমে। মাঠের ২২ গজ থেকে ড্রেসিংরম্নমের দূরত্ব খুব বেশি নয়। সাকল্যে ১০০ গজও হবে না। তবে কাল বোধকরি সে দূরত্বকেও একটু বেশি মনে হলো। তা হতেই পারে। কারণ আইডিয়া কাপে জয় সোনার হরিণ হয়েই থাকল। ঠিক এক বছর আগে একই মাঠে নিজ মাটিতে তিন জাতি ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কাকে হারালেও এবার ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে জয় অধরাই থাকল টাইগারদের। দুই পর্বের চার ম্যাচের সবটাতেই হারল শাকিবের দল। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ৭ আর ৯ উইকেটের পর ভারতের কাছে দুই পর্বেই ৬ উইকেটে হারতে হলো। শুধু ব্যবধানই এক নয়, ৭ জানুয়ারির প্রথম লড়াইয়ের সঙ্গে কালকের ম্যাচের চালচিত্রর অনেকটাই মিল। পার্থক্য একটাই। ঐ ম্যাচে টস জিতেও ফিল্ডিং না করে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৯৬ রানের বড়সড় স্কোর গড়েছিল বাংলাদেশ। কাল আর তা হয়নি। এদিন টস হেরে প্রথম ব্যাটিংয়ে নামা টাইগাররা থেমে গেছে ২৪৭-এ। তামিম (১৭), ইমরম্নল (৯), আশরাফুল (৪), রকিবুল (২৮) ও মুশফিকুরের (৭) ব্যর্থতায় সেটাও হতো না, যদি শাকিব (৮৫) ও রিয়াদ (৬৪ নটআউট) সংগ্রামী ব্যাটিং না করতেন। টাইগাররা নিজেদের ছুঁতে না পারলেও ভারতীয়রা ঠিকই নিজেদের ছুঁয়েছে। প্রথম পর্বের মতো এদিনও একজন সেঞ্চুরি করেছেন। তবে এবার আর ভারত অধিনায়ক ধোনি নন। আগের পর্বে যিনি ধোনির আগে শতরানের সম্ভাবনা জাগিয়েও মাত্র ৯ রানের জন্য শেষ হাসি হাসতে পারেননি, সোমবার সেই ভিরাট কোহলিই শতরান করেছেন। এবারের আইডিয়া কাপে চরম ব্যর্থ বাংলাদেশের বোলারদের দৈন্যর আরেক দলিল কোহলির সেঞ্চুরি। চার ম্যাচে হারের তেঁতো স্বাদ নেয়া বাংলাদেশের বিরম্নদ্ধে এটা পাঁচ নম্বর সেঞ্চুরি। এর আগে প্রথম দিন শ্রীলঙ্কার তিলকারত্নে দিলশান, দ্বিতীয় ম্যাচে ভারত অধিনায়ক ধোনি, তৃতীয় ম্যাচে দুই লঙ্কান মাহেলা-থারাঙ্গা জোড়া শতক উপহার দিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিরম্নেেদ্ধ।
চার ম্যাচ হারলেও ২৬০, ২৯৬, ২৪৯-এর পর ২৪৭ রান করা অবশ্যই কৃতিত্বের। যত বড় প-িত-বোদ্ধা আর বিশেষজ্ঞই হন না কেন, অতিবড় বাংলাদেশবিরোধীও মানছেন, না ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে অনত্মত ব্যাটিংয়ে উতরে গেছে বাংলাদেশ। তা অবশ্যই। এই দুই পরাশক্তির সঙ্গে গড়ে ২৬৩ করা কি কম? কিন্তু চার ম্যাচে পাঁচ প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি ততটাই খারাপ।
No comments