চরাচর-শ্রীরামসির নারকীয় হত্যাকাণ্ড by শামস শামীম
একাত্তরের জনযুদ্ধে চরম মূল্য দিতে হয় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীরামসি গ্রামবাসীকে। স্কুলঘরে শান্তি কমিটির সভা আহ্বান করে গ্রামবাসীর ওপর বাধ্যতামূলক উপস্থিতির আদেশ জারি করেছিল পাকিস্তানিরা। সভায় বিলম্বে উপস্থিতিদের মধ্য থেকে বাছাই করে গ্রামের বুদ্ধিজীবী, চাকরিজীবী, তরুণ, ছাত্রসহ ১০৪ জনকে আলাদা করে
হাত-পা বেঁধে ব্রাশফায়ারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ড দেখে আতঙ্কে গ্রামের নারী-পুরুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। লাশ দাফনের কেউ ছিল না। গণহত্যার পর লোকজন গ্রামে ফিরে দেখে, লাশ নিয়ে চারদিকে শকুন, শেয়াল আর জীবজন্তুর কাড়াকাড়ি। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া মৃত্যুপুরীতে ফিরে পচা, অর্ধগলিত ও জীবজন্তু খাওয়া চার-পাঁচটি করে লাশ গর্তে মাটিচাপা দেয় গ্রামবাসী। এত নৃশংসতা দেখে নির্বাক হয়ে পড়ে গ্রামের মানুষ।
একাত্তরের ৩১ আগস্ট বর্ষার বৃষ্টিস্নাত সকালে সুনামগঞ্জের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণহত্যা সংঘটিত হয় শ্রীরামসি গ্রামে। পরপর তিন দফা হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় নরপিশাচরা আগুনে ছারখার করে বাজার, বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। বিবিসি বাংলা তখন এই গণহত্যার ওপর বিশেষ সংবাদ প্রচার করে। এই হত্যাযজ্ঞ থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন এখনো স্মৃতি মনে করে হু হু করে কাঁদেন, নীরবে চোখের জল ফেলেন।
১৯৭১ সালের ৩১ আগস্ট সকাল। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষাকাল, তাই চারদিকে থৈথৈ পানি। স্থানীয় রাজাকার আহমদ আলী স্কুলের দুজন ছাত্রকে বাহক করে শ্রীরামসি উচ্চ বিদ্যালয়ে জড়ো হওয়ার নির্দেশ দিয়ে শান্তি কমিটির সভা আহ্বান করে। ধীরে ধীরে এলাকাবাসী জড়ো হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে শিক্ষক, সরকারি চাকরিজীবী, ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন জড়ো হন। তবে যাঁরা দেরি করে বৈঠকে উপস্থিত হন তাঁদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করে তাঁদের মধ্য থেকে বেশির ভাগকেই হত্যা করার জন্য বাছাই করা হয়। পাকিস্তানি দানবরা প্রথমে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছাদ উদ্দিনকে লাঞ্ছিত করেই বৈঠকে উপস্থিতিদের মধ্য থেকে ধরপাকড়ের নির্দেশ দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। প্রথম দফায় প্রধান শিক্ষক, স্কুলের আরেক শিক্ষক মাওলানা আবদুল হাই, তহশিলদার, পোস্ট মাস্টারসহ ২৬ জনকে ব্রাশফায়ারের মুখে ফেলে। এই দলের ২৪ জন মারা যান। জোয়াহির চৌধুরী ও আলকাছ মিয়া নামের দুই তরুণ সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। পরে নৌকায় তুলে আরো ৫০ জনকে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। যাঁরা নৌকা থেকে প্রাণে রক্ষার জন্য পানিতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, তাঁদের ওপরে তুলে আবার পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়। কিছুক্ষণ পর আরেকটু দূরে গিয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আরো ৩০ জনকে হাত-পা বেঁধে ব্রাশফায়ারের মুখে হত্যা করা হয়। শান্তি কমিটির নির্দেশে গ্রামবাসীকে স্কুলে জড়ো হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো কোমলমতি শিক্ষার্থী আবদুল মালিক ও তোফাজ্জল হককেও তারা রেহাই দেয়নি, গুলি করে হত্যা করে। পৈশাচিকতা চালিয়ে ফিরে যাওয়ার আগে গ্রামের কিছু লোককে বাধ্য করে শ্রীরামসি বাজার পুড়িয়ে দিয়ে যায়।
স্বাধীনতার ৪১ বছর পরও শ্রীরামসি গণহত্যার স্মৃতিবিজড়িত স্থানে কেবল একটি দায়সারা সৌধ ব্যতীত কোনো স্থাপনা নির্মাণ হয়নি। এ উদাসীনতা দেশপ্রেমিক জনগণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনগণকে খুব পীড়া দিচ্ছে।
শামস শামীম
একাত্তরের ৩১ আগস্ট বর্ষার বৃষ্টিস্নাত সকালে সুনামগঞ্জের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণহত্যা সংঘটিত হয় শ্রীরামসি গ্রামে। পরপর তিন দফা হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় নরপিশাচরা আগুনে ছারখার করে বাজার, বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। বিবিসি বাংলা তখন এই গণহত্যার ওপর বিশেষ সংবাদ প্রচার করে। এই হত্যাযজ্ঞ থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন এখনো স্মৃতি মনে করে হু হু করে কাঁদেন, নীরবে চোখের জল ফেলেন।
১৯৭১ সালের ৩১ আগস্ট সকাল। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষাকাল, তাই চারদিকে থৈথৈ পানি। স্থানীয় রাজাকার আহমদ আলী স্কুলের দুজন ছাত্রকে বাহক করে শ্রীরামসি উচ্চ বিদ্যালয়ে জড়ো হওয়ার নির্দেশ দিয়ে শান্তি কমিটির সভা আহ্বান করে। ধীরে ধীরে এলাকাবাসী জড়ো হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে শিক্ষক, সরকারি চাকরিজীবী, ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন জড়ো হন। তবে যাঁরা দেরি করে বৈঠকে উপস্থিত হন তাঁদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করে তাঁদের মধ্য থেকে বেশির ভাগকেই হত্যা করার জন্য বাছাই করা হয়। পাকিস্তানি দানবরা প্রথমে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছাদ উদ্দিনকে লাঞ্ছিত করেই বৈঠকে উপস্থিতিদের মধ্য থেকে ধরপাকড়ের নির্দেশ দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। প্রথম দফায় প্রধান শিক্ষক, স্কুলের আরেক শিক্ষক মাওলানা আবদুল হাই, তহশিলদার, পোস্ট মাস্টারসহ ২৬ জনকে ব্রাশফায়ারের মুখে ফেলে। এই দলের ২৪ জন মারা যান। জোয়াহির চৌধুরী ও আলকাছ মিয়া নামের দুই তরুণ সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। পরে নৌকায় তুলে আরো ৫০ জনকে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। যাঁরা নৌকা থেকে প্রাণে রক্ষার জন্য পানিতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, তাঁদের ওপরে তুলে আবার পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়। কিছুক্ষণ পর আরেকটু দূরে গিয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আরো ৩০ জনকে হাত-পা বেঁধে ব্রাশফায়ারের মুখে হত্যা করা হয়। শান্তি কমিটির নির্দেশে গ্রামবাসীকে স্কুলে জড়ো হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো কোমলমতি শিক্ষার্থী আবদুল মালিক ও তোফাজ্জল হককেও তারা রেহাই দেয়নি, গুলি করে হত্যা করে। পৈশাচিকতা চালিয়ে ফিরে যাওয়ার আগে গ্রামের কিছু লোককে বাধ্য করে শ্রীরামসি বাজার পুড়িয়ে দিয়ে যায়।
স্বাধীনতার ৪১ বছর পরও শ্রীরামসি গণহত্যার স্মৃতিবিজড়িত স্থানে কেবল একটি দায়সারা সৌধ ব্যতীত কোনো স্থাপনা নির্মাণ হয়নি। এ উদাসীনতা দেশপ্রেমিক জনগণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনগণকে খুব পীড়া দিচ্ছে।
শামস শামীম
No comments