পুষ্পশোভিত ক্যাম্পাস- শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় by মোঃ বশিরুল ইসলাম
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সেজেছে নতুন রূপে। ক্যাম্পাসজুড়ে প্রকৃতির মিলনমেলা। শীতে প্রকৃতির রুক্ষতা ও শুষ্কতাও এমন পরিবেশে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। নানা প্রজাতির দেশী এবং বিদেশী ফুলের মনোলোভা দৃশ্য মন কেড়ে নেয় প্রকৃতিপ্রেমীদের।
এই মনোলোভা দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে ক্যাম্পাসে। গবেষণা মাঠগুলোতে রয়েছে মৌসুমী ফুলের সমারোহ। এ যেন ফুলে ফুলে শোভিত ক্যাম্পাস। এই রূপরহস্যের কাছে ধরা দিতে প্রায়ই চলছে নাটক, সিনেমা ও মিউজিক ভিডিওর শূটিং। শিক্ষার্থীদের আড্ডাও জমে উঠছে ক্যাম্পাস চত্বরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের খামার বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ল্যান্ডস্কেপিংয়ের অংশ হিসেবে চারটি আবাসিক হল, প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন , বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে রাস্তার দুই পাশে ও কৃষি টাওয়ার চত্বর ঘিরে শোভা পাচ্ছে শীতকালীন ফুলের বাগান। এমনকি উপাচার্য বাসভবনও সেজেছে বাগানবিলাস, গোলাপ, ডালিয়া, কসমস, এস্টার, গাঁদাসহ নানা ফুলে।ক্যাম্পাসের প্রধান রাস্তা থেকে দুটি ছোট মেঠোপথ চলে গেছে টাওয়ার পর্যন্ত। মেঠোপথের দু’পাশ ঘিরে লাগানো হয়েছে ঘন সবুজ গাছ। সৌন্দর্যবর্ধক এসব গাছ খুব একটা বড় হয় না। এসব গাছের পাশেই বাগানজুড়ে রয়েছে হাইব্রিড এফ ইনকা, সিলভিয়া, ডালিয়া, কসমস, এস্টার, জিনিয়া, দোপাটি , কার্নেশান, গোলাপ, ডুয়ার্ফ রঙ্গন, ক্যালেন্ডুলা, পিটুনিয়া, পান্সি, ডায়ান্থাস, ফ্লক্স, গাজনিয়া বা চন্দ্রমল্লিকার প্রভৃতি জাতের ফুল গাছ। হাইব্রিড এফ ইনকা মূলত গাঁদা ফুলেরই একটি বিদেশী প্রজাতি। এ প্রজাতির একটি গাছে পুরো শীত মৌসুমে ২৫-৩০টি ফুল ধরে। হলুদ, সোনালি ও কমলা রঙের ফুল থাকে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। শীত কমার সঙ্গে সঙ্গে ফুল কমে যায়। হলুদ, সোনালি, কমলা, ম্যাজেন্টা ও মিশ্র বর্ণের হাইব্রিড ডালিয়া, রক্তলাল বর্ণের সিলভিয়া, হলুদ ও কমলা বর্ণের হাইব্রিড জিনিয়া ও দোপাটি ফুলের সমাহার বাগানগুলোতে সৃষ্টি করেছে অপরূপ দৃশ্য। এ ছাড়া একাডেমিক ভবন ঘিরেও রয়েছে অসংখ্য ফুলের সমারোহ। টাওয়ারের উভয়পাশে রয়েছে গবেষণা মাঠ। মাঠগুলো শিক্ষার্থীদের গবেষণা কার্যক্রমে সারাবছরই সরব থাকে। তবে শীতের এই বাহারি ফুলগুলো যেন গবেষণা কার্যক্রমের পালে দিয়েছে নতুন হাওয়া। টাওয়ারের পশ্চিম পাশে রয়েছে কৃষিতত্ত্ব বিভাগের গম, সরিষা, ধান প্রভৃতির গবেষণা প্লট। পূর্ব পাশে বিভিন্ন ডালজাতীয় শস্য ভুট্টা, গোল আলু, শিম গবেষণা প্লট। সাউ সরিষা-১, সাউ সরিষা-২ নিয়ে গবেষণা করছেন প্রফেসর ড. মোঃ শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, যা কৃষিতত্ত্ব মাঠের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে। এই ফুলগুলো দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নিচ্ছে।
র্শনার্থী মোসাঃ শাকিলা ইসলাম জানান, রাজধানীর বুকে এত সুন্দর পরিবেশ দেখতে প্রায়ই এই ক্যাম্পাসে পরিবার নিয়ে চলে আসি। ক্যাম্পাসটা যেন রাজধানীর বুকে একটা গ্রাম। এখানকার ফুলগুলো অন্য সব ফুল থেকে বড়। পরিবেশটা খুবই চমৎকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মোঃ শাদাত উল্লা বলেন, প্রকৃতির সঙ্গে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। প্রকৃতিপ্রেমীদের ক্যাম্পাসে আগমন দেখে মন ভরে ওঠে। গবেষণার কাজ করতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী মনের অজান্তেই প্রকৃতিকে জীবন্ত করে তোলে। প্রকৃতির মনোরম ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্ধারিত কার্যক্রম তো রয়েই গেছে। এছাড়া ক্যাম্পাসে সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
No comments