ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে এখন ভারতের রাজধানী নয়াদিলস্নীতে অবস্থান করছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংহের আমন্ত্রণে তিনি গতরাতে নয়াদিলস্নী পেঁৗছান।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার এ সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ বিকেলে দু' দেশের মধ্যে আলোচনা শুরম্ন হবে। স্ব স্ব দেশের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। আশা করা হচ্ছে, আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার পর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ইতোমধ্যে দু' দেশের কর্মকর্তা পর্যায়ে কয়েক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়াও কিছু কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনার পর সমঝোতায় পেঁৗছানোর পথ তৈরির সিদ্ধানত্ম হবে। সেসব বিষয়ে চুক্তি হবে শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে মনমোহন সিংহ বাংলাদেশে সফরে আসার পর। উলেস্নখ্য, শেখ হাসিনা সরকার গঠনের এক বছরের মাথায় অনেক অমীমাংসিত ইসু্য নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন। ভারত ও বাংলাদেশ সূচনালগ্ন থেকেই নিকটতম প্রতিবেশী এবং বন্ধু রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয়দের সহযোগিতা দেশবাসী এখনও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়ে বাংলাদেশের স্বনির্ভরতা চেয়েছিলেন। কিন্তু পাকিসত্মানপ্রেমী সামরিকতন্ত্র তা করতে দেয়নি। ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর শেখ হাসিনা নয়াদিলস্নী সফরে এলে ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এবারও অনেক অমীমাংসিত ইসু্য এবং ভারতের কাছ থেকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুবিধা সমপ্রসারণের সম্ভাবনা ও বিষয় সামনে রেখেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যকার সম্পর্কের কোন উন্নয়ন হয়নি, বরং অবনতি ঘটেছে। এবারের আলোচনা নিয়ে দু' দেশই আশাবাদ ব্যক্ত করছে।নদী খনন, ক্ষুদ্র সেচ ও পানি সংরক্ষণ, নৌপথের অবকাঠামো সঠিক রাখা, রাজধানী ঢাকায় ওভার হেড লাইট রেলওয়ে নির্মাণ, স্থল ও নৌবন্দর নির্ধারণ, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে রেলরম্নট ব্যবহার, টিপাইমুখ বাঁধ, বিদু্যত বিতরণে ত্রিদেশীয় সমঝোতা প্রভৃতি আলোচনায় উঠে আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এছাড়া জঙ্গীবাদ দমন এবং পারস্পরিক নিরাপত্তার বিষয়টিও প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খালেদা-নিজামীর শাসনামলে ভারতবিদ্বেষী জঙ্গীবাদ বাংলাদেশে ভয়ঙ্করভাবে তৎপর হয়ে উঠেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারও এই বিদ্বেষপরায়ণ পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে পারেনি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার জঙ্গীবাদ দমনে এবং ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শে অবিচল থাকায় গণতান্ত্রিক দেশ ভারত অনেকটা নমনীয় হওয়ায় দিলস্নী-ঢাকা বৈঠক নিয়ে আমরা প্রত্যাশা রাখছি শুভ ইঙ্গিতের প্রতি। আলোচ্য বিষয়গুলো যদি সাফল্যের মুখ দেখে তাহলে উভয় দেশই একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং কল্যাণকর অবস্থান তৈরি করে নিতে পারবে। শুল্কমুক্ত বাণিজ্যিক সম্পর্ক সৃষ্টিতে দু' দেশই উপকৃত হবে। তাছাড়া জঙ্গীবাদ দমনে দৃঢ়তা প্রদর্শন দু' দেশের কাছেই আমাদের কাম্য। পানি বন্ণ্টনে আনত্মর্জাতিক হিস্যা মেনে চলার ওপর সমঝোতায় পেঁৗছা এবং বিদু্যত বিতরণে আনুষঙ্গিক যাবতীয় সুযোগ প্রদানে ভারতের অগ্রণী ভূমিকা রাখা। দুটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য এমনতর চাওয়া নিতানত্মই স্বাভাবিক এবং ইতিবাচক। তাতে পুনরায় সৃষ্টি হবে সম্পর্কের অর্থবহ অধ্যায়ের পথচলা।
No comments