ভুলে যান- উনি ৰমতায় থাকলে দেশের স্বার্থের কথা 0 খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা 0 'দেশের কথা আমরা ভুলি না'
স্টাফ রিপোর্টার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভারত সফরের সফলতার জন্য
দেশবাসীর দোয়া কামনা করেছেন। ভারত সফর নিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার
বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর উদ্দেশে সুনির্দিষ্ট পাঁচটি প্রশ্ন
ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, "উনি (খালেদা জিয়া) ৰমতায় থাকতে বাংলাদেশের স্বার্থের
কথা সব ভুলে যান, বিরোধী দলে গেলে তাঁর সব মনে পড়ে।
এমনকি মনেও করিয়ে দেন! এ
মাটিতে আমার জন্ম, ৰমতাসীন দলটিই নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে। তাই
ভারতে গিয়ে কী করতে হবে, কী চাইতে হবে- তা উনার মতো ভুলে যাইনি। ভারতে উনার
(বিরোধী দলীয় নেত্রী) জন্ম বলেই সে দেশে গেলে তিনি দেশের স্বার্থের কথা
ভুলে যান। জনগণের প্রতিরোধের মুখে ভোটারবিহীন ১৫ ফেব্রম্নয়ারি মার্কা
প্রহসনের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারেননি বলেই বিরোধীদলীয় নেত্রীর
মনে এত ব্যথা।"বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলৰে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভারত সফরের সফলতা কামনা করায় বিরোধী দলীয় নেত্রীকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি সুনির্দিষ্ট পাঁচটি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, "পাঁচটি বছর ৰমতায় ছিলেন। গঙ্গার পানির হিস্যা নিয়ে কী দিলস্নীর সঙ্গে কোন কথা বলেছেন? বরং ফিরে এসে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেছেন, একথা বলতে নাকি ভুলেই গেছেন। পাঁচ বছরে ৰমতায় থেকে তিসত্মার পানির সমস্যা বা হিস্যা আদায় করলেন না কেন? ২০০২ সালের পর যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক পর্যনত্ম বন্ধ করে দিলেন কেন?
প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, ৰমতায় থাকতে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে একটি কথাও বলেননি কেন? এই ইসু্যতে মুখ টিপে বন্ধ রেখেছিলেন কেন? সমুদ্রসীমা চিহ্নিতকরণ নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে একটিবারও কী কোন আলোচনা করেছেন? নাকি এটিও ভুলেই গেছেন। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থের কথা আমরা ভুলি না। তিসত্মা কেন, ৫২টি অভিন্ন নদীর হিস্যা নিয়ে আলোচনা চলছে। ইনশালস্নাহ এসবও আমরা সমাধান করব।
রবিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। এদিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মুক্তিযুদ্ধের পৰের বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ৩২ নম্বর ধানম-িতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনসহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই বাঙালীকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, সতিশ চন্দ্র রায়, মোহাম্মদ নাসিম, এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরম্ন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম ও এ্যাডভোকেট কামরম্নল ইসলাম। নূহ-উল-আলম লেনিন ও অসীম কুমার উকিল আলোচনাসভা পরিচালনা করেন। আলোচনা শেষে প্রধানমন্ত্রী দিলস্নীর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।
ভারত সফরে দিলস্নীর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করে বলেন, বন্ধুপ্রতিম দেশে সফরে যাচ্ছি। তাঁর সরকার সবসময়ই আঞ্চলিক ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ককে গুরম্নত্ব দেয়। আমাদের পররাষ্ট্রনীতিই হচ্ছে- 'সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর সঙ্গে শত্রম্নতা নয়'। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে ৰমতায় এসে আমরা দীর্ঘদিনের সমস্যা গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করেছি। শানত্মিচুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলে শানত্মি প্রতিষ্ঠা করেছি। দেশের স্বার্থের কথা কখনও ভুলে যাইনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিরোধীদলীয় খালেদা জিয়ার বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমার সফরের সফলতা কামনা করায় আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে আপনার কাছে একটি প্রশ্ন_ ৰমতায় থাকতে কখনও কী গঙ্গার ন্যায্য হিস্যা নিয়ে দিলস্নীর সঙ্গে কথা বলেছেন? বলেননি, বরং নিজেই স্বীকার করেছেন ভুলেই গেছেন। ৫ বছর ৰমতায় ছিলেন, তিসত্মার পানি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করেননি কেন? ন্যায্য হিস্যা নিয়ে আলোচনা তো করেননি, উল্টো ২০০২ সালের পর ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক পর্যনত্ম করতে দেননি। ৰমতায় থাকতে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে কোন কথা দেশের মানুষ আপনার মুখ থেকে শোনেনি। আপনি মুখ বন্ধ করে রেখেছিলেন।'
প্রধানমন্ত্রী সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রীর বক্তব্যের জবাবে বলেন, সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমস্যা হঠাৎ করে হয়নি। বিরোধীদলীয় নেত্রী ৰমতায় থাকতে একটিবার কী সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছেন? হয়ত এটাও তিনি ৰমতায় থাকতে ভুলে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ৰমতায় আসার পর গত একটি বছরে সমুদ্রসীমা নিয়ে জাতিসংঘে আবেদন করেছি, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। আমরা কখনোই দেশের স্বার্থের কথা উনার (খালেদা জিয়া) মত ভুলে যাইনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ যাতে কোনদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, স্বাধীনতা যাতে অর্থহীন হয় সেজন্যই পরাজিত শত্রম্নরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বছরের পর বছর এদেশে অস্ত্র ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ৰমতা দখল, ৰমতাকে কুৰিগত করতে নির্বিচারে হত্যা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, টাকার খেলা ও ভোটচুরির খেলা চলেছে। গত ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভোট চুরির খেলা বন্ধ হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, "বিরোধীদলীয় নেত্রীর মনের ব্যথা আমি বুঝি। ভোটারবিহীন নির্বাচনের জন্য অনেক খেলা খেলেছেন। ১৫ ফেব্রম্নয়ারি মার্কা আরেকটি ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি তিনি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেশের জনগণ তা হতে দেয়নি। ছবিযুক্ত ভোটার লিস্ট করতে গিয়ে তাঁর করে যাওয়া এক কোটি ২২ হাজার ভুয়া ভোটার ধরা পড়েছে। প্রহসনের নির্বাচন করতে পারেননি বলেই তাঁর মনে এত ব্যথা।"
এক বছরে সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নানা ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও আমরা নির্ধারিত সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ১৯ কোটি বই বিনামূল্যে পৌঁছে দিয়েছি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। দ্রব্যমূল্য ও মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে এনেছি। তিনি বলেন, নানা মহল থেকে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কারণ মিথ্যা অপপ্রচার তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আর্থসামাজিক উন্নয়নে আমরা ভিশন- ২০২১ রূপকল্প ঘোষণা করেছি। এই রূপকল্প আমরা অবশ্যই বাসত্মবায়ন করব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দেশকে আধুনিক শিৰায় শিৰিত উন্নত-সমৃদ্ধ শানত্মিময় করে গড়ে তোলার লৰ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে প্রতি বছর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়নের কালিমা থেকে আমরা দেশকে মুক্ত করেছি। ওই সময় জোটের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ আওয়ামী লীগের কেউই রৰা পায়নি। আওয়ামী লীগ ৰমতায় আসার পর ধমর্ীয় সহ-অবস্থান নিশ্চিত, মানবাধিকার সংরৰণসহ জনগণের মধ্যে আস্থা-বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সৰম হয়েছি। কোথাও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করিনি। তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সকল নিপীড়ন-নির্যাতনের বিষয় তদনত্মের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। ওই সময়ে নির্যাতিত-নিপীড়িত ও হত্যাকা-ের শিকার প্রতিটি পরিবারের তথ্য এই কমিশনে প্রেরণের জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আবারও আহ্বান জানান।
দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণকে দেয়া প্রতিটি ওয়াদা আমরা পূরণ করব। বাংলাদেশের মাটিতে কোন জঙ্গী-সন্ত্রাসীর স্থান হবে না। ইসলাম শানত্মি, সৌম্য ও ভাতৃত্বের ধর্ম। পবিত্র এই ধর্মকে সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক কাজে ব্যবহারের মাধ্যমে কাউকে কলুষিত করতে দেব না। আমরা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি শানত্মি ও উন্নয়নের মডেল দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। দারিদ্র্যের বিরম্নদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করতে চাই। দেশের জনগণকে ৰুধা-দারিদ্র্যের হাত থেকে অবশ্যই আমরা মুক্ত করব ইনশালস্নাহ।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, নানা ষড়যন্ত্র চলছে। যে কোন মূল্যে আমাদের বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে রৰা করতে হবে। আবদুর রাজ্জাক বলেন, খালেদা জিয়া মিথ্যার বেসাতি করছেন। ৰমতায় থাকতে তিনি বাংলাদেশের স্বার্থ পাকিসত্মানের কাছে বিক্রি করেছেন। তোফায়েল আহমেদ ঐতিহাসিক এই দিনে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কথা বর্ণনা দিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়ে গেলেও অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়ে যেতে পারেননি। জনগণের বিশ্বাস, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা দেশবাসীকে অবশ্যই অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দেবেন।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে খালেদা জিয়া বেসামাল হয়ে গেছেন। বিশ্বায়নের যুগে ভারত জুজু আর ধর্মের কার্ড খেলে জনগণকে তিনি বিভ্রানত্ম করতে পারবেন না। বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সুসম্পর্ক বজায় রেখে কীভাবে ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হয় তা বঙ্গবন্ধুর মতো শেখ হাসিনাও ভাল করেই জানেন। পিতার মতোই শেখ হাসিনা আজ বিশ্বের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের সহজাত নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ৰমতা হারানোর বেদনায় একটি গোষ্ঠী নানা ষড়যন্ত্র, হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এদের বিরম্নদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবেলা করতে হবে। আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এই ঐতিহাসিক দিনে ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সেদেশের শহীদ সামরিক সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর অত্যনত্ম গুরম্নত্বপূর্ণ। বিগত সাতটি বছর উপরে উপরে সম্পর্ক থাকলেও ভারতের সঙ্গে ভেতরের সম্পর্ক মোটেই ভাল ছিল না। কেননা পাকিসত্মানের সহযোগিতায় খালেদা-নিজামী সরকারের সময় ভারতে সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা করতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশের ভূখ-কে ব্যবহার করতে দিয়েছে। চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র, বগুড়ার বিপুল পরিমাণ উদ্ধারকৃত গোলাবারম্নদ সবেরই গনত্মব্য ছিল ভারত। সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার ধোঁয়া তুলে আমরা আর পৃথিবী থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন রাখতে পারি না।
No comments