রিভিউর দ্রম্নত শুনানির আবেদন কাল- বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা
স্টাফ রিপোর্টার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় দুই খুনীর রিভিউ আবেদনের ওপর সরকার দ্রম্নত শুনানির জন্য আজ মঙ্গলবার চেম্বার জজের নিকট আবেদন করবে।
রাষ্ট্রপতির কাছে ৰমা ভিৰা আবেদনকারী বঙ্গবন্ধুর তিন খুনীর মধ্যে ২ জন রবিবার সুপ্রীমকোর্টের রায় রিভিউয়ের জন্য আবেদন করেন। মেজর (অব) বজলুল হুদা ও লে. কর্নেল (অব) একেএম মহিউদ্দিন (ল্যান্সার) রিভিউ আবেদন করেছেন। এরা এর আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিৰার আবেদন করেছিলেন। ৩ জানুয়ারি, লাল খামে মৃতু্যপরোয়ানা কারাগারে পেঁৗছে। কারা নিয়ম অনুযায়ী ৭ দিনের মধ্যে আসামিদের রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণ ভিৰার আবেদন করতে হয়। এই সময়ের মধ্যে মেজর (অব) বজলুল হুদা, লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহম্মেদ (আর্টিলারি), লে. কর্নেল (অব) একেএম মহিউদ্দিন চৌধুরী (ল্যান্সার) রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিৰার আবেদন জানায়। অপর দুই খুনী লে. কর্নেল (বরখাসত্ম) সৈয়দ ফারম্নক রহমান ও লে. কর্নেল (অব) একেএম মহিউদ্দিন (ল্যান্সার) ৭ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণ ভিৰার আবেদন করেনি।এদিকে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর তিন খুনীর প্রাণ ভিৰার আবেদনে আইনমন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে এ সংক্রানত্ম নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সার-সংৰেপসহ ফাইলটি প্রধানমন্ত্রীর নিকট পাঠানো হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসহ আবেদনগুলো রাষ্ট্রপতির নিকট পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতিই এ ব্যাপারে চূড়ানত্ম সিদ্ধানত্ম নেবেন। কারণ আবেদন মঞ্জুর করে ৰমা করার বা না করার এখতিয়ার রাষ্ট্রপতিরই। রাষ্ট্রপতি খুব দ্রম্নততার সঙ্গে এ ব্যাপারে তাঁর সিদ্ধানত্ম জানাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। মন্ত্রী বলেন, এৰেত্রে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মতো জঘন্য ঘটনায় জড়িতরা ৰমা বা অনুকম্পা পাওয়ার অযোগ্য। তাঁরা কোনভাবেই প্রাণ ভিৰা পেতে পারেন না। মৃতু্যদ-প্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে তিনজন প্রাণ ভিৰার আবেদন করেছেন, বাকিরা কতদিনের মধ্যে করতে পারবেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, মৃতু্য পরোয়ানা জারি হওয়ার সাতদিনের মধ্যে তাঁরা আবেদন করতে পারেন। এ পর্যনত্ম নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তিনজনের আবেদন পাওয়া গেছে। বাকি দু'জন প্রাণ ভিৰার আবেদন করতে পারবেন না। তাঁদের সময় শেষ হয়ে গেছে।
মৃতু্যদ-প্রাপ্ত দু'জন রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। আদালতের রায় হবার পর তাঁরা প্রাণ ভিৰার আবেদন করতে পারবেন কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আদালত যদি তাঁদের আবেদন গ্রহণ করে রায় পুনর্বিবেচনা করেন, তবে ভাল। আদালতের রায় হওয়ার পর দেখা যাবে, তাঁদের ব্যাপারে কী সিদ্ধানত্ম নেয়া যায়।
অপরদিকে রাষ্ট্রপৰের প্রধান আইনজীবী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, রিভিউয়ের পর দু'আসামি প্রাণ ভিৰার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এতে কোন আইগত বাধা নেই। যে দু'আসামি রিভিউয়ের জন্য আবেদন করেছেন এর ওপর দ্রম্নত শুনানির জন্য মঙ্গলবার চেম্বার জজের নিকট আবেদন করা হবে। আশা করছি রিভিউয়ের দ্রম্নত শুনানি হবে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দ-িত ১২ আসামির মধ্যে ৫ জন কারাগারে আটক রয়েছেন। এই পাঁচ জনের মধ্যে সোমবার দু'জন রিভিউয়ের জন্য আবেদন করেছেন। মেজর (অব) বজলুল হুদা ও লে. কর্নেল (অব) একেএম মহিউদ্দিন আহম্মেদ (ল্যান্সার) এর আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুলস্নাহ আল-মামুন তাঁদের পৰে সুপ্রীমকোর্টের আপীল সেশনে আবেদন করেছেন। অপর খুনী লে. কর্নেল (বরখাসত্ম) সৈয়দ ফারম্নক রহমানের আইনজীবী খান সাইফুর রহমান ও লে. কর্নেল (অব) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানের আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক খান জানিয়েছেন, তাঁরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রিভিউয়ের আবেদন করবেন। এ ব্যাপারে তাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিক ধানম-ির ৩২ নম্বরের নম্বরের বাড়িতে ঢুকে বেশ কয়েক আত্মীয়স্বজনসহ সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে। ঘটনার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ৰমতায় গেলে এ ব্যাপারে মামলা হয়। বিচারক আদালত ১৯৯৮ সালের ৮ নবেম্বর ১৫ জনকে ফায়ারিং স্কোয়াডে অথবা ফাঁসিয়ে ঝুলিয়ে মৃতু্যদ- প্রদান করে। আপীলের পর হাইকোর্ট ১২ জনের মৃতু্যদ- বহাল রাখে। কারাগারে আটক ৫ খুনী হাইকোর্টের রায়ের বিরম্নদ্ধে আপীল করলে তা নাকচ হয়ে যায়। এর পর ১৭ ডিসেম্বর আপীল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি ৪১২ পৃষ্ঠার রায়ে স্বাৰর করেন। রায় স্বাৰরের পর তা বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়। বিচারিক আদালত ৩ জানুয়ারি পাঁচ খুনীর নামে মৃতু্যপরোয়ানা 'লাল খামে' প্রবেশ করিয়ে তা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্তৃপৰের নিকট পাঠিয়ে দেয়। এরপর থেকেই কারাকতর্ৃপৰ জেল কোর্ড অনুযায়ী লাশ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে।
No comments