দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় পূর্বাচলের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে ৩শ’ ফুট রাস্তার এখন চার লেনের কাজ চলছে
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ৩শ’ ফুট প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ করতে ১৯৯৫-৯৬ সালে ডিসি অফিসের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ করে রাজউক। বর্তমানে ৩শ’ ফুট রাস্তার জমি ঠিক রেখে রাজউক চার লেনের ১৮ মিটার রাস্তা নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে এই রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে।
ভবিষ্যতে এই সড়কের পাশ দিয়ে রেললাইন, এক্সপ্রেস ওয়ে ও দুটি সার্ভিস রোড করার জায়গা রাখা হয়েছে। যেহেতু পূর্বালে এখনও কোন বসতি তৈরি হয়নি তাই আপাতত চার লেনের রাস্তা করা হচ্ছে। আগামীতে ট্রাফিক বাড়লে এই রাস্তাকে ১২ লেনে উন্নতি করা যাবে।গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান জনকণ্ঠকে জানান, নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশবিদের মতামতের ভিত্তিতে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে যে পরিমাণ রাস্তার দরকার তাই করা হচ্ছে। ৩শ’ ফুট রাস্তা করার এখন কোন প্রয়োজন নেই। দরকার হলে রাস্তার জন্য আরও জমি অধিগ্রহণ করা হবে।
রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরুল হুদা জনকণ্ঠকে বলেন, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের জন্য ৩শ’ ফুট রাস্তা অধিগ্রহণ করা হয় ১৯৯৫-৯৬ সালে। দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করে এই রাস্তাটি ৩শ’ ফুট করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ১৮ মিটার (৬৪ ফুট) প্রস্থ চার লেনের রাস্তা করা হচ্ছে। ১৩ কিলোমিটার এই রাস্তায় নির্মিত ১৬টি ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ব্রিজ কালভার্টে ৮ লেনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে ট্রাফিক বাড়লে ৮ লেন করা যাবে। বালু নদীর ওপর করা হচ্ছে ৮ লেনের ব্রিজ। একটি প্রকল্প হাতে নেয়ার আগে এক শ’ বছরের চিন্তা করা হয়। ঢাকা থেকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে যেতে ১৩ কিলোমিটার রাস্তায় প্রথমে ৬৪ ফুট চার লেনের সড়ক করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে ট্রাফিক বাড়লে ট্রেনলাইন, ২টি সার্ভিস রোড়, একটি এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণ করা হবে। এগুলো হবে পর্যায়ক্রমে। এখন ওই সবগুলো রোড় করার মানে হচ্ছে সরকারের টাকার অপচয়। বর্তমানে ৮শ’ কোটি টাকা ব্যয় করে কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে পূর্বাল প্রকল্প পর্যন্ত চার লেনের সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। আরও ৪শ’ কোটি টাকা রেখে দেয়া হয়েছে-পূর্বাচলে যখন বরাদ্দপ্রাপ্তদের প্লট বুঝিয়ে দেয়া হবে। তখন প্রয়োজন হলে রাস্তা বাড়ানো হবে।
রাজউকের চীফ ইঞ্জিনিয়ার মোঃ এমদাদুল ইসলাম বলেন, পূর্বাচল প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় ১৯৯৫-৯৬ সালে। একই সময়ে প্রকল্পের প্রবেশপথ হিসেবে ১৩ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। রাস্তাটির নির্মাণ কাজও রাজউক করবে এমন শর্ত ছিল প্রকল্পে। কিন্তু তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী এক আদেশ দিয়ে ২০০৩/২০০৪ সালে এই সংযোগ সড়কটির কাজ দেন সড়ক বিভাগের হাতে। টেন্ডারে উল্লেখ ছিল অন্য জায়গা থেকে মাটি এনে সড়কটি নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু সড়ক বিভাগের কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার সড়কের পাশ থেকে মাটি কেটে সড়ক নির্মাণ করতে থাকে। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর সড়ক বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের বিরুদ্ধে টেন্ডারের বাইরে কাজ করার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে দুদুকে মামলা হয়েছে। তখন চীফ ইঞ্জিনিয়ার এমদাদুল ইসলামের বিরোধিতা করলে তাঁকে যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা চাকরিচ্যুত করেছিলেন। পরে ২০০৭ সালে সড়ক নির্মাণটি আবার রাজউকের হাতে চলে আসে। এখন সড়ক নির্মাণের কাজ করছে রাজউক।
পূর্বাচল প্রকল্পের পিডি আনোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে যত হাইওয়ে রয়েছে- সবগুলোর জায়গার পরিমাণ অনেক বেশি। তাই বলে কি সব জায়গার ওপর সড়ক নির্মাণ করা হয়। ভবিষ্যতের প্রয়োজন মতো লেন বাড়নো হয়ে থাকে। ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের জায়গা রয়েছে ৮ লেন করার মতো। কিন্তু শুরুতে দুই লেন রাস্তা করা হয়েছে। এখন সেই রাস্তাতে চার থেকে ৬ লেন করা হচ্ছে। পূর্বাচলের রাস্তাটিও একইভাবে করা হবে। এখন যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু করা হচ্ছে। দরিদ্র দেশে অযথা পুরো রাস্তা করে টাকা ব্যয় করার কোন মানে নেই। যখন ট্রাফিক বাড়বে তখন একের পর এক লেন বাড়ানো হবে। পুরো ৩শ’ ফুট রাস্তা নির্মাণ করতে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এত টাকা ব্যয় করে রাস্তা করে ফেলে রেখে সরকারী টাকার অপচয় ছাড়া আর কিছু হবে না।
এদিকে হাউজিং প্রকল্পগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কুড়িল প্রগতি সরণি থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ৩শ’ ফুট চওড়া রাস্তার জন্য ২০ বছর আগে জমি অধিগ্রহণ করে রাজউক। অধিগ্রহণের সময় বলা হয়েছিল, মূল রাস্তা ১শ’ ফুট চওড়া হবে। এর উভয় পাশে ৫০ ফুট করে অযান্ত্রিক যানবাহন চলার জন্য রাস্তা থাকবে। তার পাশে আরও ৫০ ফুট করে জায়গা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা হবে। কিন্তু ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) এর বাইরে দু’পাশে আরও ২শ’ ফুট জায়গা ওয়াটার বডি হিসেবে রাখা হয়। বলা হয়, নতুন করে ২শ’ ফুট জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে। রাজউকের নকশায় ৬৪ ফুট রাস্তায় মধ্যে ১০ ফুট প্রশস্ত বিভাজক রাখা হয়েছে। সেখানে গাছপালা লাগানো হবে। এ ছাড়া উভয় পাশে ৩৩ ফুট করে মোট ৬৬ ফুট জায়গা রাখা হয়েছে বনায়নের জন্য। ৩৮ ফুট করে ৭৬ ফুট রাখা হয়েছে স্টর্ম স্যুয়ারেজের জন্য। এ ছাড়া এক পাশে ৩৬ ফুট ও অপর পাশে ৪৮ ফুট করে মোট ৮৪ ফুট জায়গা রাখা হয়েছে সিসি ব্লক স্থাপনের জন্য। ৩শ’ ফুট জায়গার মধ্যে কেবল রাস্তার জন্য আছে মাত্র ৬৪ ফুট। আরও যে ২শ’ ফুট জায়গা অধিগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে পানি নিষ্কাশনের ওয়াটার বডির জন্য সেখানেও রাস্তা হবে না। অর্থাৎ মোট ৫শ’ ফুট প্রশস্ত জমি অধিগ্রহণ করলেও রাস্তা হচ্ছে সেই ৬৪ ফুটেই।
অন্যদিকে গত ১৭ এপ্রিল স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খানকে একটি চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন, ঢাকা শহরের খিলক্ষেত ও বাড্ডা থানার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিমানবন্দর ও সেনানিবাসের জন্য জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে গুলশান, বনানী, বারিধারা, নিকুঞ্জ এলাকায় বার বার জমি অধিগ্রহণের শিকার হয়েছেন। তারা বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়ে বর্তমানে কুড়িল, কুড়াতলী, খিলক্ষেত, বরুয়া, ডুমনি, তলনা, ঢেলনাসহ বহু গ্রামে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করছেন। রাজউক থেকে ৩শ’ ফুট প্রশস্ত রাস্তার সৌন্দর্যবর্ধন এবং সামান্য কিছু পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্যাপে সংযোগ সড়কের উভয় পাশে আরও ১০০ ফুট প্রশস্ত ওয়াটার বডি রাখা হয়েছে। রাজউক ওই সড়ক ৩শ’ ফুট প্রশস্ত ধরেই শুধু জমি অধিগ্রহণ করেছে, যার মধ্যে মাঝখান বরাবর ১০০ ফুট গতিসম্পন্ন গাড়ি ও উভয়পাশে ৫০ ফুট করে ধীরগতি সম্পন্ন গাড়ি চলাচল করার কথা। তার উভয় পাশে ৫০ ফুট করে ওয়াটার বডি থাকার কথা। অথচ চতুরতার সঙ্গে ড্যাপে উক্ত রাস্তার উভয় পাশে আরও এক শ’ ফুট করে চওড়া ওয়াটার বডি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে রাস্তার প্রশস্ততা ৫শ’ ফুটে দাঁড়াচ্ছে। অথচ ৩শ’ ফুট জায়গাতেই যাবতীয় কিছু করা সম্ভব। অথবা দুই পাশে কালভার্ট নির্মাণ করেও অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণের চেয়ে অনেক কম খরচে ডিজাইন করা সমীচীন। তাতে সরকারী অর্থের অপচয়রোধ ও জনগণের বিরাগভাজন থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এতে নিরীহ জনগণ ভূমি অধিগ্রহণের মতো মহাবিপদ থেকে রক্ষা পাবে ও সরকারের ভাবমূর্তি সমুন্নত থাকবে বলে আমার বিশ্বাস।’
No comments