নিরৰর মায়ের সনত্মান খাটো হয় জরিপ ইউনিসেফের
নাজনীন আখতার নিরৰর মায়ের সনত্মান হয় খাটো। পড়ালেখা করেননি এমন মায়েদের পরিবারে মোট শিশুর অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ৫৩ শতাংশ হয় খাটো বা খর্বকায়।
অন্যদিকে মায়ের প্রাথমিক শিৰা আছে এমন ৪৫ শতাংশ পরিবারের শিশু খর্বকায়। নিরৰর মায়েদের তুলনায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বা তার চেয়ে বেশি শিৰাগত যোগ্যতা সম্পন্ন মায়েদের পরিবারে খর্বকায় শিশুর সংখ্যা আরও কম ৩৬ শতাংশ। বিভাগ ভেদেও এ হারের ভিন্নতা আছে। দেশে মায়ের শিৰাগত যোগ্যতার ওপর শিশুর পুষ্টি, শীর্ণতা ও খর্বকায়ত্বের এ তথ্য তুলে ধরেছে ইউনিসেফ।শিশু দারিদ্র্য ও বৈষম্য বিষয়ক বিশ্ব গবেষণার এক ফল তুলে ধরে ইউনিসেফ জানিয়েছে, দেশে ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ৪৬ শতাংশ শিশু খর্বকায়, ৪০ শতাংশ শিশু কম ওজনের এবং ১৫ শতাংশ শিশু শীর্ণতায় ভুগছে। শহরের তুলনায় গ্রামের শিশুরা অনেক বেশি খর্বকায় ও কম ওজনের। ছেলে শিশুদের তুলনায় মেয়ে শিশুরা বেশি শীর্ণ। তবে মেয়ে শিশুদের তুলনায় খর্বকায় ও কম ওজনের ছেলে শিশুর সংখ্যা বেশি।
পুষ্টিমান শিশু সমৃদ্ধির একটি অন্যতম নির্দেশক হলেও বাংলাদেশের ৰেত্রে এ চিত্রটি যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে মনত্মব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, কোন পরিবারে মায়ের শিৰাগত যোগ্যতা ওই পরিবারের শিশু অপুষ্টিকে বিপরীতভাবে প্রভাবিত করে। মায়ের কোন শিৰা নেই এমন পরিবারের ৫৩ শতাংশ শিশু খর্বকায়, ১৭ শতাংশ শীর্ণ ও ৪৭ শতাংশ কম ওজনের। প্রাথমিক শিৰা রয়েছে এমন মায়ের পরিবারে এ হার কিছুটা কম। এমন পরিবারে ৪৫ শতাংশ শিশু খাটো, ১৪ শতাংশ শীর্ণ ও ৩৯ শতাংশ কম ওজনের। আর এসএসসি বা তারও বেশি শিৰাগত যোগ্যতাসম্পন্ন মায়ের পরিবারের শিশুর অপুষ্টির চিত্র তুলনামূলকভাবে আরও কম। সেসব পরিবারের ৩৬ শতাংশ শিশু হয় খাটো। আর ১০ শতাংশ শীর্ণ এবং ২৯ শতাংশ শিশু কম ওজন নিয়ে বড় হয়।
প্রতিবেদনে প্রশাসনিক বিভাগগুলোতে শিশু পুষ্টির অবস্থা এক নয় বলে উলেস্নখ করা হয়েছে। তুলনামূলকভাবে অবস্থা সবচেয়ে ভাল ঢাকায়। সেখানে ৪৩ শতাংশ শিশু খর্বকায়। বরিশালে সবচেয়ে বেশি। ৫৩ শতাংশ শিশু খর্বকায়। এরপরেই আছে চট্টগ্রাম, ৫২ শতাংশ শিশু খর্বকায়। এ হার সিলেটে ৪৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ৪৬ শতাংশ এবং খুলনায় ৪৪ শতাংশ।
সংশিস্নষ্টরা জানান, সচেতন মানুষ মাত্রেরই ধারণা, যেকোন অবস্থায় মায়ের দুধ নবজাতক শিশুদের সবচেয়ে আদর্শ খাবার। এটি শিশুপুষ্টি নিশ্চিত করার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উপায়। প্রাথমিক পর্যায়ে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে গ্রাম ও শহরে অভিন্ন মতই রয়েছে। এরপরও পরিবারের অন্য সদস্যদের উপেৰায় অপুষ্টির শিকার শিৰা বঞ্চিত মায়ের কারণে শিশুদের অপুষ্টি লৰ্য করা যায় হরহামেশাই।
সংশিস্নষ্টরা জানান, সরকারী পযর্ায়ে পুষ্টি সংক্রানত্ম চিনত্মা-ভাবনার কথা ১৯৭২ সালের সংবিধানে আছে। সংবিধানে নাগরিকদের পুষ্টিমান বাড়ানোকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুষ্টি বিষয়ে আনত্মর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশ স্বাৰরকারী অন্যতম দেশ। সে সম্মেলনের ঘোষণা অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালে জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নীতিতে জনগণের পুষ্টিমান উন্নত করার জন্য প্রধান ও অপ্রধান পুষ্টিকর খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রাপ্যতার বিষয়টিকে গুরম্নত্ব দেয়া হয়েছে। ন্যাশনাল পস্ন্যান অব এ্যাকশন ফর নিউট্রিশন ১৯৯৭-এ শিশুদের পুষ্টি শিৰার লৰ্য নির্ধারণ করা হয়। অন্য দিকে জাতীয় খাদ্য নীতি ২০০৬-এ সবার জন্য নির্ভরযোগ্য খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। দারিদ্র্য হ্রাস কৌশলপত্র-১ এ ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল_ এ সময়সীমার মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর অনুপাত অনত্মত ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনা এবং শিশু অপুষ্টির ৰেত্রে জেন্ডার বৈষম্য কমানোর লৰ্য নিধর্ারণ করা হয়। তবে কার্যকর পদৰেপ ও সচেতনতার অভাবে এ নিধর্ারিত সময়ের মধ্যে এ লৰ্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য নীতিতে ১৫টি লৰ্য ও উদ্দেশ্য, ১০টি নীতি এবং ৩২টি কৌশলের কথা উলেস্নখ করা হলেও এর খুব কম সংখ্যকই শিশু পুষ্টির অবস্থা উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করেন সংশিস্নষ্টরা। তাদের মতে, ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ব সম্মেলনে শিশুদের প্রতি অঙ্গীকার অনুযায়ী ন্যাশনাল পস্ন্যান অব এ্যাকশন ফর চিলড্রেন (২০০৫-২০১০) অনুসারে, খাদ্যের অভাবী খানাগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ানো, জন্মগতভাবে কম ওজনের শিশুদের ব্যাপকতা কমানো, শিশু, কিশোরী ও সনত্মান ধারণে সৰম নারীদের লৌহ ঘাটতি জনিত রক্তাল্পতা এবং আয়োডিনের ঘাটতির কারণে নানা ধরনের ভারসাম্যহীনতা, ভিটামিন-এ ঘাটতিসহ অনুপুষ্টিকর খাদ্য ঘাটতির প্রকোপ কমাতে হবে।
No comments