ব্যালন ডি’অরের অপেক্ষা
এবার ব্যালন ডি’অর জিতলে টানা চতুর্থবারের মতো ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাকর ব্যক্তিগত পুরস্কারটি জয় করবেন লিওনেল মেসি। মেসির ব্যালন ডি’অর আর্জেন্টাইন এই ফুটবলারকে তাঁর প্রজন্মের সেরা ফুটবলার হিসেবে কেবল আখ্যায়িতই করবে না, তাঁকে সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার হওয়ার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে দেবে।
সেরা হওয়ার এই লড়াইটা তাঁর হচ্ছে বার্সা সতীর্থ আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ও রিয়াল মাদ্রিদের প্রবল প্রতিপক্ষ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে। দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষে সোমবারই জানা যাবে মর্যাদাকর এই পুরস্কারের সোনালি মুকুট উঠছে কার মাথায়। ২০১২ সালটি কোনোদিনই হয়তো ভুলে যাবেন না লিওনেল মেসি। গোটা বছরই তিনি গোল করে গেছেন অবলীলায়। ৯১ গোল করে জার্ড মুলারের ৪০ বছর অক্ষত থাকা এক বছরে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটি ভেঙেছেন খুব সহজেই। এখন পর্যন্ত স্প্যানিশ লা লিগায় ২৫ গোল করে আছেন সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকার শীর্ষে। এ সবই তাঁর ২০১২ সালের অর্জন। জীবনে অনেক কিছু ভুলে গেলেও ২০১২ সালটি তিনি কোনোদিনই মন থেকে মুছে ফেলতে পারবেন না।মেসি নিজে অবশ্য গোল করার এসব রেকর্ড নিয়ে একেবারেই ভাবতে চান না। অনন্য কিছু করে ফেলার আনন্দটা তাঁর মনের গহিনে থাকলেও নিজের দল জিততে না পারলে এসব গোলের কোনোই মূল্য নেই বলে অভিমত তাঁর। তিনি খুশি হবেন তখনই যখন তাঁর গোলের রেকর্ড দল বার্সেলোনাকে লা লিগা ও ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নস লিগে জিততে সহায়তা করবে।
এত বড় পুরস্কারের হাতছানি সামনে নিয়েও লিওনেল মেসি কিন্তু নির্বিকারই আছেন। নিজে এই ব্যালন ডি’অরের সবচেয়ে বড় প্রার্থী হওয়ার পরও আপাতত সতীর্থ আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার সম্ভাবনাই তাঁর মনে সবচেয়ে বেশি পুলক জাগিয়ে তুলছে। মেসি মনে করেন, পুরস্কারটি ইনিয়েস্তা পেলে তাঁর পরিশ্রম ও ফুটবলে তাঁর অবদানের প্রতিই সুবিচার করা হবে। ইনিয়েস্তা ব্যালন ডি’অর পেলে তা হবে বার্সা ড্রেসিং রুমেরই অর্জন—এমনটাই মনে করেন লিওনেল মেসি।
ক্যানসারের চিকিত্সা নিয়ে আপাতত ব্যস্ত কাতালান কোচ টিটো ভিলানোভার অবশ্য কোনো সন্দেহই নেই যে মেসি চতুর্থবারের মতো ব্যালন ডি’অর জিততে যাচ্ছেন।
মেসি ফুটবলকে কতটা ভালোবাসেন সেটা ভিলানোভাই ভালো বলতে পারেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে একটা সনদও তিনি দিয়েছেন এই সুপারস্টারকে। ভিলানোভা মনে করেন, ফুটবলের প্রতি মেসির টান, মেসির ভালোবাসাটা এখনো শিশুসুলভ পর্যায়ে আছে। একটি শিশু হাতে বল পেলে যেমন খুশি হয়ে ওঠে, ফুটবল নিয়ে মেসির আনন্দটাও অনেকটা তেমনই; যাতে কোনো খাঁদ খুঁজে পাওয়ার কোনোই কারণ নেই। ভিলানোভা বলেন, ‘মেসির সবচেয়ে বড় গুণ, ফুটবলটা সে অন্তর দিয়ে খেলে। খেলার প্রতি তাঁর মনোভাব অনেকটা শিশুদের মতো।’
ভিলানোভার স্পষ্ট উক্তি, ‘এবারের ব্যালন ডি’অর মেসিই জিততে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনোই অবকাশ নেই।’
ব্যালন ডি’অর পাওয়ার ব্যাপারে অন্যতম শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ ও পর্তুগালের আরেক সুপারস্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। মেসির বিরোধীরা রোনালদোকে এই পুরস্কারের বড় দাবিদার বললেও ‘সিআর-৭’ মনে করেন, পুরস্কার না পেলে দুনিয়া উল্টে যাওয়ার মতো কোনো ব্যাপার ঘটবে না।
‘পুরস্কার পেলে কে না খুশি হয়। ব্যালন ডি’র আমাকেও আনন্দে ভাসাবে। কিন্তু এর মানে এই না যে আমি পুরস্কারটি না পেলে দুনিয়া উল্টে যাবে, সাংঘাতিক কিছু ঘটে যাবে।’ রোনালদোর উক্তি।
মেসি, ইনিয়েস্তা, রোনালদো—এই তিন তারকা তো লড়ছেন সেরা ফুটবলার হওয়ার লড়াইয়ে। কিন্তু সেরা কোচের লড়াইটিও কিন্তু সোমবার রাতে কম জমপেশ হচ্ছে না। এই দৌড়েও আছেন তিনজন। স্প্যানিশ জাতীয় দলের কোচ ভিসেন্তে দেল বস্ক, রিয়াল মাদ্রিদের হোসে মরিনহো এবং বার্সেলোনার সাবেক কোচ পেপ গার্দিওলার মধ্যে হচ্ছে পৃথিবীর সেরা কোচ মনোনীত হওয়ার আরও একটি দুর্দান্ত লড়াই।
ফুটবল দুনিয়ায় এখনো পর্যন্ত তিনটি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন তিনজন। তাঁদের মধ্যে একজন ফরাসি, দুজন ডাচ। ফ্রান্সের মিশেল প্লাতিনির সঙ্গে আছেন দুই ডাচ কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফ ও মার্কো ফন বাস্তেন। ওয়েবসাইট।
No comments