সংসদের মুলতবি অধিবেশন আজ শুরম্ন
সংসদ রিপোর্টার দশ দফা দাবিতে অনড় প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে ছাড়াই আজ সোমবার বেলা ৩টায় সংসদের মুলতবি অধিবেশন শুরম্ন হচ্ছে। গত ৪ জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশন শুরম্ন হয়।
রাষ্ট্রপতি জিলস্নুর রহমানের ভাষণের পর তা মুলতবি করা হয় সাত দিনের জন্য। কার্য উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধানত্ম অনুসারে মুলতবি অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা হবে ৩০ ঘণ্টা। অধিবেশন চলবে ১৮ ফেব্রম্নয়ারি পর্যনত্ম। এ অধিবেশনেও বেশ কয়েকটি জনগুরম্নত্বপূর্ণ বিল পাস হতে পারে।এদিকে রাষ্ট্রপতি ও স্পীকারের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বিরোধী দলকে সংসদে ফেরার আহ্বান জানালেও এখন পর্যনত্ম তারা আগের সিদ্ধানত্মে অনড় আছে। তবে সংসদ সদস্য পদ বাঁচাতে অধিবেশনের ৮৯ কার্যদিবসে সংসদে ফেরার ঘোষণা দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরম্ন হয়। চারটি অধিবেশনে মোট ৮৭ কার্যদিবস সংসদ চলে। এর মধ্যে ৪৮ কার্যদিবসই অনুপস্থিত আছে বিএনপি। ২৫ জানুয়ারি শুরম্ন হওয়া সংসদের প্রথম অধিবেশন চলে ৭ এপ্রিল পর্যনত্ম। কার্যদিবস ছিল মোট ৩৯টি। এর মধ্যে চারদলীয় জোটের সংসদ সদস্যরা ২৩ কার্যদিবস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ সময়ের মধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল সামনের সারিতে আসন বাড়ানোসহ বিভিন্ন ইসু্যতে কয়েকদিন সংসদ বর্জন করে। আসন বাড়ানোর ব্যাপারে স্পীকারের আশ্বাসে দলটি সংসদে ফিরে এসে শেষ কার্যদিবস ৭ এপ্রিল পর্যনত্ম সংসদে উপস্থিত থাকে। গত ৪ জুন শুরম্ন হওয়া বাজেট অধিবেশন শেষ হয় ৯ জুলাই। এ সময়ের ২৫ কার্যবিসের পুরোটাই অনুপস্থিত থাকে বিরোধী দল। অনুপস্থিতি অব্যাহত ছিল তৃতীয় অধিবেশনেও। তৃতীয় অধিবেশন ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ নবেম্বর পর্যনত্ম চলে। মোট কার্যদিবস ২২টি। ফলে এ দুই অধিবেশনে বিএনপির টানা অনুপস্থিতি ৪৭ কার্যদিবস। নতুন বছরে ৪ জানুয়ারি শুরম্ন হওয়া চতুর্থ অধিবেশনের প্রথম দিনও যোগ দেয়নি বিএনপি। ফলে অনুপস্থিতি দাঁড়ায় মোট ৪৮ কার্যদিবস। নিয়ম অনুযায়ী কোন সংসদ সদস্য অধিবেশনের টানা ৯০ কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলে তাঁর সংসদ সদস্য পদ খারিজ হয়ে যাবে। ফলে ইতোমধ্যে বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে সদস্য পদ ধরে রাখতে ৮৯ কার্যদিবসের দিন অধিবেশনে যোগ দেবে। বিরোধী দলের কোন কোন সদস্যের ব্যক্তিগত অনুপস্থিতির হার অনেক বেশি। চারদলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) একমাত্র সদস্য পার্থ আন্দালিব টানা ৬০ কার্যদিবস সংসদ অধিবেশনে অনুপস্থিত আছেন। উপনির্বাচনে জয়ী ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ শপথ নেয়ার পর দলীয় সিদ্ধানত্মের কারণে একদিনও সংসদে যোগ দেয়ার সুযোগ পাননি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে নিজ নিজ আসনে পরাজিত বিএনপি নেতা সাবেক স্পীকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বেগম খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেয়া দুটি আসনে উপনির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পান। গত ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন থেকে জমিরউদ্দিন সরকার এবং বগুড়া-৭ আসন থেকে মওদুদ আহমেদ নির্বাচিত হন। ৮ এপ্রিল তাঁরা সংসদ সদস্য হিসাবে শপথ নিলেও সংসদে যোগ দিতে পারেননি।
এদিকে সংসদ সম্পর্কিত ইসু্য বাদ দিয়ে দলের চেয়ারপার্সন ও তাঁর ছেলের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বিএনপির সংসদ বর্জনের কঠোর সমালোচনা করছে সরকারী দল। প্রথমে সামনের সারিতে আসন বাড়ানো ইসু্যতে সংসদ বর্জন শুরম্ন করলেও অধিবেশনে ফেরার শর্ত হিসাবে বিএনপির ১০ দফা দাবিতে এ বিষয়টি একদমই বাদ গেছে। স্পীকার আসন বাড়ানোর ৰেত্রে বিএনপির দাবি মেনে নেয়ার পর দলটি আর এটাকে গুরম্নত্ব না দিয়ে অন্য শর্তগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
বিএনপির ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে_ তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ির লিজ বাতিলের চিঠি প্রত্যাহার করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়ার প্রাপ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, আরাফাত রহমান কোকোসহ বিএনপি নেতাদের বিরম্নদ্ধে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বিরোধী দলের সংসদ সদস্যের দেয়া মুলতবি প্রসত্মাব গ্রহণ করে অধিবেশনে আলোচনার সুযোগ দেয়া। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে আলোচনার সুযোগ দিতে হবে। এশিয়ান হাইওয়ের নামে করিডোর দেয়া বন্ধ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি, টেন্ডারবাজি দখল, সরকারী দলের নিপীড়ন নির্যাতন নিয়ে সংসদে আলোচনা করার সুযোগ দিতে হবে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি নিয়ে আলোচনা করতে দিতে হবে। সরকারের দেয়া প্রতিশ্রম্নতি মোতাবেক স্থায়ী কমিটির আরও দুটি সভাপতির পদ দিতে হবে এবং বিরোধী দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের এলাকায় সংরৰিত আওয়ামী মহিলা সংসদ সদস্যদের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে।
No comments