সংসদ গ্যালারি থেকে
উত্তম চক্রবর্তী এক সপ্তাহ পর সংসদ শুরম্ন হয়েছে। এমনিতেই বিরোধী দল নেই। তাদের সকল আসনই ফাঁকা। কবে এসব আসন পূরণ হয়ে সংসদ জমজমাট-উত্তপ্ত হয়ে উঠবে কেউ-ই বলতে পারেন না।
তার ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে। তাই যা হবার তাই। কোরাম পূর্ণ করে সংসদ শুরম্ন করতে প্রথমেই ১৫ মিনিট বিলম্ব। শুরম্নর সময় প্রথম সারিতে সংসদ উপনেতা, অর্থমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী আর এলজিআরডি মন্ত্রী ছাড়া সব আসন ফাঁকা। প্রথম থেকে শেষ পর্যনত্ম অধিবেশনের অধিকাংশ আসনও ছিল ফাঁকা। অনেকটা ভাঙ্গা মাঠেই সংসদ পরিচালনা করতে হয়েছে স্পীকার এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদকে। তবে সোমবার কথার ফুলঝুড়িতে একাই সংসদ মাতিয়ে রাখেন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। নববর্ষের শুভেচ্ছার হিড়িক নববর্ষ ইতোমধ্যে ১০ দিন পেরিয়ে গেছে। সংসদ শুরম্নর সময় রাষ্ট্রপতির ভাষণের কারণে কেউ-ই একে অপরকে নববর্ষের শুভেচ্ছা দিতে পারেননি। খ্রিস্টীয় নববর্ষ ২০১০ সাল শুরম্নর পর সংসদের অধিবেশন শুরম্ন হয় সোমবার। তাই যে সংসদ সদস্যই ফ্লোর পেয়েছেন, তিনিই স্পীকার, সংসদ সদস্য, নিজ নির্বাচনী এলাকাসহ দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি। তবে শুরম্ন করেন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। তিনি স্পীকারকে শুভেচ্ছা জানালে স্পীকার বলেন, মাননীয় মন্ত্রী, আপনাকেও ধন্যবাদ। কেন না ২০১০ সালের নতুন বর্ষ আপনাকে দিয়েই সংসদ শুরম্ন করতে পারলাম।কাঠখোট্টা মানুষ
সংসদে প্রশ্নোত্তরপর্বে অধিবেশন মাতিয়ে রেখেছিলেন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। মাঝে একটি প্রশ্নোত্তরপর্ব ছিল বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর। তিনি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলেন, মাননীয় স্পীকার, প্রশ্নোত্তরপর্বটিই ছিল আবুলময়। তিনি যেভাবে রসালো কায়দায় উত্তর দিচ্ছেন, মাঝে আমি ঢুকে পড়েছি। আমি রসালো ও মসলাযুক্ত উত্তর দিতে পারি না। আমি কাঠখোট্টা মানুষ। সোজাসাপ্টা উত্তর দিতেই ভালবাসী। তাই হয়ত আমার বক্তব্যে সবার মনে আনন্দ নাও দিতে পারে।
আপনার নামের অর্থ জানেন কী?
কোন শিশু জন্ম নিলে তার নাম রাখতে কতই না প্রতিযোগিতা হয়। কেউ অর্থ জেনে নাম রাখেন, নিরৰর মানুষ হয়ত অর্থ না জেনেই নাম রাখেন। কিন্তু নামের অর্থ কেউ না জানলে যোগাযোগ করতে পাারেন সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের কাছে। তিনি যে মানুষের নামের অর্থ বিষয়ে বিশারদ তা সোমবার সংসদে আবারও প্রমাণ করেছেন। যে সাংসদই প্রশ্ন করতে দাঁড়িয়েছেন, তাঁরই নামের অর্থ বলে দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। সাংসদ সৈয়দ মহসিন আলীর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, সৈয়দ মহসিন আলীর নামের অর্থ হচ্ছে আলস্নাহতায়ালার ইহসানপ্রাপ্ত ব্যক্তি। তহুরা আলী প্রশ্ন করলে মন্ত্রী বলেন, 'তহুরা'র অর্থ হচ্ছে বেহেসত্মের সুপেয় পানি। আর আলী হচ্ছে শক্তিমান। তাই তহুরা আলীর দাবি পূরণ না করলে আমি শক্তিও পাব না। তাঁর বিভিন্ন উদ্ধৃতি ও রসালো বক্তব্য নিয়ে সংসদে বেশ হাস্যরসের সৃষ্টি হয়।
সংসদে কোন 'ভাই' নেই
প্রশ্নোত্তরপর্বে সম্পূরক প্রশ্নের জন্য ফ্লোর পান ঢাকা মহানগরী থেকে নির্বাচিত নসরম্নল হামিদ বিপু। প্রশ্ন করতে গিয়ে তিনি বলেন, মাননীয় স্পীকার, সৈয়দ আবুল হোসেন আমাদের বড় ভাই। তাঁর কাছে গেলে তিনি চা, বিস্কুটসহ ভালই আপ্যায়ন করেন। আমরা পুরান ঢাকার মানুষ। তিনি আমার কাজটা করে দিলে বড় ভাইকে বাখরখানি খাওয়াব। রসিক স্পীকার চুপ করে বসে থাকার পাত্র নন। তাৎৰণিক জবাব- মাননীয় সদস্য, সংসদে কোন বড় ভাই নেই, তিনি মাননীয় মন্ত্রী। ভাই বলতে হলে বাইরে। পরে মাস্টার আবুল কাশেমের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, মাননীয় স্পীকার, আবুল কাসেম নামে আমার ভাই আছে। নিজের ভাইকে তো ভাই বলা যায়? জবাবে স্পীকার বলেন, তা বলতে পারেন। এ সময় সবাই হেসে ওঠেন।
রিঙ্ায় চড়লে ম-া
জামালপুর-মুক্তাগাছা সড়কের বিবর্ণ দশার কথা সংসদে তুলে ধরেন সরকারী দলের সংসদ সদস্য কেএম খালিদ। যোগাযোগমন্ত্রীকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, মাননীয় মন্ত্রী, আমি কোন প্রশ্ন করতে চাই না। একটি দাওয়াত দিতে চাই। এই সড়কের দুই কিলোমিটার পথ যদি আপনি আমার সঙ্গে রিঙ্ায় যেতে পারেন তবে চায়ের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী ম-াও খাওয়াব। ফ্লোর দিতে গিয়ে স্পীকার বলেন, মাননীয় মন্ত্রী, রিঙ্ায় গিয়ে ম-া খাবেন কী-না? জবাবে মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, মাননীয় স্পীকার, আমি একা সেখানে গিয়ে ম-া খেতে চাই না। আপনি গেলে যেতে পারি। এ সময় স্পীকার বলেন, বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে। পরে অবশ্য মন্ত্রী ওই সড়কটি মেরামতের আশ্বাস দেন।
No comments